‘প্রবাহ’ প্রকল্পে বিশুদ্ধ খাবার পানি পাচ্ছে বান্দরবানের ৫ হাজারের বেশি মানুষ
বিএটি বাংলাদেশের সিএসআর প্রকল্প ‘প্রবাহ’ এর মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি পাচ্ছেন পার্বত্য জেলা বান্দরবানের পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ। দেশের আর্সেনিকপ্রবণ বিভিন্ন অঞ্চলে সফলভাবে কার্যক্রম পরিচালনার পর গৃহীত এই উদ্যোগটির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে যাত্রা শুরু করল ‘প্রবাহ’।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘প্রবাহ’ পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্টটির উদ্বোধন করেন। এসময় নাইক্ষ্যংছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিউল্লাহ, উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তা সাদিয়া আফরিন কচি এবং নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবসার ইমনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্লান্টটি উদ্বোধনকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম বলেন, বান্দরবান জেলায় নিরাপদ ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। এ অবস্থায় বিএটি বাংলাদেশ তার ‘প্রবাহ’ প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলা সদরে নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। ‘প্রবাহ’ প্রকল্পের মাধ্যমে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহে সহযোগিতা করার জন্য বিএটি বাংলাদেশকে আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় প্রায়ই চরম সংকটে পড়তে হয় নাইক্ষ্যংছড়ি ও এর আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের। তখন তারা পাহাড়ি ঝিরি কিংবা কূপ খননের মাধ্যমে খাবার পানির চাহিদা পূরণ করে থাকে। তাছাড়া, পাথুরে স্তরের কারণে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করাটা একই সাথে বেশ কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল; যা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, ‘প্রবাহ’ এর এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের পানির সমস্যার সমাধান হবে। প্লান্টটি প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে সক্ষম, যা দিয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের নিত্যদিনের পানির চাহিদা পূরণ করতে পারবেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আইয়ুব জানান, বিশুদ্ধ পানির জন্য আগে তিনি প্রতিমাসে তাকে ৩,০০০ টাকা খরচ করতে হতো। প্রবাহ প্রকল্প চালু হবার পর সেই টাকাটা তিনি সঞ্চয় করতে পারছেন। প্লান্টের বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশের পাশাপাশি বিএটি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষত: আর্সেনিকপ্রবণ এলাকাগুলোর সুপেয় পানির অভাব পূরণে ২০০৯ সালে ‘প্রবাহ’ নামে নিরাপদ খাবার পানির এই বিশেষ প্রকল্পটি চালু করে বিএটি বাংলাদেশ। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ কার্যক্রমের স্বীকৃতি স্বরূপ ইতোমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানান পুরস্কারও পেয়েছে প্রবাহ। এই প্রকল্পের আওতায় গত ১১ বছরে দেশের ১৪টিরও বেশি জেলায় ৮৮টি পানি শোধনাগার স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, মাদারীপুর, সাতক্ষীরা, নাটোর, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জে বিএটি বাংলাদেশের পানি শোধনাগার রয়েছে। ‘বান্দরবান’ এই তালিকায় নতুন সংযোজন।
পাহাড়ি অঞ্চলে নিরাপদ পানির যোগান, বিশেষত: শুস্ক মৌসুমে পানির সংকট সমাধানে প্রকল্পটির গুরুত্ব নিয়ে বিএটি বাংলাদেশের ডিভিশনাল লিফ ম্যানেজার মামুনুর রশিদ বলেন, প্রবাহ প্রকল্পটির মাধ্যমে আমরা গত ১১ বছর ধরে দেশের আর্সেনিকপ্রবণ বিভিন্ন অঞ্চলে আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ করে মানুষের সহযোগিতা করার চেষ্টা করে আসছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো প্রবাহ প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। আমি আশাবাদী যে, আমাদের এই প্রচেষ্টা নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার মানুষজনকে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট কাটিয়ে উঠতে কিছুটা হলেও সহায়তা করবে।