নুসরাত হত্যা মামলার রায়ে সন্তুষ্ট ফেনীবাসী

  নুসরাত হত্যা
  • মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ফেনী থেকে
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মামলার রায়ে সন্তুষ্ট ফেনীবাসী, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

মামলার রায়ে সন্তুষ্ট ফেনীবাসী, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। নুসরাত হত্যা মামলার রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে ফেনীবাসী।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে আদালত প্রাঙ্গণে উৎসুক জনতার ভিড় জমতে শুরু করে। মামলার রায় শুনে তারা বলেন, এই রায় ফেনীর সকল স্তরের মানুষ প্রত্যাশা করেছিল। আজকের এই রায়ের মাধ্যমে ফেনী ও সোনাগাজী উপজেলা কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

ফেনীর বাসিন্দা মো. লিটন বলেন, আমরা নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আজকের এই রায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি ১৬ জন আসামির ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এই রায়ে আমরা সবাই সন্তুষ্ট।

মো. সুমন নামে ফেনীর আরেক বাসিন্দা বলেন, সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গনে রায় শুনতে এসেছিলাম। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের এই রকম রায় প্রত্যাশা করেছিলাম। এই হত্যাকাণ্ডের পর ফেনী ও সোনাগাজী উপজেলা সম্পর্কে দেশের নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু আজ এই রায়ের পর আমরা সবাই খুশি হয়েছি।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর মামলা তুলে নিতে নুসরাতের পরিবারকে নানা ধরনের হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু নুসরাতের পরিবার ওই মামলা তুলে নেয়নি। নুসরাত ওই মাদ্রসার শিক্ষার্থী ছিলেন।

গত ৬ এপ্রিল সকালে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিমের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে যান নুসরাত। ওই সময় কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে তাকে ডেকে নিয়ে যায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার সহযোগীরা। পরে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গত ৮ এপ্রিল নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান (নোমান) সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত। পরবর্তীতে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

স্থানীয় প্রভাবশালীরা মামলার তদন্তকে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করে। পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশ সদর দফতর থেকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ২৯ মে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই।

এরপর ১০ জুন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। ২৭ ও ৩০ জুন বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসানকে (নোমান) জেরার মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। মোট ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত। হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার শুনানি শেষ হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এরপর আদালত রায়ের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন।