কাতারে ফুটবল মরুঝড়ের অপেক্ষা!
‘মরুর বুকে বিশ্ব কাঁপে’টানটান উত্তেজনায় সারা বিশ্ব অপেক্ষমাণ। এমনিতেই মেগা ইভেন্ট নিয়ে বিশ্বব্যাপী আগ্রহের কমতি থাকে না। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে গ্রেটেস্ট শো অন দ্যা আর্থের ২২ তম সংস্করণ, যেখানে মরুর বুকে শুরু হবে বিশ্বফুটবলের দুর্দান্ত ঝড়।
নানা কারণে কাতার বিশ্বকাপ আলোচিত হচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারি পেরিয়ে বিশ্ব আবার দেখবে ফুটবল উন্মাদনা। তাছাড়া কাতার বিশ্বকাপের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া মহাদেশে বসতে যাচ্ছে ফুটবলের এই বিশ্ব আসর। ২০ বছর আগে জাপান -কোরিয়ার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ফুটবল বিশ্বকাপ।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শীতকালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই মেগা ইভেন্ট। সাধারণত মে - জুলাই মাসের মধ্যে আয়োজন করা হয় বিশ্বকাপ। কিন্তু সেইসময় কাতারে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকায় তা নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে সরিয়ে আনা হয়।
জনসংখ্যা এবং আয়তন দুইদিক থেকেই এখন পর্যন্ত কাতার সবচেয়ে ছোট আয়োজক দেশ হিসেবে রেকর্ড করেছে।
ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল হতে যাচ্ছে এবারের সংস্করণটি। আয়োজক কর্তৃপক্ষ প্রায় ২২০ বিলিয়ন ইউএস ডলার খরচ করেছে এই বিশ্বকাপ আয়োজন করার জন্যে।
কাতার বিশ্বকাপে রেকর্ড কমসংখ্যক ভেন্যুতে খেলা হবে (৮টি)। এই ৮ টি মাঠে মোট ৬৫ টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভেন্যুতে খেলা হয়েছিল ২০০২ সালের কোরিয়া - জাপান বিশ্বকাপে (২০ টি)
তাছাড়াও কাতার বিশ্বকাপের ৮ টি ভেন্যু ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। যেখানে দর্শকদের এক মাঠ থেকে আরেক মাঠে যেতে লাগবে গড়ে ৯০ মিনিটের মতো!
এবারের সংস্করণটি সবচেয়ে কমদিনের মধ্যে সম্পূর্ন হবে। মাত্র ২৮ দিনে শেষ হয়ে যাবে বিশ্বকাপের এই জাকজমকপূর্ন মেগা ইভেন্ট। আর বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে রেকর্ড দেড় মিলিয়ন মানুষ কাতারে সশরীরে উপস্থিত থাকবে। উল্লেখ্য, কাতার এক মাত্র আয়োজক দেশ যারা এর আগে কখনোই ফুটবল বিশ্বকাপের মূল পর্বে উঠতে পারেনি!
কাতার বিশ্বকাপের মাস্কটের নাম La'eeb এবং বলের নাম Al Rihla। ১৯৫৮ সালের পর আবারো এই আসরের মাধ্যমে বিশ্বকাপের ফিরছে ওয়েলস! কাতারের দুই ভেন্যু Al - Bayt এবং Al-Wakrah এর মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৯০ মাইলের! এবারের আসরে প্রতিটি স্টেডিয়ামে রয়েছে এয়ার কন্ডিশনের ব্যবস্থা যা এর আগে কখনো দেখা যায়নি কোনো ফুটবল আসরের।
কাতার বিশ্বকাপের আটটি মাঠের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মাঠ হচ্ছে লুসাইল স্টেডিয়াম (৮০,০০০) আর রাণী এলিজাবেথবিহীন প্রথম বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ।
তিন বার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও এক বারও জিততে পারেনি ডাচরা। এ বার অন্যতম ফেভারিট হিসাবেই খেলতে নামবে তারা। দলের গোলকিপাররা হলেন জাস্টিন বিলো, রেমকে পাসভির, আন্দ্রিয়েস নোপার্ট। ডিফেন্ডাররা হলেন ভার্জিল ফান ডাইক, নাথান একে, দালে ব্লিন্দ, জুরিয়েল টিম্বার, ডেঞ্জেল ডামফ্রিস, স্তেফান দি ভ্রাই, মাথিয়াস দি লিট, টাইরেল মালাসিয়া, জেরেমি ফ্রিমপং। মিডফিল্ডারদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রেঙ্কি দি জং, স্টিভন বার্গউইস, ডেভি ক্লাসেন, টিউন কুপমিনার্স, কোপি গাকপো, মার্তিন দে রুন, কেনেথ টেলর, জ়াভি সিমন্স। ফরোয়ার্ড লাইনে রয়েছেন মেম্ফিস দেপাই, স্টিভন বার্গউইন, ভিনসেন্ট জানসেন, লুক দে জং, নোয়া লাং, উট উইঘর্স্ট।
