কী ঘটে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ভেতরে



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র।

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র।

  • Font increase
  • Font Decrease

নিয়ন্ত্রণ সংস্থার উদাসীনতা, অনিয়ম দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বেড়েই চলেছে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার মতো ঘটনা। এসব ঘটনা ঘটলেই তদন্ত কমিটি হয়, দফায় দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন, চলে সাক্ষ্য গ্রহণ, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়। আবার দোষী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হালকা শাস্তি দেয়ার মধ্য দিয়ে সবকিছু শেষও হয়ে যায়।

কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনের দেয়া সুপারিশের আলোকে কোনো কিছুই করা হয় না। ফলে বারবার সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার মতো ঘটনা ঘটেই চলছে।

এ কারণে ব্যবস্থাপনার মৌলিক পরিবর্তন এই মুহূর্তেই কার্যকর এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া না হলে ইমেজ সংকটে পড়বে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র। আর এমনটাই ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে গত ১০ বছরে অন্তত চার দফা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছে পাঁচ কিশোর। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তিন কিশোর খুন ও ১৫ জন আহত হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

জানা গেছে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে সারাদেশে দুটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র পরিচালিত হয়। তার একটি যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র। আর অন্যটি গাজীপুরের টঙ্গীতে। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ১৫০ জন বন্দীর থাকার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রটিতে এর প্রায় দ্বিগুণ বন্দী থাকে। ১৮ বছরের কম বয়সী অপরাধীদের আদালতের মাধ্যমে এই কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সংশোধনের জন্য তাদের এখানে রাখা হলেও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়ায় ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িতে পড়ছে তারা।

গত ১০ বছরে এই কেন্দ্রে অন্তত ৪ বার সহিংসতা ও বন্দীদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ সালের ২৯ আগস্ট আকাশ (১২) নামে এক শিশুকে প্রথমে শ্বাসরোধ ও পরে টিনের টুকরো দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহত আকাশকে ২০০৭ সালে চুয়াডাঙ্গা থেকে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। ২০১৯ সালের ৩০ জুন কেন্দ্রে বন্দী থাকা নূর ইসলাম (১৫) নামে এক শিশু আত্মহত্যা করে। নূর ইসলামকে চুরির মামলায় ওই বছরের ২২ মে গাইবান্ধা থেকে যশোরে পাঠানো হয়েছিল। এছাড়াও ২০১৪ সালের ৫ মে কেন্দ্রে বন্দীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েক কিশোর ভাঙা কাঁচ দিয়ে শরীর কেটে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানায়। দর্শনার্থী একজন অভিভাবককে মারধরের অভিযোগের জের ধরে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল। ওই সময় বন্দী কিশোররা কেন্দ্রে ভাঙচুর ও পুলিশের ব্যারাকে হামলা চালায়। আর সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের মধ্যে পিটিয়ে ৩ কিশোরকে হত্যা করেছে কর্তৃপক্ষ। এসময় আহত হয়েছে আরও ১৫ কিশোর।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেন্দ্রে ১৮ বছরের কম বয়সীদের রাখার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হয় না। আদালতে বয়সের প্রমাণপত্র দেখিয়ে তারা এই কেন্দ্রে আসলেও প্রকৃত বয়স অনেকের ১৮ বছরের বেশি। এছাড়া এখানে দীর্ঘদিন থাকার পর বয়স ১৮ বছরের বেশি হলে জেলখানায় পাঠানোর নিয়ম। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতায় বছরের পর বছর যুবকরা এখানে থেকে যায়। তারাও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এছাড়াও খাবার সরবরাহে অনিয়ম, দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হলেও ঠিকমতো মনিটরিং হয় না। যদিও এর আগে গঠিত একটি কমিটি এসব অনিয়ম বন্ধে এক গুচ্ছ সুপারিশ করেছিল। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই বদলায়নি। আর এইসব কারণে বারবার সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের দুর্বলতা রয়েছে। ব্যবস্থাপনায় মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় কেন্দ্রের ধারাবাহিক সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা এড়ানো সম্ভব নয়। সংস্কারের মাধ্যমেই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন জানান, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা জনবল সংকট। দক্ষ জনবলের অভাবে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। আইনগতভাবে ১৮ বছরের কম বয়সী বলা হলেও বাস্তবে ২০ বছরের উপরে বেশির ভাগ অপরাধী এই কেন্দ্রে আসে। এদের একটা বড় অংশ অল্প বয়সে ভয়ঙ্কর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। তারা কেন্দ্রের অভ্যন্তরেও আধিপত্য বিস্তার করে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরাও নিরস্ত্র। তারাও অনেক সময় অপরাধীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। টাকার বিনিময়ে মাদকও সরবরাহ করে থাকে। কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করে অপরাধীরা। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দী থাকায় কর্মকর্তারাও অসহায় হয়ে পড়েন। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও সমাধান হয়নি।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সাবেক ওই কর্মকর্তা ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অনেকগুলো কারণে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা হয়ে থাকে। প্রথমত, কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা নিরস্ত্র আনসার সদস্যদের অধিকাংশের শারীরিক ফিটনেস নেই। কিশোর অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ে তারা প্রশিক্ষিতও না। সঙ্গত কারণে তারা ‘শরীরের জোরে’ বন্দীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। ফলে সব সময় গার্ড আর বন্দীদের মধ্যে একটা বিরোধ লেগেই থাকে। এজন্য মাঝে মধ্যেই হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে কম বেতনে চাকরি করা আনসার সদস্যরা টাকার বিনিময়ে বন্দীদের কাছে মাদক পৌঁছে দেয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও কেন্দ্রের সাবেক কর্মকর্তাদের দাবি, দেশের বিভিন্ন এলাকার কিশোর অপরাধীরা আদালতের মাধ্যমে এই কেন্দ্রে আসে। এর মধ্যে অনেকে হত্যা, বোমাবাজি, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু কেন্দ্রের মধ্যে তাদের মানসিক চিকিৎসার ‘কার্যকরী ব্যবস্থা’ না থাকায় বন্দী অবস্থায় তারা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। এ নিয়ে দুই পক্ষের ভেতরে মাঝে মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। তাদের কাছে কর্মকর্তারাও মাঝে মধ্যে লাঞ্ছিত হন। তাই কর্মকর্তারা নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেক সময় কিশোর গ্রুপের কোনো একজনকে নিজের ছত্রছায়ায় রাখেন। যারা আবার ক্ষমতার প্রভাবে অন্য কিশোরদের উপর নিয়মিত নির্যাতন চালায়। মূলত কর্মকর্তাদের মদদে তারা কেন্দ্রের মধ্যে আরও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। সর্বশেষ গত ১৩ আগস্ট কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় চলা ৭-৮ বন্দীর নেতৃত্বে ১৮ জন কিশোরের উপর নির্যাতন চালানো হয়। এর আগেও একই ঘটনা ঘটেছে।

এ প্রসঙ্গে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বার্তা২৪.কমকে জানান, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের নানা অসঙ্গতির বিষয় সামনে আসছে। সেই বিষয়গুলো ইতোমধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। এই ধরনের সহিংসতার ঘটনা যাতে আগামীতে আর না ঘটে, সেই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।

আরও পড়ুন: যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে সংঘর্ষে তিন কিশোর নিহত, আহত ১৪

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালকসহ ১০ কর্মকর্তা পুলিশ হেফাজতে

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩ কিশোর নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

৩ কিশোরকে ঠান্ডা মাথায় খুন করেন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা!

   

রিকশাচালকদের মাঝে স্যালাইন পানি বিতরণ করছে ফেনী পৌর মেয়র



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সারাদেশের মতো ফেনীতে বইছে তীব্র তাপদাহ। গরমে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষের জনজীবন। এরমধ্যে দিনমজুর, শ্রমজীবী ও রিকশাচালকদের ভোগান্তি চরমে। ফেনীতে তীব্র তাপদাহ থেকে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে ইতোমধ্যে শহরের ৪টি পয়েন্টে সুপেয় ঠান্ডা পানির ফিল্টার স্থাপন করেছে ফেনী পৌরসভা।

পাশাপাশি ২য় দিনের মতো রিকশাচালকদের মাঝে স্যালাইন, ঠান্ডা পানি ও কোমলজাতীয় পানীয় এবং শরবত বিতরণ করেছে ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ফেনী পৌরসভার উদ্যোগে দুপুরে শহরের জিরো পয়েন্ট দোয়েল চত্বরে ২য় দিনে এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন তিনি৷

জব্বার মিয়া নামে একজন রিকশা চালক বলেন, আমাদের মেয়র সবসময় আমাদের কথা চিন্তা করে। এ গরমে গাড়ি চালানো খুব কষ্টকর। এরমধ্যে মেয়র স্যালাইন পানি হাতে আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন, একটু ঠান্ডা খেতে পেরেছি।

রবিউল হক নামে একজন ভ্যানচালক বলেন, এ গরমে এমনিতেই আমাদের আয় রোজগার কম। তাও পরিবারের চিন্তা করে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। এরমধ্যে রাস্তায় মেয়র মহোদয় কোক পানি ও সেলাইন দিয়েছে। এটি পেয়ে খুব ভালো লাগছে।

মেয়র স্বপন মিয়াজী বলেন, সারাদেশের ন্যায় ফেনীতে তীব্র গরমে কাবু সব পেশার মানুষ। বিশেষ করে রিকশাচালক ও পথচারীরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। তাদের কথা চিন্তা করে শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ ৪টি স্থানে সুপেয় বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রিকশাচালকরা রোদের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। চালকদের দোকান থেকে ঠান্ডা পানি কিনে খাওয়ার সামর্থ্য থাকে না। তাদেরকে ঠান্ডা পানি, স্যালাইন ও কোক দেয়া হয়েছে। যতদিন তাপদাহ থাকবে ততদিন আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

;

দাবদাহে পথচারীদের তৃষ্ণা নিবারণে জেলা প্রশাসনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্২৪.কম, নরসিংদী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চলমান তাপদাহে নিম্ন আয়ের মানুষ ও পথচারীদের তৃষ্ণা নিবারণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং হিটস্ট্রোকে আক্রান্তদের প্রাথমিক চিকিৎসা স্বাস্থ্য সেবা দিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম।

বর্তমান তাপদাহ পরিস্থিতিতে নরসিংদীর জেলখানা মোড় পৌরসভা মোড়সহ শহরের ৯টি ব্যস্ততম সডকের পাশে বিনামূল্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঠান্ডা সুপেয় পানি ও স্যালাইন বিতরণ বুথ খুলেছে জেলা প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে জেলখানা মোড়ে নরসিংদী পৌরসভা, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রোকৌশল অধিদপ্তরের সহায়তায় ও জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত এই বুথের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ডক্টর বদিউল আলম।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, নরসিংদী পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন বাচ্চু, জনস্বাস্থ্য প্রোকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ান হোসেন, জেলা হাসপাতালের ত্বত্তাবধায়ক ডা. এ এন এম মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোস্তফা মনোয়ারসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।

জেলা প্রশাসক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক চলমান দাবদাহে পথচারী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের গরম থেকে রক্ষা করতেই এই প্রয়াস নেয়া হয়েছে। যতদিন দাবদাহ অব্যাহত থাকবে ততদিন জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। এছাড়া জেলার প্রতিটি উপজেলায় এই কার্ক্রম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে তীব্র গরমে একটু প্রশান্তি দিতে জেলা প্রশাসনের এমন আয়োজনে খুশি পথচারী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

;

ময়মনসিংহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় যুবলীগ নেতাসহ নিহত ২



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহে ত্রিশাল ও ফুলপুর উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় যুবলীগ নেতাসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন মো: নজরুল ইসলাম দীপক নামে আরও একজন।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ময়মনসিংহ-শেরপুর মহাসড়কের পৃথক পৃথক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- ত্রিশাল পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আজহারুল ইসলামের বড় ছেলে মো. শামীম পারভেজ (৩০। তিনি উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। তবে বর্তমানে তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। অপরদিকে ফুলপুর উপজেলার ইমাদপুর গ্রামের মৃত ইব্রাহীম শেখের ছেলে মো. সুরুজ আলী (৭০) ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন।

ত্রিশাল থানার উপপরিদর্শক (এস.আই) মো: আশরাফুল ইসলাম দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ময়মনসিংহের বাইপাস এলাকায় নিজের ফিসারির পাঙ্গাস মাছ বিক্রি করে প্রাইভেটকারযোগে ময়মনসিংহ থেকে ত্রিশালের নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন যুবলীগ নেতা শামীম ও নজরুল ইসলাম দীপক। এ সময় তাদের বহনকারী প্রাইভেটকারটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার নুরুর দোকান নামকস্থানে আসতেই হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে পড়ে গিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে ধাক্কা লাগে। এতে প্রাইভেটকারটিতে আগুন ধরে গেলে যুবলীগ নেতা শামীম পারভেজ (৩৫) ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় তার সাথে থাকা মো. নজরুল ইসলাম দীপক নামে আরও একজন গুরুতর আহত হন। গুরুতর আহত নজরুল ইসলাম দীপক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের পরিবার বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহের আবেদন করলে মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়।

অপরদিকে ময়মনসিংহের ফুলপুরে ফজরের নামাজ পড়তে ঘর থেকে বের হয়ে ট্রাক চাপায় মো. সুরুজ আলী (৭০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান।

তিনি জানান, নিহত সুরুজ আলী ফজরের নামাজ পড়তে বের হয়ে সড়কে আসলে ময়মনসিংহ-শেরপুর মহাসড়কের ইমাদপুর নামকস্থানে ময়মনসিংহ থেকে আসা একটি বেপরোয়া গতির ট্রাক হঠাৎ তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যায়।

