সকালে হঠাৎ জনসমাগম, সেনা টহলে ফের ফাঁকা রাজশাহী
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসযশোরের মণিরামপুরে এসিল্যান্ড কাণ্ডে সমালোচনার মুখে শনিবার (২৮ মার্চ) বিকেল থেকে রাজশাহী নগরীতে চোখে পড়ে পুলিশের ‘ঢিলেঢালা’ নজরদারি। দেখা মিলছিল না সেনা সদস্যদের টহলও।
ফলে শনিবার বিকেল থেকে মহানগরীতে মানুষের বেশ আনাগোনা দেখা যায়। রোববার (২৯ মার্চ) সকালে তা আরও বেড়ে যায়।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, সোনাদিঘী মোড়, মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজার, বৈশাখী মার্কেটসহ আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক জনসমাগম চোখে পড়ে। ফলে জিরোপয়েন্ট থেকে কলেজিয়েট স্কুলের গেট পর্যন্ত মাঝে-মধ্যেই রিকশা-অটোরিকশার জটও সৃষ্টি হতে থাকে।
বাজারে কেনাকাটা করতে আসা কেউ কেউ ব্যবহার করছিলেন না মাস্কও। মানছিলেন না দোকানে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর নিয়ম। মোড়ে মোড়ে দুই থেকে তিনজন করে পুলিশের টিম থাকলেও তারা ছিলেন কার্যত নির্বিকার। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে টহল অব্যাহত থাকলেও জনসাধারণের মাঝে সচেতনতার তেমন প্রভাব ছিল না।
রোবাবর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে দু’টি গাড়িতে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে আসে সেনা সদস্যদের একটি টিম। গাড়ি থেকে নেমেই তারা দুই অথবা তিনজনের টিমে বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়েন নগরীর সাহেববাজারের আশেপাশের মূল রাস্তা ও কাঁচাবাজারের অলি-গলিতে।
মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ও ফলের দোকানে গিয়ে তারা মানুষকে সচেতন করেন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করতে বলেন। অটোরিকশা ও রিকশাচালকদের নিয়ম মেনে চলাচলের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তাদের মাত্র আধা ঘণ্টার কার্যক্রমে ফের ফাঁকা হয়ে যায় রাজশাহী নগরী।
সেনা সদস্যদের সঙ্গে ঘুরে বেশ কিছু অভিনব কার্যক্রমও চোখে পড়ে। যেমন- রাস্তার ধারে অস্থায়ী মাস্ক বিক্রেতাদের থেকে পাইকারি দরে মাস্ক কিনে মাস্ক ব্যবহার না করা সাধারণ মানুষকে পরিয়ে দেওয়া, টিসিবি’র পণ্য কিনতে দূরত্ব না মেনে দাঁড়ানো মানুষদের লাইনে দাঁড়ানোর নিয়ম শিখিয়ে দেওয়া, অটোরিকশার চালকদের ভাড়া পাওয়ার ক্ষেত্রে দূরত্ব বজায় রেখে সিরিয়ালে দাঁড় করানো, সবজি বিক্রেতাদের ক্রেতাদের সাথে লেনদেনের নিয়ম শেখানো ইত্যাদি।
ভাড়ার অপেক্ষায় রোদ উপেক্ষা করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন বয়োবৃদ্ধকেও সেনাবাহিনীর দু’জন সদস্যকে পকেট থেকে নগদ টাকা বের করে দিতে দেখা যায়। সেই দৃশ্য ধারণ করলেও তা প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান সেনা সদস্যরা।
তবে সেনা সদস্যদের সাহায্য পাওয়া রিকশাচালক আমির খাঁ বার্তা২৪.কমকে বলেন, সকাল থেকে ২০ ট্যাকার ভাড়া মারছি। আরডি মার্কেটের সামনে রিকশার উপরে বসেছিলাম। আর্মি দেখে একটু ভয় পেয়ে আমি রিকশা থেকে নেমে দাঁড়িয়েছিলাম। আর্মির দুই মামা এসে বলল- ভাড়া পাচ্ছেন না চাচা? আমি বললাম- সকাল থেকে ২০ ট্যাকা ভাড়া হইছে। তখন একজন আমাকে ৩০০ টাকা দিয়ে আজকের মতো বাড়ি চলে যেতে বললেন।
আমির খাঁ বলেন, গত এক সপ্তাহে কোনো দিনই ২০০ টাকার ওপরে ভাড়া হয়নি। দিনে ৩০০ টাকা আয় হওয়া এখন কল্পনার বাইরে। আর্মির মামাদের দেয়া টাকা দিয়ে চাল-ডাল কিনে আমি বাড়ি চলে যাব। খুব খুশি হইছি, আল্লাহ উনাদের বাঁচিয়ে রাখুক।
আরডি মার্কেটের পাশের ফল বিক্রেতা শাহজাহান আলী বলেন, আর্মির লোকেরা বোঝায় এবং নির্দেশ দেয় খুবই ভদ্রভাবে। যেভাবে উনারা বলেন তাতে মন থেকে ইচ্ছে করে কষ্ট হলেও তাদের নির্দেশ মেনে চলি।
কাঁচাবাজার থেকে কেনাকাটা করে অটোরিকশায় ফিরছিলেন আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, সকালে বাজারে সবজি কিনতে এসে ভিড় দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। মানুষ সুযোগ পেলেই বাজারে ভিড় করে ফেলছে। আর্মি আসার পর বিনা কাজে যারা বাইরে ঘুরছিল, সব হুটহাট করে সরে পড়েছে। শহর এখন আবার ফাঁকা।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বার্তা২৪.কমকে বলেন, পুলিশও মাঠে রয়েছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি আমরাও। গত কয়েকদিনের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছিল, সেদিকে নজর রেখে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। আইজিপি’র দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতিতে সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে আরএমপি।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওদের নেতৃত্বে সমন্বিতভাবে কাজ করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করে ঘরে থাকার পরামর্শ অব্যাহত রাখা হয়েছে। রাজশাহীবাসী প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকছে। এখানে এখনও পর্যন্ত কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি।