সদ্য হত্যার শিকার ইরানের সফল সেনাপতি কাসিম সোলাইমানির স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন ইসমাঈল গানি। তাকে ইরানের ক্ষমতাবান কুদস বাহিনীর প্রধান করা হয়েছে, যে পদে তিনি হবেন কাসিম সোলাইমানির উত্তরাধিকারী।
১২৫,০০০ সদস্যের সুদক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ বিপ্লবী কুদস বাহিনীর নেতৃত্বে গানি ইরানের ভেতর ও বাইরের সামরিক স্বার্থ নিশ্চিত করবেন। কুদসের প্রধান হওয়ার আগে তার নাম বিশেষ কেউই জানতেন না এবং তিনি পর্দার অন্তরালে জেনারেল কাসিম সোলাইমানির নির্দেশে কাজ করতেন।
বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ ইসমাঈল গানি জেনারেল সোলাইমানির মতোই আশির দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধে অংশ নেন এবং পরে কুদস বাহিনীতে নিযুক্ত হন, যে বাহিনীর আরেক নাম 'জেরুজালেম বাহিনী'। এ বাহিনী ইরানের বৈপ্লবিক আদর্শে উজ্জীবিত, সামরিক ও বেসামরিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সরাসরি তত্ত্বাবধানে এ বাহিনী ইরানে মূল সামরিক কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে। সামরিক বাহিনীর সব শাখা ও ব্যালাস্টিক মিসাইলের বিষয়ে চূড়ান্ত নীতিকৌশল আসে এ বাহিনীর কাছ থেকেই। এ বাহিনী হলো বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কালো তালিকায় রেখেছে।
৬২ বছর বয়স্ক ইসমাঈল গানিকে বলা হয় 'যুদ্ধের সন্তান', কারণ তিনি বড় হয়েছেন যুদ্ধের ভেতর দিয়ে। তার পেশাগত জীবনের পুরোটাই কেটেছে নানা রণাঙ্গনে প্রত্যক্ষ যুদ্ধের মাধ্যমে। তিনি যুদ্ধ করতে ভালোবাসেন। তার সম্পর্কে এসব আভাস দেওয়া হয়েছে।
৮ আগস্ট ১৯৫৭ সালে ইরানের উত্তরপূর্বস্থ মাসাদ শহরে জন্ম নেওয়া ইসমাঈল গানিকে কুদস বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করার সময় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তাকে 'ইরানের সম্ভাবনাময় সেনাপতি' বলে আখ্যা দেন। ইরানি নেতা কুদস বাহিনীর বিঘোষিত নীতি ও কৌশল অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের জন্যও তাকে নির্দেশ দেন।
কুদস বাহিনীতে ইসমাঈল গানি কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ও ভূকৌশলগত দিকে অধিক মনোযোগী ছিলেন। এখন তাকে গুরুত্বপূর্ণ এ বাহিনীর সব দিকেই সামাল দিতে হবে। বিশেষ করে জেনারেল সোলাইমানি এ বাহিনীকে মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় পরিণত করেন। ইরানের বাইরে ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়ামেনেও প্রভাব বিস্তার করে সোলাইমানির নেতৃত্বে কুদস বাহিনী।
ইসমাঈল গানি কুদসের দায়িত্ব নিলেন ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মধ্যে। তাকে এ বাহিনীর প্রভাব মধ্যপ্রাচ্য অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। প্রবল মার্কিন বিরোধিতা ও আক্রমণাত্মক পরিস্থিতিতে টিকে থেকে নিজস্ব স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সোলাইমানিকে হত্যার জন্য যে প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার ইরান ঘোষণা করেছে, তা বাস্তবায়নের দায়িত্বও বহুলাংশে তার ওপর বর্তেছে।
তীব্র সংঘাত ও যুদ্ধাবস্থার মধ্যে দায়িত্ব নিয়ে ইসমাঈল গানি পূর্বসূরি জেনারেল কাসিম সোলাইমানির পর্বতসদৃশ ইমেজের উত্তরাধিকার বহনে কতটুকু সফল হন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আরো পড়ুন: