চিরঞ্জীব সঞ্জীব



রায়হান রহমান রাহিম, কন্ট্রিবিউটর
নগরীর দেয়ালে সঞ্জীব চৌধুরীর গ্রাফিতি

নগরীর দেয়ালে সঞ্জীব চৌধুরীর গ্রাফিতি

  • Font increase
  • Font Decrease

এক ডানা ভাঙা শালিক পাখির সুরে প্রজন্মের তরে যে মানুষটি গোটা জীবন আগুনের কথা বলেছেন, গানে গানে শুনিয়েছেন রঙিন হৃদয়ের সমস্ত দাবি, তিনি সঞ্জীব চৌধুরী৷ বেঁচে থাকার প্রতিটি সময় দলছুট ভাবনার সাথে তাঁর অন্তরঙ্গ মিশে থাকার গল্প বাংলা গানের জগতকে সম্পূর্ণ নতুন এক মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল৷ প্রিয় পাঠক, আজন্ম অন্তরের কথা বলতে চাওয়া এই কিংবদন্তী শিল্পীর জীবন ও সৃষ্টি নিয়ে চলুন একটু জেনে আসা যাক৷

১৯৬৪ সালের আজকের এই দিনে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে সঞ্জীব চৌধুরীর জন্ম হয়৷ পিতা গোপাল চৌধুরী এবং মা প্রভাষিণী চৌধুরীর নয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে সঞ্জীব ছিলেন সপ্তম সন্তান৷ বাড়িতে তাঁর ডাকনাম ছিল কাজল৷ বসতভিটা বানিয়াচংয়ে হলেও জানা যায় তাঁদের মূল বাড়ি ছিল সিলেট জেলার বিশ্বনাথ থানার দশঘর গ্রামে৷ তাঁর পিতামহ শরৎ রায় চৌধুরী সেখানকার জমিদার ছিলেন ৷

হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে সঞ্জীব চৌধুরী ঢাকায় চলে আসেন৷ ঢাকায় এসে বকশীবাজারের নবকুমার ইন্সটিটিউটে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই ১৯৭৮ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মেট্রিক পাশ করেন৷ ছাত্রজীবন থেকেই সঞ্জীব চৌধুরী তুখোড় মেধাবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন ৷ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জাতীয় মেধাতালিকায় ১২তম হয়ে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হবার পর পর তাঁর জীবন-দর্শনের আমূল পরিবর্তন ঘটে ৷

বলা যায়, ঢাকা কলেজের ক্যান্টিন থেকেই সঞ্জীব চৌধুরীর সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল৷ অসম্ভবের পৌরুষোদ্দীপ্ত কন্ঠে সত্তরের দশকের অকালপ্রয়াত লেখক, ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী খান মোহাম্মদ ফারাবীর রচনা থেকে প্রায়ই আবৃত্তি করতেন—

আমি তো তাদেরই জন্য,
সূর্যের দিকে চেয়ে থাকবার অভ্যাসে যারা বন্য!
আমি তো তোমারই জন্য,
কপাল রাঙানো যে মেয়ের টিপ রক্তের ছোপে ধন্য!

আস্তে আস্তে সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকতে থাকা অবস্থায় কবিতার বই হাতে কলেজ ক্যান্টিনের তুমুল আড্ডার দিনগুলিই ছিল তাঁর মৌলিক বিকাশের মূল সময়৷ তখনকার উত্তাল দিনগুলির সাথে পাল্লা দিয়ে সঞ্জীবও যেন ছুটছিলেন আগুনের ফুলকি বুকে নিয়ে৷ ১৯৭৯-৮০ সালের ঢাকা কলেজ ছাত্র ইউনিয়ন সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ তারপর ১৯৮০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন এবং সেই বছরই স্নাতকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ভর্তি হয়ে যান৷ বিজ্ঞানের এই তুমুল মেধাবী ছাত্রটির, কোনো এক অজানা কারনে গণিত বিভাগে পড়া চালিয়ে যেতে ইচ্ছে করল না৷ তারপর ভর্তি বাতিল করে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন৷ এবং সেখান থেকেই গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে মাস্টার্স পাশ করেন৷

