ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক ঋণ ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা

  সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ
  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের অপেক্ষায় আছে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট। বৃহস্পতিবার (০৬ জুন) জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা চতুর্থ দফার সরকারের এটাই প্রথম বাজেট।

নতুন অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেট ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এ বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। ব্যয় মেটাতে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে আরও ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ করতে হবে। নতুন অর্থবছরের জন্য প্রাক্কলিত এই বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪.৫৭ শতাংশের সমান।

বিজ্ঞাপন

বাজেট প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নতুন অর্থবছরে ঘাটতি অর্থায়নে ৬৫ শতাংশের বেশি অর্থ অভ্যন্তরীণ খাত থেকে সংগ্রহ করা হবে, যার বড় অংশই আসবে ব্যাংকিং খাত থেকে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজস্ব আদায়ে ক্রমাগত ব্যর্থতা, মূল্যস্ফীতির চাপ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকির চাহিদা, সরকারি ব্যয় সীমিত রাখতে আইএমএফ শর্তসহ বিভিন্ন কারণে এবার বাজেটের আকার বাড়ছে সামান্য।

বিজ্ঞাপন

সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ বেড়ে গেলে সুদের হার বৃদ্ধি, তারল্য সংকট বিভিন্ন সমস্যায় বেসরকারি খাতে অর্থায়নের সুযোগ সংকুচিত হয়ে বিনিয়োগ, উৎপাদন, প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

নতুন অর্থবছরে ব্যয় সঙ্কুচনের ধারাবাহিকতায় বাজেট ঘাটতির আকারও জিডিপির হিসাবে এক দশকের সর্বনিম্ন অবস্থানে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপির ৫.২১ শতাংশ বাজেট ঘাটতি প্রাক্বলন করা আছে। এ হিসাবে এক বছরে বাজেট ঘাটতি কমছে জিডিপির ০.৬৬ শতাংশীয় পয়েন্ট। গত সাত বছর ধরে বাজেটে জিডিপির ৫ শতাংশ থেকে ৬.২১ শতাংশ পর্যন্ত ঘাটতি ধরে আসছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

জিডিপির হিসাবে ঘাটতি কমলেও টাকার অঙ্কে চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় আগাম অর্থবছর বাজেট ঘাটতির আকার ১৯ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বাড়ছে। সংশোধিত বাজেটে ঘাটতির নির্ধারণ করা আছে ২.৩৬ লাখ কোটি টাকা।

এই ঘাটতি অর্থায়নে বিদেশ থেকে থেকে ৯০ হাজার ৭০০কোটি টাকার নিট ঋণ নিবে সরকার। আর অবশিষ্ট ৬৫ শতাংশ ঋণ নেয়া হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে।

এবার ব্যাংক থেকে আর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিতে চায় সরকার। বরাবরেরে মতই এবারও ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক ঋণেই ভরসা করছে সরকার।

চলতি বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা বেধে দেয়া হয়েছিল। এ হিসাবে এক বছরের মধ্যে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্য বাড়ছে ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা।

গত কয়েক বছর ধরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো পরিশোধ করলেও আগামী বছর এখাত থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে।

চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য থাকলেও বছল শেষে উল্টো ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকা পরিশোধ হবে বলে ধারণা করছে অর্থমন্ত্রণালয়।

সরকারের ব্যাংক ঋণ বাড়লে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ব্যবস্থায় তারল্য সঙ্কটসহ এমনিতেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। এ অবস্থায় সরকার বেশি ঋণ নিলে তারল্য সংকট বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যক্তিখাতে ঋণ বাধাগ্রস্ত হবে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ এমনিতেই কমে এসেছে। সুদের হারও বেশ বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকার আরও ঋণ নিলে ব্যবসা ও শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। এক দিকে জিডিপি বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা বলা হচ্ছে, অন্য দিকে ঋণ প্রবাহ কমানো হচ্ছে। পুরো আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সরকার নিজের নিয়মই ভেঙ্গে ফেলছে।’

তিনি বলেন, ‘টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া হলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। আবার ব্যক্তি ঋণ বাধাগ্রস্ত করলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গিয়েও মূল্যস্ফীতি বাড়বে।’

এ অবস্থায় বাজেট ঘাটতির আকার নিয়ন্ত্রণে রাখতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো, বিদেশ থেকে বাজেট সাপোর্ট ও প্রকল্প সহায়তা ছাড় বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।