জীবনের উপরে সংগীত যেভাবে প্রভাব ফেলে!
মানুষ ভেদে একেকজনের একেক ঘরানার সংগীত পছন্দ। যে যেমন ধরনের সংগীত বা গানই পছন্দ করুক না কেন, গান শুনতে ভালোবাসেন সকলেই। দিনের শুরু থেকে শেষ, কানের ইয়ারফোনে বাজতে থাকে প্রিয় গানের সুরগুলো। একেবারেই সাধারণ এই কাজটিও যে শরীর ও মনের ওপর ফেলতে পারে বড় রকমের ইতিবাচক প্রভাব, সেটা সম্পর্কে অনেকেই অবগত নই। চমৎকার এই বিষয়টিকেই তুলে আনা হয়েছে আজকের ফিচারে।
কমায় ব্যথাভাব
সংগীত ও প্রিয় গান মনকে ভালো রাখার সাথে শারীরিক ব্যথাবোধকেও কমিয়ে আনে। গবেষণা থেকে দেখা গেছে সেইফ ইলেকট্রিক শক ট্রিটমেন্ট পরবর্তী ব্যথাভাব প্রায় ১৭ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারে সংগিত। এছাড়া যে সকল ক্যানসার আক্রান্ত রোগীরা আরামদায়ক ও ধীর লয়ের সংগীত শোনেন তাদের ব্যথা অনুভব করার মাত্রা কমে যায় অন্যদের চাইতে অনেকখানি।
ঘুম ভালো হয়
ঘুমপাড়ানি গান শুধু শিশুদের জন্যেই হয়, এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। ঘুমানোর আগে পছন্দসই ও ছন্দময় গান দ্রুত ঘুম আনতে সাহায্য করে। গানের সুরে হুমিয়ে পড়লে ঘুমের মানও ভালো হয়। তাইওয়ানের এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যাদের ঘুমজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ঘুমের সময়ের আগে ৪৫ মিনিট নরম ধাঁচের সংগীত শোনানো হয়েছে। দেখা গেছে ৩৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই ঘুমজনিত সমস্যা কমে গেছে।
শক্তি দেবে সংগীত
পাওয়ারফুল কোন গান যখন শোনেন, খেয়াল করবেন শরীরে অন্য ধরনের এনার্জি কাজ করে। কাজ করার জন্য বাড়তি শক্তি পাওয়া যায়। এমনকি বেশ কয়েকটি পরীক্ষা থেকেও দেখা গেছে শরীরচর্চার সময় যারা সংগীত শোনেন, তারা যারা সংগীত শোনেন না তাদের চেয়ে ভালো শরীরচর্চা করতে পারেন। এমনকি ভারোত্তোলনের ক্ষেত্রেও তাদের কাছ থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
বৃদ্ধি পায় ডোপামিনের মাত্রা
গান শোনার সময় মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নিঃসৃত হয়, যা এক প্রকার নিউরোট্রান্সমিটার। এই একই নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসৃত হয় চকলেট খাওয়ার সময়, কোকেইন গ্রহণের সময় অথবা যৌনক্রিয়ার সময়। এমনকি ডোপামিনকে ভালোবাসার হরমোনও বলা হয়। ডোপামিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া মানেই মন ভালো থাকা, কাজে মনোযোগ আসা।
কমায় মানসিক চাপ
সংগীত শুধু ভালো হরমোন ডোপামিনের মাত্রাই বৃদ্ধি করে না, কমায় স্ট্রেস হরমোন খ্যাত কর্টিসল নিঃসরণের মাত্রাও। ২০১০ সালের গবেষণা ছিল এমন- কয়েকজন বিজ্ঞানী একটি হালকা আলোযুক্ত ঘরে হালকা ঘরানার সংগীতের সাথে শুয়ে থাকতে বলেছিলেন মানসিক চাপে থাকা ব্যক্তিদের। তিন মাস পর দেখা গেলো তাদের মাঝে মানসিক চাপ ও অ্যাংজাইটি অ্যাটাকের প্রভাব কমে গেছে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত।
কাজ করা যায় দ্রুত
কর্মক্ষেত্রে কানে হেডফোন ছাড়া কাজ করতে পারেন না এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এই অভ্যাসটাকে নেতিবাচকভাবে না দেখে বরং সুদৃষ্টিতে দেখা প্রয়োজন। বেশ কয়েকটি স্ট্যাটিস্টিক্স এর তথ্য মতে, যারা গানের তালে কাজ করেন, তাদের কাজ অন্যদের চাইতে নির্ভুল ও দ্রুত হয়। কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেশকেরাও দেখেছেন যে, আপবিট ঘরানার সংগীত কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি করতে, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও টিম ওয়ার্কে ভালো প্রভাব ফেলে।
রক্তনালীকার উপর প্রভাব ফেলে সংগীত
যে সংগীতটি আপনার মনকে ভালো ও আনন্দিত করে, সে সংগীত রক্তনালীকাকে প্রশস্ত করতে ও রক্ত চলাচলের মাত্রা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। ফলাফল স্বরূপ ভালো থাকে হৃদযন্ত্র। ২৬টি ভিন্ন ভিন্ন গবেষণার তথ্যানুসারে ১৪০০ জন হৃদ রোগীদের উপর সংগীত প্রয়োগ করে দেখা গেছে তাদের উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।