শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী

শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী

  • Font increase
  • Font Decrease

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের সর্বশেষ গেজেট অনুযায়ী দেশে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা ৫৬০ জন। এই তালিকার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ,ক, ম মোজাম্মেল হক।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট অধিবেশনে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এই তথ্য জানান। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, এই পর্যন্ত চারটি ধাপে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তার মধ্যে ২০২১ সালে ১৯১ জন, ২০২২ সালে ১৪৩ জন, ফেব্রুয়ারি ২০২৪ প্রকাশ করা হয় ১০৮ জন ও সবশেষ চতুর্থ পর্বে চলতি বছরের এপ্রিলে ১১৮ জনের নাম প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রী আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রণয়ন একটি ধারাবাহিক চলমান প্রক্রিয়া। এ বিষয়ে একটি জাতীয় কমিটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জাতীয় কমিটির সদস্যগণ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তথ্য সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই ও গেজেট প্রকাশ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। এর মধ্যে তালিকার বাইরে থাকা শহিদ বুদ্ধিজীবীদের চিহ্নিত করে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তখন প্রকাশ করা হবে।

সিলেটে কুশিয়ারা আতঙ্ক!



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
সিলেটে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

সিলেটে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ৬ পয়েন্টের পানি এখনও বিপৎসীমার ওপরে। তবে আতঙ্ক বাড়ছে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী উপজেলা বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বালাগঞ্জে।

কুশিয়ারা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ (ডাইক) ভেঙে পানি প্রবেশ করছে এসব উপজেলায়। এতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন ওই উপজেলার মানুষ।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকাল ৮টা পর থেকে বৃষ্টি হয়নি। তবে দুপুরের দিকে আকাশে কখনো রোদ কখনো মেঘে ঢাকা পড়েছে। বিকাল ৫টার দিকে সিলেটে বেশ কিছু এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত দুই দিন ধরে সিলেটে বৃষ্টিপাত কম হওয়াতে অনেক এলাকা থেকে পানি কিছুটা নেমে গেছে। কিন্তু কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ভাঙছে বাঁধ।

জানা যায়, জকিগঞ্জ উপজেলার অন্তত ৪-৫টি স্থানে কুশিয়ারা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ (ডাইক) ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ৭৩টি গ্রাম। প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রও। সিলেট-বিয়ানীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কসহ বিয়ানীবাজার -চন্দরপুর বৃষ্টির পানি আর ঢলে কুশিয়ারা নদীর ডাইক অতিক্রম করে পানি ডুকছে লোকালয়ে। কুশিয়ারা নদীর পানিতে বালাগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে প্লাবিত। ৬টি ইউনিয়ের বন্যাক্রান্ত মানুষের জন্য খোলা হয়েছে ৪৯টি আশ্রয় কেন্দ্র। বালাগঞ্জের প্রধান সড়কে হাঁটুর উপরে পানি। উপজেলা পরিষদ, বালাগঞ্জ থানা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন ও এলজিইডি সড়ক ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একইভাবে ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাজারসহ নিচু এলাকাগুলোতে ইতোমধ্যেই পানি ঢুকে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ৬টি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া কুশিয়ারার পানি আমলশীদ পয়েন্টে ১৫২ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৪৭সে.মি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০৩ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে পানি ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার ১৩ উপজেলায় ৯৬টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত। ১ হাজার ১৬০টি গ্রামের ৬ লাখ ১৭ হাজার ৭৯৩ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। জেলার ৬৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ২৩৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস জানান, গত কয়েকদিন ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি হয়নি। সিলেটের নদীগুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকায় উজানের পানি ধীরগতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। চলমান বন্যায় সিলেটের ২৫ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা মেরামতে ১৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তবে বন্যার পানি পুরোপুরি না নামলে এসব বাঁধের কাজ করা যাবে না।

বালাগঞ্জ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারিয়া হক বলেন, বালাগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সময়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণও প্লাবিত। উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে আশ্রয়ণের জন্য। এ পর্যন্ত চলমান বন্যায় প্রায় ১৩১ মেট্রিক টন চাল বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানবৃন্দকে দেওয়া হয়েছে। নগদ অর্থ, শুকনো খাবার ৯৫০ প্যাকেটসহ শিশু খাদ্য, গোখাদ্য দেওয়া হয়েছে ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বন্যার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসনিম জানান, প্রথম দফায় বন্যার পানিতে উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভাঙে এখন সেগুলোর ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নের ৭৩টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বেশ কিছু পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। যেসব আশ্রয়কেন্দ্রে পানি উঠেছে সেগুলো থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি।

;

বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা

ছবি: সংগৃহীত, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের বন্যার পরিস্থিতি আরো অবনতি হবে বলে জানা গেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদনদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যার পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে এবং টাঙ্গাইল জেলার কিছু পয়েন্টে পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদী-নদীগুলির পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

পূর্বাভাসে বলা হয়, কুশিয়ারা ব্যতীত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য প্রধান প্রধান নদীগুলির পানি সমতল সার্বিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়া সংস্থাগুলির তথ্য অনুযায়ী বলা হয়, দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ঘাঘট নদীগুলির পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে তিস্তা ও দুধকুমার নদীগুলির পানি সমতল কিছু পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং সেইসঙ্গে ধরলা ও ঘাঘট নদীসংলগ্ন কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হতে পারে।

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যমুনাশ্বরী, করতোয়া, বাঙ্গালী, আপার করতোয়া, পুনর্ভবা, টাঙ্গন, ইছামতি-যমুনা, আত্রাই, মহানন্দা এবং ছোট যমুনার নদীগুলির পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

;

থানচিতে নৌকা ডুবির তিনদিন পরও ২ শিক্ষার্থীর সন্ধান মেলেনি



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বান্দরবান
সাঙ্গু নদীতে ফায়ার সার্ভিস, ডুবুরি দলের উদ্ধার কার্যক্রম/ছবি: বার্তা২৪.কম

সাঙ্গু নদীতে ফায়ার সার্ভিস, ডুবুরি দলের উদ্ধার কার্যক্রম/ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বান্দরবানের থানচিতে নৌকা ডুবির ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজের ৭২ ঘণ্টা পার হলেও এখনো তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

বুধবার (০২ জুলাই) ঘটনার পর থেকে সাঙ্গু নদীতে ফায়ার সার্ভিস, ডুবুরি দল উদ্ধার কার্যক্রম চালালেও শিক্ষার্থীদের সন্ধান মেলেনি।

থানচি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা অরুন জ্যেতি বড়ুয়া জানান, গতকাল সারাদিন শিক্ষার্থীদের উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে। তবে ৭২ ঘণ্টা পার হলেও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এখনও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরও জানান, নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ সাঙ্গু নদীতে থাকলে ৪৮ ঘন্টা পার হলে ভেসে উঠার কথা। তবে সাঙ্গু নদীতে এখন যে পরিমাণ পানি এবং স্রোত রয়েছে, আমাদের ধারণা এতোক্ষণে নিখোঁজরা ভাঁটির দিক হয়ে সমুদ্রে চলে গেছে। তাই হয়তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

থানচি সদর থেকে তিন্দু পদ্মঝিরি দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। এলাকাটি দুর্গম ও নেটওয়ার্ক বিহীন।

জানা যায়, সোমবার (০২ জুলাই) সকালে কয়েকজন শিক্ষার্থী নৌকা যোগে হরিসচন্দ্র পাড়া থেকে রুনাধন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দিকে যাওয়ার পথে তিন্দু ইউনিয়নের পদ্মঝিরি এলাকায় পৌঁছালে পানি স্রোতে নৌকাটি ডুবে যায়। অন্যান্য শিক্ষার্থীরা সাতার কেটে প্রাণ রক্ষা করতে পারলেও শান্তি রানী ত্রিপুরা (১০) ও ফুলবানু ত্রিপুরা (৯) দুই শিক্ষার্থীর পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়ে যায়। এরপর উদ্ধারের চালালেও এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

তিন্দু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভাগ্যচন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, গতকাল ফায়ার সার্ভিস, ডুবুরি দল ও এলাকাবাসী যৌথভাবে নদীতে খোঁজখুজি চালিয়েছে। তবুও শিক্ষার্থীদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। আজকে আবার উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

;

মৃত্যুর আগেই চল্লিশা, ৫ শতাধিক গ্রামবাসীকে খাওয়ালেন মারফত আলী



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
বৃদ্ধ মারফত আলী (৭০)/ছবি: সংগৃহীত

বৃদ্ধ মারফত আলী (৭০)/ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গ্রাম-বাংলার রীতি অনুযায়ী কেউ মারা গেলে চল্লিশ দিন পরে চল্লিশা মেজবানীর আয়োজন করে জানাজায় শরীক হওয়া মুসল্লি, দরিদ্র অসহায় ও আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়ার ব্যবস্থা করে। এতে মৃত ব্যক্তির আত্মা শান্তি পায় বলে জনশ্রুতি আছে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর ইউনিয়নে। ওই গ্রামের বৃদ্ধ মারফত আলী (৭০) জীবিত অবস্থাতেই গ্রামবাসী ও আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করে চল্লিশার আয়োজন করেন। এমন ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেলে বড়হিত ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মারফত আলী ওই এলাকার মৃত উসন আলীর ছেলে।

এর আগে গত সোমবার (১ জুলাই) উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর গ্রামে বৃদ্ধ মারফত আলী মারা যাওয়ার আগেই অগ্রিম চল্লিশার আয়োজন করে প্রায় ৫ শতাধিক গ্রামবাসীকে গরু-খাসি ছাড়াও পায়েশ খাইয়েছেন।

স্থানীয়রা জানায়, মারফত আলী দুই বিয়ে করে বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছেন। দুই সংসারে রয়েছে ৩ মেয়ে ও ৬ ছেলে। এলাকায় বিত্তশালী কৃষক হিসাবে ব্যাপক পরিচিত তিনি। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা কেউ বিয়ে করে আলাদা আবার কেউবা লেখাপড়া করছেন।

যার যার মতোই ব্যস্ত থাকে। এ অবস্থায় মারফত আলী চিন্তাভাবনা করছেন নিজের জমিজমা ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়ে দেবেন। এরপর অপেক্ষা পরপারে চলে যাওয়ার। এর মধ্যে মাথায় আসে তিনি মারা গেলে সন্তানরা যদি চল্লিশা না করে। এই জন্য তিনি নিজ সিদ্ধান্ত নিজের চল্লিশা জীবিত অবস্থাতেই করে যেতে মনস্থির করেন।

 মারফত আলীর দাওয়াতে এসেছেন গ্রামবাসী।

পরে ঘটনাটি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বললে তাদের সম্মতিতেই আয়োজন করেন মেজবানি বা চল্লিশার। এই জন্য তিনি বেশ কয়েকদিন সময় নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে লোকজনকে দাওয়াত দেন। গত সোমবার দুপুরের পর থেকেই বাড়ির ভেতরে ডেকোরেটর দিয়ে ত্রিফল টানিয়ে বাবুর্চি দিয়ে রান্না-বান্না করে খাওয়ানো হয় কমপক্ষে ৫ শতাধিক নারী-পুরুষকে।

মারফত আলী জানান, বর্তমানে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। নামাজ ছাড়া এখন তেমন কোনো কাজকর্ম করেন না। চল্লিশার জন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু, ২০ হাজার টাকার খাসি, মুরগি ছাড়াও রয়েছে পায়েশ। পায়ে হেঁটে গ্রামের সব বাড়িতে গিয়ে দাওয়াত দিয়েছি। আমার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সবাই চল্লিশায় অংশগ্রহণ করেছে। এখন আমি মরেও শান্তি পাব।

দাওয়াত খেতে আসা আব্দুল কদ্দুস বলেন, এই রকম দাওয়াতে তারা অনেক দিন পর গেছেন। তবে, জীবিত ব্যক্তি নিজের চল্লিশার আয়োজন করেছেন তা ব্যতিক্রম ঘটনা। তৃপ্তি সহকারে আমরা খেয়েছি।

রশীদ মিয়া নামে একজন বলেন, আগত সবার জন্য তৃপ্তি সহকারে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন মারফত আলী। আল্লাহ তার মনভাসনা পুর্ণ করুক।

মারফত আলীর ছেলে সুজন বলেন, বাবার ইচ্ছা তিনি জীবিত থেকেই এই মেজবানী বা চল্লিশা করবেন। তাই আমাদেরও সম্মতি ছিল।

মেয়ে রেনুয়ারা বলেন, বাবার একটা সন্দেহ দূর করতেই এই আয়োজনে সবার সম্মতি ছিল। এতে তাদেরও ভালো লাগছে।

মারফত আলী জানান, মহান আল্লাহ তাআলা আমাকে অনেক সুখে শান্তিতে রেখেছেন। মালিক আমাকে যে পরিমাণ ধনসম্পদ দিয়েছেন তাতে আমি সন্তুষ্ট। আমার দুই সংসারে ছয় সন্তান রয়েছে। কিন্তু আমার মৃত্যুর পর সন্তানেরা যে গ্রামের মানুষকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াবে তার কোনো নিশ্চয়তা আছে? তাই আমি জীবিত থাকতে এই আয়োজন করেছি।

স্থানীয় মসজিদের ইমাম মওলানা আবুল কাশেম জানান, মারা যাওয়ার পর চল্লিশার আয়োজন এভাবে করার কোনো নিয়ম নেই। গরিব ও অসহায়দের আপ্যায়ন করা যেতে পারে। কিন্তু জীবিত থেকে ব্যাপক দাওয়াত দিয়ে যে কাণ্ড মারফত আলী করেছেন তা সম্পূর্ণ ইসলাম পরিপন্থী।

;