কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৮)

  • জিনি লকারবি ।। অনুবাদ: আলম খোরশেদ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

আমার শত্রুদের উপস্থিতিতে

[পূর্ব প্রকাশের পর] একঘণ্টা অতিক্রান্ত হলে রিড আবার হাঁটা শুরু করেন। জয়পাহাড় এলাকায় অবস্থিত গুর্‌গানসের বাসায় গিয়ে রিড দেখেন, তিনি এবং পার্শ্ববর্তী বাড়ির আরো ছাব্বিশ জন বিদেশি, ঘটনা এর পর কোনদিকে মোড় নেয় সেটা দেখার অপেক্ষায় বসে আছেন। তারা বাইরে লোফালুফি খেলছেন আর তাদের পত্নীরা ফ্রিজ ও রান্নাঘরের ওপর মুর্হুমুহু হামলা চালাচ্ছেন রসালো খাদ্যবস্তু রন্ধনের বাসনায়।

তাঁরা রিডকে জানান শহরের এই অঞ্চলে কী কী ঘটনা ঘটছিল। তিনি দেখতে পান উঠোনে বুলেট ও গোলার টুকরো ছড়িয়ে আছে। তাদের সাধারণ অনুভূতিটুকু এরকম ছিল যে, খেলা শেষ; পাঞ্জাবিরা দৃশ্যত জয়ী হয়েছে এবং দুচারদিনের মধ্যেই সবকিছু সেনা শাসনের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এটাকে একটা যৌক্তিক উপসংহার বলেই মনে হয়েছিল তাঁর কাছে। রিড ঠিক করেন আমরা থাকব এবং তিনি আবার দীর্ঘ প্রত্যাবর্তনের পথ ধরেন। পথে জব্বারের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়াতে তারা কিছু খাদ্যদ্রব্যও কিনে আনেন, যার মধ্যে ছিল একটি পাকা তরমুজ।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এর মধ্যে আমি ও লিন গোছগাছ করে মালুমঘাট, এবং প্রয়োজনে আরো দূরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকি। আমরা আমাদের সমস্ত মূল্যবান দ্রব্য একটি ড্রামের মধ্যে ভরে রাখি। আমরা কাগজপত্র ঘেঁটে যেগুলোকে মনে হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে, সেগুলো পুড়িয়ে ফেলি। তারপর আমরা চিন্তা করতে থাকি কোনগুলোকে আমাদের সঙ্গে নিতে হবে। এর আগে জরুরি নির্গমনের বেলায় সুটকেস গোছানোর সময় আমরা সাধারণত কাপড়, উপহারসামগ্রী, স্লাইড ইত্যাদি যেসব বাড়ি নিয়ে যেতে চাই সেগুলোকেই অগ্রাধিকার দিতাম। আমরা এই সুটকেসগুলো এর আগে ফিল্ড কাউন্সিল মিটিংয়ে নিয়ে গেছি আমাদের সঙ্গে, আবার ফেরতও এনেছি। এবার সুটকেস নেওয়ার মতো জায়গা থাকবে না গাড়িতে। মানুষ ও খাদ্যদ্রব্যের জন্য যথেষ্ট জায়গা রাখতে হবে। আমরা ঠিক করি আমি ও লিন দুজনে মিলে একটি কাঁধব্যাগমাত্র নেব। আমরা দুজনে দুটো করে কাপড় পরি, সঙ্গে একটা অন্তর্বাস, রবিবারের পোশাক, একটি গয়নার বাক্স, একটি প্রসাধনীর বাক্স আর চুল বাঁধার সেই ছেলেমানুষী ক্লিপগুলো নিই, যা প্রচুর জায়গা মারে ব্যাগের। (আমাদের ব্যাগের এই দ্রব্যসামগ্রীর তালিকা নাকি প্রচুর আলোচনার জন্ম দিয়েছিল বন্ধুদের মাঝে, যারা আমাদের প্রার্থনাপ্রত্রে সে-সম্পর্কে পড়েছিল। অনেকদিনের জন্য বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় দুটি মেয়ে মিলে একটি মাত্র কাঁধব্যাগ নিয়ে যাওয়ার এই গল্প!)

