বাজেট ২০২৪-২৫: বাড়াতে হবে সরকারি এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ
যুক্তিতর্ক
সাধ আছে সক্ষমতা কম বলে বেশি ধারকর্জ আর কর-রাজস্বে ভর করে বেশি খরচের সব পরিকল্পনা সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী তার প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে। চলতি বাজেটের তুলনায় ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা যা চলতি বছরের এডিপির তুলনায় মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা বেশি। ২৭ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে ভর্তুকি ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
সামষ্টিক অর্থনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হলো জাতীয় বাজেট। সাধারণ মানুষের কাছে বাজেট মানে ন্যায্য এবং সহনশীল মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারছে কি না। অধিকাংশ গরিব, স্বল্প আয়ের মানুষ এবং মধ্যবিত্তের কাছে প্রত্যাশা হলো বাজেট ঘোষণার পর যাতে সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রয়সীমার মধ্যে থাকে।
কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবংদুর্বল ও অদক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনার কারণে অর্থনীতি কয়েক বছর ধরে চাপে আছে। দুই বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ, ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ব্যাপকভাবে। ফলশ্রুতিতে ডলার সংকটের কারণে পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এবং বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান কমেছে।
বিজ্ঞাপন
মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ জনগণ খুব চাপে আছে। এই ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রীর কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। বাজেট বক্তৃতায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকার পেলেও নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়বে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজেট বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। ' সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার' এই স্লোগানকে টিকিয়ে রাখতে বাজেট ব্যবস্থাপনার গতিশীলতা, করনীতি সংস্কার, কর ব্যবস্থার অটোমেশন, কর সংগ্রহে সামগ্রিক সিস্টেম লস কমানো এবং কর প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি তথা জনগণকে যথাযথ সেবা দেওয়া আরও সুযোগ আছে।
বিজ্ঞাপন
এবারের প্রস্তাবিত বাজেট সময়োপযোগী ও বাস্তবায়নযোগ্য। বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতিটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে এবং সমস্যা সমাধানকল্পে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নজর বাড়াতে হবে এমএসএমই ও এসএমই খাতে। দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে এসএমই খাত ও শ্রম ঘন ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।এছাড়া গ্রামীণ এলাকায় অকৃষি খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।
বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দরকার সুশাসন ও যথাযথ মনিটরিং। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং তদারকির মান ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের জন্য সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা ও পরিকল্পনা নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়াও বাজেট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি এবং বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করতে হবে।
২০২৪ সালের বিদায়ের লগ্নে প্রশ্ন উঠেছে: গণতন্ত্র কি "নির্বাচনের বছর" টিকে আছে? কারণ, বছরটি ছিল নির্বাচনের। বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠী ভোট দিয়েছেন। সিংহভাগ দেশে নির্বাচনও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের বছরে গণতন্ত্র কতটুকু সুসংহত হয়েছে, এমন প্রশ্ন পণ্ডিতদের মনে সঞ্চারিত হয়েছে।