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আশির দশক বেশ উত্তপ্ত এক সময়৷ স্বৈরাচারী সরকারের শাসন মেনে না নেয়া হাজার হাজার স্বাধীনচেতা তরুণের মতো সঞ্জীব চৌধুরীও বিক্ষোভ বিপ্লবের দিকে জীবনকে ঠেলে দিয়েছিলেন৷ এভাবেই আন্দোলন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে নিজের জীবনকে পোড়াতে পোড়াতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে খাঁটি এক শিল্পীমন সঞ্জীব চৌধুরীর আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল৷

ছাত্রজীবনে সঞ্জীব শঙ্খচিল’ নামে একটি গানের দলের সাথে জড়িত ছিলেন৷ স্বৈরাচারী সরকার-বিরোধী আন্দোলনকারী সংস্কৃতি-কর্মীদের প্রতিটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবসূচক প্রচেষ্টা আমাদের জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ইতিহাসে বিবেচিত৷ তখনকার বিভিন্ন সভা-সমাবেশে গান গাইতেন, কবিতা পড়তেন বলে অনেকেই সঞ্জীব চৌধুরীকে চিনতেন৷ কিন্তু গায়ক হিসেবে তখনও তিনি এতটা নাম কুড়াননি।

পড়াশোনার পাট চুকিয়েই তিনি সাংবাদিকতা পেশায় মনোনিবেশ করেছিলেন। দৈনিক উত্তরণ ছিল তাঁর প্রথম কর্মস্থল৷ তারপর একে একে ‘ভোরের কাগজ’, ‘আজকের কাগজ’, ‘যায় যায় দিন’ পত্রিকায় তিনি সাংবাদিকতা করেছেন৷

গদ্য ও কবিতা উভয় ক্ষেত্রেই সঞ্জীব চৌধুরী ছিলেন অসামান্য এক সৃজনশীল প্রাণ। তিনি ১৯৮৩ সালের একুশে বইমেলায় ‘মৈনাক’ নামে একটি লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদনা ও প্রকাশ করেছিলেন৷ এরপর ১৯৯০ সালে লোকালয় প্রকাশনী থেকে তাঁর ‘রাশ প্রিন্ট’ নামে একটি গল্পগ্রন্থ বের হয়৷ বইটি বের হওয়ার পরপরই সমালোচক মহল থেকে দারুণ প্রসংশা কুড়িয়ে নেয়৷ কিংবদন্তী লেখক আহমদ ছফা সেই সময় সঞ্জীব চৌধুরীর লেখার দারুণ প্রশংসা করেছিলেন৷ বইটি পরবর্তীতে বাংলা একাডেমি কর্তৃক সেরা গল্পগ্রন্থও নির্বাচিত হয়৷

তখনকার সময়ে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত আজিজ সুপার মার্কেট ছিল প্রগতিশীলদের দারুণ এক মিলনস্থল৷ সঞ্জীব চৌধুরীর বিস্তৃত পরিসরে গানের জগতে প্রবেশে এই আজিজ মার্কেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল৷ সঞ্জীব মূলত গান ও আড্ডার টানে এখানে প্রায়ই আসতেন৷ একদিন আজিজ মার্কেটে তাঁর গায়ক বন্ধু হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল তাঁকে শিল্পী বাপ্পা মজুমদারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন৷ বাপ্পা মজুমদার এই দেশেরই কিংবদন্তী সংগীত নক্ষত্র বারীণ মজুমদারের ছোট ছেলে৷ সেই সময়ে বাপ্পা ছিলেন বয়সে তরুণ একজন মেধাবী গায়ক এবং সুরকার৷ ক্রমশই বাপ্পার সাথে সঞ্জীব চৌধুরীর হৃদ্যতা বাড়তে থাকে৷ বাপ্পার একক অ্যালবামে সঞ্জীব চৌধুরীর লেখা গান বাপ্পার কণ্ঠে গীত হয়৷ তারপর দুজন আরো বেশ কয়েকটি প্রজেক্টে একসঙ্গে কাজ করে, শেষে শিল্পকলা একাডেমিতে শিল্পী অশোক কর্মকারের প্রদর্শনীতে ২৮ মিনিটের একটি মিউজিক তৈরির সময় হঠাৎ ব্যান্ডজাতীয় একটা কিছু তৈরি করবার পরিকল্পনা আঁটেন৷ সে পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করেই ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্যান্ডদল ‘দলছুট’৷

