জনবহুল এ দেশে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস
  • ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

করোনাভাইরাস সংক্রমণ (কোভিড-১৯) পৃথিবীব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করেছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি হলো সারা বিশ্বে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ এ প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এক লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন।

এটা সারা বিশ্বের জন্য একটা বড় সংকট, বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে এর ভয়াবহতা এখনও অনেকটা কম। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০৩ জন আক্রান্ত এবং ৩৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার কারণে এ প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। গত ০৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। তার বেশ আগে জানুয়ারি থেকে বিদেশ ফেরতদের বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং ব্যবস্থা চালু করা হয়। স্ক্রিনিং করে সন্দেহভাজনদের সঙ্গরোধে (কোয়ারেন্টাইনে) রাখা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৩৬০০ জনের বাড়ি ময়মনসিংহ রেঞ্জের চারটি জেলায়। তাদের বাড়িতে সঙ্গরোধ নিশ্চিত করা হয়।

ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলা অর্থাৎ ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুরে এ পর্যন্ত ২১ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাদের সবাইকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আক্রান্তদের আশেপাশের বাড়িগুলো এরই মধ্যে লকডাউন করা হয়েছে। অন্যদের থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে, যাতে নতুন করে কেউ আক্রান্ত না হন। লকডাউনের আওতায় থাকা মানুষদের খাদ্য সামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহসহ অন্যান্য জরুরি সেবা দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ কাজ করছে। আইজিপির দিক-নির্দেশনা এবং গতিশীল নেতৃত্বে আমরা এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখা, অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ, আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা, আক্রান্ত ব্যক্তির সান্নিধ্যে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা, আক্রান্ত ব্যক্তির আশেপাশের বাড়িঘর স্থানীয়ভাবে লকডাউন করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মাইক্রো লেভেলে জেলা/উপজেলা পর্যায়ে অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। মহাসড়কে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, ওষুধ সরবরাহসহ অন্যান্য জরুরি সেবা/পরিবহন সচল রাখা হয়েছে। সড়ক ও মহাসড়কে চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলা/উপজেলার প্রবেশ দ্বারে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, যাতে অন্য এলাকার লোক অনুপ্রবেশ করতে না পারে। ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়েও স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়ন এবং গ্রাম থেকে গ্রামে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

‘কোভিড-১৯’ একটি ভয়ঙ্কর সংক্রামক ভাইরাস। এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখাই উত্তম পন্থা। লোক সমাগম এড়িয়ে চলা, সন্দেহভাজন বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসা উচিত। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়া উচিত। অত্যন্ত ছোঁয়াচে এ ভাইরাস খুব সহজে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয়। কাজেই এ পরিবহন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এজন্য ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বাড়িতে সঙ্গরোধ (হোম কোয়ারেন্টাইন) নিশ্চিত করা, লোক সমাগম হতে না দেয়া, অপ্রয়োজনীয় চলাচল বন্ধ করা এবং স্থানীয়ভাবে স্বেচ্ছায় লকডাউন নিশ্চিত করা। মাইকিং করে লিফলেট বিতরণ করে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এটা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি করোনাভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহ রেঞ্জ কার্যালয় ও রেঞ্জের জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রমজীবী, গরিব ও দুস্থ ৭১৭০টি পরিবারের মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী (চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, আটা, লবণ, সাবান ইত্যাদি) এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিদের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী (মাস্ক, হ্যান্ড ওয়াশ/হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ইত্যাদি) বিতরণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

জনবহুল এ দেশে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় এক হাজার ১০০ জন লোক বাস করেন। ঐতিহ্যগতভাবে এখানকার লোকজনের মধ্যে নিবিড় সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া রয়েছে। কাজেই প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষকে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা, এটি কীভাবে সংক্রমিত হয় এবং সংক্রমিত ব্যক্তির করুণ পরিণতির বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে।

এ কাজে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রেঞ্জের জেলাগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে, যাতে নিজে সতর্ক হওয়া ও অন্যকে সচেতন করা যায়। ফলে আওতাধীন এলাকার বাইরে থেকে কোনো লোক এলেই, তাকে আলাদা করে রাখা হচ্ছে। তাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। ব্যক্তি নিরাপত্তা সম্পর্কে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি পুলিশ সবাইকে সচেতন করছে। ব্যক্তি সচেতনতাই পারে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঠেকাতে। নিজের এবং অন্যদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতাই পারে ‘সামাজিক দূরত্ব’ কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে। কাজেই ‘নিজে সচেতন হই এবং অন্যদের সচেতন করি’, ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখি -এর মাধ্যমে নিরাপদ থাকি এবং দেশকে করোনাভাইরাস মুক্ত করি-এ হোক আমাদের আজকের প্রত্যয়।

ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ: ডিআইজি, ময়মনসিংহ রেঞ্জ