সেই ছোট্ট ব্যাগের অভ্যন্তরে ব্যক্তিগত জিনিসগুলোর চেয়েও অনেক জরুরি ছিল আমাদের কাছে একখানি চামড়ার ফাইল, যেখানে আমাদের বাইবেল অনুবাদ ও অন্যান্য সাহিত্যিক প্রকল্পের পাণ্ডুলিপিসমূহ লুকিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম অমরা।

বিজ্ঞাপন

বাঁধাছাদার সময় দুটো চিন্তার আবর্ত আমাদের পাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। দিদিমা যখন বুঝতে পারলেন আমরা কী করতে যাচ্ছি, তখন তিনি সরাসরি যেতে অস্বীকার করে বসলেন। তিনি এর আগেও কখনো পালাননি এবং এবারও কোথাও পালিয়ে যাবেন না। আমরা তাহলে কী করতে পারি? আমরা তাঁকে ছেড়েও যেতে পারিনি, তাঁকে নিয়েও যেতে পারিনি কোথাও। হঠাৎ করে অনেকটা ঈশ্বরপ্রদত্ত এক আপতিকতার মতো করে তাঁর ছেলে এসে আমাদের দরজার কড়া নাড়ে। কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি তাঁর আর একটিমাত্র শাড়ি এবং পোষা বিড়ালটিকে বগলদাবা করে নিয়ে, ‘আমি তোমাদের বলেছিলাম না’ গোছের একটি চাহনি দিয়ে, তাঁর ছেলের বাড়ির পথে রওনা দিলেন, যেখানে তিনি যুদ্ধের বাকি পুরোটা সময় বিপুল বিস্মরণ ও তুলনামূলক নিরাপত্তার মধ্যেই কাটিয়ে দিতে সক্ষম হন।

একই সঙ্গে, নিচতলার ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীরাও আসেন আমাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে। আমাদের যাওয়ার মতো একটি জায়গা আছে শুনে, ছয় বাচ্চার তরুণী মাতা, সবক’টাই আট বছরের নিচে, ডুকরে কেঁদে ওঠেন। “আমাদেরকেও আপনাদের সঙ্গে নিয়ে যান, দোহাই, আমাদেরকে নিয়ে যান।”

“গাড়ি ভরে গেছে, সেখানে কোনো জায়গাই নেই” বলতে আমাদের বুক ভেঙে যাচ্ছিল, কিন্তু সত্যি সত্যি গাড়িটি ততক্ষণে বিপজ্জনকভাবে অতিভর্তি হয়ে গিয়েছিল।

দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ রিড এসেই বোমা ফাটান এই বলে যে, আমাদের কোথাও যাওয়া উচিত হবে না। আমরা তাকে যাওয়ার পক্ষে আমাদের কারণগুলো জানাই:

• আমরা যদিও সরাসরি গোলার আঘাতে সম্ভাব্য মৃত্যুর ভয়ে ভীত ছিলাম না, তবুও যদি কোথাও যাওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে এভাবে বোকা হাঁসের মতো বসে থাকার কোনো মানে হয় না।

• মঙ্গলবার রাতে রিড আলতোভাবে উল্লেখ করেছিলেন যে, যেটা তাকে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে, সেটা হচ্ছে জয়লাভের পরে পাঞ্জাবিরা মেয়েদের সঙ্গে কী আচরণ করে। এটা আমাদেরকেও ভাবাচ্ছিল—কেবল নিজেদের জন্যই নয়, বসু পরিবারের বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলোর জন্য।
• গত পাঁচরাতে মোটেও ঘুমাতে না পেরে আমরা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।
• আমাদের পানি ফুরিয়ে গিয়েছিল আবার এবং অন্যান্য রসদও শেষ হবার পথে।

রিড আমাদের এইসব যুক্তির ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ দেখান না। এরপর আমাদেরই কেউ—এটা আমি নাকি লিন ছিলাম—আমি ঠিক মনে করতে পারছি না, বলে ওঠে, “আমাদের মনে হয় এবার ঈশ্বরই চান আমরা যেন চলে যাই।”

সেটাই যথেষ্ট ছিল। রিড আমাদের সঙ্গে তর্ক করতে পারেন, কিন্তু ঈশ্বরের সঙ্গে কখনোই নয়।

আমার ক্ষেত্রে, এই নিশ্চিত তাড়নাটুকু ছিল একটা অদ্ভুত ব্যাপার। আমার খ্রিস্টীয় অভিজ্ঞতাটুকু ছিল অনেকটা পায়ে পায়ে অনুসরণ করে যাওয়ার মতো। আমার জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে খুঁজে পাওয়ার মতো কোনো নাটকীয় ঘটনা ঘটেনি তখনও। এমনকি বৃহৎ বিষয়েও—যেমন স্কুল-পছন্দ, পেশা-নির্বাচনের ক্ষেত্রে—কোনো আলো, দৈববাণী কিংবা বিশেষ নির্দেশনা ব্যতিরেকেই সবকিছু ঠিকঠাক মিলে গিয়েছিল। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ আলাদা। এটা একেবারে নিশ্চিত নির্দেশনা ছিল, “এটাই পথ। এই পথে হাঁটো তুমি।”

একবার যখন সিদ্ধান্ত হয়ে গেল যে, আমরা যাচ্ছি, তখন আর রিড কোনো সময় নষ্ট করলেন না।

র‌্যাচেলকে আনার জন্য নির্মলকে পাঠিয়ে দিয়ে, রিড ও জব্বার গাড়ির দিকে এগিয়ে যান। অলৌকিকভাবে এবার এটা প্রথম চেষ্টাতেই চালু হয়। তারপর আসে দ্বন্দ্ব : তিনি কি গলির ভেতর দিয়ে, অজানা বিপদের মাঝ দিয়ে এঁকেবেকে এগুবেন, নাকি একবারে বড় রাস্তা ধরে কামান-বন্দুকের নিচ দিয়ে গাড়ি চালাবেন? রিড দ্বিতীয়টির পক্ষে সায় দেন।

আমি শেষবার বাড়িটা ঘুরে দেখি সবকিছু বন্ধ করা ও তালা লাগানো হয়েছে কিনা। আমি নিচু হয়ে দেখতে চেষ্টা করি রেফ্রিজারেটরের কেরোসিন শিখা জ্বলছে কিনা। গত পাঁচদিন ধরে এর কাঁটা শূন্যের ঘরে ছিল। আমার চোখের সামনেই শিখাটি শেষবার জ্বলে উঠে নিভে গেল।

আমাদের গলির কোনায় গাড়িটা দাঁড়ালে মি. দাশ ও তাঁর মেয়ে র‌্যাচেল গাড়ির দিকে এগিয়ে আসে। আমরা পাঁচজন গাড়ির ভেতরে উঠি আর বাকিরা পেছনের খোপে কাপড়চোপড় ও চাল, আটা, ময়দার ব্যাগের সঙ্গে। সবচেয়ে বড়ো সমস্যা ছিল পেছনের বামদিকের চাকার প্রায় চুপসে যাওয়া টায়ারখানি। আমরা একটা রিকশা পেয়ে যাই যে কিনা দুজন প্রাপ্তবয়স্ক, একটি বাচ্চা ও একটি কুকুরকে যাত্রী হিসাবে নিতে রাজি হয়; আর বাকিদেরকে নিয়ে রিড কোনোমতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আমাদের অফিসে পৌঁছে, চাকায় বাতাস ভরার পাম্পটা আনতে সক্ষম হন।


বার্তা২৪.কম-এর শিল্প-সাহিত্য বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]


চাকায় বাতাস ভরে, একটা বাড়তি ধাক্কায় গাড়িখানা চালু করে আমরা শহর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি। আমরাই একমাত্র শহর ছাড়ছিলাম না। বিভিন্ন মডেল ও মেয়াদের গাড়ি মানুষে ও মালপত্রে ঠাসাঠাসি হয়ে হর্ন দিতে দিতে আমাদের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল আর আমরাও তাদের অনুসরণ করে শহরত্যাগের কাফেলায় যোগ দিই।

শহরের উপকণ্ঠে আমরা সেই বেতারকেন্দ্রটা পেরিয়ে যাই যেটা এই সপ্তাহের শুরুতে ছিল বোমা ও গোলাগুলির প্রধান লক্ষ্যবস্তু। শহর থেকে বেরুনোর পরপরই শুরু হলো তল্লাশি চৌকি। প্রতিটাতেই আমাদের থামানো, জিজ্ঞাসাবাদ এবং মাঝেমধ্যে তল্লাশিও করা হচ্ছিল। কিছু চৌকি পাহারা দিচ্ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের দ্বারা প্রশিক্ষিত চৌকশ জোয়ানরা, আবার কয়েকটায় এমন বোকাহাবা লোকেরাও ছিল যারা মনে হচ্ছিল বন্দুকটাও কিভাবে ধরতে হয় জানে না। সবচেয়ে বিশদ তল্লাশি হয় কালুরঘাট ব্রিজের ওপারে। সেখানে তারা এক পর্যায়ে রিডকে একপাশে ডেকে নিয়ে অনুরোধ করে, তিনি যেন এ নিয়ে নিক্সনের সঙ্গে কথা বলেন। আমেরিকানদের ওপর তাদের কতখানি বিশ্বাস ছিল, (এই ক্ষেত্রে যদিও সেটা ছিল অপাত্রে দান করা বিশ্বাস) সেটা দেখে আমাদের বুক ভেঙে যাচ্ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো সরাসরি যোগাযোগ থাকতে পারে এমন সরল বিশ্বাসে তারা চিৎকার করে বলে, “আমেরিকা যদি জানত তারা এখানে কী করছে আমাদের ওপর, তাহলে নিশ্চয়ই সে এসে আমাদের সাহায্য করত।”

এক জায়গায় জনৈক ব্যক্তি আমাদের গাড়ির জানালায় তার মাথা ঠেকিয়ে জিজ্ঞাসা করে, “আপনারা আমাকে চিনতে পারছেন?”

