যুক্তরাষ্ট্র আসলে কি চায়? বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পশ্চিমা দেশসমূহ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নজিরবিহীন তৎপরতা বেশ চোখে পড়ার মতো। ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির দূত পিটার হাস ছাড়াও বাইডেন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক প্রতিনিধি দলের সাম্প্রতিক সফর নিঃন্দেহে বিশেষ বার্তা বহন করছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের’ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাকুলতার প্রসঙ্গটি প্রকাশ্যে এলেও শেখ হাসিনা সরকারের ওপর অব্যাহতভাবে প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগের নেপথ্য অনেক কারণও বেশ জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। খোদ সরকার প্রধান শেখ হাসিনাও যুক্তরাষ্ট্রের অতি তৎপরতাকে কড়া ভাষায় সমালোচনার সঙ্গে দেশটির বিদেশনীতির পূর্বাপর প্রেক্ষিত তুলে ধরে সাম্প্রতিক ‘দৌড়ঝাঁপের’ কার্যকারণও জানিয়েছেন।
চলমান এই বাকযুদ্ধের মধ্যে আন্তর্জাতিক কিছু গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘দৌঁড়ঝাঁপ’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে সুনির্দিষ্ট ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণে ওয়াশিংটন ঢাকাকে দু’টি সামরিক চুক্তিতে সম্মত করাতে তৎপর হওয়ার তথ্য রয়েছে। ভারতের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক সুবীর ভৌমিক সম্প্রতি তাঁর এক নাতিদীর্ঘ নিবন্ধে উল্লেখিত চুক্তি ও অন্যান্য প্রসঙ্গে অনেক নতুন তথ্যের অবতারণা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কাঙ্খিত এই চুক্তি দু’টির আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানালেও সুবীর ভৌমিকের নিবন্ধে এর বিস্তারিত উঠে এসেছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট বা ‘জিসোমিয়া এবং ‘অ্যাকুইজিশনস অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট বা ‘এসিএসএ’নামে এই দুই চুক্তির বাইরে এই অঞ্চলে ‘নোফ্লাই জোন’ প্রতিষ্ঠার জন্যই যুক্তরাষ্ট্র ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশকে ‘গণতন্ত্র’ ও ‘মানবাধিকার’ ইস্যু সামনে রেখে চাপ প্রয়োগের অপকৌশল নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সামরিক কৌশলগত এই চুক্তিতে বাংলাদেশ সম্মত না হলে বর্তমান সরকার উৎখাতে বিরোধীদের সহিংস আন্দোলনে সমর্থনসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক অবরোধের চক্রান্তে তৎপর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক পরিমণ্ডলে নতুন করে বিতর্ক দাঁনা বেধেছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে কুটনৈতিক ‘দৌড়ঝাঁপ’ এর কার্যকারণ পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।
সাংবাদিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক সুবীর ভৌমিক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুর রশীদের কাছে এবিষয়ে জানবার চেষ্টা করেছে বার্তা২৪.কম। তাদের মূল্যায়নে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর ত্রিমাত্রিক দ্বন্ধে বাংলাদেশকে অন্যায়ভাবে টেনে আনা হয়েছে বলেই মনে করছেন তারা। তবে বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ কুটনীতি ও পরিণত আচরণ, অপরদিকে তিন পরাশক্তি রাশিয়া, চীন ও ভারতের বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী অবস্থান এই সংকটে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করেন তারা।
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ‘তৎপরতা’বা ‘অপতৎপরতা, চাপ প্রয়োগ, ভিসানীতি ঘোষণা ইত্যাদির কার্যকারণ আসলে কি, এমন প্রশ্নে সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক বলেন, ‘প্রথমেই তিনটি কথা বলার আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন এবং আগেও নিজেদেরকে গণতন্ত্রের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রবক্তা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে, তারাই গণতন্ত্রের ধারক-বাহক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ২৭টি দেশে মিলিটারি ডিক্টেটর-ফান্ডামেন্টালিস্টদের ক্ষমতায় বসিয়েছে গণতন্ত্রের কোন ধার না ধেরে। বিশেষ করে মুসলিমপ্রধান দেশগুলিতে তারা যখনই গণতন্ত্রের নামে একটা শক্তিশালী স্থানীয় সরকারের পতন ঘটাবার চেষ্টা করেছে বা করতে পেরেছে সেই সুযোগটা সবচেয়ে বেশি ফান্ডামেন্টালিস্টরা নিয়েছে।’
‘চাইনিজ স্টেটের ক্যারেক্টার হচ্ছে-ওদের ব্যবসা-বাণিজ্য..ওই হিসেবপত্র ঠিক থাকলে অন্য সব কিছু ওরা মেনে নেয়। আপনি সরকারে যখন থাকবেন ডিল করবে। আপনি যখন সরকারে নেই আপনার দিকে ফিরেও থাকাবে না। এটা হচ্ছে চাইনিজ মার্কেন্টাইল স্টেট যাকে আমরা বলি। যেখানে বণিকদের মানদণ্ড রাজদণ্ড রূপে দেখা দেয়-রবীন্দ্রনাথের ভাষায়। এই চাইনিজ স্টেট ও আমেরিকান কাউবয়-এই দু’টি জায়গায় তাদের সমস্যা আছে। এখন এখানে বাংলাদেশ কেন গুরুত্ব পাচ্ছে? চায়নার সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে, তাদের ছোট উপকূল। পূর্বএশিয়ার দিকে ফোকাসড। চায়না এতো বড় একটি মিলিটারি ও ইকনমিক পাওয়ার। তার ব্যবসা-বাণিজ্য সবটাই ওই সিঙ্গাপুরের মালাঙ্কা প্রণালী দিয়ে করতে হয়। ওই জায়গাটা ব্লক করে দিলে ওরা শেষ। এজন্য চাইনিজরা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের নামে বেশ কতোগুলি করিডোর ল্যান্ড যাকে ‘সি একসেস করিডোর ল্যান্ড’বলে ওরা...ল্যান্ড থেকে সি একসেস-এই যে কৌশল তাদের, মায়ানমার-চায়না ইকনমিক করিডোর, মায়ানমার-পাকিস্তান ইকনিমক করিডোর; এই দুটির অংশ’-যোগ করে মি. ভৌমিক।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘এই জায়গার মাধ্যমে তারা বঙ্গপোসাগর, সেখান থেকে আরব সাগর একসেস পাবে তারা এবং এটা পেলে ভারত মহাসাগরের দিকে যাবে। আমেরিকা ওয়ান্ট টু ব্লক ইট। চায়নার সঙ্গে তাদের বিশ্বব্যাপি প্রতিযোগিতার যে জায়গা তৈরি হয়েছে। এই কম্পিটিশনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সিট কে? ভারতবর্ষ। এখন আমেরিকার সাথে আমাদের স্ট্যাটিজিক ডিল আছে, চারটা ফাউন্ডেশনাল এগ্রিমেন্ট আছে। তারপরেও সরাসরি চীনের সঙ্গে খড়গহস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ভারত ততোটা এগোয়নি। বিভিন্ন সময়ে আমেরিকানরা চেয়েছে চায়নার সঙ্গে সংঘাত..তবে ভারত সেটা এড়িয়ে গেছে। ছোটখাটো ক্লেশ যা হয়েছে..তা বেশিদূর গড়ায়নি। এখন যদি চায়না-মায়ানমার ইকনমিক করিডোরটা ব্লক করতে হয় তার জন্য ওরা আরকান আর্মিকে রাখাইন স্টেটে প্রচন্ড রকম সাহায্য করছে। ড্রোন দিচ্ছে, অস্ত্র দিচ্ছে এবং ওরা চাইছে আরাকান আমি যদি তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগ্রামে সফল হয় তখন আলাদা রাষ্ট্র রাখাইন প্রদেশ উঠে আসে, বার্মা ভাঙতে শুরু করে, সেরকম একটা ব্যাপার নিয়ে মার্কিনিরা এগুচ্ছে। তার জন্য যেটা দরকার, ওদের ধারণা যে, এখন আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের ২ তৃতীয়াংশ তাদের কন্ট্রোলে..ডিফ্যাক্টো কন্ট্রোল। কার্যতঃ তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।’
‘সেখানে বার্মিজ আর্মি ও বার্মিজ স্টেট মূলতঃ টিকে আছে এয়ার পাওয়ারের জোরে। বার্মিজরা রিসেন্টলি রাশিয়া থেকে প্রচুর এয়ার গানশিপ কিনেছে। চায়না থেকে যুদ্ধ কিমান কিনেছে। এখন সুখুই যুদ্ধ বিমান যেটা ভারতের কাছে আছে সেটাও তারা কিনছে রাশিয়ার কাছ থেকে..এই এয়ার পাওয়ার ব্যবহার করে বিভিন্ন গেরিলা সংগঠন যারা নিজ নিজ এলাকায় মিয়ানমারে বেশ ক্ষমতাশালী হয়ে যাচ্ছে, তারা যাতে শেষ অবধি পুরো ক্ষমতা তার অঞ্চলে করতে না পারে মায়ানমার আর্মি এয়ার পাওয়ার ব্যবহার করে তা আটকে রেখেছে। এখন মার্কিনরা চাচ্ছে এয়ার পাওয়ার দিয়ে কোন মতে রাখাইনই বলুন আর কাচিনই বলুন, চিন বলুন, সাগাাইন বলুন, চারটি পশ্চিম ও পূর্ব-উত্তরের প্রদেশ যেখানে মার্কিনদের বিশেষ ইন্টারেস্ট আছে…এই জায়গাগুলিতে বার্মার সেনাবাহিনীকে গেরিলারা যতোই তৎপর হোক আর পেছনে ঠেলে দিক, শেষ পর্যন্ত পুরো রাজ্যটাকে স্বাধীন করার মতো অবস্থায় তারা যেতে পারেনি মূলত বার্মিজ এয়ার পাওয়ারের জন্য। এজন্য আমেরিকানরা চাইছে, বসনিয়াতে যেমন তারা চেয়েছিল সার্বিয়ান আর্মিকে হিট করার জন্য, এখানে তারা একটি নোফ্লাই জোন করতে চাইছে। মানে হচ্ছে এখানে যাদের মিউচ্যুয়াল এগ্রিমেন্ট হয়েছে এই এয়ার পাওয়ার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে.. একটা বা দুটা এয়ারক্রাফট কেরিয়ার বঙ্গপোসাগরে এনে সেখান থেকে যুদ্ধযানগুলো এনে বার্মার এয়ার ফোর্সকে ডেস্ট্রয় করে দিবে এক দুদিনের মধ্যে। তারপরে আরাকান আমি এই জায়গা দখল করার ক্ষেত্রে সক্রিয় হবে এবং এক বা দু’দিনের মধ্যে করে ফেলতে পারবে। এরকম একটা মনোভাব থেকে আমেরিকা এটাকে নো ফ্লাইজোন করতে চাইছে’ -বার্তা২৪.কম-কে বলেন সুবীর ভৌমিক।
এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে পরিচিত ভারতের ভূমিকাও স্পষ্ট করেন সুবীর ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘এর জন্য ভারতের সাহায্য তারা চেয়েছিল। ভারত অত্যন্ত সুকৌশলে এড়িয়ে গেছে, কেন? ভারত মিয়ানমারে একটা বিরাট রকমের গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাক, সেটা চায় না। ভারতের সব সময়ের স্ট্রাটেজি হচ্ছে, এই দক্ষিণ এশিয়াতে কোন দেশ বিগ পওয়ারের কন্ট্রোলে চলে যাবে এটা ভারত চায় না। কারণে তাতে ভারতের গুরুত্ব কমে যাবে। সোজা হিসাব। এখানে আমেরিকা-চায়নার বাড়াবাড়ি হলে ভারত উইল টেক ব্যাক সিট। আমেরিকা এখানে সচেষ্ট হবে। নো ফ্লাই জোন ইমপোজ করবে, চাইনিজরা কি চুপ করে বসে থাকবে। এতে করে একটা বড় রকম শক্তির সংঘাত এখানে বেঁধে যেতে পারে। যেটা ১৯৭৯ এ আফগানিস্তানে হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের আগমনে..ইন্দিরা গান্ধী সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসকদের উদ্দেশ্যে মহাকবি শেলীর বিখ্যাত চরণ উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘ইফ উইন্টার কামস ক্যান স্প্রিং বি ফার বিহাইন্ড। তিনি বলেছিলেন, ‘তোমরা এখানে ঢুকেছো, আমেরিকানরা এখানে আসবে।’
‘‘আরাকানে আমেরিকা ‘নো ফ্লাই জোন’করতে ভারতকে টানতে চেয়েছিল, কিন্তু ভারত বলেছে, না-আমরা মিয়ানমারের সমস্যা নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সমাধান হোক সেটা চাই। বিভিন্ন সশস্ত্র উপজাতীয় গোষ্ঠি-এদের সঙ্গে ডেমোক্রেটিক দলগুলোর সঙ্গে বার্মিজ মিলিটারি জান্তার কথা বলবে, কথা বলে সমাধান করবে এটা আমরা চাই। আমরা এখানে কোন বলয়ের সংঘাত চাই না। ‘ইউ ডোন্ট মায়ানমার টু এনাদার ইউক্রেন, সো সিম্পল হিসাব..’
যুক্তরাষ্ট্রের নজর কেন বাংলাদেশের দিকে?
এই প্রসঙ্গেও স্পষ্ট জবাব মি. ভৌমিকের, ‘এই জায়গাতে তখন ওরা দেখছে, নো ফ্লাই জোন ইমপোজ করতে গেলে একটা কোন কোস্টাল স্টেটের যাদের দু-একটা বন্দর আছে গ্লোবাল। এখানে বৃহৎ জাহাজ নোঙর করতে পারে। এরকম জায়গায়, একটা রাষ্ট্র যে ভারতের মতো এতো কায়দা-কানুন করবে না, এতো বার্গেনিং পাওয়ার যাদের নেই তাকে। সেটা কে? সেই রাষ্ট্রটা এখানে বাংলাদেশ। তারা বাংলাদেশকে, শেখ হাসিনাকে বোঝাচ্ছে, তোমাদের যে রিফিউজি প্রবলেম ছিল, বাঙালি রিফিউজি প্রবলেম ৭১-এ এটা ভারত কিভাবে টেকেল করলো? তোমরা যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চাচ্ছো, এবং মায়ানমার সেটা কৌশলে বার বার এড়িয়ে যাচ্ছে-এটি একমাত্র সম্ভব হবে যদি এখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রশক্তি পুরোপুরি পর্যুদস্ত হয়। পিছু হটতে বাধ্য হয়। একটি স্বাধীন আরাকান-রাখাইন প্রদেশ করা যায়, আরাকান আর্মি তো ইতিমধ্যে বলেছে যে রোহিঙ্গারা আমাদের ভাই। তাহলে এই রিফিউজিদেও ফেরত পাঠানো যাবে। এসব নানারকম যুক্তি দিয়ে শেখ হাসিনাকে লাইনে ফেলতে চাইছে ওরা। যাতে এই নো ফ্লাই জোন ইমপ্লিমেন্ট করার ক্ষেত্রে বা যদি প্রয়োজন পড়ে মিয়ানমারে মিলিটারি ইন্টারভেনশন সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তাদের প্রয়োজন। কিন্তু শেখ হাসিনাও অত্যন্ত পরিণত রাজনীতিবিদ। তিনিও বোঝেন ব্যাপারটা যে আমেরিকা ধানাইপানাই করছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘গণতন্ত্র’ আর ‘মানবাধিকার’ ইস্যুটি প্রকৃত ইস্যু নয় সেই দাবি করে জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক বলেন, ‘আমেরিকার দুটি অস্ত্র আছে-হিউম্যান রাইটস আরেকটা ডেমোক্রেসি। আমি এটি বলছি না যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র একেবারে দুর্দান্ত অবস্থায় আছে। দুটো নির্বাচন নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী হবে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে-এতে ভারতের একটি নিবদ্ধ স্বার্থ আছে। কেন, বাংলাদেশ যদি একটা গরীব রাষ্ট্র, পাকিন্তানের মতো একটা ফেইল স্টেট হয়, এতে লক্ষ লক্ষ লোক ভারতে আসবে। এতে ভারতের সীমান্তবর্তী রাজনীতিতে নানারকম সমস্যা তৈরি হবে। খানিকটা যেমন আসামে আমরা দেখছি। ভারত চায় বাংলাদেশ শক্তিশালী ইকনমি হবে। তাতে ভারতের অপেক্ষকৃত পিছিয়ে থাকা পূর্বাঞ্চলীয় ও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির উন্নয়ন দ্রুততর হবে। এটা দুজনের জন্য উইন-উইন সিচুয়েশন দুজনের জন্য। এইখানে আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের বিরাট পার্থক্য রয়েছে। ভারত চায় বাংলাদেশের ইকনমি ডেভেলপ হবে। বাংলাদেশে একটা স্টেবেল সরকার থাকবে। ভারতের কাছে স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর আমেরিকার গণতন্ত্র-টন্ত্র করছে, নো ফ্লাই জোন করতে চাইছ কিন্তু ভারত তা চাইছে না। বাংলাদেশ এখানে এমন একটা কিছু করুক আমেরিকাকে নিয়ে এটা ভারত চায় না। ভারত চায় না, চীন উত্তেজিত হয়ে এই অঞ্চলে নতুন করে গোলমাল শুরু করুক।’
‘চট্টগ্রাম, টেকনাফ, উখিয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম এই জোনটাকে ব্যবহার করে আমেরিকানরা বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে মিয়ানমারে গোলোযোগ পাকাচ্ছে এবং সেখানে আরাকান আর্মি অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হেল্প করছে। চীন তখন কি করবে? চীন তখন পার্বত্য চট্টগ্রামকে আবার ডিস্টার্ব করবে। চীন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে আবার ডিস্টার্ব করবে। ভারত এ কারণে পরিস্কার করে বলছে, বিগ পাওয়ারের খেলা এখানে। আমেরিকা এখানে চাইছে যেকোন মূল্যে চীনকে প্যাচে ফেলো। চীনের করিডোর বন্ধ করো। ভারতের কথা হচ্ছে, চীনের করিডোর বন্ধ হলে আমরা যে অখুশি হবো তা না। কিন্তু তাতে বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নানা গোলোযোগ সৃষ্টিতে সক্ষম হবে, সেটা আমরা চাই না। এখানে একটা ইউক্রেন বা প্যালেস্টাইন আমরা চাই না। এই জায়গাতে আমেরিকার সঙ্গে মতপার্থক্য আছে। তাদের কথা, শেখ হাসিনা যদি এই চুক্তি সই না করে লাইনে না পড়ে তাহলে তাকে গণতন্ত্র আর হিউম্যান রাইটস নামক দুটি রকেট ব্যবহার করে তাঁর সোনার তরীকে ডুবিয়ে দাও।’
(চলবে)