কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৯)



জিনি লকারবি ।। অনুবাদ: আলম খোরশেদ
বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈশ্বর কাউকে বলেন ‘থাকো’, কাউকে ‘যাও’

[পূর্ব প্রকাশের পর] মালুমঘাটের প্রথম দিনগুলোতে আমাদের আলোচনা একটি প্রশ্নকে ঘিরেই ঘুরপাক খেত, “আমরা কি এদেশ ছেড়ে চলে যাব, নাকি এখানেই থাকব?”

সবার আগে আসা সিদ্ধান্তটি ছিল, যাদের মিশনারিকর্মের মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে, তারা জরুরি বিমান ধরে দেশে ফিরে যাবে। সেই দলে ছিল দুটি দম্পতি, পাঁচটি বাচ্চা ও দুজন অবিবাহিত তরুণী। শনিবার তাদের বিদায়ের দিন নির্ধারণ করে আমরা সবাই তাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসি: কাপড় ধোয়া, ইস্ত্রি করা, চারবছরের জমানো জিনিসপত্র গুছিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। পরিকল্পনা ছিল আমাদের এই দলটি চট্টগ্রামে অবস্থানরত বিদেশিদের কাছে চলে যাবে এবং প্রথম বহির্গামী বিমান ধরে দেশত্যাগ করবে। রিড তাদেরকে গাড়ি চালিয়ে শহরে রেখে আসবেন। (বস্তুত শহরে ফেলে আসা আমাদের নিজেদের লোকদের কথা ভেবে তিনি নিজেই খুব আগ্রহী ছিলেন যেতে। এছাড়া, তাঁর জরুরি নির্গমন থলেটি আমার ও লিনের চেয়েও শীর্ণকায় ছিল; তিনি স্রেফ তাঁর শেভের জিনিসপত্র, একটি শার্ট ও বাইবেল—সবকিছুকে একসঙ্গে একটা লুঙ্গিতে বেঁধে নিয়ে চলে এসেছিলেন।)

শুক্রবার রাতে, এর পরদিন যারা চলে যাবে তাদের সম্মানে আমরা একটি বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। লোকজন যখন এর জন্য জমায়েত হচ্ছিল তখন এসে উপস্থিত হন সন্তোষ ভট্টাচার্য মহাশয়, যিনি আমাদের নবীন মিশনারিদেরকে বাংলা শেখাতেন। সন্তোষবাবুর বাসা, শহরে আমরা যেখানে থাকি তার কাছেই এবং তিনি নাকি সেখানে ঢুঁ মেরেছিলেন পরিস্থিতি পরখ করার জন্য। তাঁর সেখানে দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা হয়: তাঁর সব টাকা চুরি হয়ে যায়, গুন্ডারা তাঁর হাত থেকে ঘড়ি খুলে রেখে দেয়, এবং তাঁর এক সহপাঠীকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে মেরে ফেলতেও দেখেন তিনি। চট্টগ্রামের প্রতিবেশী আমাদের তিনজনকে এই হাসপাতালে দেখতে পেয়ে তাঁর মুখে স্বস্তির হাসি ফোটে। অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিনি একবার এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে, কিন্তু পরে আর খবর নিতে আসতে পারেননি।

এপ্রিলের ৩ তারিখ, শনিবারের বিকালে আমরা একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, এমন সময় র‌্যাচেল ও বসু পরিবারের মেয়েরা দৌড়ে এসে খবর দেয় যে, মিস্টার ও মিসেস দাশ এসেছেন। আমরাও তৎক্ষণাৎ ওল্সেনের বাংলোয় গিয়ে দেখি সেখানে চট্টগ্রাম থেকে আগত এক বিশাল শরণার্থী-বাহিনী অপেক্ষমাণ। অন্য আরো অনেকে তখনও হাসপাতাল ভবনে। ডা: ওল্সেন ও আমি ওপরে উঠে আমাদের বাবলা, তার বাবামা ও ছোটবোনকে নিয়ে আসি। তাদের গল্পেও সেই একই পরিচিত সুর শোনা যেতে থাকে: গুলি উড়ে যাচ্ছিল মাথার ওপর দিয়ে, রাস্তায় লাশের সারি আর পাহাড়ের ওপর থেকে ভারি কামানের গোলা ছোড়া হচ্ছিল সারাক্ষণ। তারা যতক্ষণ পেরেছেন সেটা হজম করেছেন, তারপর আর না পেরে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন এবং ঘোড়ার গাড়ি, নৌকা, বাস ইত্যাদি করে অবশেষে এই হাসপাতালে এসে পৌঁছেছেন। আমাদের চট্টগ্রামের শরণার্থীদলের কলেবর বেড়েই চলে।

পাম সানডে, ১৯৭১

আমরা নার্সদের হোস্টেলের লাউঞ্জে মিলিত হই তাঁরই প্রশংসায়, যিনি প্রভুর নাম ধরে আমাদের কাছে এসেছিলেন। সেদিনের প্রার্থনাসংগীতটি ছিল অতীব সুন্দর, কেননা আমাদের সবার গলা প্রভুর প্রশংসায় মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। আমরা সবাই জীবন্ত ও নিরাপদ ছিলাম।

প্রার্থনাসভা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় জে ওয়াল্শ বলেন, তিনি রেডিওতে শুনেছেন আগামীকাল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ ছাড়বে।

আমরা আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজে নেমে পড়ি। রিড আধাবেলা পার করে পথে নামতে চান না, তাই তিনি সবাইকে নির্দেশ দেন, যেন তারা খুব ভোর ভোর তৈরি হয়ে থাকে।

সেদিন বিকাল সাড়ে তিনটা নাগাদ রিড, লিন ও আমি, এই তিনজন যখন চট্টগ্রামে আমাদের কী কী করণীয় আছে এই নিয়ে পরিকল্পনা পাকা করছিলাম, ঠিক তখনই ল্যারি গলিন দুম করে এসে ঘরে ঢোকেন।

“আমি এইমাত্র বিবিসিতে শুনলাম সেই জাহাজটি আগামীকাল সকাল আটটার সময় ছাড়বে। ফলে, যারা যারা দেশ ছাড়তে আগ্রহী তাদেরকে আজ রাতের মধ্যেই জাহাজে চড়তে হবে।”

রিড, যিনি কিনা একটু আগেই বলেছিলেন তিনি দিনের মাঝবেলায় রওনা দিতে চান না, (এবং সেটা সঙ্গত কারণেই), তিনিও তখন নড়েচড়ে বসলেন। গাড়িগুলোতে মালপত্র তোলা হয়, তাদের ওপর লাগানো হয় আমাদের সবচেয়ে বড় আমেরিকার পতাকাসমূহ, এবং সোয়া চারটার মধ্যেই তাঁরা পথে নামেন।

“প্রভু, দয়া করে সূর্যটাকে ধরে রাখুন,” এটাই ছিল তখন গোটা দলের একমাত্র প্রার্থনা। কিন্তু ঈশ্বরের অন্য পরিকল্পনা ছিল। ছোট ফক্সওয়াগনটার কিছু সমস্যা ছিল, তাই সেটাকে পথে সারিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। চট্টগ্রাম শহর থেকে ষোল মাইল দক্ষিণে পটিয়ার তল্লাশি চৌকিতে পৌঁছাতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল।

সেখানকার বাঙালি অফিসার তাদেরকে আর এগুতে বারণ করেন এই বলে যে, “আমরা আপনাদের পতাকাকে সম্মান করি, সম্ভবত ওপারের পাঞ্জাবিরাও তা করবে, কিন্তু যদি কোনো কারণে তারা সেটা দেখতে না পায়, তখন কী হবে?”

এই অফিসার তাদেরকে দুই রুমের একটি সরকারি বাংলোতে নিয়ে যান রাতটা কাটানোর জন্য এবং ডিম, ভাতের ব্যবস্থাও করে দেন রাতের খাবার বাবদ।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা আবার যাত্রা শুরু করেন। শহরের যত নিকটবর্তী হচ্ছিলেন তাঁরা, ততই লাশ আর পচনের গন্ধ প্রকট হয়ে উঠছিল চারপাশে। রিড পরে জানান, সঙ্গের বাচ্চারা রোদে শুকোতে দেওয়া শুটকির বোঁটকা গন্ধের সঙ্গে পরিচিত ছিল বলে তিনি হালকা বোধ করছিলেন। “এই বাজে গন্ধটা কিসের?”—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি তাদেরকে সহজেই শুটকি মাছের কথা বলে দিতে পারছিলেন, যা ছিল গ্রামীণ বাঙালির ভীষণ প্রিয় এক খাদ্য।

গাড়িগুলো বাঙালি-পাঞ্জাবি এলাকার সীমারেখা অতিক্রম করে নিরাপদেই, এবং তারপর বন্দরের উদ্দেশে দ্রুত ছুটে চলে খালি রাস্তা পেয়ে। প্রত্যেকের মনেই তখন একই প্রশ্ন, “আমরা কি বেশি দেরি করে ফেললাম? জাহাজ কি এতক্ষণে ছেড়ে দিল?”

“ওটা আছে! জাহাজটা এখনো আছে!”

ঈশ্বর তাদের প্রার্থনার গুণগত উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন; তিনি সূর্যকে আটকে না রেখে খোদ জাহাজটিকেই ধরে রেখেছিলেন—যেন তাঁর শেষ এগারজন যাত্রী এসে জাহাজে উঠতে পারেন। মোট ১১৯ জন বিদেশির মধ্যে ৩৭জন আমেরিকান নিয়ে সেদিন সকালে বন্দর ছেড়ে যায় ব্রিটিশ বাণিজ্যজাহাজ ক্ল্যান ম্যাকনেইর।

এরমধ্যে আরো ক’জন মানুষের আগমন ঘটে মালুমঘাটে, আশ্রয়ের আশায় : চিটাগাং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চারজন চিকিৎসক। নির্ভুলভাবেই এদের অন্তত দুজনের আগমনের ওপর ঈশ্বরের হাত ছিল। আমরা এটা বুঝতে পারি অনেক পরে, ডা: পিটার ম্যাকফিল্ডের গল্প শুনে। “অন্ততপক্ষে ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বরেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, এই দেশটা একটা ভীষণ সংকটের দিকে এগুচ্ছে। বন্ধুরা আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন সম্ভব হলে তখনই যেন দেশ ছাড়ি আমি। সত্যি বলতে কী আমার একটা সুযোগও এসেছিল, কারণ লিবিয়ায় একটা ফেলোশিপ করার জন্য নির্বাচিত ১৫০ জনের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। আমার এই নতুন চাকরি নিয়ে আমি উত্তেজিত ছিলাম এবং কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না, কেন আমার মা মনে করছিলেন যে, সেটা ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল না। তিনি নিশ্চয়ই ঠিক ছিলেন, কেননা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা সত্ত্বেও আমি কিছুতেই দেশ ছাড়ার জন্য দরকারি পাসপোর্ট ও অন্যান্য ছাড়পত্র যোগাড় করতে পারছিলাম না।

“আমি পারিবারিক ক্রিসমাস উদ্‌যাপন সেরে কেবল ঢাকায় এসেছি, এমন সময় আমার ভাই ফোন করে জানান যে, আমার মা মারা গেছেন। পরে আমরা তাঁর মৃত্যুতেও ঈশ্বরের হাত দেখতে পাব। তিনি যন্ত্রণাহীনভাবে, প্রশান্তবদনে মৃত্যুকে বরণ করেছেন। তিনি যদি যুদ্ধের সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতেন, তাহলে খুব কষ্ট পেতেন, সেটা কেবল আমাদের জন্য দুশ্চিন্তা করেই নয়, তাঁর কঠিন হৃদরোগের অষুধপত্র কেনার অবধারিত সমস্যার কারণেও।”

“জানুয়ারির ২৮ তারিখ, সরকার আমাকে চিটাগাং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করে দেয়। এটা আমাদের জন্য একটু অসুবিধারই হয়েছিল, কেননা আমার স্ত্রী রেবা, মেডিকেলের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীটিকে তখন ১৭৫ মাইল দূরে ঢাকায় থাকতে হচ্ছিল একা। ফেব্রুয়ারি, মার্চ মাসের দিকে উত্তেজনা বাড়তে আরম্ভ করলে আমি রেবাকে চিটাগাং নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিই, যা-ই ঘটুক দুজন অন্তত একসঙ্গে থাকব। রাজধানীতে যাবার অগণিত ব্যর্থ চেষ্টার পর অবশেষে মার্চের ১০ তারিখ আমি তার সঙ্গে মিলিত হতে পারি। মার্চের ২৮ তারিখ তার চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ ঠিক ছিল। আমরা যখন ঢাকা ছাড়ি তখন তার মনের অবস্থা কেমন ছিল আমি আন্দাজ করতে পারি, কেননা তাকে তখন ডাক্তারি পড়ার শেষপর্বটুকু স্থগিত করতে হচ্ছিল, কে জানে কতদিনের জন্য।” [চলবে]


কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৮)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৭)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৬)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৫)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৪)

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;

বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্বে শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ও মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ও কিশোরগঞ্জ নিউজ'র নিয়মিত লেখক।

বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি,শিল্প, সংগীত, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার বহুল কার্যক্রম নিয়ে দেশের প্রাচীনতম ও অগ্রণী প্রতিষ্ঠা নবঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র এক সভা এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শনিবার (১১মার্চ ২০২৩) বিকেল ৪-৩০ টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় নাট্যশালার কনফারেন্স হলের ভিআইপি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বরেণ্য শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্হিতিতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা
কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ। এতে সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সঞ্চালনা করেন।

সভায় বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সদস্য বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর লেখক, কমামিস্ট ও গীতিকার শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ’র কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা গঠনের দায়িত্ব আরোপ করে তার হাতে বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র ইশতেহার তুলে দেন বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং অন্যান্য নেতৃবর্গ ।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গীয়'র জার্মানির সভাপতি কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক আমিনুর রহমান বেদু, রবীন্দ্র একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবিশ, ইউনেস্কোর ব্রান্ড এম্বাসেডর নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাত, বঙ্গীয়'র সভাপতি পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, বঙ্গীয়'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আলী নিয়ামত, কবি নাঈম আহমেদ, বঙ্গীয়'র কেন্দ্রীয় সদস্য কবি মীনা মাশরাফী, কবি পারভিন আক্তার সহ প্রমুখ।

সভার প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র সম্মিলন উদযাপন বিষয়ক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কবি আজিজুর রহমান আজিজকে আহবায়ক এবং সংগীতশিল্পী শামা রহমানকে সদস্য সচিব করে উদযাপন কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে বঙ্গীয়র সভাপতি পর্ষদের সকল সদস্য, রবীন্দ্র একাডেমির নির্বাহী শাখার সকল সদস্য, বঙ্গীয়র যুগ্ম সম্পাদকবৃন্দসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্টজনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।

দ্বিতীয় পর্বে অযুত তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু সম্মিলন, দ্বিশতজন্মবর্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মরণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে লেখক কবির আলোচনা সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ইউনাইটেড নেশন্সের ব্রান্ড এম্বাসেডর জনাব নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাতকে সভাপতি পর্ষদের সদস্য, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ূন কবির ঢালীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , সংস্কৃতি সেবক রোকনউদ্দীন পাঠানকে সাংগঠনিক সম্পাদক, কবি আনোয়ার কামালকে লিটল ম্যাগ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সাংবাদিক শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে নির্বাহী সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক, কবি মীনা মাশরাফীকে নীলফামারী জেলার সমন্বয়ক, জনাব এ এইচ এম সালেহ বেলালকে গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা লেখক কবি আবদুল হালিম খান, বীরমুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, কবি মানিক চন্দ্র দে, কবি অর্ণব আশিক, কবি বাবুল আনোয়ার, দৈনিক বঙ্গজননীর সম্পাদক কামরুজ্জামান জিয়া, কবি শাহানা জেসমিন, কবি গবেষক আবু সাঈদ তুলু, চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. বিশ্ব রায় (কলকাতা), বঙ্গীয় চট্রগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফ্যাশন ডিজাইনার আমিনা রহমান লিপি, শিল্পী শাহরিয়ার পিউ, কবি সোহরাব সুমন, কবি সরকার পল্লব, কবি রহিমা আক্তার মৌ, কবি লিলি হক, কবি আকমল হোসেন খোকন, শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, হিরা পারভেজ, ড. দিপু সিদ্দিকী, শিক্ষক ও কবি রওশন ই ফেরদৌস, কবি পারভীন আক্তার, কবি শিল্পী মাহমুদা, পূর্বধলার মো. জাকির হোসেন তালুকদার, কবি আনারকলি, কবি অপরাজিতা অর্পিতা, ডা. নূরুল ইসলাম আকন্দ, আবৃত্তিশিল্পী যথাক্রমে রূপশ্রী চক্রবর্তী, রবিউল আলম রবি সরকার, জেবুন্নেছা মুনিয়া, চন্দনা সেনাগুপ্তা, কবি সংগঠক রাজিয়া রহমান, কবি শামীমা আক্তার, শিল্পী সাদিয়া শারমিন, কবি কনক চৌধুরী, কবি তাসলিমা জামালসহ প্রমুখ।

;

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব



মাহমুদ হাফিজ
কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় শুরু হয়েছে রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসব। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতি সভাগৃহে বিকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, পরিব্রাজক ও ভ্রমণগদ্য সম্পাদক মাহমুদ হাফিজ, স.ম. শামসুল আলম, নাহার আহমেদ, ড. নাঈমা খানম প্রমুখকে সম্মানিত করা হয়।

বিকালে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক নলিনী বেরা। বিশিষ্ট নাট্যকার চন্দন সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ও কবি সব্যসাচী দেব। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাধারণ সম্পাদক কবি সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য। এতে সমাপণী বক্তৃতা করেন সংগঠনের সভাপতি কবি স্বপন ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য।

আজ ও আগামীকাল ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি হলে বিকাল থেকে কবিতা ও গল্পপাঠ, আলোচনা, শ্রুতিনাটক, সঙ্গীত অনুষ্ঠিত হবে। রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, নেপাল, আসাম, ত্রিপুরার কয়েশ’ কবি লেখক অংশগ্রহণ করছেন।

;

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাকালে বন্ধ থাকার পর আবারো 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কার্যক্রমে ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ রচিত 'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের একশত কপি শুভেচ্ছামূলক প্রদান করা হবে। 

উল্লেখ্য, আগেও ইংরেজি নববর্ষে এবং ভাষার মাসে শত বিশিষ্টজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থ উপহার দিয়েছিল ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ. এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প-সাহিত্য-সমাজ উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আনসার বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার নামে গঠিত 'শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশন'। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল স্থানীয় নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে জানানো হয়েছে যে, বরকতময়, নেয়ামতপূর্ণ মাহে রমজানের সঙ্গে অন্য কোনো মাসের তুলনা চলে না। রোজা হলো মাহে রমজানে অবশ্য পালনীয় ফরজ আমল, যার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা নিজে দেবেন। মানবজীবনে রোজা একজন বান্দার আত্মীক ও শারীরিক কল্যাণের ও উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। তদুপরি, রমজান মাসকে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা তাঁর অপার ক্ষমা, দয়া আর অপরিসীম করুণা দিয়ে বান্দাদেরকে উপহার দিয়েছেন। রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত রোজা সঠিকভাবে পালন করলে রোজাদার নবজাতক শিশু মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রোজা রাখবে তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানব জীবনে ও সামাজিক ব্যবস্থায় রমজান মাস ও রোজার গুরুত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে ফাউন্ডেশন প্রদত্ত গ্রন্থে। এ গ্রন্থ রমজান মাসের তাৎপর্য এবং রোজার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পাঠকদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে ৩০টি সংক্ষিপ্ত অধ্যায়ের মাধ্যমে।

'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের লেখক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ। তাঁর পিতা: ডা. এ.এ, মাজহারুল হক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মাতা: নূরজাহান বেগম, সমাজসেবী। ড. মাহফুজ পারভেজের জন্ম: ৮ মার্চ ১৯৬৬, কিশোরগঞ্জ শহরে। পড়াশোনা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচ,ডি)। পেশা: অধ্যাপনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি, গবেষণা ও সাহিত্য সাধনায় ব্রতী। প্রকাশিত গ্রন্থ কুড়িটি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- গবেষণা-প্রবন্ধ: বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি, দারাশিকোহ: মুঘল ইতিহাসের ট্র্যাজিক হিরো। দ্বিশত জন্মবর্ষে বিদ্যাসাগর। উপন্যাস: পার্টিশনস, নীল উড়াল। ভ্রমণ: রক্তাক্ত নৈসর্গিক নেপালে। গল্প: ইতিহাসবিদ, ন্যানো ভালোবাসা ও অন্যান্য গল্প। কবিতা: মানব বংশের অলংকার, আমার সামনে নেই মহুয়ার বন, গন্ধর্বের অভিশাপ। অধ্যাপনা ও গবেষণা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের শীর্ষতম মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর এবং কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা কিশোরগঞ্জ নিউজ'র উপদেষ্টা সম্পাদক রূপে সংযুক্ত রয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের  'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজিত হবে রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ কার্যক্রম সমন্বয় করবেন কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক, ইতিহাসবিদ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ। সমন্বয় কমিটিতে আরো রয়েছেন কিশোরগঞ্জ নিউজ'র প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ ইসকান্দার আলী স্বপন, সাংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু ও চিকিৎসক নেতা ডা. গোলাম হোসেন।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে আরো জানানো হয় যে, ইতিপূর্বে ঘোষিত ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর সম্মাননা বক্তৃতা ২০২০ এবং ২০২১ করোনাকালের বিরূপ পরিস্থিতিতে স্থগিত থাকায় তা যৌথভাবে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. এএ মাজহারুল হক এবং সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' কর্তৃক কিশোরগঞ্জের জীবিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জীবনব্যাপী বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন করতে ২০১৫ সাল থেকে এ সম্মাননা বক্তৃতা আয়োজন করা হচ্ছে, যা বক্তৃতা ও লিখিত আকারে প্রদান করেন মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' গতানুগতিক সম্মাননার বদলে ব্যক্তির কর্ম ও কীর্তির বিশ্লেষণমূলক-মূল্যায়নভিত্তিক সম্মাননা বক্তৃতার মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত স্বরূপ চিহ্নিত করে এবং এরই ভিত্তিতে জ্ঞাপন করা হয় যথাযথ সম্মান। সম্মাননা স্মারকের পাশাপাশি লিখিত আকারে বক্তৃতা-পুস্তিকায় চিত্রিত হন সম্মাননা প্রাপ্তগণ। মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এই বুদ্ধিবৃত্তিক-একাডেমিক আবহে ধারাবাহিকভাবে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে, যা কিশোরগঞ্জে তো বটেই, বাংলাদেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। শুরু থেকে সম্মাননা বক্তৃতা প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. মাহফুজ পারভেজ, যিনি কিশোরগঞ্জে পাবলিক লেকচার সিরিজের মাধ্যমে গণবুদ্ধিবৃত্তিক পরিসর তৈরির পথিকৃৎ।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্রথম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান শিক্ষাবিদ প্রাণেশ কুমার চৌধুরী, ২০১৬ সালে দ্বিতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান দীপ্তিমান শিক্ষকদম্পতি: অধ্যক্ষ মুহ. নূরুল ইসলাম ও বেগম খালেদা ইসলাম, ২০১৭ সালে তৃতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘প্রজ্ঞার দ্যুতি ও আভিজাত্যের প্রতীক: প্রফেসর রফিকুর রহমান চৌধুরী’ এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘ঋদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র: শাহ্ মাহতাব আলী’। ২০১৯ সালে পঞ্চম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা দেয়া হয় 'স্বাস্থ্যসেবা-শিক্ষায় পথিকৃৎ চিকিৎসক-দম্পতি' প্রফেসর ডা. আ ন ম নৌশাদ খান ও প্রফেসর ডা. সুফিয়া খাতুনকে। ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ প্রদান করা হয় নাসিরউদ্দিন ফারুকী, ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হককে। এ উপলক্ষে ‘কিশোরগঞ্জে আইন পেশার নান্দনিক বিন্যাস’ শীর্ষক সম্মাননা বক্তৃতা বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ প্রদান করা হয়েছে ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু.আ. লতিফ,  মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ ঊষা দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরীকে, যারা কিশোরগঞ্জের সামাজিক ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিন্যাসে স্বকীয় কৃতিত্বের প্রভায় উজ্জ্বল। জীবনব্যাপী কিশোরগঞ্জের মাটি ও মানুষের জন্য শৈল্পিক দ্যোতনায় নান্দনিক বর্ণালী সৃজন করেছেন এই তিন গুণান্বিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ জানান, ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২০ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২১ একসাথে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা মার্চ মাসের শেষ দিকে আয়োজিত হবে।

;