করোনা আক্রান্ত ইরান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি চায়

  করোনা ভাইরাস
  • খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পতাকা, ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পতাকা, ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ইরান যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রের দেওয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি চায়।বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানায়, বর্তমানে করোনাভাইরাস বিশ্ব ও গোটা মানবসমাজের জন্য বড় বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

প্রতিদিনই এ ভাইরাস এক দেশের সীমানা পেরিয়ে ঢুকে পড়ছে অন্যদেশে। ফলে বিশ্বের প্রতিটি দেশের নাগরিকদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে আক্রান্ত দেশ ও জাতিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ ও সম্মিলিতভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে আসা সব দেশ ও জাতির অপরিহার্য দায়িত্ব। পাশাপাশি ভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মকভাবে তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

বিজ্ঞাপন

দুঃখজনক বিষয় হলো এই কঠিন দুঃসময়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান যখন করোনাভাইরাসের সর্বগ্রাসী আক্রমণের হাত থেকে দেশের জনগণকে রক্ষার জন্য সচেষ্ট এবং এ ভাইরাস নির্মূলের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টায় লিপ্ত, ঠিক তখনও তেহরানকে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা অন্যায় নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ অমানবিক পদক্ষেপ জাতিসংঘ সনদ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংবিধিন পরিপন্থী। যুক্তরাষ্ট্রের এহেন কর্ম একদিকে যেমন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ইরানি নাগরিকদের চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং ইরানব্যাপী এর বিস্তার রোধ করার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে, তেমনিভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করার জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
যুক্তরাষ্ট্র সব আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি অমান্যকরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে অন্যদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে এবং এর মাধ্যমেই ইরানের জনগণকে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বলে আসছে যে খাদ্য এবং ওষুধ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। কিন্তু তারা আর্থিক লেন-দেনের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ এবং নিয়মিতভাবে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে হুমকি দিয়ে ইরানে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এ অবস্থা ইরানের স্বাস্থ্যখাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিজ্ঞাপন

এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত এবং গঠনমূলক পদক্ষেপ প্রয়োজন, এর পাশাপাশি করোনার বিস্তার রোধ করার জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক লেনদেনসহ সব সামাজিক কার্যক্রমের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরার পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এজন্য বিশেষ তহবিল গঠনের জন্য দরকার অন্তত কয়েক বিলিয়ন ডলার। এমন এক দুঃসময়ের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান বড় প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র গত দুই বছরে ইরানের বিরুদ্ধে অন্তত একশ’ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে, এর পাশাপাশি ২০১৮ সালের ৮ মে থেকে এখন পর্যন্ত ইরানের অন্তত ১২০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে তাদের কালোতালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ নিষেধাজ্ঞার প্রধান লক্ষ্য হলো ইরানের অর্থনীতি। ফলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং করোনাভাইরাসের প্রভাবে সম্প্রতি ইরানের অর্থনীতিতে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ ব্যক্তি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এমনকি জেসিপিএ চুক্তি স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করছে। এসব পদক্ষেপ যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর ইশতেহারসহ মানবাধিকার নীতিমালা ও সব আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এমতাবস্থায় নিষেধাজ্ঞার বাইরের মানবিক পণ্যগুলো যেমন খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী আমদানি করার দায়িত্ব পালন করা এককভাবে ইরানের বেসরকারি খাতের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এটা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে করোনা মহামারি মোকাবিলার কাজে সহায়তার জন্য ইরানের জনগণের ওপর অন্যায়ভাবে আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অচল করে দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো প্রত্যেক দেশের সরকার, নাগরিক সমাজ ও মানবতাবাদী ব্যক্তি ও সংগঠনের কর্তব্য। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জাওয়াদ যারিফ এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, এখন আর বিশ্বের উচিত নয়, অর্থনেতিক দুর্বৃত্তপনাকে ঔষধ সন্ত্রাসে পরিণত করার মার্কিন প্রবণতার বিষয়ে নির্লিপ্ত থাকা।

ইরানের প্রখ্যাত কবি শেখ সাদী তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ গুলিস্তায় লিখেছেন–
সব মানুষ একদেহের অঙ্গসম
যেহেতু সবার প্রথম উপাদান একই।
যখন একটি অঙ্গ ব্যথায় আক্রান্ত হয়
বাকি অঙ্গও তখন স্থির থাকতে পারে না।
অন্যের দুর্যোগে যদি উদ্বিগ্ন না হও
তবে তোমার নাম মানুষ হতে পারে না।