অস্বাস্থ্যকর এই ‘অভ্যাস’গুলো অসুস্থ করে তুলছে আপনাকে!
হুট করেই মুখে অতিরিক্ত ব্রণ দেখা দেওয়া অথবা পিঠে এলার্জির প্রভাব দেখা দেওয়ার কারণ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমরা। কিন্তু বুঝতেই পারি না, আমাদের প্রতিদিনের কিছু ‘অভ্যাস’ এর কারণেই হুটহাট এই সকল অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে।
দারুণ অস্বাস্থ্যকর এই সকল অভ্যাসগুলো আমাদের সকলের খুব পরিচিত। এমনকি লেখাটি পড়লেই বুঝতে পারবেন, আজকে সারাদিনেই বেশ কয়েকটি কাজ মিলে গেছে আপনার সাথে। কী এমন অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস, যা আমাদের অসুস্থ করে তোলে?
প্রাত্যহিক জীবনে এই সকল কাজকে খুব সাধারণ ও নিরীহ মনে হলেও আদতে এর মাঝেই লুকায়িত থাকে আমাদের অসুস্থতার মূলমন্ত্র। কিছু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস হয়তো চমকেও দিতে পারে আপনাকে!
অনিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা
অযত্ন ও অনিয়মিত দাঁত ব্রাশ করার ফলেই দাঁতের ক্ষয়রোগ (ক্যাভিটিস), মাড়ি ফুলে যাওয়া, মাড়ি থেকে রক্তপাত হওয়া, মুখে দুর্গন্ধ তৈরি হওয়ার মতো সমস্যাগুলো দেখা দেয়। ক্যালিফোর্নিয়া ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নাতাশা লী জানান, দাঁতের ক্ষয়রোগ গুরুত্বর আকার ধারণ করলে নার্ভ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। যার ফলে রুট ক্যানেল করার প্রয়োজন দেখা দেয়।
অনিয়মিত গোসল করা
স্কিন কেয়ার স্পেশালিষ্ট জেনিন ফ্রান্সের মতে, গোসল শরীরের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য নয়, শারীরিক সুস্থতার জন্য বেশি প্রয়োজনীয়। পানি ও সাবানের সাহয্যে ময়লার সাথে জীবাণুও পরিস্কার হয়। ত্বক পরিষ্কার থাকে বলে এলার্জি, র্যাশ, ব্রণের প্রাদুর্ভাব কমে যায় অনেকটা।
তিনি জানান, ত্বকে মরা চামড়ার স্তর পড়ে গেলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামণ হয়ে থাকে। যা থেকে বিভিন্ন ধরণের চর্মরোগ ও প্রদাহ তৈরি হয়। যে কারণে এই স্কিন কেয়ার স্পেশালিষ্ট পরামর্শ দেন নিয়মিত ও সঠিকভাবে গোসল করার।
ব্যবহারের আগে পানির বোতল না ধোয়া
সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান খুবই জরুরি। তবে সুস্বাস্থ্যের জন্য পানি পান করতে গিয়ে যদি অসুস্থই হয়ে পড়তে হয়, তবে সেটা হয়ে যাবে হিতে-বিপরতি অবস্থা। তাইতো, প্রতিবার পানির বোতল পানিপূর্ণ করার আগে অবশ্যই ভালোভাবে বোতল পরিষ্কার করে নিতে হবে। কারণ, পূর্বের ব্যবহারের ফলে বোতলে সহজেই ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। নোংরা বোতলে পানি পানের ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও দেখা দিয়ে থাকে।
মেকআপ না তুলে ঘুমাতে যাওয়া
ব্যস্ত ও ক্লান্তিকর দিনের শেষে মেকআপ ভালোমতো তুলতে অলসতা কাজ করে। যে কারণে অনেকেই মুখে মেকআপ সমেত ঘুমিয়ে পড়েন। যা খুবই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস। এর ফলে মুখের ত্বকের রোমকূপ বন্ধ হয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে না। বন্ধ রোমকূপের কারনে ব্ল্যাক হেডস ও ব্রণের সমস্যা দেখা দেওয়া শুরু হয়। এমনকি ত্বক তার স্বাভাবিক রং ও ঔজ্জ্বল্যতাও হারায়।
একইসাথে চোখের মেকআপ তথা, আইলাইনার, কাজল, মাশকারা, আইশ্যাডো সারারাত চোখে থাকার ফলেও, চোখের ক্ষতি হবার সম্ভবনা থাকে।
বিছানার চাদর না বদলানো
কাপড় ধোয়া বেশ ঝামেলার ব্যাপার। আর সেটা যদি হয় বিশাল বড় বিছানার চাদর, তবে তো কথাই নেই। কিন্তু কাপড় ধোয়ার চাইতেও বড় ঝামেলার ব্যাপার হলো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়া। একই বিছানার চাদর বেশিদিন ব্যবহারের ফলে এতে বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস ও ধুলার আস্তরণ পড়ে। যে কারণে স্কিন কেয়ার স্পেশালিষ্ট জেনিন ফ্রান্স পরামর্শ দেন প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার বিছানার চাদর বদলানোর জন্য।
অন্তর্বাস নিয়মিত পরিষ্কার না করা
অবহেলা, অলসতা ও অসচেতনতার কারণে অনেকেই নিয়মিত নিজের অন্তর্বাস পরিষ্কার করেন না। যার নেতিবাচক প্রভাব ভয়ানক। এর ফলে ইস্ট ইনফেকশন, মূত্রনালীতে ইনফেকশনসহ দেখা দিতে পারে গুরুত্বর অসুস্থতা। তাইতো প্রতিদিনের পরিধেয় পোশাকের সাথে অন্তর্বাস পরিষ্কার করার অভ্যাসও গড়ে তোলা খুবই জরুরি।
নিজের ব্যবহৃত জিনিস অন্যকে দেওয়া
নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাঝে মাঝে স্বার্থপর হওয়া প্রয়োজন। নিজের ব্যবহৃত তোয়ালে, চিরুনি, হেয়ারব্রাশ রেজর ও ইয়ারফোন কোনভাবেই অন্য কারোর সাথে শেয়ার করা উচিৎ নয়। নিজের ব্যবহৃত জিনিস অন্য কেউ ব্যবহার করলে, তাদের শরীরে বসবাসরত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সহজেই ছড়িয়ে পড়ে ও সংক্রমিত হয়। ফলাফল স্বরূপ হেপাটাইটিসের মতো প্রাণঘাতী রোগের সম্ভবনাও দেখা দিতে পারে।
একই তোয়ালে বারবার ব্যবহার করা
একই তোয়ালে শুকিয়ে বারবার ব্যবহার করা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হিসেবে মনে করি আমরা। আদৌ কী সেটা ঠিক? স্কিন কেয়ার স্পেশালিষ্ট জেনিন ফ্রান্স জানান, কয়েকবার ব্যবহারের পর সেই তোয়ালে আর ব্যবহার করা উচিৎ নয়। সেই তোয়ালে গরম পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে এরপরেই ব্যবহার করা উচিৎ। নয়তো ব্যবহৃত তোয়ালেতে ত্বকের রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। তিনি আরো জানান, অপরিষ্কার তোয়ালে ব্যবহারে মেনিনজাইটিস, হেটাটাইটিস ও যৌনরোগ ক্ল্যামিডিয়া হবার সম্ভবনা তৈরি হতে পারে।