বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে হলে প্রয়োজন ব্যক্তি সচেতনতা, সামাজিক ও পারস্পরিক দূরত্ব গড়ে তোলা। এখনও করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি, আর রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় সংক্রমণ রোধে একমাত্র উপায় হলো দূরত্ব বজার রাখা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হয়ত করোনা যে মহামারি আকার ধারণ করেছে তা একেবারে বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু এর সংক্রমণের হার কমানো সম্ভব। আমরা যদি সামাজিক দূরত্ব বজার রাখি তাহলে এই সংক্রমণ আশানুরূপভাবে কমে আসবে।
আর এখন চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের কথা না বললেই নয়। কারণ কোনো প্রতিষেধক ছাড়া শুধুমাত্র সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আজ করোনা জয় করতে সক্ষম হয়েছে চীন। অথচ মাস দুয়েক আগেও সবাই ভেবেছিল চীন হয়ত এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে না।
এমনকি বর্তমানে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও জার্মানিও একই পথ অবলম্বন করছে। যেহেতু এসব দেশে ব্যাপক হারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে এজন্য এই দূরত্ব বজায় রাখার পর ১০-১৫ দিন সময়ের প্রয়োজন। আর এই দূরত্ব বজায় রাখতেই আক্রান্ত দেশগুলো লক ডাউন ঘোষণা করছে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, এসব দেশে সংক্রমণের হার আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে।
এখন প্রশ্ন হলো সামাজিক দূরত্ব কী?
এক কথায় বলতে গেলে যেকোনো ধরনের জনসমাগম স্থল এড়িয়ে চলা, একে অপরের থেকে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকেই সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। কারণ রোগটি সম্পর্কে তারা বেশি কিছু জানেন না। যেমন- কীভাবে করোনাভাইরাস ছড়ায়, কেন দূরত্ব রেখে চলতে হবে এগুলো জানেন না অনেকেই। প্রথমত করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে রোগ। হাঁচি- কাশি, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ অথবা ব্যবহার্য জিনিসের মাধ্যমে এই ভাইরাস অন্য দেহে সংক্রমণ ঘটায়। যেহেতু ভাইরাসটি ভারি হওয়ায় বাতাসে বেশিক্ষণ ভাসতে বা বেশি দূরে যেতে পারে না। এমনকি মানুষের দেহের বাইরেও বেশিক্ষণ বেঁচে থাকে না এ ভাইরাস এজন্য আমাদের সবাইকে কমপক্ষে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এর মাধ্যমে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচা সম্ভব।
বাড়িতে কীভাবে পরস্পর থেকে দূরত্ব বজায় রাখব—
এখন গোটা বিশ্বে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সবাইকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে প্রায় সবারই ছোট বাচ্চা ও বয়স্ক বাবা-মা আছেন। এজন্য আমাদের প্রত্যেককে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিভিন্ন দেশের মানুষ লকডাউনের সময় অন-লাইন মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য কেনাকাটা করছেন। এক্ষেত্রেও বিশেষজ্ঞরা সচেতন হতে বলছেন। এমন সময় যিনি গৃহকর্ত্রী তাকে বেশি সচেতন হতে বলছেন। উদাহরণস্বরূপ- বাইরে থেকে আসা সকল পণ্য ধরে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। শুকনো খাদ্যদ্রব্য হলে প্যাকেটটি জীবাণুনাশ (ডিটারজেন্ট/ব্লিচিং মিশ্রিত পানি) দিয়ে মুছে নিতে হবে।
গবেষকরা বলছেন, পরিবারের সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে। কারণ আক্রান্ত অনেকেই আছেন যাদের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। যেমন হাঁচি-কাশি কিংবা জ্বর থাকে না শরীরে। সেক্ষেত্রে বয়স্ক ও বাচ্চারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এজন্য খেতে বসেও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলার কথা বলা হচ্ছে।
কর্মক্ষেত্রে কীভাবে দূরত্ব রেখে চলবেন—
এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশে জরুরি প্রশাসনিক ও দাফতরিক কাজ চলমান। এক্ষেত্রে সরকারি দফতরে মেনে চলা হচ্ছে কিছু নিয়ম। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এ অবস্থায় হোয়াইট হাউজের প্রশাসনিক কাজ অব্যাহত আছে। এজন্য সম্ভব হলে বাড়ি থেকে কাজ করা, বাইরের খাদ্য এড়িয়ে চলা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, ১০ জনের বেশি সমাবেত নিষিদ্ধ করছেন। পরস্পর থেকে কমপক্ষে ৬ ফুট দূরত্ব রাখা, হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, মুখে মাস্ক পরা, হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু ও রুমাল ব্যবহার করা, নির্দিষ্ট সময় বাদে হাত ধোঁয়া, হ্যান্ডশেক ও কোলাকুলি থেকে বিরত থাকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যক্তি সচেতনতার বিকল্প নেই—
এই মহামারি প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ব্যক্তি সচেতনতা। অর্থাৎ নিজেকে নিজের সুরক্ষা দেওয়া। এই ছোঁয়াচে রোগে ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিবর্গ আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছেন। এতে বিষয়টি পরিষ্কার যে, এই রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে ও আক্রান্তের পর নিজেকে সচেতন থাকতে হবে। প্রথমত হাত ধোঁয়া, জনসমাগম স্থলে যাওয়া থেকে বিরত ও শারীরিক পরিচ্ছন্নতা আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে। আর দ্বিতীয় ধাপ হলো- আক্রান্ত হওয়ার পর আপনার করণীয় কী হতে পারে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনি যদি আক্রান্ত হন সেক্ষেত্রেও এই সচেতনতার বিকল্প নেই। জ্বর, কাশি কিংবা করোনার সামান্য লক্ষণ পাওয়া মাত্রই নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে নিতে হবে। যাতে পরিবারের কাছের মানুষটি আক্রান্ত না হতে পারে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না গিয়ে ফোনে স্বাস্থ্য সেবা নেওয়া। লক্ষণ বেশি খারাপ হলে হাসপাতালে যোগাযোগ করা। তবে এসব কাজই ঘরে বসে করতে হবে। না হলে আপনার থেকে আরও অনেকে আক্রান্ত হতে পারে। একইসঙ্গে সবার আগে এটি জানা যে, করোনায় আক্রান্ত মানেই মৃত্যু নয়। খাবার-ঘুম এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে এ রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এজন্য আতঙ্ক নয় প্রয়োজন সচেতনতার।
সারাবিশ্বে করোনায় আঠারো লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৮৮ হাজার মানুষ মারা গেছেন এবং সুস্থ হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ।
আরও পড়ুন- করোনাভাইরাস: ‘প্লিজ, উহানের ভুল থেকে শিক্ষা নিন’
করোনা লড়াইয়ে চলচ্চিত্রকার যখন ওষুধ সরবরাহকারী
ক্লোরোকুইন ওষুধে কি করোনা নিরাময় সম্ভব?
গরমে কমবে করোনার সংক্রমণ, দাবি মার্কিন গবেষকদের
করোনার চিকিৎসায় চার ওষুধ নিয়ে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বন্যপ্রাণীর অবাধ বাণিজ্য, ভয়াবহ মহামারির দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব
নীল আকাশ বলে দিচ্ছে, ভারত কতটা দূষণমুক্ত
পৃথিবীর যেসব অঞ্চল এখনো করোনামুক্ত
ক্ষমতার অন্দরমহলে করোনার আধিপত্য!