এ ঘটনায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

;

রাঙামাটিতে হঠাৎ ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে অতিষ্ঠ গ্রাহক



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাঙামাটি
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

ভুতুড়ে বিলে জর্জরিত রাঙামাটির ইসলামপুরবাসী। এক মাসের বিল ৩ হাজার থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকার বেশি এসেছে কারো কারো। কাপ্তাই হ্রদের ওপারে বসবাস করা হতদরিদ্র খেটে খাওয়া কয়েকশ পরিবারের বিদ্যুৎ বিলে এমন তুঘলকি কাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন গ্রাহকেরা।

রাঙামাটি শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামপুরে প্রায় দু’শতাধিক অসহায় দিনমজুর পরিবারের বসবাস, যাদের শতকরা ৯৯ ভাগই দিন এনে দিন খেয়ে সংসার চালাতে হয়।

এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে বাড়তি ভুতুড়ে বিল তাদের নাস্তানাবুদ করে ফেলেছে। যেখানে তাদের মাসের বিদ্যুৎ বিল আসে ৫শ থেকে ৭শ টাকা, সেখানে ৩ হাজার থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকার বিল করেছে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিভাগ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি মাসের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছেন তারা। তাদের কোনো বকেয়া বিল নেই। প্রতি মাসে সাধারণত তাদের বিদ্যুৎ বিল আসে ২শ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা। কিন্তু হঠাৎ করে এমন ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। তাদের প্রশ্ন, নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের পরেও কেন এমন বিদ্যুৎ বিল করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ! এমন বিদ্যুৎ বিলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অধিকাংশ গ্রাহকেরই দুই থেকে পাঁচ গুণ বেশি বিল করা হয়েছে। বিল কপিতে ব্যবহৃত ইউনিটের কলাম শূন্য থাকলেও পরিশোধের কলামে বিরাট অংকের টাকা বসিয়ে বিল সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিকার চাইতে গিয়ে হয়রানির শিকার হন বলেও অনেক গ্রাহক সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি দিনমজুরের কাজ করি। এর আগে প্রতিমাসে আমার বাসায় একটি মিটারে ৫ থেকে ৭শ টাকা বিল আসতো। কিন্তু এখন আমাকে ১১ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দিয়েছে। এখন পরিবার নিয়ে খেয়েপড়ে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় এতগুলো টাকার বিল আমার জন্য চরম কষ্টকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে’।

অপর এক বাসিন্দা রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমি মানুষের বাসায় কাজ করে সংসার চালাই। আমাকে বিল দিয়েছে সাড়ে ২৪ হাজার টাকা। অথচ আমার বিল হতো ৮শ থেকে এক হাজার টাকা। এই বিল কীভাবে দেবো আমি’!

শওকত আলী নামের একজন বলেন, আমার বিল হতো ১ হাজার ৫শ টাকা। কিন্তু আমাকে বিল দিয়েছে ৫৭ হাজার টাকা। এই টাকা পরিশোধ করা কোনোমতেই সম্ভব নয়। আমি এমনিতেই অসুস্থ মানুষ। এই সময়ে এতগুলো টাকার বিল দিয়ে আমার ওপর জুলুম করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এভাবে অনেক গ্রাহককে ভুতুড়ে বিল দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। নানা ঝক্কি-ঝামেলার ভয়ে অনেকেই ভুতুড়ে বিল পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন’!

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মচারী জানিয়েছেন, মিটার রিডাররা গ্রাহকের মিটার না দেখে বিল করায় এবং ‘সিস্টেম লস’ সমন্বয় করতে বাড়তি বিল করছেন। গ্রাহকেরা অভিযোগ করলে অনেক ক্ষেত্রে বিল কমিয়ে দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহককে আবার বাড়তি বিল পরিশোধ করতে হয়। এতে করে সাধারণ গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, নতুন প্রিপেইড মিটার লাগানোর কারণে পুরনো মিটারের যে রেটিং বকেয়া রয়েছে, তা একসঙ্গে বিল আকার তাদের দেওয়া হয়েছে।

রেটিং বকেয়া থাকার কারণ জানতে চাইলে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন বলেন, ‘হয়ত বিদ্যুৎ বিল করার সময় বিলে কম রেটিং তোলা হয়েছে, যার কারণে দীর্ঘদিনের রেটিং জমা হয়ে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে যারা এই পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল একসঙ্গে পরিশোধ করতে পারবেন না, তাদের কয়েক কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া হবে’।

;