ব্যান্ড তৈরি হবার ২ বছর পর ১৯৯৭ সালে দলছুটের প্রথম অ্যালবাম ‘আহ’ প্রকাশিত হয়৷ ‘আহ’ অ্যালবামটি শ্রোতাদের জন্য এক ভিন্নতার স্মারক হয়ে এলেও, প্রকাশের প্রায় আটমাস পর বিটিভির ‘শুভেচ্ছা’ অনুষ্ঠানে এই অ্যালবামের রঙ্গিলা গানটির মিউজিক ভিডিও প্রচারিত হলে, অ্যালবামটি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল৷

‘আহ’ অ্যালবামের ‘নিষিদ্ধ’ নামের আরেকটি গান বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল৷ সঞ্জীব চৌধুরীর কথায় বাপ্পা ও সঞ্জীব মিলে গেয়েছিলেন—

কণ্ঠ নিষিদ্ধ সুর নাই
যন্ত্র নিষিদ্ধ বাদ্য নাই
আমাদের গানের আদেশ নাই
ও গান গাওয়ার নিয়ম নাই...
আকাশ নিষিদ্ধ পক্ষী নাই
বৃক্ষ নিষিদ্ধ পুষ্প নাই
আমাদের মনে উড়াল নাই
উড়াল প্রজাপ্রতি নাই

এরপর ২০০০ সালে দলছুটের সবচেয়ে বিখ্যাত অ্যালবাম ‘হৃদয়পুর’ প্রকাশিত হয়৷ এই অ্যালবাম প্রকাশের পরপরই শ্রোতাদের অন্তরে ব্যান্ড ‘দলছুট’ এক স্থায়ী প্রেম রূপে নিজেদের আসন পাকা করে নেয়। এই অ্যালবামের ‘গাড়ি চলে না’, ‘বাজি’, ‘চাঁদের জন্য গান’, ‘তোমাকেই বলে দেব’ গানগুলো দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল ৷

সঞ্জীব চৌধুরীর ছিলেন চির বোহেমিয়ান৷ জীবনের পরতে পরতে অন্বেষণ আর স্বাধীনতার চিন্তায় সঞ্জীব কখনো জীবনকে জটিল করেননি৷ বরং ছেড়ে দিয়েছেন৷ সহজ জীবন শুধু বিপ্লবী থেকেই ক্ষান্ত হয়নি৷ বোকা, অভিমানী প্রেমিকও সেজেছেন সময়ের প্রয়োজনে৷ সঞ্জীব গেয়েছেন—

আমি তোমাকেই বলে দেব
কি যে একা দীর্ঘ রাত
আমি হেঁটে গেছি বিরান পথে
আমি তোমাকেই বলে দেব
সেই ভুলে ভরা গল্প
কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়
ছুঁয়ে কান্নার রং, ছুঁয়ে জোছনার ছায়া’
এই চির অভিমানী প্রেমিক সঞ্জীবই আবার গেয়েছেন—
‘কে আমাকে হাত ধরে
নিয়ে এলো তোমার উঠানে
আমি যে বসেই আছি
খোল দরজা, বলি খোল দরজা
আমি রাগ করে চলে যাব
ফিরেও আসব না
আমি কষ্ট চেপে চলে যাব
খুঁজেও পাবে না
মেয়ে আমাকে ফেরাও

দলছুটের ৩য় অ্যালবাম ‘আকাশচুরি’ প্রকাশিত হয় ২০০২ সালে ৷ এই অ্যালবাম থেকে ‘হৃদয়ের দাবি’, ‘ফিরে পেতে চাই’, ‘কার ছবি নেই’, ‘এই নষ্ট শহরে’, ‘বায়োস্কোপ’—গানগুলো আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে৷

কামরুজ্জামান কামুর লেখা ‘হৃদয়ের দাবি’ গানটি সঞ্জীব ছাড়া অন্য কারো গলায় সম্ভবত কোনোদিনই মানাত না৷ একজন সঞ্জীব চৌধুরীর হৃদয়ের অতলান্ত নিংড়ে বেরিয়ে আসা সুরে আত্মকথাকে গেঁথে কাউকে বলে দেবার যে তাড়না এই গানে উঠে এসেছে তাতে শ্রোতারা এক অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছেন বারবার৷

মায়ায় জড়িয়েই টের পেয়েছেন সঞ্জীব যেন তাদের কথাই একের পর এক নতুন গানে উঠিয়ে নিয়ে আসছেন৷ প্রশ্ন আর উত্তরের অতীতে আমাদের একান্ত যে ডুবে যাওয়া সেখানে ডুবে যেতে যেতে আবার সঞ্জীবই গাইছেন—

তীর হারা এই দুঃসময়ে
স্বপ্ন ডাক দেয়
হাতছানিতে যাই হারিয়ে
আঁধার অচেনায়
আমার গানের সাথে
তোমার গান মেলাও

চতুর্থ অ্যালবাম ‘জোছনাবিহার’-এর পর সঞ্জীব এবং বাপ্পা দুজনই আলাদাভাবে নিজস্ব ক্যারিয়ারের দিকে ঝুঁকে পড়েন৷ তবে সঞ্জীবের একক অ্যালবাম ‘স্বপ্নবাজি’র গানগুলো শুনলেই সত্যিকারের সঞ্জীব চৌধুরীর দেখা মেলে৷ ওই অ্যালবামে আমরা দেখেছি কামরুজ্জামান কামু, জুলফিকার রাসেল, টোকন ঠাকুর, আনিসুল হক, প্রজ্ঞা নাসরিন, জাফর রাশেদ, গিয়াস আহমেদ—যারা ছিলেন তখনকার সব তরুণ কবি তাঁদের লেখা থেকে গান করেছেন৷ তরুণদের মাঝেই নিজেকে এমনভাবে খুঁজেছেন যে লোকটি সে লোকটি চঞ্চল প্রেমের প্রজাপতি হয়ে বিপরীত রিকশায় চলে যাওয়া সুন্দরী তরুণীর প্রতি গেয়েছেন ‘রিকশা যাচ্ছে হাওয়ায় উড়ে, আমার হৃদয় তুচ্ছ করে... রিকশা কেন আস্তে চলে না?’ আবার অনন্ত রাত্রির বিষাদে তাঁরই কণ্ঠ ভারি হয়েছে৷ উচাটন মন নিয়ে, চির বিরহী সঞ্জীব গেয়েছেন—

কথা বলব না
আগের মতো কিছু নেই
পিছু ডাকব না
পিছু ডাকার কিছু নেই
সর্বনাশী ঝড়ের বুকে
উড়ে যাবার কিছু নেই
আগুনে পুড়েছি এ হাত বাড়িয়ে
পুড়ে যাবার কিছু বাকি নেই

শুধু তারুণ্যের গানই গাননি এই চির স্বাপ্নিক শিল্পী৷ গেয়েছেন সাতাশ বছর বয়সী সাহসী যুবকের গানও৷ যার বুকে স্বপ্ন ভাঙার শঙ্কা নেই, তার চোখে জীবন মঞ্চের জটিল দৃশ্যায়নের ইতিবৃত্ত সময়কে মুঠোবন্দী করবার প্রেরণা দেয়৷ সঞ্জীব গেয়েছেন—

আমার বুক দেখাব তোকে
বুকে রয়েছে বিদ্যুৎ
কিছু করলি মনে ধুৎ
আমি খেয়েছি স্বপ্নকে
জানিস বজ্র সখা আমার
আমার সাধ এখানে থামার
তোর আঁচল পেলে বাতাস
আর দরকার কী নামার
আমার বয়স হলো সাতাশ
আমার সঙ্গে মিতা পাতাস,
তোর দু’হাত চেপে ধরি
চাই এটুকু মাত্তরি

অসীম সাহসী এই শিল্পী শুধু স্বপ্নের কথাই তাঁর গানে বলেননি৷ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নানা অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি যে সদা একজন সদা জাগ্রত কণ্ঠস্বর ছিলেন সে প্রমাণও তাঁর গানে আমরা পেয়েছি৷ শুভাশিস সিনহার কথায়, নিজস্ব সুরে তিনি গেয়েছেন—

ওই কান্নাভেজা আকাশ আমার ভাল লাগে না
থমকে থাকা বাতাস আমার ভাল লাগে না
তুড়ির তালে নাচতে থাকা ভাল লাগে না
এই মরে মরে বেঁচে থাকা ভাল লাগে না

পুলিশের হাতে ধর্ষিত হয়ে খুন হওয়া ইয়াসমিনকে নিয়ে তিনি ছাড়া আর কেউ গাননি—

ওরে রক্তচোষা ডাকলো পেঁচা অলক্ষুণে রাত
আসে অন্ধকারে চুপিসারে ভীষণ কালো হাত
লোল ছেড়ে তার লোলুপ জিহ্বা ছিঁড়ল হৃদয় বিণ
আহ ইয়াসমিন আহ ইয়াসমিন আহ ইয়াসমিন

