আসামিরা কোনো রকম অনুকম্পা পেতে পারেন না
হলি আর্টিজান মামলার রায়ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১২টা ৫ মিনিট। রায় পড়ার জন্য এজলাসে ওঠেন সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান। তিনি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, আসামিপক্ষের আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে হলি আর্টিজান মামলার রায় পড়তে শুরু করেন।
শুরুতেই তিনি বলেন, রায়ে সর্বোচ্চ ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। রায় শুধু রাষ্ট্রপক্ষে গেলেই ন্যায় বিচার নয়, কিংবা আসামিপক্ষেই গেলেই ন্যায় বিচার নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে জিহাদের মাধ্যমে খিলাফত কায়েম করার লক্ষ্যে ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এ হামলা চালানো হয়।
হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তামিম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান ও সারোয়ার জাহান। হলি আর্টিজানে নিহত পাঁচজন ও অভিযুক্ত সাত আসামির প্রত্যেকেরই এ হত্যাকাণ্ডে সাধারণ অভিপ্রায় ছিল। তাদের কেউ কেউ অস্ত্র যোগান দাতা, কেউ অর্থ যোগান দাতা, কেউ পরিকল্পনাকারী। হলি আর্টিজানে হামলা করে বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব জানান দেওয়া ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চরিত্র হনন করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল।
বাংলাদেশে নব্য জেএমবির সন্ত্রাসীরা গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছেন। হলি আর্টিজানে হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদের উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও জঘন্যতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। দেশ-বিদেশের নিরীহ মানুষ যখন রাতের খাবার খেতে হলি আর্টিজান বেকারিতে যান, তখন তাদের ওপর নেমে আসে জঙ্গিবাদের ভয়াল রূপ। তাদের এক এক করে হত্যা করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তাদের ধারালো ছুরি দিয়ে কোপানো হয়। মুহূর্তেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় হলি আর্টিজান বেকারি। কলঙ্কজনক এ হামলার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এর ফলে শান্তি সম্প্রীতির জন্য পরিচিত বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়। সেজন্য সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে আসামিরা কোনো রকম অনুকম্পা পেতে পারেন না।
এরপর বিচারক মামলার আদেশ দেন। আদেশে হলি আর্টিজান বেকারিতে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা মামলার রায়ে আট আসামির মধ্যে সাতজনকে ফাঁসির নির্দেশ দেন। আর আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ না হওয়ায়, তাকে খালাস দেন।