রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে নাটোর থেকে শুরু হয় নব্য জেএমবির কিলিং মিশন

  হলি আর্টিজান মামলার রায়
  • নাইমুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নাটোর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নব্য জেএমবির কমান্ডার রাজীব গান্ধী, ছবি: সংগৃহীত

নব্য জেএমবির কমান্ডার রাজীব গান্ধী, ছবি: সংগৃহীত

হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী। তার নেতৃত্বেই নাটোরে থেকে শুরু হয় নব্য জেএমবির কিলিং মিশন। হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ২৫ দিন আগে ২০১৬ সালের ৫ জুন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া খ্রিষ্টানপল্লীর মুদি দোকানি সুনীল গোমেজ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে কিলিং মিশনটি শুরু করে সংগঠনটি। আর এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনায় ছিলেন রাজীব গান্ধী। নব্য জেএমবির কিলিং মিশনের সময় সংগঠনটির উত্তরাঞ্চলের সামরিক কমান্ডারও ছিলেন তিনি। হত্যা পরিকল্পনায় মোট ৬জন অংশগ্রহণ করে। ওইদিন সন্ধ্যায় জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে।

সাংগঠনিক কাজের সুবিধার্থে ৬টি নাম ব্যবহার করতেন রাজীব গান্ধী। সেগুলো হচ্ছে, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজিব গান্ধী ওরফে সুবাস ওরফে টাইগার ওরফে শান্ত ওরফে আদিল। তবে রাজীব গান্ধী হিসেবে সংগঠনে পরিচিতি পান তিনি।

বিজ্ঞাপন

হত্যাকাণ্ডের একদিন পর ৭ জুন ঝিনাইদহে হিন্দু পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী ও তিনদিন পর ১০ জুন পাবনায় ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের সেবাশ্রমের এক সেবায়েত নিত্যরঞ্জন পাণ্ডেকে একই কায়দায় হত্যা করে সংগঠনটির জঙ্গিরা। হামলার পর দায় স্বীকার করে বার্তা দিয়েছিলে নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চলের সামরিক কমান্ডার রাজীব গান্ধী।

খ্রিষ্টানপল্লীর মুদি দোকানি সুনীল গোমেজ

২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পুর্ণভুতপাড়া গ্রাম থেকে রাজীব গান্ধীকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুনীল গোমেজ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন রাজীব গান্ধী। এরপর তাকে আনা হয় নাটোরে। নাটোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শামসুল আল আমিনের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রাজীব গান্ধী।

বিজ্ঞাপন

ওই জবানবন্দীতে রাজীব গান্ধী বলেন, সুনীল গোমেজ হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে নাটোর বঙ্গজ্জ্বল রাজবাড়ীতে সহযোগীদের নিয়ে বৈঠক করেন তারা। তার নেতৃত্বে ওই বৈঠক থেকে স্থানীয় তারেকশ্বর শীব মন্দিরের পুরোহিত গোবিন্দ হালদার, শহরের অদূরে হরিশপুরের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় পরিচালিত ব্যাপিস্ট মিড মিশন হাসপাতালের একজন বিদেশি চিকিৎসক, খ্রিষ্টান মুদি ব্যবসায়ী সুনীল গমেজ এবং বনপাড়া খ্রিষ্টানপল্লীর আরেক ব্যবসায়ীকে টার্গেট করে জঙ্গিরা।

এ বিষয়ে তৎকালীন নাটোরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, ওই কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করে মোট ৫জন নব্য জেএমবি সদস্য। এদের মধ্যে একটি মোটরসাইকেলে তিনজন ছিলেন। হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করার পর মোটরসাইকেলটি পাঠিয়ে দেওয়া হয় পাবনার দিকে। আর থ্রিমা নামের একটি অ্যাপস ব্যবহার করে যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন তারা।

সুনীল গোমেজ হত্যাকাণ্ডের পরদিন তার মেয়ে স্বপ্না গোমেজ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বড়াইগ্রাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

রাজীব গান্ধীর জবানবন্দির সূত্র ধরে তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডে মোট ১২ জঙ্গির সম্পৃক্ততার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযুক্তদের মধ্যে ৭জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত ও ৪ জন পলাতক ছিলেন। একমাত্র জীবিত ও উপস্থিত আসামি ছিলেন রাজীব গান্ধী।

রাজীব গান্ধীকে আলোচিত হলি আর্টিজানে হামলার মামলায় ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত সুনীল গোমেজের স্ত্রী জোসিন্তা গোমেজ। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় উচ্চ আদালতেও রায় বহাল থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বনপাড়া ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত ফাদার বিকাশ হিউবার্ট রিবেরু বলেন, সুনীল গোমেজের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করি। আমরা সব ধর্মের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করি, আগামীতেও করতে চাই।

জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সভাপতি চিত্তরঞ্জন সাহা বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'আমরা রায়ে সন্তুষ্ট। আমরা বিশ্বাস করি উচ্চ আদালতে দৃষ্টান্তমূলক এই রায় বহালের পর কার্যকরের মাধ্যমে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে কেউ সাহস পাবে না।'