তাঁর ছিল এক কবির হৃদয়, যে হৃদয় সুরেই খুঁজে পেত জীবনের সত্য সুখ৷ কখনো দৃশ্যে, কখনো অদৃশ্যে জীবনকে উদযাপনে মগ্ন এই শিল্পীর চির বোহেমিয়ান চিন্তা জগৎ সর্বদাই জনমানুষের কাছাকাছি এসেই শিল্পের মানে খুঁজে পেয়েছে৷

সঞ্জীব চৌধুরীকে সব্যসাচী বলা যায় এক অর্থে৷ যেমন করে গান গেয়েছেন, সাংবাদিকতাও করেছেন তার সাথে পাল্লা দিয়ে৷ গান তো লিখেছেনই, গদ্য পদ্যের মতো নাটকের স্ক্রিপ্টও লিখেছেন এই মেধাবী মানুষটি৷ ‘সুখেরও লাগিয়া’ নামে একটি নাটকে অভিনয় করার অভিজ্ঞতাও ছিল তাঁর৷

সঞ্জীব গুণীর কদর করতে জানতেন৷ ‘হৃদয়পুর’ অ্যালবামে ‘গাড়ি চলে না’ গানটি গাওয়ার আগে শাহ আবদুল করিমের অনুমতি নিয়েছেন তিনি৷ তাঁর গানে যে রুচিশীলতার, গভীর বোধের দিকটি ধরা পড়ে তার কারণ অ্যাল স্টুয়ার্ট, পিংক ফ্লয়েড, বব ডিলান তাঁর গান শোনার জীবনকে আলোকিত করেছে৷ তিনি বাংলাদেশ, মরক্কো, স্পেনের লোকসংগীত দ্বারাও প্রচুর আকৃষ্ট ছিলেন৷

রোমান্টিক এই মানুষটি খন্দকার আলেমা নাসরিন শিল্পীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন৷ সঞ্জীব-শিল্পীর একমাত্র কন্যা কিংবদন্তীর জন্ম ২০০৪ সালের ১৮ মে৷

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর হঠাৎ বাইলেটারেল সেরিব্রাল স্কিমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হন সঞ্জীব চৌধুরী৷ ওই দিন প্রচণ্ড অসুস্থ বোধ করার পর তাঁকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ আইসিইউতে থাকাকালীন সেখানেই ১৯ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে এই মহান শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন৷ চিরকাল শিল্পে মানুষের কথা এই মহান শিল্পী মৃত্যুর পরেও নিজেকে মানুষের সেবাতেই নিয়োজিত রাখতে চেয়েছিলেন৷ ঢাকা মেডিকেল কলেজকে দান করে দেয়া তাঁর কঙ্কালটি এখন চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়ুয়া ছাত্রদের পড়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে৷

বেঁচে থাকার প্রতিটা সময় শুধু কাজ করে যাওয়া এই আপোসহীন, গুণী শিল্পীকে মানুষ তাঁর কাজেই হয়তো মনে রাখবেন৷ তাঁর স্বপ্নবাজি করে কাটিয়ে যাওয়া একেকটা মুহূর্ত এখনকার তরুণদের কী প্রবল অনুপ্রাণিত করে অন্তরের কথা বলবার তাগাদা দেয় তা রাত বাড়লে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল থেকে, আড্ডার কিনারা থেকে ভেসে আসা গিটারের সুর, আবেগমথিত গলার গান শুনেই অনুভব করা যায়৷

ছিলেন জমিদার পরিবারের সন্তান৷ তবু চিরকাল লালন করেছেন সাম্যবাদের সুদিনের স্বপ্ন৷ তথাকথিত প্রশাসন হয়তো বারবার তাঁর দিকে চোখ রাঙিয়েছে, তবু তিনি দমে যাননি৷ শক্তিশালী ডানা নিয়ে পারলেই উড়ে গিয়েছেন স্বাধীনতা নামক ঝকঝকে নীল আকাশে৷

সঞ্জীব নেই—এ কথা আজ কে বলবে? চোখ পুড়ে যায়, যাক৷ চোখ সমুদ্র সাজে, সাজুক ৷ সঞ্জীব আছেন, সঞ্জীব থাকবেন সারাজীবন৷

   

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;