কেন নির্বাচনের বছরে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন? কারণ একাধিক। নির্বাচন বহু দেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করার বদলে স্বৈরতন্ত্রকে পাকাপোক্ত করেছে। গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে একনায়কতন্ত্র দখল করেছে রাজনীতি। যার প্রতিফল হলো গণঅসন্তোষ। গণআন্দোলন। রক্তাক্ত পথে ক্ষমতার পালাবদল। ফলে নির্বাচনের বছরে প্রধান চরিত্র হয়েছে স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলন। বছরের মধ্য থেকে শেষার্ধে বাংলাদেশ থেকে সিরিয়া পর্যন্ত দেখা গেছে এমনই দৃশ্যপট। ইকোনোমিস্ট বছরের সেরা দেশের তকমা দিয়েছে রক্তাক্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিবাহী বাংলাদেশকে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মারিয়া রেসা কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, "২০২৪ সালের শেষ নাগাদ বিশ্ব জানবে গণতন্ত্র বেঁচে আছে নাকি মরেছে।" তার মতে, ২০২৪ সালে, "নির্বাচনের বছর"-এ বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যা ভোট দেবে। কিন্তু ভোটারদের এই ঢেউ ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ হিসাবে ব্যালট বাক্সের দিকে যাবে, নাকি বৈশ্বিক কর্তৃত্ববাদী প্রভাব, বিদেশী তথ্যের কারসাজি এবং প্রযুক্তির নতুন ফর্ম-এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিপন্ন করার জন্য "একটি নিখুঁত ঝড়" হিসাবে বিবেচিত হবে? বছরটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রশ্ন করার সময় আসবে পারে: গণতন্ত্র কেমন চলছে? আর তখনই বলা হবে, গণতন্ত্র কি "নির্বাচনের বছর" টিকে আছে বা ছিল? যেমনটি জার্নাল অব ডেমোক্রেসিতে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর ডেমোক্রিটিক স্টাডিজ-এর পরিচালক জন কে গ্যালেন Is Democracy Surviving the “Year of Elections”? শিরোনামের এক প্রবন্ধে।
গণতন্ত্র ক্ষুন্ন হয়েছে এজন্য যে, ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলো স্বচ্ছ ও অবিতর্কিত চরিত্র ধরে রাখতে পারে নি। এর নেপথ্যে রয়েছে তিনটি প্রবণতা:
প্রথমত, গণতন্ত্রের নামে কর্তৃত্ববাদী শাসন বৈধতার বিভ্রম তৈরি করতে জাল নির্বাচনের উপর নির্ভর করেছে।
দ্বিতীয়ত, ভোটের মাঠে গণতন্ত্রগুলো বিদেশী তথ্যের কারসাজির চ্যালেঞ্জ থেকে প্রভাব মুক্ত থাকতে পারে নি।
তৃতীয়ত, নির্বাচনের উপর নতুন জেনারেটিভ-এআই সরঞ্জামগুলোর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ ব্যাপক হয়েছে এবং এটিও স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে AI এর আসল হুমকি তাদের ভোট পরিবর্তন করার জন্য লোকেদের প্রতারণা করার ক্ষমতা, যা নির্বাচন এবং গণতন্ত্র সংক্রান্ত বিশ্বাসকে দুর্বল করেছে।
এসব কারণেই ইন্টারন্যাশনাল আইডিইএ-র একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, জরিপ করা উনিশটি দেশের মধ্যে এগারোটিতে, অর্ধেকেরও চেয়েও অনেক কম লোক বিশ্বাস করে নি যে, তাদের দেশে সাম্প্রতিকতম নির্বাচন "অবাধ ও সুষ্ঠু" হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলো কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার দ্বারা নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার এবং জোরপূর্বক নিজেদের বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টাগুলো প্রত্যক্ষ করেছে, যা প্রকারান্তরে গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
অধিকাংশ নির্বাচনেই বিরোধী, মধ্যপন্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হয় নি। সরকারে আসীন কর্তৃত্ববাদীরা নিজেদের শুধুমাত্র একতরফা নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সীমাবদ্ধ রাখে নি। বরং তারা নির্বাচনকে "তথ্যের কারসাজির জন্য যুদ্ধক্ষেত্র" হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তদুপরি, সরকারিভাবে প্রশাসনিক শক্তি এবং বেসরকারিভাবে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক শক্তি প্রতিপক্ষকে এমনভাবে চেপে ধরেছিল যে, নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হতে বাধ্য হয় এবং গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। ফলে নির্বাচনের পথ ধরে গণতন্ত্রের বা জনমনের বিকাশের বদলে কর্তৃত্ববাদের পুনর্বাসন হয়েছে। যেজন্য বিশ্বব্যাপী এই প্রশ্ন শোনা যাচ্ছে যে, গণতন্ত্র কি "নির্বাচনের বছর" টিকে আছে?
সামগ্রিকভাবে, নির্বাচনী বছর ২০২৪ সালে গণতন্ত্রের ছবিটি খুবই ধূসরিত ও ঝাপসা। কর্তৃত্ববাদ, স্বৈরতন্ত্র ও একনায়কবাদ কবলিত হয়ে নির্বাচনের পবিত্রতা এবং গণতন্ত্রের শক্তির ব্যাপক পতন হয়েছে ২০২৪ সালে। এমন ন্যাক্কারজনক তথ্যও ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড-এর রিপোর্টে দেখা যায়, একটি বিরোধী দল অপ্রত্যাশিতভাবে সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি অংশ জিতেও ক্ষমতাসীনদের দ্বারা সরকারে প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হয়।
ফলে নির্বাচনের বছরটি বাস্তব পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে বলা যাবে না। এটি নিছক নির্বাচনের বছর এজন্য যে এ বছর অনেকগুলো নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনগুলো গণতন্ত্রের বিকাশ ও শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার বদলে কর্তৃত্ববাদীদের দ্বারা লুণ্ঠিত হয়েছে। প্রার্থীদের বিপদের পাশাপাশি নাগরিকদের ভোটদানের মুহুর্তগুলো ছিল আক্রান্ত আর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল বিপন্ন, যা নির্বাচন ও গণতন্ত্রের প্রতি আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। বহু ক্ষেত্রে সহিংসতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং এমন সব কাজ করা হয়েছে, যা মৌলিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
অতএব, গণতন্ত্র কি "নির্বাচনের বছর" টিকে আছে বা ছিল মর্মে যেসব প্রশ্ন বছর শেষে উঠতে তা বহুলাংশেই যথার্থ। তবে এসব প্রশ্নের উত্তর এবং নির্বাচন ও গণতন্ত্র সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের পথ দেখানো বিদায়ে পথে চলা ২০২৪ সালের পক্ষে দেওয়া আর সম্ভব হবে না। উত্তর ও উত্তরণের পথ ও পন্থা পাওয়া সম্ভব হবে আগত ২০২৫ সালে এবং সামনের অনাগত বছরগুলোতে।
ড. মাহফুজ পারভেজ: অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম; প্রফেসর ও চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।
দেশের এভিয়েশনকে সমৃদ্ধশালী করে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত দেশের অন্যতম সেরা এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই দেশিয় যাত্রীদের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা হচ্ছে ইউএস-বাংলা হবে শতভাগ যাত্রী বান্ধব বিমান সংস্থা। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা হবে সেবায়, আর সাশ্রয়ী ভাড়ায় দেশের প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী যাত্রীদের পাশে থাকার অভিপ্রায় নিয়ে চলাচল করছে ইউএস-বাংলা।
দু’টি ৭৬ আসনের ড্যাশ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট নিয়ে যাত্রা শুরু করা ইউএস-বাংলার বহরে এখন ২৪টি এয়ারক্রাফট রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩৬ আসনের দু’টি এয়ারবাস ৩৩০-৩০০ এবং ৯টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এয়ারক্রাফটও রয়েছে। যাত্রীসেবাকে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে রাখার জন্য অভ্যন্তরীণ রুটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সই প্রথম ব্র্যান্ডনিউ এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। খুব শীঘ্রই ইউএস-বাংলার বিমান বহরকে আরো সমৃদ্ধ করতে এবং নতুন নতুন রুট সম্প্রসারণের জন্য নতুন এয়ারবাস ৩৩০ সহ বোয়িং ৭৩৭-৮০০ যোগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
২০১৪ সালের ১৭ জুলাই ঢাকা থেকে যশোর রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মধ্য দিয়ে শুরু করা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে সুনামের সাথে জাতীয় বিমান সংস্থার পাশাপাশি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে দেশিয় বিমান সংস্থা হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা। সারাবিশ্বে অবস্থান করা প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সিংহভাগই অবস্থান করে মধ্যপ্রাচ্যে। এ অঞ্চলের প্রায় ২৮ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই বাস করে সৌদি আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে। আর চার ভাগের এক ভাগ বাস করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন অঞ্চলে।
সিংহভাগ প্রবাসীদের সেবা দেয়ার জন্য ইউএস-বাংলার যাত্রা শুরু থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দোহা, মাস্কাট, দুবাই, শারজাহ, আবুধাবী, জেদ্দায় ফ্লাইট পরিচালনা করছে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবস্থান কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। দেশিয় পর্যটকদের চাহিদা পূরণে ব্যাংককে প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করছে। পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে ভারতের বিভিন্ন গন্তব্য বিশেষ করে কলকাতা ও চেন্নাইতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা। যার বেশির ভাগই পর্যটক, উন্নত চিকিৎসা সেবা ও ব্যবসার উদ্দেশ্যে গমন করে থাকে।
স্বাধীনতার পর প্রথম কোনো বাংলাদেশি বিমান সংস্থা হিসেবে চীনের গুয়াংজুতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা। চলতি শতাব্দীতে অতি মহামারিতে আক্রান্ত কোভিডকালীন সময়েও একমাত্র দেশিয় বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা ঢাকা-গুয়াংজু রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। দেশের এভিয়েশনকে আরো বেশি গতিশীল রাখতে এবং আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে ইউএস-বাংলা খুব শীঘ্রই সৌদি আরবের রিয়াদ, মদিনাসহ মধ্যপ্রাচ্যে নতুন নতুন রুট সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।
২০২৬ সালের মধ্যে লন্ডন, রোমসহ ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্য এবং ২০২৮ সালের মধ্যে টরেন্টো, নিউইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়েছে ইউএস-বাংলা। অদূর ভবিষ্যতে ইউএস-বাংলা অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনাও আছে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স শুরু থেকে পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নকে সাথে নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। যাত্রী সাধারণের একনিষ্ঠ সমর্থন ও আস্থাই ইউএস-বাংলাকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করছে।
সর্বোপরি দেশিয় এয়ারলাইন্সের অগ্রযাত্রাই দেশের এভিয়েশনের অগ্রযাত্রাই প্রতিফলিত হয়ে থাকে।
লেখক মোঃ কামরুল ইসলাম মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স
আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে একের পর এক জয়ের মুখ দেখছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহর দখলে নেওয়ার ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে আরাকান আর্মি রাখাইনের ১৭টি শহরের মধ্যে ১৩টি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের মংডু ও বুথিডাং এবং চিন প্রদেশের পালেতোয়া এই তিনটি শহরেরই নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করছে, পালেতোয়ার সাথে ভারতেরও সীমান্ত রয়েছে। আরাকান আর্মি এখন দক্ষিণ রাখাইনের গাওয়া, তাউনগুপ ও আন শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়াই করছে।
মংডু দখলের সময় আরাকান আর্মি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরিন তুনসহ মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের পাশাপাশি আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের কিছু রোহিঙ্গাকেও গ্রেফতার করে। মংডুতে রোহিঙ্গাদের প্ররোচনা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক প্রশিক্ষণ, অস্ত্র দেওয়া, ভয় দেখিয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নিতে বাধ্য করা এবং মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে জাতিগত বিদ্বেষ উস্কে দেওয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি, আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন সামরিক জান্তার হয়ে আরাকান আর্মির বিপক্ষে যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত আলোচনায় যাতে কোন সংকট তৈরি না হয় সেজন্য এর যৌক্তিকতা সকল পক্ষের কাছে তুলে ধরতে হবে। রাখাইনে সংঘর্ষের সময় আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের জোর করে তাদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে এবং তাদের বাড়িঘর লুট করে জ্বালিয়ে দিচ্ছে বলে জানা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটে। বহির্বিশ্বে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ইসলামী জঙ্গি হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছে, এর বিপরীতে রোহিঙ্গা কিংবা তাদের স্বার্থরক্ষাকারী সংস্থার উল্লেখযোগ্য কোন প্রচারণা নেই। রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী জোর করে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাধ্য করছে তা আন্তর্জাতিক মহলকে ভালভাবে অবহিত করতে হবে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে। রাখাইনে এখন প্রায় পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা আছে, চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে নতুন করে অনুপ্রবেশে বাধ্য করতে পারে।
বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ উচ্ছেদের পর আরাকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত ক্যাম্পগুলোতে দায়িত্ব পালন করছে ফলে সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। চলমান পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মির সদস্যদের সাথে নতুন করে বোঝাপড়া এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। অরক্ষিত সীমান্ত মাদক ও অস্ত্র পাচারকারীদের জন্য সুযোগ এনে দিবে এতে নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর চাপ পড়বে। বর্তমানে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাখাইনের চলমান সংঘাতে দুই দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি ও রফতানি বন্ধ রয়েছে, সীমান্ত বাণিজ্যও বন্ধ হয়ে গেছে। সংঘর্ষ চলমান থাকায় রাখাইন অঞ্চলের সামাজিক, রাজনৈতিক, জাতিগত এবং অর্থনৈতিক অবস্থা অস্থিতিশীল অবস্থায় আছে। জান্তা সরকার সড়ক ও জলপথ অবরুদ্ধ করায় সেখানে খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধসহ আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। রাখাইনের প্রায় ২০ লাখ মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে পুনরায় বাণিজ্য শুরু হলে তা রাখাইনের জনগণের দুর্দশা কমাতে সাহায্য করবে।
