প্রস্তাবিত বাজেট দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট: ফখরুল

  বাজেট অর্থবছর ২০২১-২২


স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটকে দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সাথে বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট পথরেখা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, মহামারিকালে মানুষের জীবন-জীবিকার স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে ও বেঁচে থাকার নিশ্চয়তায় চলমান স্বাস্থ্য পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ইহা একটি অবাস্তবায়নযোগ্য কাল্পনিক ও কাগুজে বাজেট ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণকে কোভিডের মহাসংকট থেকে রক্ষার দিকনির্দেশনা নেই। এটি দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট। জনগণের সমর্থনবিহীন সরকারের রাষ্ট্রের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাই এ বাজেটে জনস্বার্থের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এটি দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট। 

জাতীয় সংসদে দেশের ৫০তম বাজেট উপস্থাপনের পরদিন শুক্রবার (৪ জুন) বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল এ সব মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিপাদ্য শব্দমালার মাঝেই এবারের বাজেটের ভাওতাবাজি পরিস্কার। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন গত ১৮ মাস যাবৎ অচল। এর মধ্যে অপরিকল্পিত লকডাউনের নামে শাটডাউন নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষদের জীবন চূড়ান্ত রকমে থমকে গেছে। তাই সুস্পষ্টভাবে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা মাথায় না রেখে কেবলমাত্র অর্থনীতির নানা তত্ত্ব ও বিশাল সংখ্যার আর্থিক উপস্থাপনার মাধ্যমে কার্যত জনগণের সাথে এক ধরনের ভাওতাবাজি করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এই বাজেটেও স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। অথচ এই মুহূর্তে মানুষের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

ফখরুল বলেন, সার্বিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট পথরেখা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি। ঘোষিত বাজেটে অপচয়, অব্যবস্থাপনা বন্ধ করে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ হয়নি। বরং এই সরকারের সময় দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও আইনের শাসন এবং জবাবদিহির যে ঘাটতি রয়েছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে বাজেটে। এবারের বাজেট কেবল বার্ষিক হিসাব-কিতাবের বাজেট হওয়ার কথা নয়। বাজেট হওয়া উচিত ছিল ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিমালার পথনির্দেশনা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট। ভবিষ্যতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের মডেল কী হতে পারে, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বাজেটের ফোকাস কী হবে, তার পথনির্দেশনার বাজেট। কিন্তু সরকার সেদিকে যায়নি। মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলে দেশে আয়বৈষম্য বেড়েছে। ‘স্বজন তোষণের’ ভিত্তিতে এ সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকা- চলছে। যার ফলে মাত্র ১ শতাংশ লোকের কাছে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এমনকি এই করোনাকালেও অপ্রদর্শিত আয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন হাজার হাজার লোক। ফলে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সম প্রতিযোগিতার স্বাভাবিক যে বিকাশ, সে সুযোগ তারা বন্ধ করে দিয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এবারের এই বাজেটে জিডিপির মাত্র ১৭.৪৬ শতাংশ। ২০২১ অর্থবছরের জন্য মূল বাজেট ছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা ছিল জিডিপির ১৭.৯০ শতাংশ। এ হিসাবে বাজেটের প্রকৃত আকার বৃদ্ধির পরিবর্তে সংকোচিত হয়েছে। কোভিডের অভিঘাত এখনো অনুভূত হচ্ছে। কত দিন তা থাকবে, নতুন নতুন ভেরিয়েন্ট আসবে, আমরা তা জানিনা। তাই পরিকল্পনা শুধু এক বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। তাই বাজেটে মধ্যমেয়াদি প্রক্ষেপণ থাকা উচিত ছিল। অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটের শিরোনাম করেছেন “জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ”। বাজেট নাকি দেয়া হয়েছে ‘মানুষের’ জন্য। শুনতে ভালো শোনায়। কিন্তু বাজেটে দিন আনে দিন খায় এমন গোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষায় নগদ অর্থ এর কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই। এ খাতে পুরাতন ত্রুটিপূর্ণ ব্যাংকনির্ভর ঋণের কথাই বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সম্প্রসারণের নামে যে সামান্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তা নিতান্তই অপ্রতুল। মধ্যবিত্তদের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি যা মধ্যবিত্তকে হতাশ করেছে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে দেশে ২ কোটি ৪৫ লাখ নতুন গরিব সৃষ্টি হয়েছে। নতুন দরিদ্র, পুরাতন দরিদ্র আর ক্ষণস্থায়ী দরিদ্র নিয়ে এর সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি। তাছাড়া রয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ৮৬% শ্রমিক। এদের প্রত্যেককে নগদ আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এ খাতে জিডিপি ৬ থেকে ৭ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বরাদ্দ এক লাখ সাত হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। এখানে বলে রাখা ভালো সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ ও প্রাইমারি স্কুল শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকাও রয়েছে। এ কারণে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ বড় করে দেখানো হচ্ছে। এর মানে দাড়াচ্ছে করোনাকালেও সামাজিক সুরক্ষার নামে মানুষের সাথে ভাওতাবাজি করা হচ্ছে। এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যে সহায়তা সরকার দিয়েছে তা ‘লোকদেখানো’। ৫-৬ কোটি মানুষের জন্য মাথাপিছু ১-২ শ’ টাকাও পড়বে না। অথচ আমরা বিএনপি থেকে বলেছি প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা ক্যাশ ট্রান্সফার করার কথা। সব গণতান্ত্রিক দেশে তাই করছে। কারণ তারা জনগণের কাছে জবাবদিহি করে। এই সরকার তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় নাই। তাদের তো জনগণের কাছে জবাবদিহি করার তো কারণ নেই। সেজন্য দেশে সুশাসনের অভাব, জবাবদিহিতার অভাব। অপচয়, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের সম্পদের একটা বিশাল অংশ এরা (ক্ষমতাসীনরা) লুটপাট করে নিয়ে গেছে। করোনায় দেশের বেকার এবং আয় কমে যাওয়া মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া উচিত। গ্রামীণ অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান কর্মসূচির মতো কিছু উদ্যোগ নেওয়া দরকার। কারণ, শহরে কাজ হারিয়ে অনেকে গ্রামে চলে গেছেন। বাজেটে এদের বাঁচানোর জন্য কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা নেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারি ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজর মধ্যে কেবলমাত্র অর্থমন্ত্রণালয়ের রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের পুরোটাই বাস্তবায়িত হয়েছে। অন্যখাতে ঘোষিত প্রণোদনা বিতরণ চিত্র তথৈবৈচৈ। অগ্রগতি মাত্র ৬০%।

স্বাস্থ্য খাত নিয়ে এত কথা বলা হচ্ছে, অথচ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির সেই ১ শতাংশের মধ্যেই আছে। এই বরাদ্দ দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের চাহিদা মিটবে না। অন্যদিকে বরাদ্দ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য খাত পিছিয়ে আছে। এবার ২০২১-২২ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে মোট ২৫ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে দেখা গেলেও সংশোধিত বাজেটের তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ১৮০ কোটি টাকা। কারণ গতবছর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৮৮৩ হাজার কোটি টাকা এবং সংশোধিত আকারে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ২৫ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকায়। এই বাস্তবতায় স্বাস্থ্য খাত বড় ধাক্কা সামলাতে পারবে না। স্বাস্থ্য খাতে জিডিপি'র ৫% বরাদ্দ করতে হবে। করোনার টিকা প্রদানের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি।

তিনি বলেন, সরকার ২৫ লাখ মানুষকে মাসে টিকা দেয়ার কথা বলেছেন। সেটা কবে থেকে কার্যকর হবে, কিভাবে হবে, সে সম্পর্কে কিছু নিশ্চিত বলা হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা এই হিসেবে প্রতি বছর টিকা নিতে পারবে ৩ কোটি মানুষ। কাংখিত জনগোষ্ঠীকে টিকা দিতে লাগবে প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর। অথচ ভারতে প্রতিদিন ১ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। সেই পর্যায়ক্রমে কতদিনে শেষ হবে।

সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয় এসএমই খাতে। কিন্তু সরকারের প্রণোদনা পেলেন মূলত বড় শিল্পমালিকেরা। এসএমই খাতের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে মূলত ব্যাংকের মাধ্যমে। কিন্তু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অনেকেরই ব্যাংক হিসাব নেই। তাই এনজিওগুলোর মাধ্যমে তাঁদের ঋণ দেওয়া উচিত। এনজিওগুলোর নেটওয়ার্ক দেশব্যাপী। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগও ভালো। কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে এটা অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। এই ব্যাপারে বাজেটে কোন সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা নেই।

বড় আকারের বাজেট আর বড় অংকের প্রবৃদ্ধির আলোচনা বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি অর্থমন্ত্রী। ৭.২% প্রবৃদ্ধির বড় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উচ্চাভিলাষ বজায় রেখেছেন। এবার সবাই আশা করেছিল জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সাধারণ মানুষের হাতে নগদ অর্থ পৌঁছে দেয়ার দিকে বেশি নজর দিবে সরকার। অথচ সে জন্য কোন সুনির্দিষ্ট রোড-ম্যাপ দেয়নি অর্থমন্ত্রী। সামাজিক নিরাপত্তা সম্প্রসারণ খাত পেয়েছে সর্বশেষ অগ্রাধিকার। অনেকক্ষেত্রে অগ্রাধিকার বদল হলেও বরাদ্দের ধরন সেই গতানুগতিকই রাখা হয়েছে। নতুন কোন প্রণোদনার কথা নেই। পুরাতন সেই ব্যাংকনির্ভর প্রণোদনা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে, তাতে কোন লাভ হয়নি, হবেও না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের ওপরে ধরা হয়েছে, কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধির জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার, তা কীভাবে হবে বলা হয়নি। বিশেষ করে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ কয়েক বছর ধরে এক জায়গায় আটকে আছে। কোভিডের কারণে তা আরও কমে গেছে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ না হলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে কীভাবে? শুধু সরকারি বিনিয়োগ দিয়ে হবে না। আবার গত এক বছরে অনেক সরকারি প্রকল্পে ধীরগতি দেখা গেছে। এই বাস্তবতার সঙ্গে প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ মেলে না। সরকারি ব্যয় আশানুরূপ হয়নি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন প্রতিবছরই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়। এবার তা আরও কম হয়েছে। শিল্প উৎপাদনও কম। ছোট ছোট শিল্পের উৎপাদন কমেছে। অন্যদিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য খুব একটা সহায়ক হবে না। ফলে সামষ্টিক অর্থনীতির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।

বাজার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অনেক আগেই সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে। গত এপ্রিলে গড়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৫৬%। এই বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫.৩%। এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবভিত্তিক নয়। সরকারের প্রক্ষেপণ আর বাস্তবতার কোন মিল নেই।

তিনি বলেন, সরকার আইটি খাতকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বললেও কেবলমাত্র প্রযুক্তি শিক্ষা বেসরকারি কলেজের আয়ের ওপর ১৫% করারোপের প্রস্তাব করেছে। এটি স্ববিরোধীতা। প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫% কর আরোপের প্রস্তাব করেছে। সরকার মানবসম্পদ উন্নয়নের কথা বললেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানের ওপর ট্যাক্স আরোপ করে মূলত শিক্ষা সংকোচন নীতি গ্রহণ করল।

বাজেটে সরকার মৎস্য চাষ খাতে নতুন করে করারোপ করেছে। লাইভস্টক, পোল্ট্রি ও মৎস্য খাতকে উৎসাহিত করতে হবে। মৎস্য খাতের ওপর প্রস্তাবিত কর বাতিলের অনুরোধ জানাচ্ছি।

মাইক্রোবাস ও হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে শুল্কহার কমানো হয়েছে। এমনিতেই ট্রাফিক জ্যাম, তার ওপর আরো কমদামে গাড়ি আমদানি উৎসাহ করা হলো।

করজাল সম্প্রসারণে বাড়ির নকশা অনুমোদন ও সমবায় সমিতির নিবন্ধনে টিআইএন গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এর মানে শহরে বা গ্রামে যেখানেই আপনি বাড়ি করতে যান না কেন আপনার টিআইএন নিতে হবে। এ ছাড়া বন্ধুবান্ধব বা সহকর্মীদের নিয়ে কোনো সমবায় সমিতি করলে সেটির নিবন্ধন নিতে হলেও টিআইএন গ্রহণ করতে হবে। এর ফলে বাড়ির মালিক ও সমবায় সমিতিগুলো করজালের আওতায় আসবে।

আসছে বাজেটে রাজস্বের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৮ দশমিক ২ শতাংশ। যা কল্পনাপ্রসূত ও অবাস্তব। আয়ের উৎসের এই দুর্বলতা নিয়েই গতানুগতিকভাবে বড় করা হয়েছে বাজেট।

মোট বাজেটের ৩৫.৫৬%, অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশের বেশিই হল ঘাটতি যা বৈদেশিক অথবা অভ্যন্তরীণ সোর্স থেকেই ঋণের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে।

যে প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতি বাঁচিয়ে রেখেছেন, তাঁদের জন্য বাজেটে কোনো পদক্ষেপ নেই। রপ্তানি খাতে ২ শতাংশ ভর্তুকির সুবিধা পাবে অর্থ পাচারকারীরা। বড় প্রকল্পে লুটপাটের সুযোগ বেশি, তাই সরকার গরিবদের প্রণোদনায় আগ্রহ দেখায় না। বাজেটে কোনো ভিশন নেই এবং করোনাকালে এ বিপদের সময় অর্থমন্ত্রী কোনো ক্যারিশমা দেখাতে পারেননি।

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাজেট প্রণয়নে করোনা ভাইরাসের প্রকোপের অনিশ্চয়তাকে আমলে নেওয়া হয়নি। স্বল্পমেয়াদি নীতিমালাই গ্রহণ করা হয়েছে। অনুমান করা হয়নি বিদ্যমান কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে অর্থনীতিতে আরও বেশি সংকোচন ঘটতে পারে। বিদ্যমান মৌলিক কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা মোকাবিলায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কর্মসূচি নেওয়া হলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউয়ের তীব্রতা থেকে রেহাই পাওয়া যেত। বিশ্ব যখন সম্প্রসারণশীল নীতির দিকে ঝুঁকছে, বাংলাদেশে তখন রাজস্ব ব্যয় আরও সংকুচিত হয়েছে। 

তাই বিএনপি মনে করে এই বাজেটে মহামারিকালে মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে ও বেঁচে থাকার নিশ্চয়তায় চলমান স্বাস্থ্য পরিকল্পনার গ্রহণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

   

জ্বালানি তেল পরিবহনের খোলনলচে বদলে দিচ্ছে ৩ মেগা প্রকল্প



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তিন মেগা প্রকল্প বাংলাদেশের জ্বালানি তেল পরিবহনের খোলনলচে বদলে দিতে যাচ্ছে। মেগা প্রকল্প তিনটি হলো, এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং), বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্প এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্প।

এর মধ্যে এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) ও বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন ইতোমধ্যেই অপারেশনে এসেছে। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন চলতি বছরেই শেষ হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।

এখন ভোক্তার হাতে জ্বালানি তেল পৌঁছাতে বহুঘাট ঘুরতে হবে না। আবার বৃষ্টি-বাদল কিংবা হরতাল, ধর্মঘটেও জ্বালানি তেল সরবরাহ থাকবে নির্ভার। শুধু কী নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চয়তা, তাও নয়, এক এসপিএম বছরে সাশ্রয় করবে কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা! কমে যাবে জ্বালানি তেলের সিস্টেম লসও।

