কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৮)



জিনি লকারবি ।। অনুবাদ: আলম খোরশেদ
বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

  • Font increase
  • Font Decrease

আমার শত্রুদের উপস্থিতিতে

[পূর্ব প্রকাশের পর] একঘণ্টা অতিক্রান্ত হলে রিড আবার হাঁটা শুরু করেন। জয়পাহাড় এলাকায় অবস্থিত গুর্‌গানসের বাসায় গিয়ে রিড দেখেন, তিনি এবং পার্শ্ববর্তী বাড়ির আরো ছাব্বিশ জন বিদেশি, ঘটনা এর পর কোনদিকে মোড় নেয় সেটা দেখার অপেক্ষায় বসে আছেন। তারা বাইরে লোফালুফি খেলছেন আর তাদের পত্নীরা ফ্রিজ ও রান্নাঘরের ওপর মুর্হুমুহু হামলা চালাচ্ছেন রসালো খাদ্যবস্তু রন্ধনের বাসনায়।

তাঁরা রিডকে জানান শহরের এই অঞ্চলে কী কী ঘটনা ঘটছিল। তিনি দেখতে পান উঠোনে বুলেট ও গোলার টুকরো ছড়িয়ে আছে। তাদের সাধারণ অনুভূতিটুকু এরকম ছিল যে, খেলা শেষ; পাঞ্জাবিরা দৃশ্যত জয়ী হয়েছে এবং দুচারদিনের মধ্যেই সবকিছু সেনা শাসনের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এটাকে একটা যৌক্তিক উপসংহার বলেই মনে হয়েছিল তাঁর কাছে। রিড ঠিক করেন আমরা থাকব এবং তিনি আবার দীর্ঘ প্রত্যাবর্তনের পথ ধরেন। পথে জব্বারের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়াতে তারা কিছু খাদ্যদ্রব্যও কিনে আনেন, যার মধ্যে ছিল একটি পাকা তরমুজ।

কিন্তু এর মধ্যে আমি ও লিন গোছগাছ করে মালুমঘাট, এবং প্রয়োজনে আরো দূরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকি। আমরা আমাদের সমস্ত মূল্যবান দ্রব্য একটি ড্রামের মধ্যে ভরে রাখি। আমরা কাগজপত্র ঘেঁটে যেগুলোকে মনে হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে, সেগুলো পুড়িয়ে ফেলি। তারপর আমরা চিন্তা করতে থাকি কোনগুলোকে আমাদের সঙ্গে নিতে হবে। এর আগে জরুরি নির্গমনের বেলায় সুটকেস গোছানোর সময় আমরা সাধারণত কাপড়, উপহারসামগ্রী, স্লাইড ইত্যাদি যেসব বাড়ি নিয়ে যেতে চাই সেগুলোকেই অগ্রাধিকার দিতাম। আমরা এই সুটকেসগুলো এর আগে ফিল্ড কাউন্সিল মিটিংয়ে নিয়ে গেছি আমাদের সঙ্গে, আবার ফেরতও এনেছি। এবার সুটকেস নেওয়ার মতো জায়গা থাকবে না গাড়িতে। মানুষ ও খাদ্যদ্রব্যের জন্য যথেষ্ট জায়গা রাখতে হবে। আমরা ঠিক করি আমি ও লিন দুজনে মিলে একটি কাঁধব্যাগমাত্র নেব। আমরা দুজনে দুটো করে কাপড় পরি, সঙ্গে একটা অন্তর্বাস, রবিবারের পোশাক, একটি গয়নার বাক্স, একটি প্রসাধনীর বাক্স আর চুল বাঁধার সেই ছেলেমানুষী ক্লিপগুলো নিই, যা প্রচুর জায়গা মারে ব্যাগের। (আমাদের ব্যাগের এই দ্রব্যসামগ্রীর তালিকা নাকি প্রচুর আলোচনার জন্ম দিয়েছিল বন্ধুদের মাঝে, যারা আমাদের প্রার্থনাপ্রত্রে সে-সম্পর্কে পড়েছিল। অনেকদিনের জন্য বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় দুটি মেয়ে মিলে একটি মাত্র কাঁধব্যাগ নিয়ে যাওয়ার এই গল্প!)