রাখাইনে চীনের ভূ-কৌশলগত, বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ স্বার্থ রয়েছে। আরাকান আর্মি চীনের স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু করছে না, মিয়ানমার সরকারও চীনের স্বার্থ রক্ষা করছে। রাখাইনে ভারতেরও বাণিজ্যিক এবং ভূ-কৌশলগত স্বার্থের পাশাপাশি চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য মোকাবিলায় তাদের উপস্থিতির বিষয় রয়েছে। ভারত আলাদাভাবে জাতীয় ঐক্য সরকার, আরাকান আর্মি, চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এবং চিন ব্রাদারহুডের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে যদিও এর ফলাফল এখনও জানা যায় নাই। চীন তার সীমান্ত বাণিজ্য চলিয়ে যাচ্ছে এবং ভারত পুনরায় কালাদান মাল্টি মোডাল প্রকল্প চালু ও সিতওয়ে বন্দরের কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নিচ্ছে।
সামনের দিনগুলোতে রাখাইনের পরিস্থিত কি হবে এবং আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রাখাইন কতদিন থাকবে, তা এখনো অস্পষ্ট। তবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সীমান্ত পার হয়ে নতুন করে বাংলাদেশে যাতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান করতে চায় বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের ওপর আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার বিষয়ে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ রোহিঙ্গা ইস্যুতে যারা খুবই আগ্রহী, তারা সবাই এই সম্মেলনে থাকবে বলে আশা করা যায়। প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময়ে এই পরিকল্পনার কথা জানায়। সার্বিক রোহিঙ্গা পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রধান উপদেষ্টা একজন উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি গভীরভাবে এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন এবং সব অংশীজনদের সাথে আলোচনা ও সমন্বয় করবেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং যুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরির জন্য সকল অংশীজনদেরকে একত্রে কাজ করতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে সীমান্তের ওপারের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত খবরাখবর জানতে পারে এবং জনগণের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করতে পারে। কক্সবাজারে কর্মরত জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে আরাকান আর্মি, ইউ এল এ এবং এন ইউ জি’র প্রতিনিধিরা যোগাযোগ করতে পারে। রাখাইনের মুক্ত এলাকায় নিরাপদ অঞ্চল ও মানবিক করিডোর স্থাপন করে ত্রাণ সহায়তা ও রোহিঙ্গা স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। মিয়ানমারের অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলো মিয়ামারের সাথে তাদের বাণিজ্য চলমান রেখেছে। রাখাইনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে দুদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এগিয়ে আসতে পারে।
রাখাইনে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ও বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কোস্ট গার্ড ও বিজিবি সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ চলমান পরিস্থিতিতে নাফ নদীতে টহল বাড়িয়েছে এবং নাফ নদীর ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে এবং বাংলাদেশের জলসীমার ভেতরে নৌ টহলও জোরদার করেছে।
২০২১ সালে জান্তা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশ এন ইউ জি, আরাকান আর্মি কিংবা রাখাইনের রাজনৈতিক দল ও জনগণের সাথে যোগাযোগ ও স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়ে কিছু করতে না পারলেও নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে মিয়ানমার সৃষ্ট সংকটের বিপুল বোঝা বহন করে চলছে। মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে দুদেশের মানুষের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে চাইলে বাংলাদেশকে আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও আলোচনা শুরু করতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বার্মা অ্যাক্টসহ, রোহিঙ্গা অ্যাক্টসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক কৌশল কাজে লাগাতে সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন।