জ্বালানি তেল পরিবহনের খোলনলচে পাল্টে দিচ্ছে মেগা তিন প্রকল্প

এজন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপন করা হয়েছে, এসপিএম উইথ ডাবল পাইপলাইন। এতদিন আমদানি করা জ্বালানি তেলের জাহাজ গভীর সমুদ্রে নোঙর করতো। সেখান থেকে লাইটার জাহাজে করে রিফাইনারি ট্যাংকে পৌঁছাতে সময় লাগত ১১, ১২ দিন। এসপিএম হওয়ায় সমপরিমাণ তেল পরিবহনে সময় লাগবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। এতে করে মাদার ভেসেলের ওয়েটিং চার্জ এবং লাইটারেজ জাহাজের পরিবহন খরচ আর থাকছে না।

মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে গভীর সমুদ্রে স্থাপন করা হয়েছে, ভাসমান বয়া। সেই বয়া থেকে সাগরের তলদেশ দিয়ে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের পৃথক দুটি পাইপলাইন পৌঁছে গেছে স্টোরেজ ট্যাংক টার্মিনালে। একটি ক্রড অয়েল সঞ্চালনের জন্য। আরেকটি দিয়ে সফলভাবে ডিজেল পরিবহন কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

গভীর সমুদ্রে বয়াতে এসে নোঙর করবে মাদার ভেসেল। সেখান থেকে পাাইপলাইনের মাধ্যমে কয়েক ঘণ্টায় তেল পৌঁছে যাবে চট্টগ্রামের জ্বালানি তেলের প্রধান স্থাপনায়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জ্বালানি তেল ব্যবস্থাপনা সাশ্রয়ী ও টেকসই করতে এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) কার্যকরী অবদান রাখবে। প্রকল্পটি চালু হলে বছরে ১ হাজার কোটি টাকা খরচ সাশ্রয় হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় ২শ ২০ কিলোমিটার পাইপলাইনে পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ৬টি বিশালাকৃতির স্টোরেজ ট্যাঙ্ক; যার মাধ্যমে বাংলাদেশের তেল মজুত সক্ষমতা পৌঁছে গেছে নতুন এক উচ্চতায়।

এসপিএম প্রকল্পের পরিচালক শরীফ হাসনাত বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বড় জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে অন্তত ১১ দিন সময় লাগে। কখনো কখনো এই তেল খালাস করতে আরো সময় লেগে যায়। বিশেষ করে সমুদ্র উত্তাল হয়ে পড়লে তখন খালাস করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। জাহাজ মালিকদের সঙ্গে চুক্তির চেয়ে বেশি সময় লাগায় কখনো কখনো জরিমানা গুণতে হতো। এসপিএম প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় ২৮ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় ডিজেল ও ক্রুড অয়েল খালাস করা সম্ভব হবে। এতে একদিকে যেমন জাহাজ ভাড়া কমে আসবে, অন্যদিকে তেল পরিবহনে সিস্টেম লস ও নানান ধরনের চুরিও প্রতিরোধ সম্ভবপর হবে।

বাংলাদেশ জ্বালানি তেল উৎপাদন করে না। গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে প্রাপ্ত কনডেনসেট থেকে পেট্রোল এবং ৪০ শতাংশের মতো অকটেন জোগান আসে। বিপুল পরিমাণ ডিজেলসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করে জোগান দেওয়া হয়। বিপুল পরিমাণ জ্বালানি আমদানি করা হয়, নদীপথে। কিন্তু নদী বন্দরগুলোতে নাব্যতার অভাবে বড় বড় জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারে না। সে কারণে নির্ভর করতে হয় লাইটারেজ জাহাজের ওপর।

মেগা প্রকল্প বদলে দিচ্ছে জ্বালানি তেল পরিবহনের ব্যবস্থা

মাদারভেসেল থেকে লাইটার বা ছোট জাহাজে করে তেল আনা হয়, বিপিসি’র (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) ডিপোতে।

বিপিসি থেকে আবার জাহাজে করে তেল দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়। ক্ষেত্র বিশেষে রেলের ওয়াগন এবং ট্যাংকলরিতে করেও তেল পৌঁছাতে নানান রকম ঝাক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। বিষয়টি ছিল সময়সাপেক্ষ ও অনেক কিছুর ওপর নির্ভরশীল। সেখানেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগতে শুরু করেছে।

অবশেষে, ঢাকা-চট্টগ্রাম তেলের পাইপলাইন করার কাজও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ২০১৭ সালে প্রাক-সমীক্ষা শেষ হলেও নানা কারণে নির্ধারিত গতিতে চলতে পারেনি প্রকল্পটি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অর্থায়নে গৃহীত এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ২শ ৩৭ কিলোমিটার, কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার, ফতুল্লা থেকে থেকে গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। পাইপলাইনটি চালু হলে বছরে ৬৫ কোটি টাকা পরিবহন খরচ সাশ্রয় হবে বলে আশা করছে বিপিসি।

প্রকল্পের আওতায় ২শ ৩৭ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন চট্টগ্রাম ডেচপার্স টার্মিনাল ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় রিসিভিং পয়েন্টের ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। ডিসেম্বরের আগেই পাইপলাইনটি চালু করার বিষয়ে আশাবাদী জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ।

অন্যদিকে, দেশের শস্যভাণ্ডার খ্যাত উত্তরাঞ্চলের জ্বালানি পরিবহন ব্যবস্থা ছিল খুবই জটিল ও বহুঘাট, হাত ঘুরে। লাইটারেজে করে তেল নেওয়া হতো। এছাড়াও ট্যাংকলরি, আরেকটি রুট হচ্ছে রেলওয়ের মাধ্যমে পৌঁছানো। এখন সেখানেও পরিবর্তন এনেছে, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন।

দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় নিরবচ্ছিন্ন, দ্রুত ও সাশ্রয়ীভাবে জ্বালানি সরবরাহের জন্য ২০১৮ সালে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ৩ হাজার ৬শ ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১শ ৩১.৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণের সময়কাল ছিল ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের আগেই পাইপলাইনটি চালু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ভারতের নুমালীগড় থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত বিস্তৃত এই পাইপলাইনের কারণে উত্তরাঞ্চলের দৈনিক অতিরিক্ত ২৯ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি মজুত সক্ষমতা বৃদ্ধি হবে। সহজে বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ করা, উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় কম খরচে এবং দ্রুততম উপায়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে এই পাইপ লাইনের কারণে।

  বাজেট অর্থবছর ২০২১-২২

;

বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে বাণিজ্য জোরদারে প্রতিষ্ঠিত হলো ‘জেবিসি’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত ও জোরদার করার পাশাপাশি ব্যবসায়িক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিলের (জেবিসি) প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ ও কাতার।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির উপস্থিতিতে এ উপলক্ষ্যে চুক্তি সই করেছে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং কাতারের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন কাতার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (কিউসিসিআই)।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং কিউসিসিআই চেয়ারম্যান শেখ খলিফা বিন জসিম আল থানি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। মূলত বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে বাণিজ্য জোরদার করতে এই চুক্তি স্বাক্ষ্যরিত হয়।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম এই প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে জেবিসি প্রতিষ্ঠা দুই দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে। এ চুক্তির আওতায় কাতারের ব্যবসায়ীরা যেমন উপকৃত হবে তেমনি বাংলাদেশী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পক্ষেও কাতারের রপ্তানি বাজার ধরা আরও সহজতর হবে এবং কাতার থেকে জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি সহজ হবে। একইসঙ্গে জেবিসির মাধ্যমে কাতারের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এফবিসিসিআই ও কিউবিসিসিআই’র মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও কাতারের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, সেবা এবং অন্যান্য শিল্প খাতে বাণিজ্য কার্যক্রম জোরদারের একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল।

এফবিসিসিআই এবং কিউসিসিআই উভয়ই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং পরিষেবা সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে উপকৃত হবে। পাশাপাশি দুই দেশের ব্যবসায়ীক তথ্যের আদান-প্রদান, সংশ্লিষ্ট সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেওয়া, প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করাসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করবে জেবিসি।

এছাড়া উভয় পক্ষই বাণিজ্য উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য যৌথ বৈঠক আয়োজন করতে পারবে। চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনে এফবিসিসিআই ও কিউসিসিআই সাব-কমিটি ও টাস্কফোর্স গঠন করতে পারবে।

 

  বাজেট অর্থবছর ২০২১-২২

;

সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৩১৩৮ টাকা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি মাসে তিন দফা বৃদ্ধির পরে দেশের বাজারে সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমানো হয়েছে। তাতে ভালো মানের, অর্থাৎ হল-মার্ক করা ২২ ক্যারেট সোনার দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি ভরি ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকায়। নতুন এ দাম আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে কার্যকর হবে ।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে। এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে খাঁটি সোনার দাম কমেছে, সে জন্য সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের সোনার দাম পড়বে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১০ হাজার ৯৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৫ হাজার ১৪৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৭৬ হাজার ৫৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে, গত ২১ এপ্রিল একদিনের ব্যবধানে ভরিতে ৬৩০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৭ হাজার ৭০৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৭৮ হাজার ৬৬২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা সেদিন বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে কার্যকর হয়েছিল।

তার আগে, ২০ এপ্রিল সোনার দাম ক‌মিয়ে‌ছিল বাজুস। যা ওইদিনই কার্যকর হয়। ওই দাম অনুযায়ী রোববার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ টাকা, ২১ ক্যারেট সোনার দাম ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৯৭ হাজার ১৯৭ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা।

  বাজেট অর্থবছর ২০২১-২২

;

বোয়িং

৬ ড্রিমলাইনার নিয়ে শঙ্কা, কী আপডেট বিমানের



ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

 

বিশ্বের সর্বাধুনিক উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৮৭ ‘ড্রিমলাইনার’-এর নির্মাণে ত্রুটিপূর্ণ রয়েছে বলে দাবি করে এই মডেলের সব উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বোয়িংয়ের সাবেক প্রকৌশলী স্যাম সাহেলপৌর সম্প্রতি এ কথা বলায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

ওই প্রকৌশলী অভিযোগ করেছেন, বোয়িং ৮৭৮ ড্রিমলাইনার ছাড়া বোয়িং ৭৭৭ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছিল। এতে সব উড়োজাহাজের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এদের ঝুঁকি বিপর্যকর মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে।

স্যাম এটাও বলেন, আমি কখনোই উড়োজাহাজের এমন গুরুতর অবস্থা দেখিনি। তাই, কখনোই আমার পরিবারের সদস্যদের বোয়িং ড্রিমলাইনারে উঠতে দেবো না।

এই ঘটনার পর বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

এরপর বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম জানিয়েছেন, এ বিষয়ে বিমানের পক্ষ থেকে বোয়িংয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনো আপডেট পেলে মন্ত্রীকে জানাবো।

পরবর্তীতে মন্ত্রী বলেছেন, বিমানের বহরে থাকা ‘ড্রিমলাইনার’ উড়োজাহাজগুলো নতুন হওয়ায় আপাতত কারিগরি সমস্যা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে এবং যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী কোম্পানি বোয়িংয়ের সঙ্গে দ্রুত কথা বলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। কারণ, বাংলাদেশ সরকার ও বিমানের কাছে যাত্রীদের নিরাপত্তাই মুখ্য বিষয়।