সেই ছোট্ট ব্যাগের অভ্যন্তরে ব্যক্তিগত জিনিসগুলোর চেয়েও অনেক জরুরি ছিল আমাদের কাছে একখানি চামড়ার ফাইল, যেখানে আমাদের বাইবেল অনুবাদ ও অন্যান্য সাহিত্যিক প্রকল্পের পাণ্ডুলিপিসমূহ লুকিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম অমরা।

বাঁধাছাদার সময় দুটো চিন্তার আবর্ত আমাদের পাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। দিদিমা যখন বুঝতে পারলেন আমরা কী করতে যাচ্ছি, তখন তিনি সরাসরি যেতে অস্বীকার করে বসলেন। তিনি এর আগেও কখনো পালাননি এবং এবারও কোথাও পালিয়ে যাবেন না। আমরা তাহলে কী করতে পারি? আমরা তাঁকে ছেড়েও যেতে পারিনি, তাঁকে নিয়েও যেতে পারিনি কোথাও। হঠাৎ করে অনেকটা ঈশ্বরপ্রদত্ত এক আপতিকতার মতো করে তাঁর ছেলে এসে আমাদের দরজার কড়া নাড়ে। কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি তাঁর আর একটিমাত্র শাড়ি এবং পোষা বিড়ালটিকে বগলদাবা করে নিয়ে, ‘আমি তোমাদের বলেছিলাম না’ গোছের একটি চাহনি দিয়ে, তাঁর ছেলের বাড়ির পথে রওনা দিলেন, যেখানে তিনি যুদ্ধের বাকি পুরোটা সময় বিপুল বিস্মরণ ও তুলনামূলক নিরাপত্তার মধ্যেই কাটিয়ে দিতে সক্ষম হন।

একই সঙ্গে, নিচতলার ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীরাও আসেন আমাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে। আমাদের যাওয়ার মতো একটি জায়গা আছে শুনে, ছয় বাচ্চার তরুণী মাতা, সবক’টাই আট বছরের নিচে, ডুকরে কেঁদে ওঠেন। “আমাদেরকেও আপনাদের সঙ্গে নিয়ে যান, দোহাই, আমাদেরকে নিয়ে যান।”

“গাড়ি ভরে গেছে, সেখানে কোনো জায়গাই নেই” বলতে আমাদের বুক ভেঙে যাচ্ছিল, কিন্তু সত্যি সত্যি গাড়িটি ততক্ষণে বিপজ্জনকভাবে অতিভর্তি হয়ে গিয়েছিল।

দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ রিড এসেই বোমা ফাটান এই বলে যে, আমাদের কোথাও যাওয়া উচিত হবে না। আমরা তাকে যাওয়ার পক্ষে আমাদের কারণগুলো জানাই:

• আমরা যদিও সরাসরি গোলার আঘাতে সম্ভাব্য মৃত্যুর ভয়ে ভীত ছিলাম না, তবুও যদি কোথাও যাওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে এভাবে বোকা হাঁসের মতো বসে থাকার কোনো মানে হয় না।

• মঙ্গলবার রাতে রিড আলতোভাবে উল্লেখ করেছিলেন যে, যেটা তাকে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে, সেটা হচ্ছে জয়লাভের পরে পাঞ্জাবিরা মেয়েদের সঙ্গে কী আচরণ করে। এটা আমাদেরকেও ভাবাচ্ছিল—কেবল নিজেদের জন্যই নয়, বসু পরিবারের বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলোর জন্য।
• গত পাঁচরাতে মোটেও ঘুমাতে না পেরে আমরা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।
• আমাদের পানি ফুরিয়ে গিয়েছিল আবার এবং অন্যান্য রসদও শেষ হবার পথে।