নির্ধারিত সময়ের তিন দিন আগেই কাতার বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছে আর্জেন্টিনা। কোচ লিয়োনেল স্কালোনির বেছে নেওয়া দলে সে ভাবে কোনও চমক নেই। কোপা আমেরিকা এবং ফাইনালিসিমা জেতাতে যে সব ফুটবলার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই দলে সুযোগ পেয়েছেন। চোট থাকলেও পাওলো ডিবালাকে দলে নেওয়া হয়েছে। সুযোগ পেয়েছেন অ্যাঙ্খেল দি মারিয়াও।
স্পেন দলে জায়গা পেলেন না ২০১০-এর বিশ্বজয়ী সের্খিয়ো র্যামোস। তিনি জায়গা পাবেন না এটা এক প্রকার নিশ্চিতই ছিল। প্যারিসে যাওয়ার পর সে ভাবে সুযোগই পাচ্ছেন না। ফিটনেসও তলানির দিকে। কোচ লুই এনরিকে জোর দিয়েছেন তারুণ্যের উপর। নেদারল্যান্ডসের দলে চোটের কারণে নেই জর্জিনিয়ো ওয়াইনালডাম।
আর্জেন্টিনা দলে তিন গোলকিপার হলেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস, জেরোনিমো রুলি, ফ্রাঙ্কো আর্মানি। ডিফেন্ডাররা হলেন নাহুয়েল মোলিনা, গঞ্জালো মন্তিয়েল, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, জার্মান পেজেল্লা, নিকোলাস ওটামেন্ডি, লিসান্দ্রো মার্তিনেস, মার্কোস আকুনা, নিকোলাস ট্যাগলিয়াফিকো, জুয়ান ফয়েথ। মিডফিল্ডাররা হলেন রদ্রিগো দি পল, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, গুইদো রদ্রিগেস, আলেসান্দ্রো গোমেজ, এনজ়ো ফের্নান্দেস, এজ়েকিয়েল পালাসিয়োস। ফরোয়ার্ডে থাকছেন দি মারিয়া, লাউতারো মার্তিনেস, জুলিয়ান আলভারেস, নিকোলাস গঞ্জালেস, জোয়াকুইন কোরিয়া, পাওলো ডিবালা এবং লিয়োনেল মেসি।
স্পেনের দলে ২০ বছরের আনসু ফাতিকে নেওয়া হয়েছে। ২০২০-র অক্টোবরের পর থেকে স্পেনের হয়ে আর খেলেননি তিনি। স্পেনের হয়ে কনিষ্ঠতম গোলদাতা হওয়ার নজির গড়লেও চোটে আঘাতে বিধ্বস্ত হয় তাঁর ফুটবলজীবন। তিনি ছাড়াও ১৯ বছরের পেদ্রি এবং ১৮ বছরের গাভিকে দলে রেখেছেন এনরিকে। র্যামোস ছাড়াও বাদ দেওয়া হয়েছে গোলকিপার ডেভিড দি গিয়াকে।
দলের তিন গোলকিপার হলেন উনাই সিমন, রবার্ত স্যাঞ্চেস, ডেভিড রায়া। ডিফেন্ডাররা হলেন, সেজার আথপিলিকুয়েতা, দানি কার্বাখাল, এরিক গার্সিয়া, হুগো গুইয়ামন, পাউ তোরেস, আয়মেরিক লাপোর্তে, জর্ডি আলবা, হোসে গায়া। মিডফিল্ডাররা হলেন সের্খিয়ো বুস্কেৎস, রদ্রি, গাভি, কার্লোস সোলার, মার্কোস লোরেন্তে, পেদ্রি, কোকে। ফরোয়ার্ড বিভাগে রয়েছেন ফেরান তোরেস, নিকো উইলিয়ামস, ইয়েরেমি পিনো, আলভারো মোরাতা, মার্কো আসেনসিয়ো, পাবলো সারাবিয়া, দানি অলমো, আনসু ফাতি। কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে ২৩ নভেম্বর স্পেনের প্রথম ম্যাচ।
দল ঘোষণা করেছে পর্তুগালও। স্বাভাবিক ভাবেই নেতৃত্ব দেবেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার পেপে-কেও নেওয়া হয়েছে। নতুনদের মধ্যে মাথিয়াস নুনেস এবং হোয়ে পালহিনহা সুযোগ পেয়েছেন। দলের তিন গোলকিপার হলেন দিয়োগো কোস্তা, রুই পাত্রিসিয়ো এবং হোসে সা। ডিফেন্ডাররা হলেন দিয়োগো দালত, দানিলো পেরেরা, হোয়াও কানসেলো, আন্তোনিয়ো সিলভা, পেপে, রুবেন দিয়াস, নুনো মেন্দেস, রাফায়েল গুয়েরেরো। মিডফিল্ডাররা হলেন উইলিয়াম কার্ভালহো, রুবেন নেভেস, ওটাভি মন্তেইরো, বার্নার্ডো সিলভা, মাথেউস নুনেস, ব্রুনো ফের্নান্দেস, হোয়াও মারিয়ো, হোয়াও পালহিনহা, ভিটিনহা। ফরোয়ার্ডে রোনাল্ডো ছাড়াও রয়েছেন আন্দ্রে সিলভা, রিকার্ডো হোর্তা, হোয়াও ফেলিক্স, রাফায়েল লিয়াও, গনসালো র্যামোস।
সব মিলিয়ে কাতার বিশ্বকাপে মরুর বুকে শিহরণ জাগানো ফুটবলের অপেক্ষায় এখন সারা দুনিয়া।