ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনের সাজে বইমেলা

  ‘এসো মিলি প্রাণের মেলায়’
  • কানজুল কারাম কৌষিক, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

‘হয়ত ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যত আছে, হয়ত গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি তবুও ফুটেছে জবা, দুরন্ত শিমুল গাছে গাছে, তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক।’

কবি নির্মলেন্দু গুণ-এর এই লেখাটিই যেন আজ বইমেলা ও তার আশেপাশের চিত্র। প্রকৃতি তার নিজের মতো করে পহেলা বসন্তের জানান দিচ্ছে এবং সেই সঙ্গে বাঙালিও নিজেদেরকে সাজিয়েছে পহেলা ফাল্গুনের সাজে, ভালোবাসা দিবসের সাজে এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কেউ কেউ আবার সেজেছে বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজার সাজে। সব মিলিয়ে বইমেলা আজ হলুদ, বাসন্তী, লাল, সাদা রঙে রঙিন। তারা ধীরে ধীরে মেলায় আসছেন, ঘুরছেন এবং বই কিনছেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সরেজমিন দেখা যায়, এই চিত্র। অন্য যেকোনো সাধারণ দিনের চেয়ে ভালোবাসা দিবসের এই দিনটিতে বইমেলায় বেশি ভিড় লক্ষ করা গেছে।

পুরো বইমেলাতেই আজ বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। এতদিন ধরে যে দিনটির অপেক্ষা পৃথিবীর হৃদয়বান মানুষের, সেই ভালোবাসা দিবস ও পহেলা বসন্ত আজ, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। তাই তো, বইমেলা প্রাঙ্গণের বাইরে টিএসসি এলাকায় সকাল থেকেই চোখে পড়ে উপচেপড়া ভিড়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ-তরুণীর যুগল, তবে প্রবীণ ও শিশুদের উপস্থিতিও আছে। অনেকেই আবার এসেছেন পরিবারের সাথে, কেউ এসেছেন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে। অনেকের মাথায় ফুলের টায়রা, কেউ আবার চুলে আর কানে ফুল গুঁজে প্রিয়জনের সঙ্গে ঘুরছেন। তাদের খুনসুটিতে বইমেলা পেয়েছে ভিন্নমাত্রা।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামিম আল রাজি এসেছেন তার প্রিয়জনকে নিয়ে। তিনি বলেন, আজকে ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে বইমেলায় ঘুরতে এসেছি। ভালো লাগছে, বই দেখছি যদিও আজকে একটু বেশি ভিড়। সন্ধ্যায় চারুকলায় বসন্তবরণ উৎসবেও যাবো।

ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনের সাজে বইমেলা

এদিকে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের এই দিনকে কেন্দ্র করে বাড়তি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন প্রকাশকরাও। প্রেম ভালোবাসা নিয়ে গল্প, উপন্যাস আর কবিতার বইগুলো সামনেই সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রিয়জনকে বই উপহার দিতে দর্শনার্থীরা এসব বই-ই বেশি কিনছেন বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা।

তাম্রলিপি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী নাহিয়ান বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে আমাদের বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের নতুন কিছু প্রেম ভালোবাসার গল্প আর উপন্যাসও আনা হয়েছে। যুগলরা তাদের ভালোবাসার মানুষকে বই উপহার দেওয়ার জন্য আমাদের কিছু বিশেষ বই আছে। যেমন- হিমাদ্রী শর্মার 'হৃদয় জুড়ে মায়া', মৌরি মরিয়মের লগ্নজিতা, হুমায়রা স্যারনের কয়েন।

তিনি আরও বলেন, মৌরি মরিয়মের বইগুলো প্রায়ই রোমান্টিক আর প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে। ভালোবাসার মানুষকে উপহার দেওয়ার জন্য তার বইগুলো ভালো হতে পারে।

অন্যপ্রকাশ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সানজানা জেবিন ছোঁয়া বলেন, 'আমাদের প্রকাশনীর সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ স্যার ওতপ্রোতভাবে মিশে আছেন। তাই স্যারের সব বইই পাঠকদের পছন্দের শীর্ষে। প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে বই বিশেষ করে 'এই বসন্তে', ‘বৃষ্টি বিলাস’,'জোছনা ত্রয়ী', ‘তেঁতুল বনে জোছনা’, ‘দিঘির জলে কার ছায়া গো’, ‘লীলাবতী’, ‘মৃন্ময়ী’ বেশি নিচ্ছেন মানুষ। এ ছাড়া সমসাময়িক জনপ্রিয় লেখকদের মধ্যে সাদাত হোসাইনের 'আগুন ডানা মেয়ে' বইটি ভালো চলছে। মৌরি মরিয়মের 'নইয়রি' বইটি ভালো চলছে।

মাওলা ব্রাদার্সের বিক্রয় প্রতিনিধি সাজরিন বলেন, ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে অনেকেই আমাদের প্রকাশনীতে আসছেন। প্রিয়জনকে ভালোবাসার বই উপহার দিচ্ছেন। তার মধ্যে শাহীন আকতারের 'আবারো প্রেম আসছে', হুমায়ূন আহমেদের প্রিয়তমেষু বইগুলো ভালো চলছে। কবিতার বইয়ের মধ্যে নির্মলেন্দু গুণের প্রকৃতি ও প্রেমের কবিতা সমগ্র, মহাদেব সাহার শ্রেষ্ঠ কবিতা, ফরহাদ মাজহারের 'কবিতা সংগ্রহ' বইগুলো পাঠকগণ বেশি কিনছেন। এই বইগুলো প্রিয় মানুষের জন্যে ভালো উপহার হতে পারে।

এ ছাড়া হুমায়ূন আহমেদের ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’, সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘শবনম’, বুদ্ধদেব বসুর ‘তিথিডোর’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’, ‘চোখের বালি’, বুদ্ধদেব গুহর ‘বাবলি’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘প্রথম প্রণয়’, ‘ভালোবাসা, প্রেম নয়’, ‘যুবক-যুবতীরা’, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কপালকুণ্ডলা, ‘আমারও একটি প্রেম কাহিনী আছে’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘যত দূরে যাই’, মোশতাক আহমেদের ‘ফাগুন বসন্ত’ বইগুলো প্রিয় মানুষদের উপহার হিসেবে মানুষ বেশি কিনছেন বলে জানা যায়।