করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে নাগরিক ও সামাজিক সচেতনতা জরুরি  

  করোনা ভাইরাস
  • ড. মাহফুজ পারভেজ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

চীন পেরিয়ে করোনাভাইরাস বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করেছি এই প্রাণঘাতী ভাইরাস। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গৃহীত হচ্ছে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সতর্কতা।

ফ্রান্সে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে। সৌদি আরব ওমরাহর ভিসা প্রদান স্থগিত করেছে। বিশ্বের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলা, সন্মেলনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টার সঙ্গে তাল মিলিয়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সামাজিক সতর্কতার নানা পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগ প্রতিরোধের সম্ভাব্য পন্থা নিরূপণ করার কাজ যেমন চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনি সামাজিক বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একাধিক গবেষণা সেল গঠন করেছে, যারা সমাজ ও নাগরিকদের মধ্যে এই ভয়ংকর বিপদ সংক্রমিত হওয়ার হার ঠেকানোর কৌশল বের করছেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সচেতনতা ও নাগরিক সুরক্ষা বলয় তৈরি হয়েছে। টুইটার তার কর্মীদের ঘরে বসে কাজ করতে বলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, হ্যান্ডসেক, আলিঙ্গন, কোলাকুলি না করার জন্য।

বিজ্ঞাপন

জনবহুল এলাকা ও অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় মেলামেশা এড়িয়ে চলতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। বাইরে থেকে ঘরে এসে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোয়ার পরামর্শের পাশাপাশি ময়লা ও পুরনো কাপড় পরিহার ও মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে।

জনবহুল বাংলাদেশের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কতটুকু নেওয়া হয়েছে? স্কুলে, বাসে, বাজারে, ভিড়ে, সভায়, সমাবেশে, অনুষ্ঠানে কতটুকু নাগরিক সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে?

ছড়িয়ে পড়ার আগেই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। কিন্তু এই জরুরি কাজটি এখনো বাংলাদেশে শুরুই হয়নি। বন্ধ হয়নি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি ও বিপদের নানা দিকগুলো। যত্রতত্র থুতু ফেলা, পানের পিক, কফ, কাশি ছিটানো এদেশের পথেঘাটের নিত্য ঘটনা। এসব নোংরাকরণ প্রক্রিয়া থেকে স্কুল, কলেজ, প্রার্থনাস্থল, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ইত্যাদি পাবলিক প্লেস মুক্ত নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসমাবেশ ও জনবহুল স্থানে বা স্থান থেকে এ ভাইরাসজনিত রোগ ছড়াতে পারে। যেজন্য, বিশ্বের বহু স্থানে স্কুল এবং জনসমাগম হয় এমন আয়োজন, সন্মেলন, সমাবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রয়োজনে বাসায় বসে কাজ করার জন্য।

বাংলাদেশে এসবের বালাই নেই। প্রচার মাধ্যম বোবা হয়ে আছে। জনস্বার্থে ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে বিশেষ কোনও প্রচারণা নেই। স্কুল, কলেজও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে না। চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উৎসব, ওয়াজ ইত্যাদির নামে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ। অবাধে চলছেই জনস্বাস্থ্য রক্ষার বদলে কফ, কাশি, থুতু, মল, মূত্রের ভাগাড় তৈরির ধারা।

পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালতের তরফে জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে এবং নাগরিক সচেতনতার কোনও উদ্যোগও গৃহীত হওয়া খবর পাওয়া যায়নি। প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর, রোগ হওয়ার আগে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া ভালো, এই বৈজ্ঞানিক নীতিটি মানতে সারা বিশ্ব ঝাঁপিয়ে পড়লেও আমরা এখনো বসে আছি।

কিন্তু অন্ধের মতো বসে থাকলে তো প্রলয় বন্ধ থাকে না। বসে না থেকে করোনাভাইরাসের প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা ও নাগরিক সুরক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাই কাম্য।

ড. মাহফুজ পারভেজ: অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম