শীতের দেশের টিউলিপ গাজীপুরে, সম্ভাবনার নতুন দ্বার
টিউলিপ বাগান ঘুরে (গাজীপুর, শ্রীপুর): শীত প্রধান দেশের ফুল টিউলিপ। টিউলিপের সৌন্দর্য যেমন মনোমুগ্ধকর, ঠিক তেমনি অর্থনৈতিক দিক দিয়েও গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে একে রাজকীয় ফুল বলে থাকেন। রাজকীয় এই ফুলটি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ফোটালেন গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন। শীতের দেশের ফুল নাতিশীতোষ্ণ দেশে ফুটিয়ে যেন অসাধ্য সাধন করলেন তিনি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে ১ কি.মি দূরে এক হাজার বীজ (বাল্ব) দিয়ে টিউলিপের বাগান শুরু করেন দেলোয়ার। ডাচ একটি সংস্থা থেকে উপহার পান এসব বীজ। এখন এক হাজারটি টিউলিপ ফুলের মালিক তিনি।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) কর্মব্যস্ত দিনে শহরের যানজট পেরিয়ে শ্রীপুরে দেলোয়ার হোসেনের টিউলিপ বাগান ঘুরে এলাম।
প্রকৃতিতে শীতের জরাজীর্ণতা কাটিয়ে এখন বসন্তের সজীবতা। শীতকালীন ফুল হওয়ায় দেলোয়ারের বাগানেও টিউলিপ প্রায় শেষের দিকে। টিউলিপ গাছেও এখন ঝরা পাতার গান। তাই চোখ পড়ল কয়েকটি অবশিষ্ট ফুলের দিকে।
ফুল চাষের সাধক দেলোয়ারের বাগানে পাঁচ রংয়ের টিউলিপ রয়েছে। বাগানে দাঁড়ালে মনে হবে আপনি শীতের দেশ- সুইজারল্যান্ড অথবা নেদারল্যান্ডে রয়েছেন।
দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী দীর্ঘদিন থেকে ফুল চাষ করছেন। ছয় ঋতুর এদেশে টিউলিপের বাগান করতে দেলোয়ার সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন তার কর্মঠ স্ত্রীকে।
বাগানের পরিচর্যাকারী এরশাদ উদ্দিন জানান, গত ডিসেম্বরে তারা টিউলিপের এক হাজার বাল্ব (বীজ) রোপণ করেন। এরপর মাত্র ২২ দিনে একটি বাল্ব চারায় পরিণত হয়। টিউলিপ চাষে সঠিকভাবে নিড়ানি পানি বিষ দিতে হয়েছে।
স্থানীয় রাসেল মিয়া জানান, প্রতিদিন টিউলিপের বাগান দেখতে অনেক মানুষ ভিড় করে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফুল চাষিরা তাদের বাগান দেখতে আসেন। অনেক সময় ফুল বিক্রেতারাও আসেন। বিক্রেতারা ফুলের দরদাম করলেও প্রথম অবস্থায় বাগান থেকে কোন ফুল বিক্রি করা হয়নি।
দেলোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ফুল চাষের সঙ্গে যুক্ত এই দম্পতি। ৩ বছর আগে ডাচ একটি সংস্থা থেকে ফুল চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। সংস্থাটি তাদের ১০০০ টিউলিপের বাল্ব উপহার দেয়। সংস্থাটির পরামর্শ অনুযায়ী পরিচর্যা করে টিউলিপ ফুটাতে সক্ষম হন তারা।
আবহাওয়া অধিদফতরের সঙ্গে কথা বলে সার্ভে করা হচ্ছে, কোন অঞ্চলে টিউলিপ চাষ করা যেতে পারে। যেহেতু শীতপ্রধান দেশের ফুল টিউলিপ ওই হিসেবে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ চুয়াডাঙ্গা এবং সিলেট অঞ্চলে চাষ করা যেতে পারে।
আগামী বছর থেকে তারা আরো বড় পরিসরে টিউলিপের চাষ করতে চান বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শুধু বাণিজ্যিকভাবে নয় পর্যটকদের জন্য টিউলিপ বাগান করার ইচ্ছা রয়েছে আমার।
টিউলিপের চাষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং বেকার জনগোষ্ঠীর লাভবান হতে পারে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ডঃ ইমরুল কায়েস বার্তা২৪.কমকে বলেন, যিনি টিউলিপ ফুলের চাষ করেছেন তাকে সাধুবাদ জানাই। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ এবং ভালো কাজ। বাংলাদেশে যদি বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপের চাষ করা যায়, তবে এই ফুল দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানিও করা যাবে। এতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে। এই ফুলের চাষ বড় আকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের উচিত যিনি টিউলিপ ফুল চাষ করছেন তাকে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। বিষয়টি নিয়ে আরো গবেষণা করা যেতে পারে। নতুন জাত উদ্ভাবন করা যেতে পারে।