রিড আমাদের এইসব যুক্তির ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ দেখান না। এরপর আমাদেরই কেউ—এটা আমি নাকি লিন ছিলাম—আমি ঠিক মনে করতে পারছি না, বলে ওঠে, “আমাদের মনে হয় এবার ঈশ্বরই চান আমরা যেন চলে যাই।”

সেটাই যথেষ্ট ছিল। রিড আমাদের সঙ্গে তর্ক করতে পারেন, কিন্তু ঈশ্বরের সঙ্গে কখনোই নয়।

আমার ক্ষেত্রে, এই নিশ্চিত তাড়নাটুকু ছিল একটা অদ্ভুত ব্যাপার। আমার খ্রিস্টীয় অভিজ্ঞতাটুকু ছিল অনেকটা পায়ে পায়ে অনুসরণ করে যাওয়ার মতো। আমার জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে খুঁজে পাওয়ার মতো কোনো নাটকীয় ঘটনা ঘটেনি তখনও। এমনকি বৃহৎ বিষয়েও—যেমন স্কুল-পছন্দ, পেশা-নির্বাচনের ক্ষেত্রে—কোনো আলো, দৈববাণী কিংবা বিশেষ নির্দেশনা ব্যতিরেকেই সবকিছু ঠিকঠাক মিলে গিয়েছিল। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ আলাদা। এটা একেবারে নিশ্চিত নির্দেশনা ছিল, “এটাই পথ। এই পথে হাঁটো তুমি।”

একবার যখন সিদ্ধান্ত হয়ে গেল যে, আমরা যাচ্ছি, তখন আর রিড কোনো সময় নষ্ট করলেন না।

র‌্যাচেলকে আনার জন্য নির্মলকে পাঠিয়ে দিয়ে, রিড ও জব্বার গাড়ির দিকে এগিয়ে যান। অলৌকিকভাবে এবার এটা প্রথম চেষ্টাতেই চালু হয়। তারপর আসে দ্বন্দ্ব : তিনি কি গলির ভেতর দিয়ে, অজানা বিপদের মাঝ দিয়ে এঁকেবেকে এগুবেন, নাকি একবারে বড় রাস্তা ধরে কামান-বন্দুকের নিচ দিয়ে গাড়ি চালাবেন? রিড দ্বিতীয়টির পক্ষে সায় দেন।

আমি শেষবার বাড়িটা ঘুরে দেখি সবকিছু বন্ধ করা ও তালা লাগানো হয়েছে কিনা। আমি নিচু হয়ে দেখতে চেষ্টা করি রেফ্রিজারেটরের কেরোসিন শিখা জ্বলছে কিনা। গত পাঁচদিন ধরে এর কাঁটা শূন্যের ঘরে ছিল। আমার চোখের সামনেই শিখাটি শেষবার জ্বলে উঠে নিভে গেল।

আমাদের গলির কোনায় গাড়িটা দাঁড়ালে মি. দাশ ও তাঁর মেয়ে র‌্যাচেল গাড়ির দিকে এগিয়ে আসে। আমরা পাঁচজন গাড়ির ভেতরে উঠি আর বাকিরা পেছনের খোপে কাপড়চোপড় ও চাল, আটা, ময়দার ব্যাগের সঙ্গে। সবচেয়ে বড়ো সমস্যা ছিল পেছনের বামদিকের চাকার প্রায় চুপসে যাওয়া টায়ারখানি। আমরা একটা রিকশা পেয়ে যাই যে কিনা দুজন প্রাপ্তবয়স্ক, একটি বাচ্চা ও একটি কুকুরকে যাত্রী হিসাবে নিতে রাজি হয়; আর বাকিদেরকে নিয়ে রিড কোনোমতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আমাদের অফিসে পৌঁছে, চাকায় বাতাস ভরার পাম্পটা আনতে সক্ষম হন।


বার্তা২৪.কম-এর শিল্প-সাহিত্য বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]


চাকায় বাতাস ভরে, একটা বাড়তি ধাক্কায় গাড়িখানা চালু করে আমরা শহর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি। আমরাই একমাত্র শহর ছাড়ছিলাম না। বিভিন্ন মডেল ও মেয়াদের গাড়ি মানুষে ও মালপত্রে ঠাসাঠাসি হয়ে হর্ন দিতে দিতে আমাদের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল আর আমরাও তাদের অনুসরণ করে শহরত্যাগের কাফেলায় যোগ দিই।

শহরের উপকণ্ঠে আমরা সেই বেতারকেন্দ্রটা পেরিয়ে যাই যেটা এই সপ্তাহের শুরুতে ছিল বোমা ও গোলাগুলির প্রধান লক্ষ্যবস্তু। শহর থেকে বেরুনোর পরপরই শুরু হলো তল্লাশি চৌকি। প্রতিটাতেই আমাদের থামানো, জিজ্ঞাসাবাদ এবং মাঝেমধ্যে তল্লাশিও করা হচ্ছিল। কিছু চৌকি পাহারা দিচ্ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের দ্বারা প্রশিক্ষিত চৌকশ জোয়ানরা, আবার কয়েকটায় এমন বোকাহাবা লোকেরাও ছিল যারা মনে হচ্ছিল বন্দুকটাও কিভাবে ধরতে হয় জানে না। সবচেয়ে বিশদ তল্লাশি হয় কালুরঘাট ব্রিজের ওপারে। সেখানে তারা এক পর্যায়ে রিডকে একপাশে ডেকে নিয়ে অনুরোধ করে, তিনি যেন এ নিয়ে নিক্সনের সঙ্গে কথা বলেন। আমেরিকানদের ওপর তাদের কতখানি বিশ্বাস ছিল, (এই ক্ষেত্রে যদিও সেটা ছিল অপাত্রে দান করা বিশ্বাস) সেটা দেখে আমাদের বুক ভেঙে যাচ্ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো সরাসরি যোগাযোগ থাকতে পারে এমন সরল বিশ্বাসে তারা চিৎকার করে বলে, “আমেরিকা যদি জানত তারা এখানে কী করছে আমাদের ওপর, তাহলে নিশ্চয়ই সে এসে আমাদের সাহায্য করত।”

এক জায়গায় জনৈক ব্যক্তি আমাদের গাড়ির জানালায় তার মাথা ঠেকিয়ে জিজ্ঞাসা করে, “আপনারা আমাকে চিনতে পারছেন?”

আমি সেই লাল শার্ট-পরা গার্ডকে চিনতে না পারলেও, সে নিজেই পরিচয় দিয়ে বলে, সে পিআইএ অফিসের সেই কেরানি যে-আমাদেরকে বিমানের টিকিট বিক্রি করেছিল।

সব মিলিয়ে সেই পঁয়ষট্টি মাইলের যাত্রাপথে মোট সতেরোটি তল্লাশি চৌকি ছিল। প্রতিটা চৌকিতেই আমরা মুক্তিবাহিনীর জন্য চাঁদা দিয়েছিলাম।

মাঝরাস্তায় আমরা একবার গাড়ি থেকে বেরিয়ে শরীরের আড় ভাঙি, তরমুজ কিনে খাই এবং বোমার ধোঁয়া কিংবা গলিত লাশের গন্ধে অকলুষিত বাতাসে বুকভরে নিঃশ্বাস নিই।

এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে, আমরা একটা ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়ানো শহর ছেড়ে পালাচ্ছি। এখানে বসন্তের বিকালের বাতাস প্রশান্ত ও মধুর, বাংলাদেশের পতাকা এখনো প্রতিটি বাড়ির দোরগোড়ায় উড্ডীন আর গ্রামবাসীরা তখনও প্রত্যেককে ‘জয় বাংলা’ বলে সম্ভাষণ জানাচ্ছিল।

