জাবি উপাচার্যের বাসভবন ‘পাহারায়’ কর্মচারীরা
জাবি উপাচার্য অপসারণ আন্দোলনজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে তাকে তার বাসভবনে অবরুদ্ধ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এদিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে কর্মচারীদের দিয়ে পাহারা বসিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপাচার্য অপসারণ মঞ্চ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বাসভবন ঘেরাও করেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় আন্দোলনকারীদের ঘিরে চার স্তর বিশিষ্ট বহর তৈরি করেন উপাচার্যপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। কিন্তু রাত বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের উপস্থিতি এবং বাড়তে থাকে বিভিন্ন হল ও অফিস থেকে আনা কর্মচারীদের উপস্থিতি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক জব্বার হলের এক কর্মচারী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারীরা এসেছেন, এজন্য স্যার আমাদের এখানে থাকতে বলেছেন। আমিসহ আরো কয়েকজন একসঙ্গে এসেছি। স্যার যখন বলবেন, তখন চলে যাব।
জাহানারা ইমাম হলের আরেক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, কর্মচারী ইউনিয়ন থেকে আমাদের এখানে থাকতে বলেছে। এখানে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে আর গান শুনছি, ভালোই লাগছে।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, একাধিক হল, অফিস ও বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উপাচার্যের বাসভবন পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। আর এর মাধ্যমে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তুলছেন।
এ ব্যাপারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর আন্দোলনের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, এর আগে কোনো আন্দোলনে আমরা আজকের মত কোনো অবস্থান দেখিনি। আমরা লক্ষ্য করেছি, দুর্নীতিবাজ উপাচার্য শুধু শিক্ষকদেরই নয়, নিজের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও ব্যবহার করছেন। আর এর মাধ্যমে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন। এর আগে যখন আমরা ঘোষণা দিয়েছি, যে কোনো সময় আমরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করতে পারি, তখন থেকেই উপাচার্য তার বাসভবনে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন বলে জানতে পেরেছি। এর একটাই কারণ, সেটা হলো আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি তাদের দাঁড় করানো।
এ বিষয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর ব্যানারের অন্যতম সংগঠক ও ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) সংসদের সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বৈরাতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাষ্ট্রীয় বেতনভুক্ত কর্মচারীদের নিজের রাজনৈতিক প্রয়োজনে এভাবে ব্যবহার করতে পারেন না। এ কাজ নৈতিকভাবে যে তিনি অবৈধ, সেটা প্রমাণ করে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অংশ, তাছাড়া তারা অফিস টাইমে এখানে আসেননি। উপাচার্য চাইলে তারা আসতে পারেন। এছাড়া আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও উন্নয়নের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর ব্যানারের তারাও একটি অংশ। ফলে তারা চাইলে আমাদের কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন।
এদিকে টানা ১০ম দিনের মতো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ ও অষ্টম দিনের মতো সর্বাত্মক ধর্মঘট শেষে উপাচার্যকে তার বাসভবনে অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারীরা।