আমেরিকায় ইতিহাস গড়া কে এই জো বাইডেন!
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনজোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র, যিনি সর্বজন স্বীকৃত জো বাইডেন হিসেবে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যিনি ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হয়ে জিতে ইতিহাস গড়লেন তিনি। জো বাইডেনের রাজনীতিতে পথ চলা ৫০ বছর! ২০০৯-১৭ পর্যন্ত আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন তিনি। ৩৬ বছর ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ছিলেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ।
জন্ম
পেনসিলভেনিয়ার স্ক্রানটনে ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর একটি ক্যাথলিক পরিবারে জন্ম জো বাইডেনের। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ধনাঢ্য পরিবারে সন্তান ছিলেন না বাইডেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় বাইডেন বেড়ে ওঠেন স্ক্রানটন, নিউ ক্যাসল কাউন্টি ও ডেলাওয়ারের মধ্যেই। বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র আর আইরিশ বংশোদ্ভূত মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান। অভাব-অনটনের কারণে তার পরিবারকে ডেলাওয়্যারে আসতে হয়। ছোট বেলায় তেতলামির জন্য নানা কটুক্তি শুনতে হয়েছে তাকে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই সমস্যা তিনি কাটিয়ে ওঠেন।
শিক্ষা
পড়াশুনা করেছেন আইন, ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। সেরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক অর্জনের আগে ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে পড়েন তিনি। কৈশোর থেকে জো বাইডেনের মধ্যে নেতৃত্বগুণ ছিল।
পারিবারিক জীবন
ব্যক্তিজীবনে নানা ট্র্যাজেডির মুখোমুখী হয়েছেন জো বাইডেন। এরপর স্বজন হারানো, স্ত্রী-পুত্রবিয়োগ, নিজের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ সহ নানা সংকটে আর ২০ বছর নিজের সঙ্গে সংগ্রাম করেন বাইডেন।
সড়ক দুর্ঘটনা, অকালে সন্তান হারানোর মতো ঘটনা ছিল তার পারিবারিক জীবনে। ১৯৬৬ সালে সহপাঠী নেইলা হানটারকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে তিন সন্তান রয়েছেন- জোসেফ আর ‘বিউ’ বাইডেন, রবার্ট হান্টার ও নাওমি ক্রিস্টিনা। ১৯৭২ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনা স্ত্রী নেইলাসহ একমাত্র কন্যা নাওমিকে হারান বাইডেন।
দীর্ঘ পাঁচ বছর নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের পর ১৯৭৭ সালে তার শিক্ষিকা জিল ট্রেসি জ্যাকবসকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে অ্যাশলে ব্লেজার নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০১৫ সালে মস্তিস্ক কানসারে তার বড় ছেলে বো বাইডেন মৃত্যুবরণ করেন।
রাজনৈতিক জীবন
শুরুতে জো বাইডেন আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও পরে নগর পরিষদের একটি আসনে জয়ের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।১৯৭০ সালে ডেলাওয়ারের নিউ ক্যাসল কাউন্টির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন জো বাইডেন। ১৯৭২ সালে সিনেটে বিজয় আসে তার। মাত্র ৩০ বছর বয়সে শক্তিশালী সিনেট নেতাকে হারিয়ে ডেমোক্র্যাট দলের এক সম্ভাবনাময় তরুণ নেতাতে পরিণত হন। তারপর নাম লেখান ইতিহাসে। ১৯৮৮ ও ২০০৮ সালে হোয়াইট হাউসের যাওয়ার লড়াইয়ে অংশ নিলেও সুবিধা করতে পারেননি।
২০০৮ সালে জো বাইডেনকে রানিংমেট হিসেবে বেছে নেন ওবামা। ওই সময় ওবামা বলেন, বাইডেন পররাষ্ট্র বিষয়ে ঝানু রাজনীতিবিদ। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।৭৩ থেকে টানা ২০০৯ সাল পর্যন্ত সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাইডেন।
আমেরিকার পররাষ্ট্র সম্পর্কিত সিনেট কমিটির সভাপতি ছিলেন জো বাইডেন। ২০০২ সালে ইরাকে যুদ্ধে যাওয়ার বিষয়ে তিনি অনুমোদন দেন। তবে এর আগে এর জর্জ ডব্লিউ বুশের সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিরোধিতা করায় তোপের মুখে পড়েন তিনি। পরবর্তীতে তিনি বলকান গৃহ যুদ্ধ, ইরাকে বোমা হামলা, আফগানিস্তান দখলদারিত্বে সমর্থন দেন। ফলে নিজ দল ডেমোক্র্যাটে সমালোচিত হন।
জো বাইডেন ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এবার প্রেসিডেন্ট নির্বোচনের লড়াইয়ের ঘোষণা দেওয়া পর ইরানের সাথে আলোচনা, প্যারিস চুক্তি সমর্থন করেন তিনি। এছাড়াও আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সৌদ আরবকে সমর্থন না করার আহ্বান জানান।
ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে নানা উত্থান-পতনের পর ঘুরে দাড়ান জো বাইডেন। তবে জো বাইডেন প্রায়ই একটা কথা বলেন, ‘‘বাবার একটা কথা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা - কে তোমাকে কতবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল, সেটা বড় কথা নয়, কত দ্রুত তুমি উঠে দাঁড়াতে পারলে, মানুষ হিসাবে সেটাই হবে তোমার সাফল্যের পরিচয়।’’
এমন সংগ্রামমুখর যার জীবন, এমন সুন্দর কথা যিনি বলেন, তিনিই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।