সৌদি-আর্জেন্টিনা ম্যাচ: 'অঘটন' কিংবা ফুটবল বিস্ময়!
‘মরুর বুকে বিশ্ব কাঁপে’রক্ষণশীলতার খোলস ছেড়ে সৌদি রাজতন্ত্রের যাত্রাপথে মাইলফলক হয়ে এলো এক বিজয়। মঙ্গলবার ২২ সেপ্টেম্বর। টানটান উত্তেজনায় সূচিত ফুটবলের মেগা ইভেন্টের তৃতীয় দিন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে গ্রেটেস্ট শো অন দ্যা আর্থের ২২ তম সংস্করণের প্রথম 'অঘটন' ঘটলো, যেখানে মরুর বুকে বিশ্বফুটবলের ময়দানে দুর্দান্ত ঝড় তুললো সৌদি আরব। ধরাশায়ী হলো ফুটবল পরাশক্তি আর্জেন্টিনা।
ক্রীড়া সাংবাদিকতার বাহারি ভাষা আর বর্ণনায় সৌদি-আর্জেন্টিনা ম্যাচের নানা খবর মিডিয়ায় প্লাবন তৈরি করেছে। আর গতানুগতিক ঐতিহ্যে সুসজ্জিত অশ্বারোহী দল জাতীয় পতাকা হাতে প্রদক্ষিণ করছে আরবের শহরগুলো।
কিন্তু অধিকাংশই যখন সৌদি-আর্জেন্টিনা ম্যাচকে ‘অঘটন’ বলছেন, তখন ফুটবল বিস্ময়ের কথাও স্মরণ করাও জরুরি। আরব বেদুইনের রোমহর্ষক শিহরণ জাগিয়ে যোগ্যতার মানদণ্ডেই খেলা জিতেছে সৌদিরা। কোনও দর্শকই এ সত্য কবুল করতে দ্বিধা করবেন না।
দর্শক অবশ্যই স্মৃতিতে ধরে রাখবেন বিশ্বকাপের এই প্রবল উত্তেজনাপূর্ণ খেলাটিকে। কারণ আর্জেন্টিনার পরাজয় অনেকেই মেনে নিতে না পারলেও সৌদি ফুটবল শৈলীর কৃতিত্বকেও অস্বীকার করতে পারবেন না। টুর্নামেন্টের প্রথম খেলায় এবং সৌদি আরবের মতো প্রায় অজ্ঞাত কোনও দলের সাথে আর্জেন্টিনার পরাজয় অভাবনীয়। তবে সৌদির জয়ও নিছক অঘটন নয়, যোগ্যতার জয়।
দর্শক হিসেবে বলতে পারি, ফুটবলের যে অসামান্য যাদু সৌদি আরবের ছেলেরা দেখিয়েছে তা বিশ্বকাপের ইতিহাসে অঘটনের বাইরে গিয়েও অসামান্য কীর্তির এক বিরল নজির স্থাপনের দাবি রাখে। খেলাটি দেখে সৌদির নাগরিকরাই কেবল নন, সব দর্শকই আপ্লুত। অনেক বছর ধরে প্রচণ্ড শক্তিশালী ও প্রায় অপরাজিত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কম সামর্থবান নতুনের দৃঢ়চিত্ত লড়াইয়ের সার্থক অভিষেক হিসেবে সৌদিদের মনে রাখবে বিশ্বফুটবলের ইতিহাস।
বিশ্বকাপ ফুটবলে পরাক্রমের পর্যুদস্ত হওয়ার ঘটনা বিরল নয়। ব্রাজিল, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন প্রভৃতি দলও আর্জেন্টিনার মতো শুরুতে অনেক বার পরাজিত হয়েছে। আর আর্জেন্টিনা এই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিক বার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হেরে শুরু করেছে আর্জেন্টিনা। তার মধ্যে এক বার তারা উঠেছে ফাইনালেও। তবে সৌদি আরবের মতো ফিফা ক্রমতালিকায় এত নীচে থাকা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হার যে আর্জেন্টিনার আত্মবিশ্বাসে অনেকটা ধাক্কা দেবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপে রানার্স হয়েছিল আর্জেন্টিনা। তার পরে ১৯৩৪ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই সুইডেনের কাছে ২-৩ হেরে বিদায় নেয় তারা। সে বার শুরু থেকেই নকআউটে খেলা হয়। আর্জেন্টিনা হারে প্রথম ম্যাচেই। এর পর ১৯৫০ এবং ১৯৬৪ সালে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। ১৯৫৮ সালেও প্রথম ম্যাচেই হেরে যায় তারা। পশ্চিম জার্মানির কাছে ১-৩ গোলে হারে তারা।
১৯৭৪ সালে প্রথম ম্যাচে পোল্যান্ডের কাছে ২-৩ গোলে হারে আর্জেন্টিনা। এর পর ১৯৮২ বিশ্বকাপে তারা প্রথম ম্যাচে বেলজিয়ামের কাছে ০-১ ব্যবধানে হারে। ১৯৮৬ সালে দিয়েগো মারাদোনার সৌজন্যে বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৯০ সালে ট্রফিজয়ের দাবিদার হিসাবে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু সে বার ক্যামেরুনের কাছে প্রথম ম্যাচে ০-১ গোলে হারে আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেই হারের ধাক্কা সামলে একের পর এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যান মারাদোনারা। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির কাছে ফাইনালে হারতে হয়, যে ম্যাচকে অনেকেই মনে করেন জোর করে হারানো হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে।
সেই শেষ বার বিশ্বকাপে হারে আর্জেন্টিনা। গত বার তারা প্রথম ম্যাচে ড্র করেছিল আইসল্যান্ডের বিপক্ষে। এ বার আবার হারতে হয়েছে নীল-সাদা জার্সিধারীদের। দেখা যাক, এবারের হার থেকে ফুটবল জায়ান্ট আর্জেন্টিনা শেষ পর্যন্ত দর্শকদের সামনে কোন বিস্ময় হাজির করে!