বাজেটে রেলের উন্নয়নে মহাযজ্ঞ উদ্যোগ

  সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ
  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সাশ্রয় এবং নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে রেলখাতের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে সরকার। এরই মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে রেলের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।

আগামী অর্থবছরে নতুন ২০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রো লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ যুক্ত হবে। একই সঙ্গে পুনর্বাসনকৃত ১০০টি এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ রেল পরিবহনে সংযোজন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদ ভবনে আয়োজিত ‘মূল্যস্ফীতি আর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করে এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সাশ্রয় এবং নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে রেলখাতের উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গত পনেরো বছরে দেশে ৯৪৭.৯৯ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ, ৩৪০ কিলোমিটার মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর, ১ হাজার ৩৯১ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্বাসন/পুনর্নির্মাণ, ১৪৮টি নতুন স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ, ২৩৮টি স্টেশন বিল্ডিং পুনর্বাসন/পুনর্নির্মাণ, ১ হাজার ৬২টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ, ৭৯৪টি রেলসেতু পুনর্বাসন/পুনর্নির্মাণ, ১৩৭টি স্টেশনে সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চিলাহাটি এক্সপ্রেসসহ নতুন ১৪৪টি ট্রেন চালু করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া, বাংলাদেশ রেলওয়ের মাস্টারপ্ল্যান, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক ও ২য় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা/টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪ অনুযায়ী বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

খুলনা হতে মোংলা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত ৬৪.৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলওয়ে লাইন নির্মাণ কাজ শেষে উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে বিদ্যমান বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় পদ্মা সেতুর রেল সংযোগের সাথে মোংলা সমুদ্রবন্দরের সংযোগ স্থাপন হবে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

এছাড়া, আখাউড়া হতে লাকসাম সেকশনে ৭২ কিলোমিটার দ্বৈত লাইন নির্মাণ সম্পন্ন হবে। ইতোমধ্যে, ঢাকা হতে কক্সবাজার নতুন রেল যোগাযোগ চালু হওয়ায় উক্ত সেকশনটি ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ে এবং উপ-আঞ্চলিক করিডোরের একটি বড় অংশ হিসেবে কাজ করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

উল্লেখ্য, আগামী অর্থবছরে নতুন ২০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রো লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ যুক্ত হবে এবং পুনর্বাসনকৃত ১০০টি এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ রেল পরিবহনে সংযোজন করা হবে। আশা করছি এর ফলে যাত্রী সেবার মান, মালামাল পরিবহন সক্ষমতা, রেলওয়ের পরিচালন দক্ষতা এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিম্নবর্ণিত উল্লেখযোগ্য কার্যাবলি/প্রকল্প/কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে:

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ লাইন নির্মাণ; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ; দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মায়ানমারের নিকটে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ; বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন (রোলিং স্টক সংগ্রহ); বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০০ টি ব্রডগেজ গেজ যাত্রীবাহী গাড়ী সংগ্রহ; বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনের ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ; মধুখালী হতে কামার খালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ; বাংলাদেশ রেলওয়ের জয়দেবপুর হতে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ; বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ঈশ্বরদী-পাবর্তীপুর সেকশনের স্টেশনসমূহের সিগন্যালিং ও ইন্টারলকিং ব্যবস্থার প্রতিস্থাপন ও আধুনিকীকরণ; বগুড়া হতে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন, সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ; চট্টগ্রাম-দোহাজারী মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজ রেলপথে রূপান্তর; বাংলাদেশ রেলওয়ের খুলনা-দর্শনা জংশন সেকশনে ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ; এবং ধীরাশ্রম আইসিডি নির্মাণের লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণসহ পুবাইল-ধীরাশ্রম রেল লিংক নির্মাণ।

এর আগে, প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনে দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাজেটে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর দেন।

‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’ শিরোনামে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এবার ঘাটতিই থাকবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই বিশাল পরিমাণ ঘাটতি পূরণে কয়েকটি খাতকে উৎস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। এই খাত থেকে মোটা দাগে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার সহায়তা পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ১ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প ঋণও রয়েছে। এর পাশাপাশি ব্যাংকবহির্ভূত খাত হিসেবে বিবেচিত সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব আয়ের টার্গেট দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। নন-এনবিআর থেকে আসবে আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির টার্গেট থাকছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।