জানি সবই, কিন্তু মানি না

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস
  • খন্দকার সুজন হোসেন
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

করোনাভাইরাস। আতঙ্কের এক নাম। যার নেই কোনো প্রতিষেধক। সচেতনতাই পারে করোনা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে। এই ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সারা পৃথিবী।

এই যুদ্ধের একজন সৈনিক আমি এবং আপনিও। অসচেতনভাবে চলাফেরা করলে আমি, আপনি এবং আমরা কেউই নিরাপদ থাকব না। পরাজয় মেনে চলে যেতে হবে সুন্দর সাজানো পৃথিবী ছেড়ে। বিদায় নিতে হবে এই সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে। সেই সঙ্গে আমার কারণে বিপদে পড়তে পারে আমার সবচেয়ে আপনজনরা। আমার পরিবার, প্রিয়জনেরাও। নিশ্চই আমরা এই বিষয়গুলো এতোদিনে জেনে গেছি। মিডিয়ার কল্যাণে ঘরে বসে আজ দেখতে পাচ্ছি আমেরিকা আর ইতালির মতো উন্নত রাষ্ট্রের খবরাখবর।

বিজ্ঞাপন

দিন দিন বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল। বিজ্ঞানের অনেক অর্জনকে মলিন করে দিয়েছে এই ভাইরাস। এর হাত থেকে রক্ষা পেতে মরিয়া হয়ে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন পৃথিবীর গবেষক, বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা। থেমে নেই কারো চেষ্টা। তবে এর হাত থেকে আমরা রক্ষাও পেতে পারি খুব সহজেই। শুধুমাত্র আমি, আপনি অর্থাৎ আমরা সবাই সচেতন হলে নিশ্চয়ই জয়ী হবো এই যুদ্ধে।

তবে এই যুদ্ধের জন্য কতটুকু প্রস্তুত আমরা? কতটুকু মেনে চলি সামাজিক দূরত্ব? করোনাভাইরাসের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে কতটুকু সচেতন আমরা? মুখে সুন্দর সুন্দর কথা বললেও বাস্তবে কি করে বেড়াচ্ছি? আমার জন্মভূমি, পরিবার ও প্রিয়জনদের রক্ষায় আমারও দায়িত্ব আছে নিশ্চয়ই। সেখানে কতটুকু সচেতন আমরা?

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর পাশের জেলা মানিকগঞ্জ। হাতেগোনা কয়েকটি কল কারখানা রয়েছে এখানে। করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে যার সবই এখন বন্ধ। জেলা শহর ও উপজেলা শহরের দোকনাপাটও বন্ধ রয়েছে। ব্যস্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক এখন ফাঁকা। মানুষের আনাগোনা নেই পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায়। প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে এখন এসব এলাকা।

তবে যথার্থ নজরদারিতে নেই মানিকগঞ্জের অধিকাংশ গ্রামগুলো। স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যন্ত গ্রামে ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশের উপস্থিতি কম। প্রতিটি গ্রামঞ্চল কড়া নজরদারিতে রাখাটা প্রশাসনের জন্য কষ্টসাধ্যও বটে। যে কারণে সুযোগ পেলেই আড্ডা জমাচ্ছে গ্রামাঞ্চলের লোকগুলো।

কোনো প্রয়োজন ছাড়াই একটি প্রাইমারি স্কুলের মাঠে ১০/১২ জন মিলে আড্ডা দিচ্ছিলেন আমিনুর রহমান (ছদ্মনাম) নামের এক পোশাক শ্রমিক। তার সাথে আলাপ হলে তিনি জানান, চলতি মাসের ৭ তারিখে মার্চ মাসের বেতন বুঝে পেয়েছেন তিনি। তার স্ত্রীও পোশাক কারখানার শ্রমিক। বেতন পেয়েছেন তিনিও। আড্ডা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জানান, বাড়িতে সারাদিন বসে থাকা কষ্টকর!

এক বাসস্ট্যান্ডের পাশে লুডু খেলায় মগ্ন কয়েকজন রিকশাচালক। করোনা বিষয়ে জানতে চাইলে দেখলাম সবই জানেন তারা। বাড়িতে খাবারেরও অভাব নেই। সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি এলাকার বেশ কয়েকটি যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন বলে জানান তারা। তবুও রিকশা নিয়ে বাইরে কেন জানতে চাইলে বলেন, বাড়িতে থাকতে ভালো লাগে না!

রুস্তম আলী (ছদ্মনাম) নামে এক চায়ের দোকানদার জানান, দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন বছর তিনেক আগে। ছেলেরা চাকরি করে পোশাক কারখানায়। বাড়িতে অভাব নেই। তবে পরিচিত মানুষের চেহারা দেখার জন্য দোকানের সামনের দরজা বন্ধ রেখে পেছনের দরজা দিয়ে চা/কফি বিক্রি করছেন তিনি।

বেশিরভাগ গ্রামাঞ্চলের চিত্র একই রকম। করোনা সম্পর্কে জানি সবই, তবে মেনে চলছি কতটুকু? সুযোগ পেলেই মেতে উঠছি আড্ডায়। তবে কি এই সমাজ সভ্যতার প্রতি আমাদের কোনো দায়িত্বই নেই? এখনো সময় আছে নিশ্চয়ই। এই যুদ্ধে জয়ী হতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই আমাদের।

খন্দকার সুজন হোসেন: স্টাফ করেসপন্ডেন্ট