হারিয়ে গেলেন তিনি!
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনঅনেকেই আনন্দে হর্ষধ্বনি করছেন। কেউ কেউ বেদনাহত। তবু বাস্তবতা এই যে, নিজ দেশ ও বিশ্ব রাজনীতির রঙ্গমঞ্চ থেকে হারিয়ে গেলেন তিনি!
মার্কিন দেশে নাটকীয়তায় ভরা উত্তেজক নির্বাচন শেষে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। আড়াই মাসের মধ্যেই হোয়াইট হাউস ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। একই সঙ্গে ইতি ঘটবে, বিশ্বব্যাপী তার আলোড়ন জাগানো কার্যক্রমেরও। যেসব কথা ও কাজের অধিকাংশই মানুষকে ক্ষুব্ধ, ব্যথিত ও উদ্বিগ্ন করেছিল।
তিনি একটি উগ্র দক্ষিণপন্থী নিকৃষ্ট রাজনৈতিক আবহাওয়া গড়ে তুলেছিলেন। বর্ণবাদী হুঙ্কারে মাঠে নামিয়ে ছিলেন আগ্রাসী শ্বেতাঙ্গদের। সংখ্যালঘু ও অভিবাসীদের নিত্য ভীতির মধ্যে আবর্তিত করেছিলেন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক-জাতিগত ক্ষেত্রে সূচনা করেছিলেন চরম বিভাজনের। 'আমরা এবং ওরা' বলে নিজের দেশ ও বিশ্বকে ভাগ করেছিলেন।
মার্কিন গণতন্ত্রে তালে পরাজিত করেছে। বাইডেনের বিজয়ের চেয়ে তীব্র হয়েছে তার পরাজয়ের ঘটনাটি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পরাজয়ের পর তিনি যাবেন কোথায়? কেমন হবে তার সামনের দিনগুলো?
মার্কিন দেশের রীতিনীতিতে তিনি আর সরাসরি রাজনীতি করতে পারবেন না। পূর্ণ অবসরে যেতে হবে তাকে। উন্নয়নশীল দেশের মতো আমৃত্যু রাজনীতির স্বাদ তিনি পাবেন না। সাংবিধানিক নিয়মে সরকারি দায়িত্ব থেকে অন্তত ৪ বছরের জন্য তো বটেই অবসরে যেতে হচ্ছে ট্রাম্পকে। তবে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে হলেও ট্রাম্পের জন্য সরকারি খাতে খরচ খুব কম হবে না আমেরিকায়।
বেশ মোটা অঙ্কের পেনশন তো পাবেনই আজীবন। সঙ্গে পাবেন আমেরিকার ঝাঁচকচকে এলাকায় অফিস চালানোর বিশাল জায়গা। তার যাবতীয় খরচ বহন করবে সরকার। সেই অফিসে বহু কর্মী রাখার যাবতীয় খরচও বহন করা হবে। তা ছাড়াও পাবেন বিস্তর ঘোরাঘুরি আর টেলিফোনের খরচের প্রচুর ডলার। আর আজীবন পাবেন তার ও তার পরিবারের জন্য সিক্রেট সার্ভিসের নিরাপত্তা রক্ষার সুবিধা। যার সব খরচই সরকারের।
শুধু ট্রাম্প নন, তাকে নিয়ে আমেরিকার যে ৪৫ জন প্রেসিডেন্ট এখনও পর্যন্ত অবসরে গিয়েছেন আজীবন তাদের সকলের জন্যই সরকারি খাতে পেনশন-সহ ওই সব ক্ষেত্রে বিশাল অঙ্কের অর্থবরাদ্দ থাকে বাজেটে। আমেরিকার সংবিধান মোতাবেকই তা হয়, যার শুরুটা হয়েছিল আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেই, ১৭৮৯ সালে।
সব প্রাক্তন প্রেসিডেন্টই আমেরিকার সংবিধানের রীতি অনুযায়ী, বেতন পান প্রেসিডেন্টের ক্যাবিনেটের সদস্যদের এখনকার মাইনের মতো। ২০১৭ সালে সেই পরিমাণ ছিল প্রতি বছরে ২ লক্ষ ৭ হাজার ৮০০ ডলার। এর মধ্যে অন্যান্য ভাতা নেই, মনে রাখবেন।
২০১৮ সালে কংগ্রেসে যে বাজেট প্রস্তাব জমা পড়েছিল তাতে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অফিসের জায়গার জন্য খরচ জানানো হয়েছিল ৫ লক্ষ ৩৬ হাজার ডলার। আর এক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের ঘোরাঘুরির জন্য খরচ বরাদ্দ করা হয়েছিল ৬৮ হাজার ডলার।
শুধু তাই নয় প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের স্বামী বা স্ত্রীদের মোটা অঙ্কের পেনশন পাওয়ারও অধিকার দেওয়া হয়েছে আমেরিকার সংবিধানে। সেটাও খুব কম নয়! বছরে ২০ হাজার ডলার। আজীবন। সঙ্গে তারাও পান ঘোরাঘুরি, টেলিফোন ও যোগাযোগরক্ষার যাবতীয় খরচ।
২০১৫-য় প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও তার পরিবারের নিরাপত্তারক্ষার জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ২ লক্ষ ডলারেরও বেশি। আর সেই খরচটা আর এক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ক্ষেত্রে ছিল ৮ লক্ষ ডলার।
এসব ছাড়াও আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টরা আত্মজীবনী লিখে, কোনও নামজাদা কর্পোরেট সংস্থার পরিচালন বোর্ডের সদস্য হয়ে বা বিশ্বের নানা প্রান্তে আমন্ত্রণী বক্তৃতা দিয়ে প্রচুর ডলার উপার্জন করতে পারেন। আমেরিকার সংবিধানে সেই অধিকার দেওয়া রয়েছে।
অবসর নেওয়ার পর শুধু বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দিয়ে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন উপার্জন করেছিলেন সাড়ে ৬ কোটি ডলার। আর আত্মজীবনী ছাপিয়ে রোজগার করেছিলেন দেড় কোটি ডলার।
এসব সুযোগই থাকবে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পেরও। কিন্তু তিনি কোন ধরনের সুযোগ নেবেন, সেটা নির্ভর করছে তার ইচ্ছা ও আচরণের উপর। দেশ ও বিশ্বের রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে তাকেও খুঁজতে হবে নিজের একান্ত একটি জগৎ। তবে, সে জগতটিও সম্ভবত হবে তার ক্ষমতাকালের সময়কালের মতোই চমক, হটকারিতা ও নাটকীয়তায় ভরপুর। কারণ, ট্রাম্প বলে কথা! তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের তালিকা যেভাবে উদ্ভট মানুষ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছেন, অবসরেও নিশ্চয় তার কিছুটা ছাপ থেকেই যাবে!