ইনকিউবেটর মাস্ক হতে পারে ভেন্টিলেটরের বিকল্প
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসমহামারি বলি কিংবা অদৃশ্য শক্তির সাথে যুদ্ধ, যাই বলি না কেন আমরা পার করছি মানবসভ্যতার ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ সময়। গবেষণা, কৌশল আর প্রযুক্তির সমন্বয়ে অতীতের মতো এবারো আমরা জয়ী হব।
তবে এবার আমাদের আরো বেশি সক্রিয় ও দূরদর্শী হতে হবে। কারণ যথেষ্ট দেরি হয়ে গিয়েছে, আর দেরি করার অবকাশ নেই।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে অনার্স শেষ করে মাস্টারস করতে আসি ইতালির মিলানে। পড়ালেখা শেষ করে ইন্টার্ন, এরপর প্রোডাক্ট ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি। সেই সুবাদেই ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে ইতালির নানা শহর। যেমন গোছানো এদের শহরগুলো ঠিক তেমনই গোছানো এদের প্রশাসনিক, দাপ্তরিক এবং স্বাস্থ্য অবকাঠামো।
এত সুসজ্জিত একটা দুর্গ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল শুধু কিছু ভুল আর বিলম্বিত সিদ্ধান্তের কারণে। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর, ফ্যাশন আইকন এক নগরীতে আজ শুধু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন, কখনো খুব কাছ থেকে আবার কখনো ভেসে আসে দূর থেকে।
আমার দেশ বাংলাদেশও আজ একই যুদ্ধে শামিল। দেরি হবার আগেই নিতে হবে পদক্ষেপ আর প্রস্তুত থাকতে হবে হাতিয়ার নিয়ে। যেহেতু এখনও কার্যকর কোন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হয়নি, তাই প্রতিরোধই হবে এই যুদ্ধে জয়ী হবার প্রধান রণকৌশল। প্রথমে রক্ষা করতে হবে আমাদের ডাক্তারদের, যারা এই যুদ্ধের অগ্রভাগের সেনানি, তাদের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পিপিই। আমার বিশ্বাস সরকার ইতোমধ্যে সফলভাবে এই ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে। এবার নজর দিতে হবে আক্রান্ত রোগীদের দিকে।
ভেন্টিলেটর, এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত যন্ত্র। কারণ এই যন্ত্র দিয়ে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রোগীদের জীবন বাঁচানো সম্ভব। তবে ঘাটতি আছে এই যন্ত্রের, আর এটি ব্যয়বহুলও। কিন্তু প্রতিটি জীবনই অমূল্য।
এমন যদি করা যায়, একটি মাস্ক হয়ে উঠবে এক একটি ইনকিউবেটর, আর এই মাস্কগুলো বানাতে খরচ হবে ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মতো। এই চিন্তা থেকে আমি একটি ফুলফেস মাস্কের মডেল দাঁড় করিয়েছি, যা হবে ওয়ান ফুলফেস মাস্ক, ওয়ান ইনকিউবেটর (একটি ফুলফেস মাস্ক, একটি জীবন)।
প্রাথমিক মডেলের ছবি এবং ফিচারগুলোর বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো। মাস্কটির কাঠামো থেকে শুরু করে প্রতিটি অংশ তৈরি সুলভ পলিমার দিয়ে।
ফ্রেমের চারপাশে থাকবে রাবার, যা আক্রান্ত রোগীর পুরো মুখে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করবে। তাই এই মাস্ক পরিধানের পর ডাক্তার/নার্স এবং আশপাশের সুস্থ মানুষের সংক্রমিত হবার আশঙ্কা থাকবে না। এছাড়া নেই আলাদা কোনো রুমের প্রয়োজন। সাধারণ ওয়ার্ডেই করোনা আক্রান্ত রোগীদের রাখা সম্ভব।
মুখের অগ্রভাগে (নাকের অংশে) বসানো হবে, বারবার ধুয়ে ব্যবহারযোগ্য পলিমারিক মেমব্রেন (ওয়ান টাইম সার্জিকাল ফিল্টারও ব্যবহার করা সম্ভব)।
বিভিন্ন আকৃতির মুখের সাথে মানিয়ে নেবার জন্য ফ্রেমের চোয়ালে আছে অ্যাডজাস্টেবল মেকানিজম।
মাস্কের মাথার অংশে থাকবে একটি সকেট, যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিচার। এই সকেটে আছে দুটি চ্যানেল। একটি যুক্ত হবে অক্সিজেনের লাইনের সাথে আর অন্য চ্যানেলে থাকবে পিইপি (পজিটিভ অ্যান্ড এক্সপিরেটরি প্রেসার)। যার সাহায্যে কর্তব্যরত ডাক্তার অক্সিজেনের পরিমাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
ফ্রেমের অভ্যন্তরীণ চ্যানেল অক্সিজেনের সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করবে।
মাস্কের ভিতরের আর্দ্রতা স্বাভাবিক রাখার জন্য আছে বিশেষ ব্যবস্থা।
মডেলটির কিছু ছবি কয়েকজন বিশিষ্ট ডাক্তারের কাছে পাঠানো হয়েছিল এবং সবাই আশা করছেন এটি হতে পারে সত্যিকার অর্থেই একটি জীবন রক্ষাকারী ফুলফেস মাস্ক। এ কারণে সবার আগে প্রয়োজন কিছু মাস্ক তৈরি করা, যাতে করে এর পরিক্ষামূলক ফলাফল যাচাই করা যায়।
যদিও দেশে এখন লকডাউন পরিস্থিতি, তবুও আশা করব দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠান যোগাযোগের জন্য এগিয়ে আসবে এবং বৃহত্তর স্বার্থে আমরা এক সাথে কাজ করতে পারব। এখনই উৎপাদনে যাবার জন্য প্রয়োজনীয় ডিজাইন এবং নির্দেশনা প্রস্তুত আছে এবং কিছু হাসপাতালও আগ্রহী এর প্রয়োগ দেখতে।
আমি আশা করি অতি দ্রুত আমরা পরীক্ষামূলক কিছু ফুলফেস মাস্ক বানিয়ে হাসপাতালগুলোকে দিতে পারব এবং তাদের ফলাফলের ভিত্তিতে অতিসত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে আমরা সারা দেশে এই মাস্ক পৌঁছে দিতে পারব।
মনসুর আহমেদ
ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার
মিলান, ইতালি।
Email: [email protected]