বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, যারা গণতন্ত্রকে ভালোবাসে, গণতন্ত্র পছন্দ করে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যৎ খারাপ। খারাপ বলার কারণ হলো, ক্ষমতার চেয়ারে যারা বসে, সহজে এটা ছাড়তে চায় না। তারা বুঝতেও চায় না যে এটা তাদের কাজ না।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে গণতান্ত্রিক জাগ্রত বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, একটা গোষ্ঠী আছে যারা অতীত এমনকি ভবিষ্যৎও তারা দেখতে পায়। তারা মনে করে একমাসের মধ্যে সরকার পরিবর্তন, হাসিনার বিদায় এবং বিপ্লব গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, কিন্তু অতীতে কি ছিল এটা তারা একসেপ্ট করতে চায় না। এমনকি সরকারের প্রধান যে ব্যক্তি আছেন, তিনিও অতীতটা দেখতে পারেন না। অতীতে আর যান না । এক মাসের মধ্যে আটকে গেছেন।
তিনি বলেন, ড. ইউনূস আমেরিকা গিয়ে একজনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন, সে নাকি মাস্টারমাইন্ড। অর্থাৎ এই ছেলেটি এক মাসের ভিতরে সবকিছু উদ্ধার করে ফেলেছে। এমনকি হাসিনাকেও তাড়িয়েছে। সবকিছু সফল করে ফেলেছে। আমার কাছে মাঝে মাঝে মনে হয়, ড. ইউনূস একমাসের মধ্যে এরকম একটা সফল আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড খুঁজে ফেললেন, তাহলে জিনিসপত্রের দাম কমাতে ছয় মাসেও কেন হচ্ছে না? আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে তাহলে কেন ছয় মাস হচ্ছে না? মাস্টারমাইন্ড তো একেকটা বের করতে পারতো! খাদ্যের মাস্টারমাইন্ড, আইন-শৃঙ্খলার মাস্টারমাইন্ড, বাণিজ্যের মাস্টারমাইন্ড বের করতে পারতো। সবকিছুর একটা সুস্থতা আছে। শয়তানিরও একটা সুস্থতা আছে। এ কয়টা লোক গত ছয় মাসে বাংলাদেশে যা করেছে সেটা খুব ভয়ংকর।
পরিবেশ উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে কৃষকদলের সাবেক এই আহ্বায়ক বলেন, একজন তো বলেই ফেললো এই ৫৩ বছরে রাজনীতিবিদরা কি করেছে। আমি তাকে পরিবেশ আন্দোলনের সফল ব্যক্তি হিসেবে মনে করি। কিন্তু, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি কতটা কাজ করেছেন জানি না।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই নেতা বলেন, ছাত্রদের কাঁধে পা উঠিয়ে আপনারা ক্ষমতায় এসেছেন। রাজনীতিকে ছোট করবেন না। রাজনীতিবিদদেরকে ছোট করবেন না। আন্দোলনকারীদের ছোট করবেন না। তাহলে দেশ থাকবে না। জনগণকে সংগঠিত করতে হলে, আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক হতে হবে।
তিনি বলেন, কোনো রাজনীতিবিদরা এনজিও করতে যায় না। তারা সাধারণ মানুষের কাছে যায়। এজিও'র যে অত্যাচার সেটার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষ রাজনীতিবিদদের কাছে আসে। কেউ কেউ গলায়ও দড়ি দেয়। তারা এত হতাশ হয়ে যায়। কিন্তু, রাজনীতিবিদরা স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে। তারা কখনো জনগণকে সাফল্য দিতে পারে আবার কখনো পারে না। কিন্তু, শেষ বিচারে রাজনীতিবিদরাই দেশ পরিচালনা করে। সেই রাজনীতিবিদরা যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে তখন দেশের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হবে। সেজন্য রাজনীতিবিদদেরকে যারা ছোট করছে তারা আসলে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরছে।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, এক শ্রেণীর খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে। তারা বলছে, জাতীয় ইলেকশনের আগে স্থানীয় ইলেকশন করতে হবে। খুঁজে দেখেন, এই কথাগুলো যেখান থেকে বেরিয়ে আসছে তারা ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল। ২-৩ পারসেন্টের বেশি ভোট তাদের নাই। এদের চেহারা চালচলন সবসময় একটা গোষ্ঠীর মধ্যে আটকে থাকে। আগে এরা ইসলামী বিপ্লবের কথা বলতো। এখন তারা সেগুলো বাদ দিয়ে ভোটের রাজনীতিতে আসতে চায়। ভোটও যাতে সুষ্ঠুভাবে না হয় সে অবস্থার মধ্যে তারা দেশকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন, তারা ব্যাংক দখল করে ফেলেছে, কোচিং সেন্টার দখল করে ফেলেছে, বিশ তলা হাসপাতাল পর্যন্ত দখল করে ফেলেছে। এরা এখন তৎপর হয়ে গেছে। তাই গণতন্ত্রকারীদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম কলিম এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন এর উপদেষ্টা এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমতুল্লাহ, শাহজাহান মিয়া সম্রাট সহ প্রমুখ।