‘সাকিব-তামিম ক্লাসিকো’য় শেষ হাসি তামিমের, ফাইনালে বরিশাল

ক্রিকেট, খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-02-28 22:14:19

ম্যাচটা রীতিমতো ডার্বিতেই রূপ নিয়েছিল। দুই দলের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবাল একে অন্যের বন্ধু থেকে নেমেসিসে পরিণত হয়েছেন বহু দিন হয়। এবারের বিপিএলে তা পেয়েছে নতুন মাত্রাও। সেসব একপাশে রাখলেও রংপুর আর বরিশালের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লড়াইটাও ছিল একেবারে ‘ক্লাসিকোসুলভই’। ফলে দুই দলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচটা খেলার আগেই উত্তাপ ছড়াচ্ছিল বেশ। সেই দ্বৈরথে শেষমেশ শেষ হাসিটা হাসলেন তামিম ইকবালই। তার দল ফরচুন বরিশাল ৬ উইকেটে রংপুরকে হারিয়ে চলে গেছে ফাইনালে।

কখনো শিরোপা জেতেনি, এমন দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফাইনালে খেলার রেকর্ডটা বরিশালের। ভিন্ন ভিন্ন নামে তিন বার খেলেছে ফাইনালে। চতুর্থ ফাইনাল হাতছানি দিয়ে ডাকছিল ফরচুন বরিশালকে। এমন হাতছানির সামনে দাঁড়িয়ে দলটার সামনে ছিল রংপুর রাইডার্স, যারা এবার বিপিএলের গ্রুপ পর্ব শেষ করেছে শীর্ষে থেকে। এমন পরিস্থিতিতে শেষমেশ পা হড়কায়নি তামিম ইকবালের দল। 

এদিন টস ভাগ্যটাও সঙ্গ দিয়েছিল তামিমের দলকে। অধিনায়ক তামিম টস জিতে রংপুরকে পাঠান ব্যাটিংয়ে। ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে রংপুর। মেইকশিফট ওপেনার শেখ মাহেদি হোক, কিংবা তিনে নামা সাকিব আল হাসান, যাকে নিয়ে ম্যাচের আগে অত আলোচনা, তাদের কেউই দুই অঙ্কে পৌঁছুতে পারলেন না; দুজনকেই ফেরালেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এরপর যখন রনি তালুকদারকে ফেরালেন কাইল মায়ার্স, পাওয়ারপ্লেতেই তিন উইকেট খুইয়ে বসে রংপুর। 

সেই যে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ল রংপুর, আর ফিরতেই পারল না। পাওয়ারপ্লেতে তিন, পরের চার ওভারে আরও দুই উইকেট খুইয়ে বসে। তার মধ্যে একটা উইকেট আবার জিমি নিশামের, যিনি ২২ বলে ২৮ রান করে ছিলেন রংপুরের আশার বাতিঘর হয়ে। তার বিদায়ের পর মোহাম্মদ নবী আর অধিনায়ক নুরুল হাসান একটু চেষ্টা করেছিলেন দলকে বিপদমুক্ত করার। তবে জেমস ফুলারের করা ১৫তম ওভারে দুজনই বিদায় নেন।

তখন তিন অঙ্ক ছোঁয়াও অনেকটাই কঠিন ছিল রংপুরের। ৭৭-৭ থেকে দলের রানটা ১৪৯ তে গিয়ে ঠেকেছে শামীম পাটোয়ারীর ব্যাটে চড়ে। ৫টি করে চার আর ছক্কায় তিনি করেন ২৪ বলে ৫৯। তাতে ভর করেই শেষ ৩১ বলে ৭২ রান তোলে রংপুর, পায় লড়াইয়ের পুঁজি।

লক্ষ্যটা বড় ছিল না। ১৫০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে তামিম ইকবালের সঙ্গে মেহেদি হাসান মিরাজকে ওপেনিং জুটিতে পাঠায় বরিশাল। সে সিদ্ধান্ত অবশ্য কাজে দেয়নি তাদের। ওপেনিং জুটিটা স্থায়ী হয়নি খুব বেশিক্ষণ, মিরাজও ফিরেছেন দ্রুতই। 

ফজলহক ফারুকীর সঙ্গে তামিমের ম্যাচ আপ নিয়ে বহু কথা হচ্ছিল। শেষ চার সাক্ষাতে চার বারই তার বলে তামিমের আউট হওয়াটা মোটেও স্বাভাবিক কিছু নয়। আজ অবশ্য তামিম নিজের উইকেটটা তার কাছে খোয়াননি। তবে সে সুযোগটাই তিনি দিয়েছেন কম। ফারুকির করা প্রথম ওভারে স্ট্রাইকে ছিলেন মিরাজ। এরপর তৃতীয় ওভারে ফারুকীর তিন বল খেলেছেন তামিম। সে থেকে তুলেছেন ১ রান। তবে তিনি ফিরেছেন আবু হায়দার রনির বলে, ক্যাচ দিয়েছেন মিড অফে থাকা নবীর কাছে। সে ওভারে মিরাজও সাজঘরমুখো হয়েছেন এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে।

পরের গল্পটা কেবলই মুশফিকুর রহিমের। ৩৮ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলেছেন, দলের প্রয়োজনে ব্যাট চালিয়েছেন, কখনো বা পরিস্থিতি বুঝে সমঝে খেলেছেন। ওপাশে থাকা সৌম্য সরকার, কাইল মায়ার্স, ডেভিড মিলারদের সঙ্গ দিয়েছেন। ঝড়টা রংপুরের ওপর বইয়েছেন মায়ার্স। তার ১৫ বলে ২৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ক্যামিওই সৌম্য সরকারের বিদায়ের পর দলকে বিপদে পড়তে দেয়নি। সঙ্গে তো মুশফিক ছিলেনই! মায়ার্স জয়ের একটু আগে বিদায় নিয়েছেন। তবে মুশফিক হার মানেননি। দলকে নিয়ে গেছেন জয়ের বন্দরে, এরপরই ক্ষান্ত হয়েছেন।

তাতেই শিরোপাজয় থেকে আর মোটে এক ধাপের দূরত্বে এসে দাঁড়িয়েছে কখনো শিরোপা না জেতা দলটি। শুক্রবার কুমিল্লার বিপক্ষে ফাইনালের এবার তাদের মিশনটা আক্ষেপ ঘোচানোর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর