‘বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা করোনাকালীন বাজেটকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে’

  বাজেট অর্থবছর ২০২১-২২
  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সিপিডির বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন

সিপিডির বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাংলাদেশের ৫০ তম বাজেট। এটি চলমান করোনা অতিমারীর সময়ের দ্বিতীয় বাজেট। এই বাজেটটি এমন একটি সময়ে উপস্থাপিত হলো, যখন বাংলাদেশ এখোনো করোনার প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি। করোনার অভিঘাত আমরা এখোনো অনুভব করছি।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের সময়কালেও করোনার সংক্রমণের অনেক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এই প্রেক্ষিতে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো  হলো: সকলকে টিকা দানের মাধ্যমে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলা করাসহ স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন; সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; সরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা; সর্বোপরি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা।

বিজ্ঞাপন

২০২০-২১ অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে বেশ কিছু দুর্বলতা দেখা গেছে। যেমন রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি; সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে দূর্বলতা; প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতি; বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচী বাস্তবায়নের নিম্নগতি; সরকারি ব্যয় লক্ষ্যমাত্রার চাইতে নিচে থাকার কারনে বাজেট ঘাটতি প্রাক্কলিত সীমার নিচে থাকা; শিল্প উৎপাদন কম হওয়া, বিশেষ করে ছোট শিল্পের ক্ষেত্রে; কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী খাদ্য মূল্যস্ফীতি।

অন্যদিকে, কিছু ইতিবাচক দিকও লক্ষ্য করা গেছে। যেমন, রপ্তানি এবং আমদানি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে; রেমিট্যান্স প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী; লেনদেন ভারসাম্যের অবস্থা স্বস্তিদায়ক; মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

এই প্রেক্ষিতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে যে বিষয়গুলো জায়গা পাওয়ার কথা ছিল তার অনেকগুলোই দেখা যায়নি। প্রাধিকারগুলো এবং করোনার প্রেক্ষিতে বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়া হয়েছ খুব কম।

জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক, ড. ফাহমিদা খাতুন।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করার পর একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দেয় সিপিডি।

আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.২ শতাংশ ধরা হয়েছে সরকার আগামী অর্থবছরে অনেকটা স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে। এই প্রবৃদ্ধি হতে হলে আগামী অর্থবছরে অনেক বেশী বিনিয়োগ হতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ না বাড়লে প্রবৃদ্ধি কোথা থেকে হবে স্পষ্ট নয়।

রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের সমান রাখা হয়েছে। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রাও কিভাবে পুরণ হবে আমাদের জানা নেই। বর্তমান পর্যায়ের সক্ষমতা দিয়ে জাতীয় বোর্ডের পক্ষে এটি অর্জন করা সম্ভব নয়। রাজস্বের ক্ষেত্রে পদক্ষেপগুলো ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে নয় বরং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে। তাদের জন্য কর ও মূল্যসংযোজন করে যে ছাড়গুলো দেয়া হয়েছে সেগুলো কোভিডকালে ব্যবসাকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। একইসাথে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার বিষয়টিও ভাল পদক্ষেপ। তবে ব্যক্তি-করের ক্ষেত্রে, নিচের দিকে আয়মুক্ত করের সীমা বাড়ানো হয়নি। এটি করলে সাধারণ মানুষের হাতে খরচ করার এবং বিনিয়োগযোগ্য অর্থ আসতো। কেননা এই সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষের ভোগ ব্যয় বাড়ানো।

সরকারি ব্যয়ের বর্ধিত বরাদ্দের বড় অংশ জনপ্রশাসনের জন্য দেয়া হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে উন্নয়ন ব্যয় বাড়াতে হবে এবং অনুন্নয়ন বা পরিচালনা ব্যয় সংকোচিত করতে হবে। এ থেকে যা সাশ্রয় হবে তা দিয়ে আমরা বিনিয়োগ করতে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবো।

ব্যয়ের ক্ষেত্রেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন আগের বছরগুলোর চাইতে কম। এটি বাস্তবায়নের দুর্বলতাকে প্রকটভাবে তুলে ধরছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারকে বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করতে হবে বেশী। তবে, ঋণের বোঝা যাতে না বাড়ে সেটির দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আমরা এখন স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে আছি, সেটি বজায় রাখতে হবে।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতকেও আমরা প্রাধিকার খাত মনে করি। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কিছু বরাদ্দ বেড়েছে। তবে আগের মতই সেখানে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন রয়েছে। তাই এটাকে যত বড় দেখা যাচ্ছে আসলে সেটা এতটা বড় নয়।

তাই মোটা দাগে, একদিকে কোভিডকে মোকাবিলা করা, অন্যদিকে কোভিড থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করার জন্য যে বাজেটটি প্রয়োজন ছিল সেটা আমরা লক্ষ্য করিনি। সেটি এক বছরের বাজেট নয়। সেই বাজেটে আগামী কয়েক বছরের স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষাখাত, সামাজিক খাত, কর্মসংস্থান ইত্যাদি কেমন হবে এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় কাঠামো কেমন হবে, রাজস্ব আহরণ কিভাবে হবে, সেগুলোর একটা পরিস্কার দিক-নির্দেশনা থাকা উচিৎ ছিল।

সার্বিকভাবে, দুর্বল অনুমিতি ও বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা কোভিডকালিন বাজেট বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।

সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান; সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, জনাব তৌফিকুল ইসলাম খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।