ফেনী শহরের প্রধান সড়কে যানজট এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। শহরের প্রধান সড়কের অর্ধেক দখল করে অবৈধ পার্কিং, যত্রতত্র সিএনজি স্ট্যান্ড, ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ দোকানের কারণে এ যানজট সৃষ্টি হয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে বিভিন্ন সড়কে গিয়ে দেখা যায়, শহরের গুরুত্বপূর্ণ ট্রাংক রোড, বড় মসজিদ রোড, মহিপাল, মিজান রোডসহ একাধিক সড়কে রাস্তার দুপাশে সারি সারি যানবাহন ও ফুটপাত দখল করে দোকান বসেছে।
ট্রাফিক বিভাগের তথ্য মতে, সড়কের ৩০ ভাগের বেশি অবৈধ পার্কিং ও নানা ধরনের দখলদারদের হাতে। ফুটপাত হকারদের দখলে থাকায় প্রধান সড়কেই পায়ে হেঁটে চলেন শহরবাসী। ফলে যানজটের সঙ্গে আছে জনজট।
দোয়েল চত্ত্বরে কর্মরত এক ট্রাফিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জনবল সীমিত হলেও যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে। চালকদের নির্দিষ্ট একটি পয়েন্টে যাত্রী নামানোর কথা থাকলেও তা মানা হয় না। তিনি বলেন, বড় মসজিদ রোডে রাস্তার দুপাশেই মোটরসাইকেল পার্কিং করে রাখে, রাস্তা দখল করে ব্যবসা করা হয়। যে যার মত করে চলছে। বলতে গেলে কেউ শুনছে না।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শহরে বেড়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। সিএনজি চালকেরা বলছেন, নিয়ম থাকলেও যাত্রীদের চাপে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে অনেকেই নিয়ম মেনে চলে না। সিএনজি স্ট্যান্ড না থাকাতে বাধ্য হয়েই রাস্তার ওপর পার্কিং করতে হয়। সিএনজি চালকের জানান, নিয়ম অনুয়ায়ী শহীদ মিনারের আগেই যাত্রী নামানোর কথা, তবে কিছু সিএনজি চালক তা মেনে চলে না, যেখানে সেখানে ইউটার্ন নেয়। ফলে যানজট সৃষ্টি হয়।
কালাম নামে এক রিকশাচালক বলেন, যানজটে বিরক্ত হয়ে অনেক যাত্রী রিকশা থেকে নেমে হেঁটে চলে যান। টাকা তো পাই না, সময়ও নষ্ট। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই ঘণ্টা এভাবেই রাস্তায় কেটে যায়।
অনিক নামে একজন বলেন, বড় মসজিদ রোডে বেশিরভাগ সময়ই সকাল থেকে বিকাল অব্দি রাস্তার দুপাশ মোটরসাইকেলের দখলে থাকে। সেখানে মানুষ হাঁটার জায়গা থাকে না, গাড়ি কিভাবে চলাচল করবে। কোন মার্কেটে পার্কিং ব্যবস্থা নেই, যে যার যার ইচ্ছা অনুযায়ী গাড়ি পার্কিং করে। এ শহরের কোন আইনের তোয়াক্কা নেই, সবাই সবার জায়গা থেকে রাজা।
এ বিষয়ে জেলা ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) এস এম শওকত হোসেন বলেন, প্রতিদিন মামলা করা হচ্ছে। তার পরও অনেকে মোড়ে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তাই যানজট নিরসনে বৃহস্পতিবার থেকে যৌথ অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ফেনী শহরের ৪টি অস্থায়ী স্ট্যান্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। মহিপালে আনসার ক্যাম্প পর্যন্ত, হাসপাতাল মোড়ে রাস্তার নিচে, বড় মসজিদ রোডে সেন্ট্রাল হাই স্কুলের পরে দাউদপুল পর্যন্ত এবং সালাউদ্দিন মোডে রাস্তার নিচে পার্কিং করতে হবে। এর আগে যাত্রী নামিয়ে কোন গাড়ি দাঁড়াতে পারবে না। স্ট্যান্ডে চলে যাবে। ট্রাফিক পুলিশ সবসময় কাজ করছে, তবে দৃশ্যমান হচ্ছে না হয়তো।
এদিকে ফেনী শহরের শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌরসভা ও ছাত্র সমাজের সহযোগিতায় ফুটপাত দখলমুক্তকরণ ও শহরে অবৈধ পার্কিং বন্ধে অভিযান শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পৌরসভা প্রশাসক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাত দখলমুক্তকরণ নিয়ে আমরা নকশা চূড়ান্ত করেছি। এটি আমাদের সবার নজরে রয়েছে। গত দুইদিন যাবত মাইকিং করা হচ্ছে। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে চূড়ান্ত অ্যাকশন নেওয়া হবে।