সংখ্যায় বেশি তবে বিক্রিতে পিছিয়ে কবিতার বই
‘এসো মিলি প্রাণের মেলায়’চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৪। সাতাশ তম দিন পার করছে অমর একুশে বইমেলা। এবার বইমেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত নতুন বইয়ের অধিকাংশই কবিতার বই। তবে কবি ও কবিতার বই বৃদ্ধির সাথে কবিতার পাঠক বাড়েনি বলেই প্রমাণ দেয় বইমেলার চিত্র।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে কবিতার বই বিক্রেতা ও সাহিত্য বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, বইমেলায় কবিতার বই বেশি হলেও থ্রিলার-গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধের তুলনায় সামগ্রিকভাবে কবিতার বইয়ের বিক্রি কম। তবে প্রতিষ্ঠিত কিছু কবিদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ রয়েছে পাঠকদের।
প্রকাশনা সংশ্লিষ্টরা বার্তা ২৪.কমকে জানান, কবিতার বইয়ের পাঠক কম। যারা কবিতার চর্চা করে তারাই কবিতার মূল পাঠক। এর মধ্যে বিখ্যাত ও সমসাময়িক পরিচিত কবিদের বইয়ের বিক্রি ভালো। কিন্তু নতুন প্রকাশিত কবিতার বইগুলোর ক্ষেত্রে লেখকদের নিজেদের পরিচিতজনদের বাইরে তেমন কেউ কিনছে না। ফলে সামগ্রিকভাবে বলা যায় কবিতার বইয়ের বিক্রি কম।
কবিতার বই বিক্রি কম হওয়ায় অনেক প্রকাশকই কবিতার বই প্রকাশ করতে চান না। এ ব্যাপারে অবসর প্রকাশনার প্রকাশক নূর-ই-মোনতাকিম আলমগীর বলেন, এ বছর নতুন কোনো কবিতার বই প্রকাশ করিনি। যে হারে কবি বাড়ছে, সে হারে কবিতার তেমন কোনো পাঠক শ্রেণি নেই৷ তবে পুরাতন কবিদের বইয়ে পাঠকের আকর্ষণ কিছুটা থাকায় আমরা সেগুলো প্রকাশ করি।
অনিন্দ্য প্রকাশের বই বিক্রয় কর্মী আবিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের স্টলে থ্রিলার বই, উপন্যাস, ছোট গল্পের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। কবিতার বইগুলো সবচেয়ে কম বিক্রি হয়। মানুষ এখন প্রায় সবাই উঠতে বসতে কবিতা লিখে। এত এত কবির তুলনায় পাঠক কম।
প্রথমা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মাহিম বলেন, আমাদের এখানে উপন্যাস, রাজনৈতিক, গবেষণাধর্মী বইগুলো বেশি বিক্রি হয়। সে তুলনায় কবিতার বইয়ের বিক্রি অনেক কম। আমাদের এখানে কবিতার বই রাখা হয়েছেও কম।
তবে নতুন কবিদের বই বিক্রিতে পিছিয়ে থাকলেও বিখ্যাত নতুন কবিদের বইয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে কবি নজরুল ইন্সটিটিউটের স্টলে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় সহকারী মো.রাসেলের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে কাজী নজরুল ইসলামের মূল বইগুলো বেশি চলছে। নজরুলের কবিতা গল্প, উপন্যাস, নজরুল সংগীত, স্বরলিপি সবকিছুতেই পাঠকের আগ্রহ আছে। এর মধ্যে কবিতাসমগ্র, সাম্যবাদী, অগ্নিবীণা, কাব্য আমপারা বেশি বিক্রি হয়েছে।
দিব্যপ্রকাশ প্রকাশনীর মার্কেটিং ম্যানেজার খায়রুল হাসান বলেন, প্রকাশনীতে মূলত ইতিহাসভিত্তিক এবং অনুবাদ বইয়ের বিক্রি বেশি। তবে খ্যাতনামা দুই কবি হেলাল হাফিজ ও ইমতিয়াজ মাহমুদের কবিতার বই ভালো বিক্রি হচ্ছে।
'বৈভব' ও 'ঐতিহ্য' প্রকাশনী সূত্রে জানা যায়, বর্তমান কবিদের বইয়ের প্রতি তেমন চাহিদা না থাকলেও কোনো কোনো কবির বইয়ের চাহিদা রয়েছে বেশ। কবি হাসান রোবায়েত, কবি মজনু শাহ এর বই তার মধ্যে অন্যতম।
বইমেলা থেকে প্রতিবছরই কবিতার বই সংগ্রহ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসান মেহেদী। তিনি বার্তা ২৪.কমকে বলেন, কবিতার বই আমি প্রতিবছরই বইমেলা থেকে সংগ্রহ করি। পুরনোদের সাথে সাথে নতুন কবিদের বইও কিনি। তবে সকল নতুন কবিরা পাঠক সৃষ্টি করতে পারছেন না। মানসম্মত কবিতার বই না থাকাও কম বিক্রির একটা কারণ হতে পারে।
এ ব্যাপারে বার্তা ২৪.কমের প্রতিবেদকের কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক কবি বায়তুল্লাহ কাদেরীর সাথে। তিনি বলেন, এখন কবিতা সবাই লিখে। কবিতা লিখেন না এমন মানুষ এখন কমই পাওয়া যাবে হয়ত। যে হারে কবি এবং কবিতার বই বাড়ছে সে অনুযায়ী কবিতার বই বিক্রি হচ্ছে না ব্যাপারটি সত্য। তবে কবিতার বইয়ের পাঠকের সংখ্যা বরাবরই কম ছিল।
কবিতার মান ভালো হলে বই বিক্রিও ভালো হবে এমন কথা প্রকাশক ও পাঠকদের মুখে শোনা যায়। এ ব্যাপারে কবি বায়তুল্লাহ কাদেরী বলেন, কবিতার পাঠক এমনিতে কম। তবে সিরিয়াস কবিতার পাঠক আরো বেশি কম।