ড্রিমলাইনার কতটা নতুন
বিমানমন্ত্রী ফারুক খান বোয়িংয়ের ত্রুটির বিষয়ে ত্বরিত নির্দেশনা দিয়েছেন। এটি যেমন প্রশংসিত, তেমনি তিনি বলেছেন, ‘ড্রিমলাইনার’-এর উড়োজাহাজগুলো নতুন হওয়ায় এর কারিগরি ত্রুটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

বোয়িং কোম্পানির উড়োজাহাজ, ছবি- সংগৃহীত

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের আগস্টে দেশে প্রথম ড্রিমলাইনার অবতরণ করে। এরপর একে একে বিমানের বহরে যুক্ত হতে থাকে ‘ড্রিমলাইনার’-এর উড়োজাহাজগুলো। সর্বশেষ, ‘ড্রিমলাইনার’টি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। সে হিসাবে এসব উড়োজাহাজ পুরোপুরি নতুন নয়।

দুর্ঘটনা পিছু ছাড়ছে না বোয়িংকে
মাঝ আকাশে আলাস্কা এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজের দরজা খুলে যাওয়ার ঘটনায় বিশ্ব জুড়ে তোলপাড় হয়। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন করে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় এলো একই কোম্পানির ‘ড্রিমলাইনার’ মডেলের উড়োজাহাজগুলো।

‘ম্যাক্স’-এর ঘটনার পর বোয়িং ৭৮৭-৮০০ উড়োজাহাজের জানালায় ফাটলের ঘটনায় জাপানের তোয়ামা বিমানবন্দর থেকে নিপ্পন এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজটি ছেড়ে গিয়ে দ্রুতই আবার বিমানবন্দরে ফিরে আসে। দুটি ঘটনাতেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় উড়োজাহাজ দুটি। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে বোয়িং ৭৪৭-এর একটি উড়োজাহাজে মাঝ আকাশে আগুন লাগে।

কেন বিমানের ড্রিমলাইনারের উইন্ডশিল্ডে ফাটল
বোয়িংয়ের উড়োজাহাজের দুর্ঘটনার ঝাপটা এসে লেগেছে বিমানেরও। গত জানুয়ারিতে বিমানের বোয়িং ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজের উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখা দেয়।

দাম্মামগামী উড়োজাহাজটি দুই ঘণ্টা ফ্লাই করার পর ফের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে আসে। বোয়িংটির পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজা। উড়োজাহাজটি ২৮৫ জন যাত্রী নিয়ে ফের ঢাকায় অবতরণ করতে সক্ষম হয়।

এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজটি জরুরি অবতরণ করে। ওই উড়োজাহাজের উইন্ডশিল্ডেও ফাটল দেখা দিয়েছিল। যদিও সেটি বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজ নয়। এটি লিজে আনা হয়েছিল।

উইন্ডশিল্ডে ফাটলের বিষয়ে এক বৈমানিক বলেন, উইন্ডশিল্ডে ফাটল সচরাচর ঘটে না। মাঝ আকাশে উইন্ডশিল্ডে ফাটল অবশ্যই ভীতিকর। উইন্ডশিল্ড ভেঙে গেলে উড়োজাহাজের ভেতরে চাপ কমে তা ভারসাম্যহীন হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বিমানের প্রকৌশল পরিদপ্তরের পরিচালক এয়ার কমোডর মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, চার বছরের মাথায় সাধারণত উড়োজাহাজে এ ধরনের ঘটনা ঘটার কথা না।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
এ বিষয়ে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘বোয়িং ম্যাক্স’ দুর্ঘটনার পর বোয়িংয়ের নিরাপত্তা ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এবার আবার নতুন করে ‘ড্রিমলাইনার’-এর নিরাপত্তার ইস্যুটি সামনে এলো। তাই, এটি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে উত্থাপিত বিষয়টির সুরাহা করা উচিত।

 

  বাজেট অর্থবছর ২০২১-২২

;