‘যাপিত জীবনের গল্প’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
‘এসো মিলি প্রাণের মেলায়’অমর একুশে বইমেলায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের ‘যাপিত জীবনের গল্প’ জীবনী গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ঝুমঝুমি প্রকাশনী। বইমেলায় ঝুমঝুমি’র ৭০ ও ৭১ নাম্বার স্টলে বইটি পাওয়া যাবে।
রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে ঝুমঝুমি প্রকাশনের সামনে এ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি।
এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল আমার সঙ্গে অনেক কাজ করেছেন। তিনি আমার জীবনের উত্থান-পতন অনেক কিছুর সাক্ষী। কেমন করে শূন্য থেকে বার্ন ইনস্টিটিটিউট স্থাপন করলাম, কীভাবে এতদূর এলাম- সবকিছুর সাক্ষী তিনি। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।’
তিনি বলেন, ‘এই পথচলায় অনেক সাংবাদিক আমাকে সর্বদা সহযোগিতা করেছেন। ৫ থেকে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপনে সাংবাদিকরা অনেক অবদান রেখেছেন। তারা স্বাস্থ্যখাতের সমস্যাগুলো সবার কাছে তুলে ধরেছেন, তার জন্য আজকের এই হাসপাতালকে বিশ্বের সর্ব বৃহৎ বার্ন ইনস্টিটিউট হিসেবে পরিণত করতে পেরেছি। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ, যার অনুপ্রেরণায় আমরা সফল হয়েছি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকদের অনেক কষ্ট সহ্য করে কাজ করতে হয়। কিন্তু সত্য সংবাদ প্রকাশ করলে তার যে কত উপকার হয় আমি নিজেই তার প্রমাণ।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হওয়ার অনুভূতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার একটা স্বাভাবিক জীবন ছিল। তা একটা টেলিফোন এসে পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমি বাসায় বসে টেলিভিশন দেখছিলাম, হঠাৎ একটা কল এসে সব পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমি আগে বাসায় বিশ্রাম নিতাম, টিভির বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতাম, এখন সারাদেশ চষে বেড়াচ্ছি।’
সামন্ত লাল বলেন, ‘আমি মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যাসেবা পৌঁছে দিতে চাই। আমি যদি টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে এত ভিড় হবে না। ঢাকার বাইরে বার্ন ইউনিট নেই। গরিব মানুষকে কষ্ট করে ঢাকায় আসতে হয়। আমি সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে কাজ করছি। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করবো। আমি শতভাগ না পারলেও যদি ৫০ ভাগ করতে পারি, নিজেকে সফল মনে করবো।’
এসময় বইয়ের লেখক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘সাংবাদিকতা জীবনে গত তিন দশকে নানান ঘটনা দেখেছি। যার অনেক কিছুই রিপোর্ট আকারে প্রকাশ করা যায় না। ঘটনার নেপথ্যের অনেক ঘটনা আমি ফেসবুকে তুলে ধরছিলাম। পরে সিনিয়র সাংবাদিক আরিফের পরামর্শে বই আকারে প্রকাশ করলাম।’
তিনি বলেন, ‘আজ আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসেছেন। তার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ও কাজ করার অভিজ্ঞতা। তার কাছে অনেক রোগী পাঠিয়েছি, সবসময় সহযোগিতা করেছেন। তেমনই একটি দগ্ধ মেয়েকে পাঠানোর কথা এই বইয়ে উল্লেখ আছে। বার্ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠায় তার যে অক্লান্ত পরিশ্রম তা এই বইয়ে উঠে এসেছে।’
এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেন, ‘বই হলো সন্তানের মতো। আমার যেদিন প্রথম সন্তান হয়, সেদিন যে খুশি হয়েছি আমার বইটি হাতে পেয়ে একই অনুভূতি হয়েছে। সাংবাদিকদের জীবনযাপনের বিষয়ে যাদের জানার আগ্রহ রয়েছে, যারা সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের সম্পর্কে জানতে চান, তারা বইটির মাধ্যমে জানতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই সাংবাদিকতাকে ফ্যান্টাসি মনে করেন। কিন্তু প্রকৃত সাংবাদিকতা করতে হলে অনেক দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আবার কাজের স্বীকৃতি পেলে অনেক আনন্দ পাওয়া যায়।’
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আরিফ সোহেলের সঞ্চালনায় মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ, ক্র্যাবের সভাপতি কামরুজ্জামান খানসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বইটিতে লেখক সাংবাদিকতা পেশার সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রিয়-অপ্রিয় এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির পাশাপাশি গ্রাম ও শহুরে জীবনের নানান বাস্তব ঘটনা পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন।
অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার বাণীর মাধ্যমে মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের সাংবাদিকতার পথচলা শুরু। পরে দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় পত্রিকা দৈনিক যুগান্তর ও দৈনিক সমকালে অপরাধ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক রিপোর্টিংয়ে বেশ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনে দীর্ঘদিন সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেন।
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজ ২৪ ডটকমে প্ল্যানিং এডিটর হিসেবে কর্মরত।
বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মামুন হোসাইন। লেখকের সাংবাদিকতা জীবনের ৩৪টি উল্লেখযোগ্য ঘটনার গল্প নিয়ে ‘যাপিত জীবনের গল্প’ বইটির প্রথম খণ্ড সাজানো হয়েছে। গল্পগুলোতে সত্য তুলে ধরতে বিন্দুমাত্র পিছপা হননি লেখক।