ইএসপিএন-ক্রিকইনফোর বিশ্বকাপ একাদশে ৬ ভারতীয় ক্রিকেটার

  ক্রিকেট কার্নিভাল
  • স্পোর্টস ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের পর্দা নামল ভারতের হাতে শিরোপা ওঠার মাধ্যমেই। অধরা বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে নিজেদের ক্যারিয়ারকে যেন পূর্ণতা দিয়েছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি সহ আরও অনেকেই। বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করে নিজেদের সেরা একাদশ ঘোষণা করল ক্রিকেট সংবাদ এবং পরিসংখ্যান ভিত্তিক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো।

এই একাদশ মূলত ক্রিকইনফোর স্মার্ট পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যা ম্যাচের প্রেক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে ব্যাটিং এবং বোলিং পারফরম্যান্সের জন্য ইম্প্যাক্ট পয়েন্টও দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং , তিন ক্ষেত্র বিবেচনায়ই মিশ্র দল সাজিয়েছে ক্রিকইনফো। যেখানে সর্বোচ্চ ছয়জন ক্রিকেটার বাছাই করা হয়েছে চ্যাম্পিয়ন ভারত দল থেকে। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিশ্বসেরা এই একাদশ।

রোহিত শর্মা (রান-২৫৭, স্ট্রাইক রেট-১৫৬.৭০, ইম্প্যাক্ট রেটিং-৪৫.৮১)

কঠিন পরিস্থিতিতেও রোহিত তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রতি অটল। এই বিশেষ গুণটিই তাকে এবং ভারত দলকে শেষ পর্যন্ত সফলতা এনে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তার ৯২ রান ছিল টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর এবং যেকোনো ইনিংসে ব্যাটিং রেটিং পয়েন্টের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেরফান রাদারফোর্ডের অপরাজিত ৬৮ রান আছে প্রথম স্থানে।

রহমানুল্লাহ গুরবাজ (রান-২৮১, স্ট্রাইক রেট-১২৪.৩৩, ইম্প্যাক্ট রেটিং-৫১.০১)

গুরবাজ এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তার সঙ্গী ইব্রাহিম জাদরানের সঙ্গে তিনি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উদ্বোধনী পার্টনারশিপ গড়েছেন। এই জুটি একসাথে মোট ৪৪৬ রান করেছে, যার মধ্যে তিনটি শতকও আছে। যেখানে অন্য কোনো জুটি ৩১২ রানের বেশি করতে পারেনি। আফগানিস্তানের দুটি বড় জয়ের ম্যাচে গুরুবাজ নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮০ এবং ৬০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন।

নিকোলাস পুরান (রান-২২৮, স্ট্রাইক রেট-১৪৬.১৫, ইম্প্যাক্ট রেটিং-৩৩.৮৯)

পুরান ব্যাট হাতে এবারের বিশ্বকাপে সাত ইনিংসের মধ্যে পাঁচটিতে ২০ এর অধিক রান করেছিলেন এবং নিঃসন্দেহে তার সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স ছিল ৫৩ বলে ৯৮, যা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২১৮ রান তুলতে সাহায্য করেছিল। যদিও তার একটি ব্যর্থতা ছিল দলের হয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নকআউট ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১ রানে আউট হয়েছিলেন।

সূর্যকুমার যাদব (রান-১৯৯, স্ট্রাইক রেট-১৩৫.৩৭, ইম্প্যাক্ট রেটিং-২৯.২৮)

টুর্নামেন্টের শুরুটা ধীরগতির হলেও সূর্যকুমার তার শেষ ছয় ইনিংসের চারটিতেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার ২৮ বলে ৫৩ রান ভারতকে ৪ উইকেটে ৯০ রান থেকে ১৮১ রানে নিয়ে যায়। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি রোহিতের সাথে জুটি বেঁধে ভারতের ইনিংসকে আবার প্রাণ ফিরিয়ে দেন। ফাইনাল ম্যাচে শেষ মুহুর্তে দুর্দান্ত এক ক্যাচে মিলারকে আউট করে তো দলের জয় নিশ্চিত করেছেন। তিনিই একমাত্র নন-ওপেনার যিনি টুর্নামেন্টে চারটি ৩০ রানের বেশি ইনিংস খেলছেন।

হেনরিখ ক্লাসেন (রান-১৯০, স্ট্রাইক রেট-১২৬.৬৬, ইম্প্যাক্ট রেটিং-৩১.৪৭)

ক্লাসেনের স্ট্রাইক রেট তার মান অনুযায়ী বেশ কমই দেখাচ্ছে। কিন্তু এর প্রধান কারণ হল দক্ষিণ আফ্রিকা কঠিন ব্যাটিং কন্ডিশনে একাধিক ম্যাচ খেলেছে। তারপরও দলের হয়ে ক্লাসেনের পারফরম্যান্স বাকিদের তুলনায় ভালো ছিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে তার ৪৪ বলে ৪৬ রান তাদের দলীয় ১১৩ রান করতে সাহায্য করে এবং তাকে ৭৯.৯ ব্যাটিং ইমপ্যাক্ট পয়েন্ট এনে দেয়। এছাড়া ফাইনালে ভারতীয় স্পিনারদের ওপর তার মারকুটে ব্যাটিং তো দক্ষিণ আফ্রিকাকে শিরোপা জয়ের জন্য খুব কাছে নিয়ে যায়।

