পরিযায়ী পাখি: এদেশের প্রজনন পরিযায়ী কোকিলেরা



আ ন ম আমিনুর রহমান, পাখি ও বন্যপ্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ
ঢাকার মিরপুরস্থ জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে অস্থির লাল-ডানা ঝুঁটিয়াল কোকিল। ছবি- লেখক।

ঢাকার মিরপুরস্থ জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে অস্থির লাল-ডানা ঝুঁটিয়াল কোকিল। ছবি- লেখক।

  • Font increase
  • Font Decrease

 

সাতাশ কি আটাশ বছর আগে সর্বপ্রথম লাল-ডানার ঝুঁটিয়াল পাখিটির ছবি দেখেছিলাম। পরবর্তী বছর দু’য়েক বিভিন্ন স্থানে বেশ ক’বার পাখিটির সন্ধান করেছিলাম। কিন্তু, দেখা পাইনি। এরপর বহু বছর গড়িয়ে গেছে; বহু জায়গায় ওকে খুঁজেছি, কিন্তু ফলাফল একই।

বর্ষায় সুন্দরবনের রূপ দেখতে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই ‘অভিযাত্রিক সুন্দরবন’-এর ব্যানারে দশজনের টিমে সুন্দরবন গেলাম। পরদিন সকালে লঞ্চের সঙ্গে থাকা কোসা নৌকায় জামতলী খালে ঢুকলাম। আধঘন্টার মতো খালে ঘুরে কিছু পাখির ছবি তুলে যখন খয়েরি-মাথা সুইচোরার ছানার ছবি তুলছি ঠিক তখন লাল-ডানায় পাখিটিকে চোখের সামনে দিয়ে উড়ে যেতে দেখলাম। পাখিটি উড়ে গিয়ে খালপাড়ের কেওড়া গাছে বসল। দ্রুত ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে ক্লিক করলাম। কিন্তু, সে দ্রুত উড়ে যাওয়ায় দলের একজন ছাড়া বাকিরা ছবি তুলতে ব্যর্থ হলো। দুপুরে দ্বিতীয়বারের মতো জামতলী গেলাম। সমুদ্র সৈকত থেকে ফেরার পথে আরও দু’বার ওকে কয়েক সেকে-ের জন্য দেখলাম। কিন্তু, দু’বারই ও গাছের ঘন পাতার আড়ালে হারিয়ে গেল। বাঘের ভয়ে ওখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। কাজেই ছবিও তোলা হলো না। এরপর টানা তিনবছর ওর খোঁজ নেই। 

 শূককীট মুখে লাল-ডানা ঝুঁটিয়াল কোকিল। ছবি- লেখক

বিরল একটি কোকিলের ছবি তোলার জন্য এ বছরের ২০ মে মিরপুরস্থ জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে গেলাম। ওখানে গিয়ে জানতে পারলাম লাল-ডানার ঝুঁটিয়াল পাখিটিকে গত দু’দিন ধরে অনেকেই দেখেছে। আমরা যখন বেলা এগারটায় পল্লবীর গেটের কাছে লেকের পাশে পাখির ছবি তুলছি সে সময় এক সুহৃদ ফোনে জানাল তারা পাখিটিকে দেখেছে। প্রায় এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দ্রুত সেখানে পৌঁছলাম। কিন্তু ততক্ষণে পাখিটি ঝোপের আড়ালে চলে গেছে। এমনিতেই দূরন্ত পাখিটি গাছের আড়ালে-আবডালে থেকে প্রজাপতি ও মথের শুঁয়াপোকা ধরে খায়। বেলা ১১:৩৫ মিনিটে একযোগে ৭-৮ জনের ক্যামেরার শাটার গর্জে ওঠতেই একটি গাছের পাতার আড়ালে ওকে লাফালাফি করতে দেখলাম। তবে অনেক চেষ্টার পরও অস্থির পাখিটির পরিষ্কার ছবি তুলতে পারলাম না। মিনিট বিশেক চেষ্টার পর অবশেষে অধরা পাখিটির ছবি তুলতে সক্ষম হলাম। এত বছর খোঁজাখুঁজি ও চেষ্টার পর যার ছবি তুললাম সে হলো এদেশের দুর্লভ প্রজনন পরিযায়ী পাখি লাল-ডানা বা লাল-পাখা কোকিল। আজকে এই পাখিসহ কোকিল গোত্রের সকল পরিযায়ী তথা গ্রীষ্মের প্রজনন পরিযায়ী সদস্যদের নিয়ে গল্প সাজিয়েছি।

কোকিল পরভৃত অর্থাৎ কুকুলিফরমেস (Cuculiformes) বর্গের পাখি। এই বর্গের কমবেশি ৪০ ভাগ পাখি, যাদের বেশির ভাগই পুরনো বিশ্ব অর্থাৎ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকায় বাস করে, তারা বাসা তৈরি করে না; তাই বংশবৃদ্ধির জন্য ওরা অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে ও নিজেদের বংশবৃদ্ধির কাজটি অন্য পাখিকে দিয়ে করিয়ে নেয়। এজন্য ওদেরকে শাবক পরজীবীও (Brood Parasite) বলে। এই বর্গে মোট ১৪৭ থেকে ১৫১ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এই বর্গের একমাত্র গোত্রের নাম পরভৃত বা কুকুলিডি (Cuculidae)। এদেশে এই গোত্রের মাত্র বিশ প্রজাতির পাখির বাস, যার বেশিরভাগই কোকিল (Cuckoo)। এই বিশ প্রজাতির বেশিরভাগ পাখিই বাসা বানায় না। তবে এদের মধ্যে ব্যতিক্রম হলো বনকোকিল বা মালকোহা (Malkoha) এবং কানাকুক্কা বা কুকাল (Coucal), কারণ তারা অন্যান্য পাখির মতো বাসা বানায়, ডিম পাড়ে ও ডিমে তা দিয়ে ছানা ফোটায়। এই গোত্রের অনেক প্রজাতির পাখির ক্ষেত্রেই স্ত্রী ও পুরুষের মধ্যে বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বেশকিছু প্রজাতি বংশবৃদ্ধি করার জন্য গ্রীষ্মকালে এদেশে আসে যাদেরকে গ্রীষ্মের প্রজনন পরিযায়ী (Summer Breeder) বলে। এদেশে প্রাপ্ত এই গোত্রের ২০টি প্রজাতির মধ্যে দুটি বনকোকিল ও দুটি কানাকুক্কা এবং বাকি ১৬টি প্রজাতি কোকিল। এই কোকিলগুলোর মধ্যে যারা গ্রীষ্মকালে এদেশে প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি করতে আসে তাদের সম্পর্কেই এখানে আলোচনা করব।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাছের ডালে চাতক পাখি। ছবি- লেখক।  

তবে প্রজনন পরিযায়ী কোকিলদের নিয়ে আলোচনার আগে আবাসিক, পরিযায়ী ও প্রজনন পরিযায়ী পাখি বলতে কি বোঝানো হয় তা একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। এদেশের পক্ষীতালিকায় এখন পর্যন্ত ৭২২ প্রজাতির পাখি নথিভুক্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কমবেশি ৩৪০টি প্রজাতি আবাসিক; অর্থাৎ ওরা সারাবছর এদেশে থাকে, ডিম পাড়ে ও ছানা তোলে। এছাড়াও ৩৭০ প্রজাতিরও বেশি পাখি পরিযায়ী অর্থাৎ বছরের কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় এদেশে আসে, বসবাস করে ও সময়মতো মূল আবাসে ফিরে যায়। এসব পাখি এদেশের মানুষের কাছে আগে, এমনকি এখনও, ‘অতিথি পাখি’ নামেই পরিচিত। এদেরই এক বিরাট অংশ আসে শীতে, যারা শীতের পরিযায়ী নামেও পরিচিত। এসব পাখি মূল দেশে আবাসস্থল বসবাস অনুপযোগী হওয়া, খাদ্যের অভাব ও শীতের কবল থেকে বাঁচার জন্যই বাংলাদেশসহ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার অন্যান্য দেশে পরিযায়ন করে। এটা ওদের জীবনচক্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে ওরা সচরাচর শীতের আবাসে বংশবিস্তার করে না; অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে, যেমন- কুড়া বা পালাসেস ফিশ ঈগল এদেশে আসে শীতকালে, ডিম-ছানা তোলে ও ছানাদের বড় করে সঙ্গে নিয়ে চলে যায়।

রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার বিজয়নগরে শুককীট খাচ্ছে চাতক পাখি। ছবি- লেখক

এছাড়াও বেশকিছু পরিযায়ী পাখি এদেশে অনিয়মিত। ওরা অন্যদের মতো প্রতিবছর আসে না, বরং ৫ বা ১০ বছর পর পর আসে। তাই ওরা যাযাবর, ভবঘুরে বা অনিয়মিত পরিযায়ী হিসেবে পরিচিত। ওদের সংখ্যাও নেহাত কম না, এদেশের মোট পরিযায়ী পাখির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়াও কোনো কোনো পাখি অন্য দেশে পরিযায়নের এক পর্যায়ে এদেশে স্বল্প সময়ের জন্য বিশ্রাম নিতে আসে, যেমন- বাদামি চটক, বন খঞ্জন, লাল-পা তুরমতি ইত্যাদি। ওরা পন্থ-পরিযায়ী (Passage-migrant) নামে পরিচিত। এই পাখিগুলো মূলত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে অন্য কোনো দেশে পরিযায়নের পথে এদেশে কিছুদিনের জন্য যাত্রা বিরতি করে ও ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চে মূল দেশে ফিরে যাওয়ার সময়ও আরেকবার এদেশে যাত্রা বিরতি করে।

যদিও পরিযায়ী পাখি বলতে মূলত শীতের পাখিগুলোকেই বোঝায়, তথাপি কিছু পাখি গ্রীষ্মেও পরিযায়ন করে, যেমন- বিভিন্ন প্রজাতির কোকিল, সুমচা, সুইচোরা, মাছরাঙা ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রজাতির কোকিল এদেশে মার্চ থেকে এপ্রিলে আসে, অন্য উপযুক্ত পাখির বাসায় ডিম পাড়ে, ছানা তোলে এবং ছানাসহ সকলেই আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরে শীতকালীন আবাসে চলে যায়।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পান্না কোকিল। ছবি- লেখক

আগেই বলেছি কোকিলরা বাসা বানায় না। ওরা ডিমে তাও দেয় না এবং ছানাদেরও লালন-পালন করে না। ববং ওরা অন্য উপযুক্ত পাখির বাসায় ডিম পাড়ে এবং তাদের মাধ্যমে নিজেদের বংশবৃদ্ধির কাজটি করিয়ে নেয়। কোকিলের বিভিন্ন প্রজাতি, যেমন- কোকিল, পাপিয়া, চোখ গেল, বউ কথা কও, পান্না কোকিল, বেগুনি কোকিল, বাদামি কোকিল, সরগম, ফিঙ্গে কুলি প্রভৃতির স্ত্রী পাখিরা নিজেদের জন্য উপযুক্ত পোষক বা ধাত্রী পাখির বাসায় ধাত্রীর পাড়া ডিম ফেলে দিয়ে ঠিক একই রঙের প্রায় সমান আকারের ডিম পাড়ে। বংশ রক্ষা নিশ্চিত করতে একটি পোষকের বাসায় ডিম না পেড়ে একাধিক বাসায় ১-৩টি করে ডিম পাড়ে। এসব শাবক পরজীবী পাখির ডিম সচরাচর পোষক পাখির ডিমের আগে ফোটে ও পরজীবী পাখিদের সদ্যফোটা চোখ অফোটা ছানারা পোষক পাখির অফোটা ডিম বা সদ্যফোটা ছানা পিঠ দিয়ে ঠেলে ঠেলে বাসা থেকে নিচে ফেলে দেয় যেন ওরা এদের খাবার বা যতেœ ভাগ বসাতে না পারে। আর এভাবেই ছানাগুলো পোষক বাবা-মায়ের যত্নে একদিন বড়ো হয়ে ওঠে। অথচ পোষক পাখি তা টেরই পায় না।

বাসা না বানানো এই কোকিলদের মধ্যে যারা আবাসিক এবং পন্থ-পরিযায়ী নয়, কিন্তু প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি করার জন্য অন্য দেশ থেকে গ্রীষ্মকালে এদেশে আসে ওদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লাল-ডানা ঝুঁটিয়াল কোকিল, চাতক ও পান্না কোকিল। এছাড়াও আরও যেসব প্রজাতির কোকিল এদেশে প্রজনন পরিযায়ী হয়ে আসে সেগুলোর মধ্যে বউ কথা কও, ধূসর-পেট কোাকিল ও বেগুনি কোকিল অন্যতম। তবে, প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন-এর মতে ওরা এদেশের আবাসিক পাখি। এছাড়াও এ তালিকায় ছোট কোকিলকেও অর্ন্তভুক্ত করা যায়। তবে, এদেশে গ্রীষ্মের অনিয়মিত এই পরিযায়ী পাখিটির প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির কোন চাক্ষুস প্রমাণ না পাওয়ায় লাল-ডানা ঝুঁটিয়াল কোকিল, চাতক ও পান্না কোকিলের মধ্যেই আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকবে। 

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়রণ্যে পান্না কোকিল। ছবি- লেখক