রোহিঙ্গাদেরকেও তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন থাকতে থাকে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শিক্ষিত করা প্রয়োজন। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদেরকে আত্মনির্ভরশীল করা গেলে তারা নিজেদের অধিকার নিশ্চিতে কাজ করতে পারবে।
বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে বসবাসকারী জনগণ কিছুদিন পরপরই আতঙ্কের মধ্য দিয়ে সময় পার করে, নাফ নদীতে জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে আক্রমণের শিকার হচ্ছে। রাখাইনে সংঘর্ষের কারণে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। রাখাইন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে আসলেও সামনের দিনগুলোতে এই সংকটের রাজনৈতিক সমাধান না হলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের অবস্থান পুনরুদ্ধার করার জন্য আক্রমণ করবে। ইতিপূর্বে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। পুনরায় আক্রমণ শুরু হলে আরাকান আর্মির সদস্যরাও পালিয়ে এখানে আশ্রয় নিতে পারে। তখন নতুন ধরনের সংকট সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশকে চলমান সংকটের পাশাপাশি সামনের দিনগুলোতে নতুন ধরনের সংকট মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদেরকেও তাদের দাবি আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে। ভূকৌশলগত ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় সবাই তাদের নিজস্ব স্বার্থ নিয়ে কাজ করে, তাই নিজের অধিকার নিজেদেরকেই সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জন করতে হবে। আঞ্চলিক ও বিশ্বের যে সব দেশে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে ও নিচ্ছে এই সংকট সমাধানে তাদেরকে ও সাথে রাখতে হবে। রাখাইনের জনগনের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে রোহিঙ্গা ও রাখাইনদের মধ্যেকার পারস্পরিক সম্প্রীতি বাড়বে ও বিদ্বেষ কমবে। এর ফলে এই অঞ্চলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে।
মিয়ানমার সরকার সব সময় রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী ও বাংলাদেশি হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে। একই সাথে রোহিঙ্গারা এ অঞ্চলে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে বলে তারা দাবি করে। এন ইউ জি ও আরাকান আর্মির যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমার ও রাখাইনের জনগণের মধ্যে প্রোথিত মুসলিম ভীতি সম্পর্কে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করে দিতে হবে যে, বাংলাদেশ সবসময় তার প্রতিবেশী দেশের ভেতরে অশান্তি সৃষ্টির বিপক্ষে।
আগামী দিনগুলোতে মিয়ানমারে যে সরকারই আসুক না কেন আরাকান আর্মি রাখাইনের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আরাকান আর্মিকে বাদ দিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান অসম্ভব। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে একজন উপদেষ্টা নিয়োগ করেছে যা একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। নিয়োগপ্রাপ্ত উপদেষ্টার দিকনির্দেশনায় এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সফলতার মুখ দেখবে বলে আশা করা যায়।
ব্রি. জে. হাসান মো. শামসুদ্দীন, এন ডি সি, এ এফ ডব্লিউ সি, পি এস সি, এম ফিল (অব.) মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক
নির্বাচনের বছর বলা হয়েছিল ২০২৪ সালকে। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ এবার ভোট দিয়েছেন। কিন্তু বছর শেষে বাংলাদেশ, দক্ষিণ কোরিয়া, সিরিয়া এবং আরও অনেক দেশে গণআন্দোলন, সংঘাত ও ক্ষমতার পালাবদলের জন্য ২০২৪ নামক বছরটিকে দেখা যাচ্ছে রক্তাক্ত রাজনৈতিক পর্বান্তরের পটভূমিতে।
বছর শেষের প্রাক্কালে যে প্রশ্নটি বিশ্বব্যাপী আলোচনার ঝড় তুলেছে, তা হলো, কেন সিরিয়ায় আসাদের নাটকীয় পতন হয়েছে? দ্রুততম ও অভাবনীয় এই পতনের নেপথ্য কার্যকারণগুলো কি ছিল? যদিও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের সাথে সুপরিচিত এবং বিশ্বাসযোগ্য ভাষ্যের বন্যা বইছে। অনেকেই ব্যাখ্যা করেছেন, কিভাবে এবং কেন তার শাসন এত দ্রুত পতন হল। তথাপি সিরিয়া নিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায় নি।