বিকাল সাড়ে পাঁচটায় আমরা মালুমঘাট হাসপাতালের ভেতর ঢুকি। হাসপাতাল ভবন ও আবাসিক এলাকার মাঝখানের রাস্তায় মিশনারি ল্যারি গলিন তখন পায়চারি করছিলেন।

আমাদেরকে দেখে একগাল হেসে তিনি ছোট্ট একটি বাক্যে তাঁর পুরো অনুভূতিটুকু জানিয়ে দিলেন, “ও, কী যে খুশি হয়েছি তোমাদের দেখে!”

হাসপাতাল ভবনের পেছন থেকে আবাসিক এলাকা হয়ে, মিশনারিদের বাড়িঘর ছাড়িয়ে সামনে এগুতে এগুতে আমাদের মনে হচ্ছিল আমরা বুঝি এক শান্তির মরূদ্যানে এসে উপস্থিত হয়েছি। যুদ্ধকে মনে হচ্ছিল অনেক দূরের বিষয়। প্রাঙ্গণের একেবারে শেষপ্রান্তে অবস্থিত নার্সদের কোয়ার্টারে পৌঁছানোর আগেই আমাদের আসার খবর ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ মিশনারি পরিবার ও আমাদের বাঙালি বন্ধুরা একটি আনন্দাশ্রুময় পুনর্মিলনের জন্য জমায়েত হয়।

সবাই একসঙ্গে কথা বলতে শুরু করে। আমাদের ফিল্ড কাউন্সিল সভাপতি জে ওয়াল্শ পরামর্শ দেন, “চলো আমরা একটা সভা করি, যাতে করে সবার গল্প সবাই একসঙ্গে শুনতে পারি।”

সেই সভা দিয়েই শুরু হলো আমাদের জীবনের সবচেয়ে মিটিংভারাক্রান্ত তিনটি সপ্তাহ। নতুন কিছু ঘটলে কিংবা কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ার হলেই সবাই মিলে আলাপ-আলোচনার গুরুত্বটুকু বোঝা যেত তখন। সেদিনের প্রথম সভায় আমরা চিটাগাংয়ের প্রতিবেদন পেশ করি।

তারপর সারা রাত ধরে নির্বিঘ্ন নিদ্রার আনন্দ। না ঠিক, পুরো নির্বিঘ্ন নয়। হাসপাতালটির নিকটেই ছিল জঙ্গলের মধ্যে একটি কাঠ চেরাইয়ের কল। পাহাড়ের চূড়ায় গাছগুলো কেটে নদীতে অপেক্ষমাণ সাম্পানের উদ্দেশে গড়িয়ে দেওয়া হতো। কাঠের গুঁড়িগুলো যখনই শব্দ করে গড়িয়ে পড়ত নিচে, তখনই ধড়ফড় করে জেগে উঠত লিন, আবারও বুঝি সেই গোলাগুলির দিনগুলোতে ফেরত গেছে সে, এই কথা ভেবে। [চলবে]


কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৭)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৬)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৫)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৪)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৩)

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;

বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্বে শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ও মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ও কিশোরগঞ্জ নিউজ'র নিয়মিত লেখক।

বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি,শিল্প, সংগীত, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার বহুল কার্যক্রম নিয়ে দেশের প্রাচীনতম ও অগ্রণী প্রতিষ্ঠা নবঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র এক সভা এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শনিবার (১১মার্চ ২০২৩) বিকেল ৪-৩০ টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় নাট্যশালার কনফারেন্স হলের ভিআইপি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বরেণ্য শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্হিতিতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা
কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ। এতে সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সঞ্চালনা করেন।

সভায় বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সদস্য বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর লেখক, কমামিস্ট ও গীতিকার শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ’র কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা গঠনের দায়িত্ব আরোপ করে তার হাতে বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র ইশতেহার তুলে দেন বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং অন্যান্য নেতৃবর্গ ।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গীয়'র জার্মানির সভাপতি কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক আমিনুর রহমান বেদু, রবীন্দ্র একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবিশ, ইউনেস্কোর ব্রান্ড এম্বাসেডর নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাত, বঙ্গীয়'র সভাপতি পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, বঙ্গীয়'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আলী নিয়ামত, কবি নাঈম আহমেদ, বঙ্গীয়'র কেন্দ্রীয় সদস্য কবি মীনা মাশরাফী, কবি পারভিন আক্তার সহ প্রমুখ।

সভার প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র সম্মিলন উদযাপন বিষয়ক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কবি আজিজুর রহমান আজিজকে আহবায়ক এবং সংগীতশিল্পী শামা রহমানকে সদস্য সচিব করে উদযাপন কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে বঙ্গীয়র সভাপতি পর্ষদের সকল সদস্য, রবীন্দ্র একাডেমির নির্বাহী শাখার সকল সদস্য, বঙ্গীয়র যুগ্ম সম্পাদকবৃন্দসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্টজনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।

দ্বিতীয় পর্বে অযুত তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু সম্মিলন, দ্বিশতজন্মবর্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মরণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে লেখক কবির আলোচনা সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ইউনাইটেড নেশন্সের ব্রান্ড এম্বাসেডর জনাব নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাতকে সভাপতি পর্ষদের সদস্য, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ূন কবির ঢালীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , সংস্কৃতি সেবক রোকনউদ্দীন পাঠানকে সাংগঠনিক সম্পাদক, কবি আনোয়ার কামালকে লিটল ম্যাগ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সাংবাদিক শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে নির্বাহী সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক, কবি মীনা মাশরাফীকে নীলফামারী জেলার সমন্বয়ক, জনাব এ এইচ এম সালেহ বেলালকে গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা লেখক কবি আবদুল হালিম খান, বীরমুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, কবি মানিক চন্দ্র দে, কবি অর্ণব আশিক, কবি বাবুল আনোয়ার, দৈনিক বঙ্গজননীর সম্পাদক কামরুজ্জামান জিয়া, কবি শাহানা জেসমিন, কবি গবেষক আবু সাঈদ তুলু, চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. বিশ্ব রায় (কলকাতা), বঙ্গীয় চট্রগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফ্যাশন ডিজাইনার আমিনা রহমান লিপি, শিল্পী শাহরিয়ার পিউ, কবি সোহরাব সুমন, কবি সরকার পল্লব, কবি রহিমা আক্তার মৌ, কবি লিলি হক, কবি আকমল হোসেন খোকন, শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, হিরা পারভেজ, ড. দিপু সিদ্দিকী, শিক্ষক ও কবি রওশন ই ফেরদৌস, কবি পারভীন আক্তার, কবি শিল্পী মাহমুদা, পূর্বধলার মো. জাকির হোসেন তালুকদার, কবি আনারকলি, কবি অপরাজিতা অর্পিতা, ডা. নূরুল ইসলাম আকন্দ, আবৃত্তিশিল্পী যথাক্রমে রূপশ্রী চক্রবর্তী, রবিউল আলম রবি সরকার, জেবুন্নেছা মুনিয়া, চন্দনা সেনাগুপ্তা, কবি সংগঠক রাজিয়া রহমান, কবি শামীমা আক্তার, শিল্পী সাদিয়া শারমিন, কবি কনক চৌধুরী, কবি তাসলিমা জামালসহ প্রমুখ।

;

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব



মাহমুদ হাফিজ
কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় শুরু হয়েছে রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসব। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতি সভাগৃহে বিকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, পরিব্রাজক ও ভ্রমণগদ্য সম্পাদক মাহমুদ হাফিজ, স.ম. শামসুল আলম, নাহার আহমেদ, ড. নাঈমা খানম প্রমুখকে সম্মানিত করা হয়।

বিকালে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক নলিনী বেরা। বিশিষ্ট নাট্যকার চন্দন সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ও কবি সব্যসাচী দেব। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাধারণ সম্পাদক কবি সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য। এতে সমাপণী বক্তৃতা করেন সংগঠনের সভাপতি কবি স্বপন ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য।

আজ ও আগামীকাল ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি হলে বিকাল থেকে কবিতা ও গল্পপাঠ, আলোচনা, শ্রুতিনাটক, সঙ্গীত অনুষ্ঠিত হবে। রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, নেপাল, আসাম, ত্রিপুরার কয়েশ’ কবি লেখক অংশগ্রহণ করছেন।

;

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাকালে বন্ধ থাকার পর আবারো 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কার্যক্রমে ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ রচিত 'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের একশত কপি শুভেচ্ছামূলক প্রদান করা হবে। 

উল্লেখ্য, আগেও ইংরেজি নববর্ষে এবং ভাষার মাসে শত বিশিষ্টজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থ উপহার দিয়েছিল ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ. এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প-সাহিত্য-সমাজ উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আনসার বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার নামে গঠিত 'শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশন'। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল স্থানীয় নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে জানানো হয়েছে যে, বরকতময়, নেয়ামতপূর্ণ মাহে রমজানের সঙ্গে অন্য কোনো মাসের তুলনা চলে না। রোজা হলো মাহে রমজানে অবশ্য পালনীয় ফরজ আমল, যার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা নিজে দেবেন। মানবজীবনে রোজা একজন বান্দার আত্মীক ও শারীরিক কল্যাণের ও উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। তদুপরি, রমজান মাসকে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা তাঁর অপার ক্ষমা, দয়া আর অপরিসীম করুণা দিয়ে বান্দাদেরকে উপহার দিয়েছেন। রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত রোজা সঠিকভাবে পালন করলে রোজাদার নবজাতক শিশু মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রোজা রাখবে তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানব জীবনে ও সামাজিক ব্যবস্থায় রমজান মাস ও রোজার গুরুত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে ফাউন্ডেশন প্রদত্ত গ্রন্থে। এ গ্রন্থ রমজান মাসের তাৎপর্য এবং রোজার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পাঠকদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে ৩০টি সংক্ষিপ্ত অধ্যায়ের মাধ্যমে।

'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের লেখক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ। তাঁর পিতা: ডা. এ.এ, মাজহারুল হক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মাতা: নূরজাহান বেগম, সমাজসেবী। ড. মাহফুজ পারভেজের জন্ম: ৮ মার্চ ১৯৬৬, কিশোরগঞ্জ শহরে। পড়াশোনা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচ,ডি)। পেশা: অধ্যাপনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি, গবেষণা ও সাহিত্য সাধনায় ব্রতী। প্রকাশিত গ্রন্থ কুড়িটি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- গবেষণা-প্রবন্ধ: বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি, দারাশিকোহ: মুঘল ইতিহাসের ট্র্যাজিক হিরো। দ্বিশত জন্মবর্ষে বিদ্যাসাগর। উপন্যাস: পার্টিশনস, নীল উড়াল। ভ্রমণ: রক্তাক্ত নৈসর্গিক নেপালে। গল্প: ইতিহাসবিদ, ন্যানো ভালোবাসা ও অন্যান্য গল্প। কবিতা: মানব বংশের অলংকার, আমার সামনে নেই মহুয়ার বন, গন্ধর্বের অভিশাপ। অধ্যাপনা ও গবেষণা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের শীর্ষতম মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর এবং কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা কিশোরগঞ্জ নিউজ'র উপদেষ্টা সম্পাদক রূপে সংযুক্ত রয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের  'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজিত হবে রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ কার্যক্রম সমন্বয় করবেন কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক, ইতিহাসবিদ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ। সমন্বয় কমিটিতে আরো রয়েছেন কিশোরগঞ্জ নিউজ'র প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ ইসকান্দার আলী স্বপন, সাংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু ও চিকিৎসক নেতা ডা. গোলাম হোসেন।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে আরো জানানো হয় যে, ইতিপূর্বে ঘোষিত ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর সম্মাননা বক্তৃতা ২০২০ এবং ২০২১ করোনাকালের বিরূপ পরিস্থিতিতে স্থগিত থাকায় তা যৌথভাবে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. এএ মাজহারুল হক এবং সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' কর্তৃক কিশোরগঞ্জের জীবিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জীবনব্যাপী বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন করতে ২০১৫ সাল থেকে এ সম্মাননা বক্তৃতা আয়োজন করা হচ্ছে, যা বক্তৃতা ও লিখিত আকারে প্রদান করেন মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' গতানুগতিক সম্মাননার বদলে ব্যক্তির কর্ম ও কীর্তির বিশ্লেষণমূলক-মূল্যায়নভিত্তিক সম্মাননা বক্তৃতার মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত স্বরূপ চিহ্নিত করে এবং এরই ভিত্তিতে জ্ঞাপন করা হয় যথাযথ সম্মান। সম্মাননা স্মারকের পাশাপাশি লিখিত আকারে বক্তৃতা-পুস্তিকায় চিত্রিত হন সম্মাননা প্রাপ্তগণ। মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এই বুদ্ধিবৃত্তিক-একাডেমিক আবহে ধারাবাহিকভাবে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে, যা কিশোরগঞ্জে তো বটেই, বাংলাদেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। শুরু থেকে সম্মাননা বক্তৃতা প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. মাহফুজ পারভেজ, যিনি কিশোরগঞ্জে পাবলিক লেকচার সিরিজের মাধ্যমে গণবুদ্ধিবৃত্তিক পরিসর তৈরির পথিকৃৎ।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্রথম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান শিক্ষাবিদ প্রাণেশ কুমার চৌধুরী, ২০১৬ সালে দ্বিতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান দীপ্তিমান শিক্ষকদম্পতি: অধ্যক্ষ মুহ. নূরুল ইসলাম ও বেগম খালেদা ইসলাম, ২০১৭ সালে তৃতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘প্রজ্ঞার দ্যুতি ও আভিজাত্যের প্রতীক: প্রফেসর রফিকুর রহমান চৌধুরী’ এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘ঋদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র: শাহ্ মাহতাব আলী’। ২০১৯ সালে পঞ্চম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা দেয়া হয় 'স্বাস্থ্যসেবা-শিক্ষায় পথিকৃৎ চিকিৎসক-দম্পতি' প্রফেসর ডা. আ ন ম নৌশাদ খান ও প্রফেসর ডা. সুফিয়া খাতুনকে। ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ প্রদান করা হয় নাসিরউদ্দিন ফারুকী, ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হককে। এ উপলক্ষে ‘কিশোরগঞ্জে আইন পেশার নান্দনিক বিন্যাস’ শীর্ষক সম্মাননা বক্তৃতা বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ প্রদান করা হয়েছে ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু.আ. লতিফ,  মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ ঊষা দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরীকে, যারা কিশোরগঞ্জের সামাজিক ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিন্যাসে স্বকীয় কৃতিত্বের প্রভায় উজ্জ্বল। জীবনব্যাপী কিশোরগঞ্জের মাটি ও মানুষের জন্য শৈল্পিক দ্যোতনায় নান্দনিক বর্ণালী সৃজন করেছেন এই তিন গুণান্বিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ জানান, ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২০ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২১ একসাথে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা মার্চ মাসের শেষ দিকে আয়োজিত হবে।

;