পিএসসির যে পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে চাকরিচ্যুত হন আবেদ আলী

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-07-09 16:29:20

মুখভর্তি দাঁড়ি, মাথায় টুপি। এলাকায় ধর্মভীরু মানুষ হিসেবে পরিচিত সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীকে নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।

রোববার (৭ জুলাই) ‘বিসিএস প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শিরোনামে দেশের অন্যতম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যা নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

পিএসসি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সালে নন-ক্যাডারের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পিএসসির চাকরি থেকে সৈয়দ আবেদ আলীকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

সূত্র জানায়, ধুরন্ধর সৈয়দ আবেদ আলী ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নন-ক্যাডারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার’ পদের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন।

সৈয়দ আবেদ আলীকে সে সময় এক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে হলের বাহির থেকে অবৈধভাবে সরবরাহকৃত সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তরসহ হাতেনাতে ধরা হয়। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ আইনের ধারায় মামলা করা হয়। ওই মামলার তদন্তে সৈয়দ আবেদ আলীর সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য–প্রমাণ মেলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। পিএসপির প্রতিবেদনে বলা হয়, সৈয়দ আবেদ আলী বিরুদ্ধে বহু বেআইনি কর্মের দুর্নাম আছে, তিনি অভ্যাসগত অপকর্মে জড়িত।

এদিকে, বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় পিএসপির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছে- পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম।

এ ছাড়াও রয়েছেন সাবেক সেনাসদস্য নোমান সিদ্দিকী, ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের রাজনীতি করা এবং বর্তমানে মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন ও বেকার যুবক লিটন সরকার।

বিসিএসের প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আলোচনায় আসেন সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। একইসঙ্গে আলোচনায় এসেছে তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সৈয়দ আবেদ আলী এবং তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমানকে বেশ সরব দেখা যায়। এছাড়াও সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। ফেসবুকে তাদের জীবনযাপন এবং বিভিন্ন কর্মসূচির ছবি দেখে ধারণা করা কঠিন যে তিনি পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের ড্রাইভার ছিলেন। একজন সামান্য গাড়িচালক হয়েও কীভাবে এত সম্পদ এবং অর্থ-বিত্তের মালিক বনেছেন তা যেন এখন সবার কাছে পরিষ্কার।

জানা গেছে, সাবেক পিএসসি চেয়ারম্যানের এই গাড়িচালকের নিজের একটি ডুপ্লেক্স বাড়িসহ কুয়াটায় একটি থ্রিস্টার মানের হোটেল রয়েছে। এ হোটেল সম্পর্কে তার ফেসবুক প্রোফাইলে এক পোস্টে তিনি লিখেন ‘আমাদের নতুন হোটেল এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা। সমুদ্রকন্যার পাড়ে আজীবন নিজের জন্য একটা থাকার ব্যবস্থা।’

ছাত্রলীগের ডাসার উপজেলা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ছিলেন তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। এছাড়াও বর্তমানে ঢাকা উত্তর শাখা ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সেক্রেটারি তিনি। ফেসবুকে তাকে নানান সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত দেখা যায়। সেই সাথে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন বলে দেখা যায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর