আরাফাতের দিন মক্কার নারীরা যেভাবে কাটান
![আরাফাতের দিন সকালে পবিত্র কাবা, ছবি: সংগৃহীত](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/Jun/15/1718450748318.jpg)
আরাফাতের দিন সকালে পবিত্র কাবা, ছবি: সংগৃহীত
সৌদি আরবের স্থানীয় সময় ৮ জিলহজ হজের প্রথম দিন। ওই দিন লাখ লাখ মুসলমান যখন মিনায় যাত্রা শুরু করেন, তখন মক্কার নারীরা মসজিদে হারামের দিকে রওয়ানা হন। এটা তাদের অনেক পুরনো ঐতিহ্য।
সৌদি গণমাধ্যম আরব নিউজ মক্কার নারীদের ঐতিহ্য এক প্রতিবেদনে বলেছে, আরাফাতের দিন ইসলামিক ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে পবিত্র দিন। দিনটি প্রার্থনা এবং মুসলমানদের ঐক্য প্রকাশের জন্য সংরক্ষিত। এই দিনের সঙ্গে মক্কাবাসীদের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য জড়িত।
লাখ লাখ হজযাত্রী আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মক্কা, বিশেষ করে মসজিদে হারাম অনেকটাই ভিড়হীন থাকে, বলা চলে নীরব হয়ে যায়। এই সময়ে ওই জায়গা পূরণ করেন মক্কার স্থানীয় নারীরা। এমন ফাঁকা কাবা বছরের অন্য সময় পাওয়া যায় না।
এ সময় নারীরা পবিত্র উমরা পালন করেন। এটি মক্কা ও আশেপাশের এলাকার মানুষের সাধারণ অভ্যাস।
যেখানে মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও লাখ লাখ মানুষের ভিড় ছিল, সে জায়গায় ভিড় কমে গেলে তা মক্কার স্থানীয় নারীরা পূরণ করেন। দিনটিকে ‘ইয়াওমুল খালিফ’ বা শূন্যস্থান পূরণের দিন বলা হয়। এই দিনে মক্কার স্থানীয় নারী ও শিশুরা মসজিদে হারামের চলে যায় আর পুরুষ হজপালনের জন্য কিংবা হজযাত্রীদের সেবার জন্য মিনা কিংবা আরাফাতের ময়দানে।
হজের জন্য মক্কার মানুষ ঈদুল ফিতরের পর থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেন। আগের দিনে হজের মুয়াল্লিমদের বেশি মেহনত করতে হতো, এখন তা অনেকটাই কমে গেছে। আগে মক্কার ঘরে ঘরে হাজিদের থাকার ব্যবস্থা করা হতো, এখন তারা থাকেন নির্দিষ্ট হোটেলে। কিন্তু হজযাত্রী আর মক্কাবাসীদের মধ্যকার সম্পর্ক তেমনই রেয়ে গেছে, যা আর্থিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে।
এই সম্পর্ক মানবিক, আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয়। তাই হাজিদের সেবা করার প্রথা প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে চলে এসেছে এবং তারা হাজিদের সেবা করা এবং তাদের যত্ন নেওয়াকে সৌভাগ্য ও আশীর্বাদ বলে মনে করেন।
তাই তারা হজযাত্রীদের মক্কা, মিনা ও আরাফাতের পথে-ঘাটে এখনও হজযাত্রীদের জন্য খাবার, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে সহযোগিতা করে, আর কিছু করতে না পারলেও পথ দেখিয়ে পাশে দাঁড়ায়।
আরাফাতের ময়দানে হাজিরা অবস্থানের সময় মক্কার নারীরা রোজাপালন করেন। এদিন তারা কাবা তাওয়াফসহ সারাদিন মসজিদে হারামে অবস্থান ও ইফতার শেষে ঘরে ফিরে যান। অনেকে রাতভর সেখানে থেকে ইবাদত-বন্দেগি করেন। পরের দিন মক্কায় পালিত হয় ঈদুল আজহা।
উল্লেখ্য, যারা হজপালন করছেন না- তাদেরকে আরাফাতের দিন রোজা রাখতে উৎসাহিত করা হয়েছে ইসলামে। এ দিনে রোজা অত্যন্ত ফজিলতময়।
জেদ্দার বাসিন্দা নিদা জহির আরব নিউজকে বলেন, ‘শৈশবে তিনি তার দাদী এবং খালাদের আরাফাত দিবসে মসজিদে হারামে যেতে দেখতেন।’
গ্রাফিক ডিজাইনার নিদা জহির বলেন, ‘সে সময় থেকে সাম্প্রতিক অতীত পর্যন্ত, আমি আরাফাতের দিনে মক্কায় নারীদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে দেখেছি।’
নিদা জহির বলেন, ‘২০১১ সালে আমার এক চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়, যা সারাজীবন মনে থাকবে। আমি কাবার চারপাশে হাঁটছিলাম, আমি হঠাৎ কাউকে কাবার আবরণ স্পর্শ করতে দেখি। সে সময় আমি তাওয়াফ পূর্ণ করার দিকে মনোনিবেশ করছিলাম। তারপর যখন কাবা স্পর্শ করার সুযোগ পেলাম, সেই সময়কার আধ্যাত্মিক অনুভূতি বর্ণনাতীত। এরপর আর কখনও কাবা স্পর্শ করার সুযোগ পাইনি।’
নিদা জহির আরাফাত দিবসের সঙ্গে জড়িত ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমি আশা করি, আবার সেখানে গিয়ে কাবা স্পর্শ করতে পারব, আমি আমার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যাব।’
আরব নিউজ অবলম্বনে