বিশেষত, প্রবীণ সিরিয়ান সাংবাদিক এবং বিশ্লেষক হাসান হাসানের এক্স-এর একটি পোস্টে উত্থাপিত অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর এখনও বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট নয়। তিনি বলেছেন যে, "সিরিয়া বিষয়ে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত উত্তর নেই। এখনও অনেক কিছু ব্যাখ্যা করা বাকি।" তার মতে, "আসাদের অনুগত বাহিনী ছিল অন্তত কিছু সময়ের জন্য দামেস্ককে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্ত তারা কেন হাল ছেড়ে দিল, তার কোন সদুত্তর নেই।
তিনি মনে করেন, "দামেস্কের কাছে এটি পরিষ্কার ছিল যে পুরো দেশের বেশিরভাগ অংশে যুদ্ধ করতে অক্ষম ছিল আসাদের শাসন ও সৈন্যদল। কিন্তু এটা স্পষ্ট নয়, কেন তারা রাজধানী রক্ষার যে সিদ্ধান্ত ছিল, তা কোনও ঘোষণা ছাড়াই পরিত্যাগ করেছিল? এটি কখন ও কেমন করে হলো, তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি কোনও সূত্রের পক্ষেই।"
হাসান আরও বলেন, "আসাদের কাছে লড়াই করার জন্য সবচেয়ে প্রশিক্ষিত এবং অনুগত বাহিনী ছিল, কিন্তু তারা রাজধানী ছেড়ে পালালো কেন? যদিও সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে আসাদের অনেকগুলো শক্তিশালী ঘাঁটিতে অনুগত ইউনিটগুলে লড়াই করতে ইচ্ছুক ছিল। রাজধানীর আকস্মিক পতন ঘটায় তারাও হতাশ আর নেতৃত্বহীন হয়ে রণাঙ্গন পরিত্যাগ করে।"
হাসানের মতো আরও অনেকেই প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, "তাহলে কেন সেনাবাহিনী আসাদকে সম্পূর্ণরূপে এবং অপরিবর্তনীয়ভাবে পরিত্যাগ করল অপেশাগত পদ্ধতিতে?" পশ্চিমা গ্রেগরি ওয়াটার্স এবং সিরিয়ার মুহসেন মুস্তাফার মতো বিশ্লেষকরা একাধিক কারণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন যা গত কয়েক বছরে সামরিক সংহতি এবং প্রস্তুতিকে ক্ষুণ্ন করেছে, যার মধ্যে কয়েক হাজার অফিসার এবং সৈন্যকে রিজার্ভে স্থানান্তর করার ঘটনা রয়েছে। এতে, সক্রিয় এবং রিজার্ভ উভয় ধরনের সৈন্যদের পেশাগত জীবনযাত্রার মান মারাত্মক ক্ষয় হয়েছে। তাছাড়া, সংরক্ষিত কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও দুর্নীতির ফলে বেতন আত্মসাৎ এবং খাদ্য সরবরাহের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় আসাদের সামরিক শক্তি ভঙ্গুর হয়েছে। সর্বোপরি, রাশিয়া, ইরান এবং হিজবুল্লাহর কাছ থেকে যে ধরনের সামরিক সহায়তা আসাদ-শাসনের টিকে থাকার চাবিকাঠি ছিল, শেষ দিকে পর্যাপ্ত ছিল না।
আসাদের পতনের ঘটনা থেকে কর্তৃত্ববাদী আরব রাষ্ট্রগুলো এই সামরিক রাজনীতির অভিজ্ঞতা পেতে পারে যে, বাইরের সাহায্যে ভেতরের সমস্যার সমাধান দীর্ঘমেয়াদে সম্ভব নয়। আসাদ পতনের ঘটনাবলি এই দরকারী অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে যে, জনবিচ্ছিন হলে ক্ষমতা ধরে রাখা অসম্ভব। তদুপরি, জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে রাজনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, যা শাসনের অবক্ষয় নিয়ে আসে। সিরিয়ার অভিজ্ঞতায় আরব বিশ্বের দেশগুলোতে আগামী দিনে শাসন ব্যবস্থা ও সেনাবাহিনীর মধ্যকার সম্পর্ককে আরও জনমুখী করার প্রয়োজনীয়তা প্রকট হচ্ছে।
উত্তাল আরব বিশ্বে অভ্যুত্থান ও গণবিক্ষোভ তীব্র হয়ে ক্ষমতার পালাবদল ঘটালেও সিরিয়া এসব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিল। তবে, ২০১১ সালে মিশর এবং লিবিয়ায় এবং ২০১৯ সালে আলজেরিয়া এবং সুদানে কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সাধারণ কারণের মধ্যে অন্তত একটি সিরিয়ার আসাদ সরকারের শেষ দিনগুলোতে দৃশ্যমান হয়েছিল। অন্যান্য আরব দেশের মতো সিরিয়ায় যখন জনপ্রিয় অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পর্যায় শুরু হয়েছিল, তখন সামরিক বাহিনী বুঝতে পেরেছিল যে বর্তমান রাষ্ট্রপতি জনগণের সঙ্গে বোঝাপড়ায় পর্যুদস্ত হয়েছেন, আর তখনই কর্তৃত্ববাদী শক্তির প্রধান নোঙ্গর এবং শাসনের স্থায়িত্বের গ্যারান্টার হিসাবে সামরিক বাহিনী তার ভূমিকা স্থগিত করেছে।
২০২৪ সালে সিরিয়ায় যা হয়েছে, তা ২০১১-২০১২ সালে হয় নি। তখনকার জনপ্রিয় অভ্যুত্থানের হুমকির কারণে আসাদ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়নি। তবে শাসনের প্রতিটি সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ক্ষয় শুরু হয়েছিল অল্প অল্প করে। এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধকালীন বাস্তুচ্যুতি এবং রাষ্ট্রীয় ঋণের ক্ষতির কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি বৃহৎ চাষি শ্রেণি, এবং একটি ব্যবসায়িক খাত যা বারবার ঝাঁকুনি এবং পতনের মুখোমুখি হয়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে, আসাদ একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের সাথে একটি অন্তর্নিহিত চুক্তি ভঙ্গ করেছেন বলে মনে হচ্ছে যেটি তার প্রতিরক্ষায় হাজার হাজার লোককে হারিয়েছে। ক্রমাগত অবনতিশীল জীবনযাত্রার মান এবং সরকারী খাতে আয়ের অবমূল্যায়ন ঘটিয়েছে। সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে আস্থায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। জাতীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং মুদ্রাস্ফীতির অন্তহীন চক্রের পতন ঠেকাতে পারে নি।
সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কমান্ডের মধ্যে এই ধারণা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি একটি সংকটময় মুহূর্তে বিদেশি সামরিক বা আর্থিক সহায়তার সুবিধা নিতে পারছেন না। এর আনুমানিক কারণগুলো ছিল, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ, ইরানের অবক্ষয়, কৌশলগত প্রতিরোধ এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর সামরিক ক্ষয়ক্ষতি, যা ছিল সম্পূর্ণরূপে আসাদের হাতের বাইরে। অন্য চারটি আরব দেশে অতীত দৃষ্টান্তে দেখা যায় যে, একজন প্রেসিডেন্টের বিদেশি সমর্থন বা সামরিক নিষেধাজ্ঞা থেকে রক্ষা করার ক্ষমতার প্রকৃত বা সম্ভাব্য ক্ষতি তাকে রক্ষা করতে বা পরিত্যাগ করার জন্য সামরিক প্রস্তুতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
সিরিয়ার একদিকে, সমাজ ও রাজনীতির সামরিকীকরণ এবং কয়েক দশক ধরে শাসনের স্তম্ভ হিসাবে সেনাবাহিনীর দ্ব্যর্থহীন ভূমিকা সত্ত্বেও, সিরিয়ার সেনাবাহিনীর আরব প্রতিপক্ষদের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের অভাব ছিল। হাস্যকরভাবে, আসাদের অনানুষ্ঠানিক কন্ট্রোল নেটওয়ার্কের সাথে এর আনুষ্ঠানিক কমান্ড স্ট্রাকচারের আন্তঃসংযোগের অর্থ হল যে তিনি এর সংহতি রক্ষা করতে এবং গৃহযুদ্ধের সময় এটির টিকে থাকা নিশ্চিত করার চেয়ে বেশি করেছিলেন তার ক্ষমতা রক্ষা করার জন্য। অতি সম্প্রতি, একটি সঙ্কুচিত অর্থনীতি থেকে আয় কমানোর বিষয়ে তার বিভ্রান্তির মধ্যে এই ফাংশনটির প্রতি তার অবহেলা, সেনাবাহিনীর সংহতিকে আরও দুর্বল করেছে। অন্যদিকে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সামাজিক স্বায়ত্তশাসনের অভাব ছিল। সেনাবাহিনীতে আসাদপন্থী আলাভি সম্প্রদায়ের নিয়োগের উপর অত্যধিক নির্ভর করে শাসনের টিকে থাকার প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত সেনা প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যর্থ করেছে। যদিও সামরিক বাহিনী দীর্ঘকাল ধরে এবং নিজের মধ্যে একটি প্রধান পাবলিক সেক্টর নির্বাচনী প্রতিনিধিত্ব করেছে ও এটিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার একটি হাতিয়ার হিসাবে অপরিহার্য করে তুলেছে, তথাপি আসাদের রাষ্ট্রীয় আমলাতন্ত্রের বাকি অংশের দরিদ্রতা থেকে রক্ষা করতে আসাদের অক্ষমতা তার উপর সেনা আস্থা হ্রাস করেছে।
সিরিয়ার বেসামরিক-সামরিক সম্পর্কের এই পাঠ থেকে একটি চূড়ান্ত, আশাব্যঞ্জক প্রভাব হল যে দামেস্কে যা ঘটেছিল তা ২০১১ সালে মিশরে যা ঘটেছিল তার পুনরাবৃত্তি নয়, যখন সশস্ত্র বাহিনী তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হোসনি মুবারককে রক্ষা করার জন্য ক্ষমতা থেকে সরে গিয়েছিল। তাদের অবস্থান এবং মূল শাসন সংরক্ষণ, অথবা যখন আলজেরিয়ান এবং সুদানী সেনাবাহিনী ২০১৯ সালে একই কাজ করেছিল। সিরিয়ার কয়েক ডজন সিনিয়র সেনা কমান্ডার যারা আসাদের শাসনের শেষ দিনে দামেস্কে থেকে যাওয়া হয়তো তাকে বলেছিল যে তারা তার পক্ষে লড়াই করবে না এবং তাকে পদত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছে। যাইহোক, তাদের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের অভ্যাসের অভাব ছিল এবং সিরিয়ার রাজনৈতিক রূপান্তর বাতিল করতে এবং তাদের নিজের হাতে ক্ষমতা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক স্বায়ত্তশাসনের অভাব ছিল। ফলে সিরিয়ার ক্ষমতা আসাদের কাছ থেকে কোনও সামরিক জেনারেলের হাতে যায় নি। জেনারলগণ নৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে পুরো সেনাবাহিনী সমেত রণাঙ্গন থেকে সরে গিয়ে ক্ষমতা দখলের জন্য বিদ্রোহীদের সামনে মসৃণ পথ তৈরি করে দিয়েছেন। সেই পথে, অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনীর কর্তৃত্বের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে আরেক দিক থেকে ইসরায়েল আক্রমণ ও আগ্রাসন চালিয়েছে সিরিয়ায়।
সিরিয়ায় আসাদের সুদীর্ঘ স্বৈরশাসন ও কর্তৃত্ববাদ দেশটির ইতিহাস, ঐতিহ্য, শক্তি ও সামর্থ্যের যে চরম ক্ষতি করেছে, তার দায়ভার সিরিয়াকে ভোগ করতে হচ্ছে চারদিক থেকে আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমে।
ড. মাহফুজ পারভেজ: অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম; প্রফেসর ও চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।