আমি সেই লাল শার্ট-পরা গার্ডকে চিনতে না পারলেও, সে নিজেই পরিচয় দিয়ে বলে, সে পিআইএ অফিসের সেই কেরানি যে-আমাদেরকে বিমানের টিকিট বিক্রি করেছিল।

সব মিলিয়ে সেই পঁয়ষট্টি মাইলের যাত্রাপথে মোট সতেরোটি তল্লাশি চৌকি ছিল। প্রতিটা চৌকিতেই আমরা মুক্তিবাহিনীর জন্য চাঁদা দিয়েছিলাম।

মাঝরাস্তায় আমরা একবার গাড়ি থেকে বেরিয়ে শরীরের আড় ভাঙি, তরমুজ কিনে খাই এবং বোমার ধোঁয়া কিংবা গলিত লাশের গন্ধে অকলুষিত বাতাসে বুকভরে নিঃশ্বাস নিই।

এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে, আমরা একটা ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়ানো শহর ছেড়ে পালাচ্ছি। এখানে বসন্তের বিকালের বাতাস প্রশান্ত ও মধুর, বাংলাদেশের পতাকা এখনো প্রতিটি বাড়ির দোরগোড়ায় উড্ডীন আর গ্রামবাসীরা তখনও প্রত্যেককে ‘জয় বাংলা’ বলে সম্ভাষণ জানাচ্ছিল।

বিকাল সাড়ে পাঁচটায় আমরা মালুমঘাট হাসপাতালের ভেতর ঢুকি। হাসপাতাল ভবন ও আবাসিক এলাকার মাঝখানের রাস্তায় মিশনারি ল্যারি গলিন তখন পায়চারি করছিলেন।

আমাদেরকে দেখে একগাল হেসে তিনি ছোট্ট একটি বাক্যে তাঁর পুরো অনুভূতিটুকু জানিয়ে দিলেন, “ও, কী যে খুশি হয়েছি তোমাদের দেখে!”

হাসপাতাল ভবনের পেছন থেকে আবাসিক এলাকা হয়ে, মিশনারিদের বাড়িঘর ছাড়িয়ে সামনে এগুতে এগুতে আমাদের মনে হচ্ছিল আমরা বুঝি এক শান্তির মরূদ্যানে এসে উপস্থিত হয়েছি। যুদ্ধকে মনে হচ্ছিল অনেক দূরের বিষয়। প্রাঙ্গণের একেবারে শেষপ্রান্তে অবস্থিত নার্সদের কোয়ার্টারে পৌঁছানোর আগেই আমাদের আসার খবর ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ মিশনারি পরিবার ও আমাদের বাঙালি বন্ধুরা একটি আনন্দাশ্রুময় পুনর্মিলনের জন্য জমায়েত হয়।

সবাই একসঙ্গে কথা বলতে শুরু করে। আমাদের ফিল্ড কাউন্সিল সভাপতি জে ওয়াল্শ পরামর্শ দেন, “চলো আমরা একটা সভা করি, যাতে করে সবার গল্প সবাই একসঙ্গে শুনতে পারি।”

সেই সভা দিয়েই শুরু হলো আমাদের জীবনের সবচেয়ে মিটিংভারাক্রান্ত তিনটি সপ্তাহ। নতুন কিছু ঘটলে কিংবা কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ার হলেই সবাই মিলে আলাপ-আলোচনার গুরুত্বটুকু বোঝা যেত তখন। সেদিনের প্রথম সভায় আমরা চিটাগাংয়ের প্রতিবেদন পেশ করি।

তারপর সারা রাত ধরে নির্বিঘ্ন নিদ্রার আনন্দ। না ঠিক, পুরো নির্বিঘ্ন নয়। হাসপাতালটির নিকটেই ছিল জঙ্গলের মধ্যে একটি কাঠ চেরাইয়ের কল। পাহাড়ের চূড়ায় গাছগুলো কেটে নদীতে অপেক্ষমাণ সাম্পানের উদ্দেশে গড়িয়ে দেওয়া হতো। কাঠের গুঁড়িগুলো যখনই শব্দ করে গড়িয়ে পড়ত নিচে, তখনই ধড়ফড় করে জেগে উঠত লিন, আবারও বুঝি সেই গোলাগুলির দিনগুলোতে ফেরত গেছে সে, এই কথা ভেবে। [চলবে]


কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৭)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৬)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৫)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৪)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৩)