করোনায় নিদারুণ কষ্টে গণপরিবহন শ্রমিকরা
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসবাস টার্মিনালে গাড়ি আছে, কিন্তু খোলা নেই টিকেট বিক্রির কাউন্টার। নেই বাস স্ট্যান্ড জুড়ে মানুষের গাদাগাদি। বাসে ওঠা নামা নিয়ে নেই কলার বয়দের হাঁকডাকও। তালা ঝুলছে কাউন্টারগুলোতে। বন্ধ রাখা হয়েছে গাড়ির চাকা। করোনাকালে গণপরিবহন সেবায় নিয়োজিত মানুষগুলোও বদলে গেছে। কষ্ট, আহাজারি আর মানবেতর দিন পার করার এক শব্দহীন অনুভূতি পরিবহন শ্রমিকদের চোখে মুখে।
দিনের পর দিন হাত গুঁটিয়ে বসে থাকা এসব মানুষদের সংসার চলছে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তায়। কিন্তু সেই ত্রাণ আর জমানো টাকা ফুরিয়ে আসায় নিদারুণ কষ্ট চেপে বসেছে শ্রমিক পরিবারগুলোতে। কবে নাগাদ ঘুরবে উপার্জন নির্ভর গাড়ির চাকা, এখন তা নিয়েই ভাবছেন তারা।
রংপুর বিভাগে আন্তঃ জেলা ও দূরপাল্লা মিলে প্রায় লাখ খানেক গণপরিবহন চলাচল করে। আর এর সাথে সরাসরি জীবন জীবিকায় জড়িত প্রায় দুই লাখেরও বেশি মানুষের। করোনা পরিস্থিতিতে গণপরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে সরকারকে স্বাগত জানালেও অসহায় শ্রমিকদের দাবি পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তার।
নগরীর শাপলা চত্বর হাজীপাড়া এলাকার মোটরবাস শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘হামার গাড়ি চললে সংসার চলে। কিন্তু এ্যলা তো করোনার কারণে সোগে বন্ধ। পনের দিন আগোত ডিসি অফিস থাকি দশ কেজি চাউল দেছে। এ্যালা চাউল শ্যাষ, কায়ো তো আর খরব নেয় না।’
কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডের সামনে কথা হয় পরিবহন শ্রমিক কাজী মাহাবুবের সাথে। বার্তা২৪.কম-কে তিনি বলেন, পরিস্থিতি খুবই খারাপ। নেতারা চাল ডাল তেলসহ কিছু সামগ্রী দিয়েছিল। সামান্য ত্রাণে তো এক মাস সংসার চালানো সম্ভব না। এখন খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। এভাবে আর কতদিন থাকতে হবে, আমাদের জন্য কিছু একটা করেন।’
বৈশ্বিক এই মহামারিতে ত্রাণের আশায় প্রতিদিন রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার পরিবহন শ্রমিকরা পথে পথে ঘুরছেন। খোঁজ করছেন কোথাও মিলবে খাদ্য সহায়তা। অনেক শ্রমিক পরিবার থেকে তাদের স্ত্রী-সন্তানরা অনাহারে অর্ধাহারে থাকার কষ্ট সইতে না পেরে পাড়া-মহল্লায় বিত্তবানদের দরজায় দরজায় ঘুরছেন।
যাত্রীসেবায় নিয়োজিত এসব শ্রমিকদের জীবন জীবিকা নির্ভর গণপরিবহনের চাকা সচল না হওয়া পর্যন্ত সরকারের পাশাপাশি পরিবহন মালিকদেরও এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শ্রমিকদের এমন দুর্দিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্থানীয় শ্রমিক নেতারাও সাধ্যমত চেষ্টা করছেন পাশে দাঁড়ানোর। ইতোমধ্যে রংপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন, জাতীয় শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে দুই দফায় সহস্রাধিক শ্রমিককে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। সরকারি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তবে অসহায় শ্রমিকদের দাবি পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তার। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান করছে অসহায় এসব মানুষ।
এব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের রংপুর বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ বলেন, সরকারি সহায়তা যা এসেছে, তা শ্রমিকদের মধ্যে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও কয়েক দফায় ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে যদি করোনা প্রতিরোধে গণপরিবহন বন্ধ থাকে, তাহলে শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে। এই পরিস্থিতিতো সরকারের বা আমাদের সংগঠনের পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এজন্য পরিবহন মালিকদেরও শ্রমিকদের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
সরকারি ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নজরুল ইসলাম। বার্তা২৪.কম-কে তিনি বলেন, সরকারি বরাদ্দ থেকে জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে রংপুরে পরিবহন শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার শ্রমিকদের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন স্পটে এবং বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষদেরকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।