মার্কাস স্টয়নিস (রান-১৬৯, স্ট্রাইক রেট-১৬৪.০৭, উইকেট-১০, ইকোনমি-৮.৮৮, ইম্প্যাক্ট রেটিং-৬২.১৭)

ওমানের বিপক্ষে কঠিন ব্যাটিং কন্ডিশনেও তিনি ৩৬ বলে ৬৭ রানে অপরাজিত ছিলেন, তারপর ১৯টি বল করে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। স্কটল্যান্ডের ১৮০ রান তাড়া করার সময় তার ২৮ বলে ৫৯ রান বড় ভূমিকা পালন করেছে।

হার্দিক পান্ডিয়া (রান-১৪৪, স্ট্রাইক রেট-১৫১.৫৭, উইকেট-১১, ইকোনমি-৭.৬৪, ইম্প্যাক্ট রেটিং-৫৫.৫৮)

কঠিন আইপিএল আসর শেষ করার পর হার্দিকের জন্য এবারের বিশ্বকাপ দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প ছিল। ব্যাট ও বল হাতে তিনি ঠান্ডা মাঠায় কিছু ম্যাচে দারুণ পারফর্ম করেছেন। বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার ৫০*, ২৭* এবং ২৩ রানের ইনিংসগুলো ভূমিকা রেখেছে। ডেথ-ওভারে তার পাওয়ার-হিটিং দুর্দান্ত ছিল। ফাইনালে তার বোলিং দিয়ে তিনি ক্লাসেন এবং মিলারকে আউট করেন।

অক্ষর প্যাটেল (রান-৯২, স্ট্রাইক রেট-১৩৯.৩৯, উইকেট-৯, ইকোনমি-৭.৮৬, ইম্প্যাক্ট রেটিং-৪৮.২৬)

ভারতের স্কোয়াডে অক্ষর প্যাটেলের থাকাটা অনেকের কাছেই বিস্ময়কর ছিল। কিন্তু তিনি ঠান্ডা মাথায় নিজের পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। ফাইনালে তার ৩১ বলে ৪৭ রান ভারতের দ্রুত তিনটি উইকেট হারানোর পর খুব জরুরি ছিল। বল হাতেও ২৩ রান খরচ করে ৩ উইকেট শিকার করেছেন।

আর্শদীপ সিং (উইকেট-১৭, ইকোনমি-৭.১৬, ইম্প্যাক্ট রেটিং-৪৪.৪৮)

নতুন বলে সুইং করাতে এবং পাওয়ারপ্লেতে ছয় উইকেট নিয়ে তিনি নিজের জাত চিনিয়েছেন। ফজলহক ফারুকির সঙ্গে যৌথভাবে তিনি এবারের আসরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। জসপ্রিত বুমরাহ স্পষ্টতই দলের সেরা তারকা পেসার হলেও বাঁহাতি এই তরুণ আর্শদীপ যে দলের হয়ে আগামী দিনে দারুণ কিছু করে দেখাবেন তা নিশ্চিত।

জসপ্রীত বুমরাহ (উইকেট-১৫, ইকোনমি-৪.১৭, ইম্প্যাক্ট রেটিং-৪৯.৮)

যখনই ভারত সমস্যায় পড়েছে, তখনই অধিনায়ক রোহিতের হাতে সেরা বোলার হিসেবে ছিলেন বুমরাহ। তিনি নতুন বলে অপ্রতিরোধ্য ডেলিভারি করেছেন, মাঝের ওভারে পার্টনারশিপ ভেঙেছেন এবং ডেথ ওভারে নির্ভুল ইয়র্কার ও স্লোয়ার কাটার বোলিং করেছেন। পাওয়ারপ্লেতে মাত্র ৪.০৭, মাঝের ওভারে ৪.৭৫ এবং শেষ দিকের ওভারে ৩.৭৮ গড়ে রান দিয়েছেন তিনি যা এই ফরম্যাটে দুর্দান্ত। যেকোনো বিশ্বকাপে এর চেয়ে ভালো বোলিং পারফরম্যান্স কারও নেই।

তাবরিজ শামসি (উইকেট-১১, ইকোনমি-৭.৬০, ইম্প্যাক্ট রেটিং-৪৩.৭৩)

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে প্রথম তিনটি ম্যাচ না খেলতে পারার পর শামসি তার প্রথম ম্যাচে মাঠে নেমেই নেপালের বিপক্ষে এক রানের রোমাঞ্চকর জয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। বল হাতে ১৯ রান খরচ করে ৪ উইকেট তুলে  নেন তিনি। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তিনি ২৭ রানে ৩ উইকেট শিকার করে খেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। ফাইনালে বাঁহাতি স্পিনারদের লড়াইয়ে কুলদীপ যাদবকে তিনি ছাড়িয়ে এই একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন।