বাজেট বক্তৃতায় অনুপস্থিত দেশীয় খনিজ সম্পদ
বাজেট অর্থবছর ২০২১-২২অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় অনুপস্থিত দেশের খনিজ সম্পদ আহরণের বিষয়টি। গ্যাসের ঘাটতি মোকাবিলায় এলএনজি আমদানিকে সামনে এনেছেন।
গ্যাস ঘাটতির কারণে এখনই হিমশিম খেতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। আরও উৎপাদন হ্রাসের শঙ্কা করা হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ কমে গেলে, বিদ্যুতের উৎপাদন ও শিল্পকারখানা সংকটে পড়তে পারে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের এমন শঙ্কা সঠিক হলে সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গলার কাঁটায় পরিণত হতে পারে। দেশীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দাবি জানিয়ে আসলেও বাজেট বক্তৃতায় তার কোনই প্রতিফলন নেই।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন এক সেমিনারে বলেছেন, আমাদের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে ১১ হাজার মেগাওয়ার্ট। এসব কেন্দ্রে ১৫শ এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছি ১২শ এমএমসিএফডি (আগস্ট ২০২০)। যা দিয়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতে পারি। প্রায় ২৫ শতাংশ গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে থাকছে। গ্যাস থেকে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৮২৫০ মেগাওয়াটের মতো।
বাংলাদেশে ২৭টি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব ফিল্ডে প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ২১ দশমিক ৪ টিসিএফ, আরও ৬ টিসিএফ রয়েছে সম্ভাব্য মজুদ। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ১৮ টিসিএফ উত্তোলন করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রমাণিত মজুদ অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৩ টিসিএফ, আর সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে আরও ৭ টিএসএফ’র মতো। আর প্রতি বছরে উত্তোলিত হচ্ছে প্রায় ১ টিসিএফ’র মতো।
আন্তর্জাতিক জালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী খন্দকার সালেক সূফী বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, গ্যাসের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। এক সময় ২৭০০ এমএমসিএফডি উৎপাদিত হতো এখন আড়াই হাজারের নিচে নেমে এসেছে। বর্তমানে দৈনিক উত্তোলিত গ্যাসের প্রায় ৫০ শতাংশ আসছে শেভরনের ফিল্ড থেকে। বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বিবিয়ানা ফিল্ডে পানি আসা শুরু করেছে। যে কোনো সময় ফিল্ডটির গ্যাস উৎপাদন ব্যাপক আকারে কমে যেতে পারে। কি হারে হ্রাস পাবে তা ধারণাতীত হতে পারে।
২০২৩ সাল নাগাদ গ্যাস উৎপাদন বড় ধরনের হ্রাস পেতে পারে। তেমন পরিস্থিতির জন্য পেট্রোবাংলার কোনো প্রস্তুতি দৃশ্যমান নয়। তারা এখনই গ্যাসের যোগান দিতে পারছে না। এলএনজি আমদানি করেও ঘাটতি সামাল দিতে পারছে না। গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে দ্রুতগতিতে, সেখানে যদি দেশীয় গ্যাস হ্রাস পায় তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। বর্তমানে এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মোকাবিলা করার চেষ্টা চলছে। এলএনজি আমদানির সক্ষমতা বাড়ানো বিষয়টিও সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয় বহুল।
২০২৫ সালের আগে এলএনজি আমদানি বাড়ানো সম্ভব না। বর্তমানে ১০০০ এমএমসিএফডি এলএনজি আমদানি করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। এই এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা ছিল ২০১৪ সালে। বাস্তবায়ন হতে আর ৫ বছর বেশি সময় লেগে গেছে। ২০১৮ সালের আগস্টে প্রথম ইউনিট ৫০০ এমএমসিএফডি আনতে সক্ষম হয়। দ্বিতীয় ইউনিট এসেছে ২০১৯ সালের এপ্রিলে। মাতারবাড়িতে ১০০০ এমএমসিএফডি ক্ষমতা সম্পন্ন ল্যান্ড বেজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। মাত্র কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নির্ধারিত সময়ে আসবে সে কথা বলা জটিল। পূর্বের অভিজ্ঞতা নেগেটিভ উত্তর দেয়। অর্থাৎ ঘাটতি বেড়ে গেলেও বাড়তি এলএনজি আমদানির পথ প্রায় বন্ধ।
অথচ অর্থমন্ত্রী জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ প্রসঙ্গে বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের মোট চাহিদার অবশিষ্ট এলএনজি আমদানি করে যুক্ত করা হচ্ছে। সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য মাতারবাড়িতে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার ল্যান্ড-বেইজড একটি এলএনএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গ্যাসের ঘাটতি মোকাবিলায় সবচেয়ে ভালো উপায় হতে পারতো কয়লা উত্তোলন ও বেশি বেশি কূপ খনন করা। কিন্তু সেই ট্রেন মিস করেছে বলে মনে করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। কয়লা এখনই না তোলার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। আর বেশি কূপ খনন থেকেও রয়েছে অনেকটা পিছিয়ে। সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানও হতাশাজনক।
জ্বালানি বিভাগের যখন বেহাল অবস্থা, তখন বিদ্যুৎ বিভাগ নতুন নতুন গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়ন করে চলেছে। ২০১৬ সালের রিভাইস মাস্টারপ্লানে ২০২১ সালে ২৬৬১ মেগাওয়াট ও ২০২২ সালে ১১৮৮ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র যুক্ত হওয়ার কথা।