মূল্যস্ফীতি আর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করা হচ্ছে আজ (বৃহস্পতিবার) বিকাল তিনটায়। আগামী অর্থবছরে দেশের মানুষের ওপর বাড়ছে প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকার বাড়তি চাপ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ৪৯ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার কর আদায়ের লক্ষ্য বেধে দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে কর বাবদ ৪ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা কর হিসেবে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হচ্ছে। এ হিসাবে কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৫.৩৮ শতাংশ।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার কর আদায়ের লক্ষ্যের বিপীতে এপ্রিল পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ২২৯ কোটি টাকা বা ৭০.৫০ শতাংশ। লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় কম থাকায় চলতি বছরের লক্ষ্য কমেছে ৪.৬৭ শতাংশ।
বাজেট প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সরকারের করের সবচেয়ে বড় অংশ আদায় করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। সংস্থাটিকে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা কর আহরণের লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হচ্ছে। নতুন বছরে করের বোঝাও সবচেয়ে বেশি বাড়াচ্ছে এই সংস্থাটি। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বেশি কর আদায় করতে চায় এনবিআর।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এনবিআর -এর জন্য ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি কোটি টাকার কর আহরণের লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এ হিসাবে নতুন বছরে সংস্থাটির কর আহরণের লক্ষ্য বাড়ছে প্রায় ১৭ শতাংশের বেশি।
এবারের মূল বাজেটে কর আহরণ করতে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার কর আহরণের লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হলেও সংশোধিত বাজেটে তা ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। মূল বাজেটের তুলনায় এনবিআর এর কর আহরণ বাড়ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা বা ১১.৬৩ শতাংশ।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এবার বিভিন্ন সংকট সামাল দিতে আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার মাত্র ৩৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বা ৪.৬২ শতাংশ বাড়ছে। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় বাজেট বৃদ্ধির হার দাঁড়াচ্ছে মাত্র ১১.৫৬ শতাংশ। ঘাটতি সামাল দিতে বাজেটের আকার বৃদ্ধির হারের তুলনায় কয়েক গুন বেশি কর বাড়াচ্ছে সরকার।
অন্যান্য খাতগুলো পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এনবিআর এর বাইরে বিভিন্ন সংস্থার কর প্রায় ২৫ শতাংশ কমিয়ে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এবারের মূল বাজেটে এ খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও তা ১৯ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
কর ছাড়া সরকারের অন্যান্য খাতের আদায়ও কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। এখাতে চলতি অর্থবছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের মূল লক্ষ্য সংশোধিত বাজেটে ৪৯ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। আগামী অর্থবছরে এ খাতে ৪৬ হাজার কোটি টাকা আদায়ের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। এখাতে আয়ের লক্ষ্য কমছে ৪ হাজার কোটি টাকা বা আট শতাংশ।
আদায় বাড়াতে নতুন অর্থবছরে বড় ধরনের কর নেটের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ১০ লাখ বা এর বেশি মূসক (ভ্যাট) পরিশোধের ক্ষেত্রে ই-পেমেন্ট বা এ-চালান বাধ্যতামূলক হবে। বর্তমান ই-পেমেন্ট বা এ-চালান শুধু ৫০ লাখ টাকা বা তার বেশি ভ্যাট পরিশোধে ব্যবহারের বিধান আছে। সেটি কমিয়ে আনলে এ খাত থেকে অনিয়ম দূর হবে এবং রাজস্ব আহরণ বাড়বে।
এছাড়া ইলেকট্রনিকস টেক্স ডিকটেশন সোর্স (ইটিডিএস) অনলাইন প্ল্যাটফরম চালু, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি, সেবার মান উন্নয়ন ও রাজস্ব আদায় বাড়াতে আয়কর আইন-২০২৩ প্রয়োগ করা হবে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে অনেক সম্ভাব্য করদাতা থাকলেও তারা আয়কর দিচ্ছেন না বলে মনে করে এনবিআর। তাদের করজালের আওতায় আনতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইডিএফ মেশিন স্থাপনের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অনেক প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনা হবে।
এছাড়া নতুন করদাতাদের কর জালে আনতে বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন, ডিপিডিসির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)