রাহুলের নেতৃত্বে খর্ব হবে বিজেপির স্বেচ্ছাচারিতা!

ভারত, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-06-28 02:46:55

২০২৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স) জোটের সমর্থনে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি- বিজেপি।

২০১৪ সালের ষোড়শতম এবং ২০১৯ সালের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হয়েছিল দলটি। আগের দুটি নির্বাচনে সরকার গঠনে এককভাবে সক্ষমতা অর্জন করলেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের সঙ্গে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি।

কিন্তু ২০২৪ সালের অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে একক দল হিসেবে ২শ ৭২টি আসন পায়নি দলটি। ২শ ৪০টি আসন পেয়ে জোটভুক্ত শরিক দলের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে সরকার গঠন করে বিজেপি।

এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেন অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টির চন্দ্রবাবু নাইডু ও বিহারের জেডি (ইউ) বা জনতা দল (সংযুক্ত)-এর নেতা নীতিশকুমার। এছাড়া ছোটখাটো দলগুলিও বিজেপি সরকার গঠনে ভূমিকা রাখে।

২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই টানা ১০ বছর বিরোধীদলবিহীন ছিল ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভা। লোকসভায় বিরোধী দলের আসনে বসতে হলে লোকসভার মোট ৫শ ৪৩টি আসনের মধ্যে অন্তত ৫৫টি আসনে জয়লাভ করতে হবে, শতকরা হারে যা দাঁড়ায় ১০ শতাংশ ভোট।

এই ১০ বছর সংসদের বাইরে সরকারে বিপক্ষে মূল শক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখেছে সর্ব ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দল। তবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৯৯টি আসন পেয়ে বিরোধী দলের মর্যাদা অর্জন করেছে দলটি।

২৬ জুন (বুধবার) লোকসভায় এনডিএ জোটের কণ্ঠভোটে নতুন স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন ওম বিড়লা। এসময় লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও।

২০২৪ সালের আমেথির রায়বেরিলি ও কেরালার ওয়ানডা থেকে লোকসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন রাহুল গান্ধী।

বিরোধীদলীয় নেতৃত্বের বিষয়ে পুস্তিকা
ভারতের লোকসভায় বিরোধী দলের নেতার ভূমিকা কী হবে, ২০১২ সালে সে বিষয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে জাতীয় সংসদ। তাতে বলা হয়, লোকসভায় বিরোধীয়দলীয় নেতা হবেন ‘ছায়া মন্ত্রিসভার ছায়া প্রধানমন্ত্রী’। সংসদে যদি সরকারি দল অনাস্থা ভোটে হেরে যায়, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণসাপেক্ষে তিনিই হবেন পরবর্তী সরকার প্রধান।

পুস্তিকায় আরো বলা হয়, বিরোধীদলীয় নেতা কোনো সাংবিধানিক পদ নয়। তবে মূল মূল সরকারি পদগুলিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে তার মতামত গুরুত্ব পাবে।

সে হিসেবে লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাহুল গান্ধীর বিশেষ ভূমিকা থাকবে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত একটা ১০ বছর বিজেপি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারতো, ২০২৪ সালের লোকসভায় সে আধিপত্য থাকছে না। তাদের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত খর্ব হবে রাহুল গান্ধী বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হওয়ায়।

যে সব ক্ষমতা থাকে বিরোধীদলীয় নেতার
ভারতের সংবিধান অনুসারে লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে রাহুল গান্ধী সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে যে যে ভূমিকা রাখতে পারবেন, তাহলো-

১. সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা, প্রশ্ন তোলা
সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা দিতে না পারলেও সংসদে সে বিষয়ে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য করতে পারবেন বিরোধীদলীয় নেতা। তারমানে সরকার চাইলেই বিনা চ্যালেঞ্জে আর কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে না।

২. ছায়া মন্ত্রিসভার ছায়া প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব
কোনো কারণে সরকারে থাকা প্রধামন্ত্রী রাষ্ট্রের দেওয়া দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় এবং সংসদে অনাস্থা ভোটে হেরে যায়, তাহলে সংসদে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণসাপেক্ষে দেশের স্বার্থে সরকার গঠন করতে পারবে। এজন্য বিরোধীদলীয় নেতা থাকাকালে ‘ছায়া মন্ত্রিসভা গঠন করে ছায়া প্রধানমন্ত্রী’র দায়িত্ব পালন করবেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা।

৩. গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিতর্ক আহ্বান
যদি বিরোধীদলীয় নেতার ধারণা হয় যে, সমালোচনার ভয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত সংসদকে পাশ কাটিয়ে বাস্তবায়ন করতে চায়, তাহলে বিরোধীদলীয় নেতা সরকারের কাছে সংসদে বিতর্কের আহ্বান জানাতে পারবেন।

৪. নীতিগত সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ প্রদান
বৈদেশিক সম্পর্ক নির্ধারণ এবং জাতীয় নিরাপত্তায় কিংবা জাতির সংকটকালে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে আলোচনা করে যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, বিরোধীদলীয় নেতা দেশের সংহতির প্রতীক হিসেবে কাজ করে থাকেন। সে কারণে দেশের সংকটকালে বিরোধীদলীয় নেতার অঙ্গীকারও প্রয়োজন হয়।

৫. সরকারের সমালোচনা
বিরোধীদলীয় নেতা সংসদে বা দেশের বাইরে সফরকালে সরকারের সমালোচনা করতে পারবেন। তবে তখন তিনি ‘পার্টি পলিটিকস’ করতে পারবেন না।

৬. সংখ্যালঘুদের মুখপাত্র
সংসদের প্রকাশিত পুস্তিকা অনুসারে, লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা হবেন সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় এবং সুবিচারের মুখপাত্র। সে হিসেবে দায়িত্ব তিনি সে দায়িত্ব পালন করবেন।

৭.গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগদানে সিদ্ধান্তদানকারী
সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদের নিয়োগে বিরোধীদলীয় নেতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ থাকে। এর মধ্যে রয়েছে, সেন্টাল ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)-এর পরিচালক নিয়োগ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নিয়োগ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন নিয়োগ এবং জাতীয় পরিদর্শক নিয়োগে মতামত।

এছাড়াও বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে পাবলিক অ্যাকাউন্টস, পাবলিক আন্ডারটেকিংস, হিসাব এবং যৌথ সংসদীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ থাকে।

ভারতের লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার সুযোগ থাকায় রাহুল গান্ধী সহজে বিজেপিকে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দেবেন, তা ভাবা যায় না।

এমনিতেই সংসদের বাইরে থাকার সময় ‘ইন্ডিয়া’ ব্লকের সমালোচনার কারণে বিজেপির নির্বাচনি জনসভায় দলের নেতাদের অনেক কিছুই সমঝে বক্তব্য দিতে হয়েছে। এবার লোকসভা বিরোধীদলের তীব্র সমালোচনা ও তর্কবির্তকে যে, বিজেপি তুলোধুনা হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়! বাকিটা সময়ই বলে দেবে, কতটুকু সফল হলেন রাহুল গান্ধী!

এ সম্পর্কিত আরও খবর