এক. লাল-ডানা ঝুঁটিয়াল কোকিল: ফিচারের শুরুতে লাল ডানার খোপাধারী যে কোকিলটির গল্প বলা হয়েছে সে হলো লাল-ডানা বা লাল-পাখা ঝুঁটিয়াল কোকিল। এটি এদেশের দুর্লভ প্রজনন পরিযায়ী কোকিল। পশ্চিমবঙ্গে বলে গোলা কোকিল। ইংরেজি নাম Chestnut-winged Cuckoo বা Red-winged Crested Cuckoo । বৈজ্ঞানিক নাম Clamator coromandus। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত।

লাল-ডানা কোকিল চাতক পাখির মতোই লম্বালেজী ঝুঁটিদার কোকিল। হাঠাৎ দেখলে মনে হবে যেন একটি লালচে চাতক। দেহের দৈর্ঘ্য ৩৮-৪৬ সেন্টিমিটার ও ওজন ৬৬-৮৬ গ্রাম। কালো মাথায় কালো ঝুঁটি, চোখ ও চঞ্চু কালো। পিঠের উপরটা ও লম্বা লেজ চকচকে নীলচে-কালো। ডানার উপরটা ও প্রান্ত লাল। গাল ও গলা হালকা লালচে। ঘাড়ের উপর অর্ধ সাদা বন্ধনী। বুক-পেট সাদা। চোখের মনি গাঢ় বাদামি। পা ও পায়ের পাতা ধূসর। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি ফ্যাকাশে, দেহের উপরটা লালচে ফুটকিযুক্ত ও ঝুঁটি ছোট। 

গ্রীষ্মকালে দেশের সব ধরনের বনাঞ্চল ও বনের আশেপাশের গাছপালাসম্পন্ন এলাকায় দেখা যায়। সচরাচর একাকী বা জোড়ায় থাকে। ঘন ঝোপ বা পাতাঘেরা গাছে লুকিয়ে থাকে বলে সহজে নজরে আসে না। প্রধানত শুঁয়াপোকা ও নরম দেহের কীটপতঙ্গ খায়। দ্রুত ডানা ঝাপটে গাছ থেকে গাছে ঘুরে বেরায়। স্ত্রী সচরাচর নীরব। পুরুষ অন্য সময় নীরব থাকলেও প্রজনন ঋতুতে উঁচ্চ কন্ঠে ‘ব্রিপ-ব্রিপ-ব্রিপ---’ শব্দে ডাকে।

মার্চ থেকে আগস্ট প্রজননকাল। বাসা না বানানো অন্যান্য কোকিলের মতো ওরাও না বানায় বাসা, না দেয় ডিমে তা, না করে ছানাদের যত্নে। সচরাচর ছাতারে বা পেঙ্গা পাখির বাসায় ওদের ডিমের সঙ্গে মিলিয়ে ২-৩টি নীল ডিম পাড়ে। ছাতারে বা পেঙ্গার ডিম ফোটার আগেই ওদের ডিম ফোটে। আয়ুষ্কাল চার বছরের বেশি।

দুই. চাতক: এটি এদেশের সচরাচর দৃশ্যমান প্রজনন পরিযায়ী খোঁপাধারী কোকিল। পিঁউকাহা, পাপিয়া বা পাকড়া কোকিল নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Pied Cuckoo, Pied Crested Cuckoo বা Jacobin Cuckoo বৈজ্ঞানিক নাম Clamator jocobinus । পূর্ব আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার পাখিটি প্রতি গ্রীষ্মে এদেশে প্রজনন করার জন্য পরিযায়ী হয়ে আসে। পাখিটি বছরের পর বছর একই সময়ে একই জায়গায় পরিযায়ন করে। 

চাতক লম্বালেজি ঝুঁটিয়াল কোকিল। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের গড় দৈর্ঘ্য ৩৩ সেন্টিমিটার যার মধ্যে লেজই ১৬ সেন্টিমিটার । ওজন ৬৫-৭০ গ্রাম। মাথায় কালো ঝুঁটি, দেহের উপরটা কালো ও নিচটা সাদা। লেজের ডগা সাদা। ডানার প্রান্তে সাদা ছোপ থাকে। চোখ বাদামি ও চঞ্চু কালো। পা, পায়ের পাতা ও আঙুল ধূসর-কালো। নখ কালো। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ ধূসর-বাদামি, গলা-বুকে ধূসর ও দেহতলে পীতাভ আভা থাকে। গ্রীষ্মকালে এদেশের বন, বাগান, আবাদি জমি, খামার, ঝোপঝাড় সর্বত্রই ওদের দেখা যায়। সচরাচর একাকী, জোড়ায় বা ৫-৬টির ছোটো দলে থাকে। ঘন ঝোপ বা পাতাঘেরা গাছে লুকিয়ে খাবার খায়। প্রজাপতি ও মথের শূককীট, ছারপোকা, উঁইপোকা, পিঁপড়া ইত্যাদি প্রিয় খাবার। স্ত্রী সচরাচর নীরব। তবে, পুরুষ চাতক ‘পিউ---পি-পি-পিউ---’ শব্দে ডাকে।

মার্চ থেকে জুলাই প্রজননকাল। পুরুষ চাতক পূর্বরাগের সময় সুরেলা কন্ঠে গান গায়। পরভৃত গোত্রের বেশিরভাগ প্রজাতির মতো ওরাও বাসা বানায় না। আর ডিমে তা দেয়া বা ছানার যতœ নেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। ছাতারে (Babbler), বুলবুল (Bulbul), ফিঙে (Drongo) পোষক পাখি অর্থাৎ এসব পাখির বাসায় স্ত্রী চাতক চুপিসারে বাসাপ্রতি ২-৩টি করে ডিম পাড়ে, পোষক পাখির ডিমের রঙের সাথে মিল রেখে। ডিম ফোটে পোষক পাখির ডিম ফোটার আগে। ছানারা পোষক পাখির যত্নে বড়ো হয়ে উঠে। আয়ুষ্কাল চার বছরের বেশি।

আরও পড়ুন:

আমাদের প্রজাপতি

বাঘের থেকেও বিরল পাখি সুন্দরী হাঁস

পরিযায়ী পাখিরা আসছে


তিন. পান্না কোকিল: এটি বিরল ও সুদর্শন গ্রীষ্মের প্রজনন পরিযায়ী কোকিল। সবুজাভ কোকিল নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Asian Emerald Cuckoo বা Emerald Cuckoo । বৈজ্ঞানিক নাম Chrysococcyx maculatus । প্রতি গ্রীষ্মে পাখিটি এদেশে আসে ডিম-ছানা তোলার জন্য; যদিও না বানায় বাসা, না দেয় ডিমে তা। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, চীন, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় দেখা যায়।

কোকিল গোত্রের অন্যতম ছোট এই সদস্যটির দেহের দৈর্ঘ্য ১৭-১৮ সেন্টিমিটার ও ওজন ২৩-৩০ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী-পুরুষের পালকের রঙে ভিন্নতা থাকে। পুরুষের পিঠের উপরটা চকচকে পান্না-সবুজ, তাতে থাকে সোনালি-ব্রোঞ্জ আভা। থুতনি, গলা ও বুকেও তাই। বুক-পেটের নিচটা সাদা, তাতে ধাতব ব্রোঞ্জ-সবুজ ডোরা। লেজের নিচটা ধাতব সবুজ, তাতে সাদা ডোরা। স্ত্রীর মাথা ও ঘাড়ের পিছনটা সোনালি লাল। পিঠের পালক ব্রোঞ্জ-সবুজ। গলা-বুক-পেটে সাদার উপর বাদামি-ব্রোঞ্জ ডোরা। লেজে খয়েরি-কালো ডোরা, ডগা সাদা। চোখের রং গাঢ় লাল। চঞ্চু কমলা-হলুদ, আগা কালো। পা, পায়ের পাতা ও আঙুল গাঢ় বাদামি-সবুজ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের উপরটায় থাকে লাল-বাদামি ডোরা। থুতনি, গলা ও ঘাড়ে থাকে লালচে কালো দাগ। দেহের নিচটায় রয়েছে অনুজ্জ¦ল সাদা ও বাদামি ডোরা। 

 পান্না কোকিল প্রধানত চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। তবে নিচু ভূমি ও পাহাড়ের ১,৫০০ মিটার উঁচুতেও দেখা যায়। ওরা একাকী বা ৪-৬টির দলে বিচরণ করে। গাছের মগডালে পাতার আচ্ছাদনে লুকিয়ে থাকে, তাই সহজে চোখে পড়ে না। পিঁপড়া, শুঁয়াপোকা ও নরম পোকামাকড় খেতে পছন্দ করে। পূর্ণিমা রাতে পুরুষটি ‘চিরর্র-চিরর্র---’ শব্দে ডাকে।

এদেশে ওরা এপ্রিলের মাঝামাঝি আসে ও জুলাইয়ের শেষে চলে যায়। প্রজনন মৌসুমে পুরুষটি দিনভর ‘চিরর্র-চিরর্র-চিরর্র-চিরর্র---’ শব্দে ডাকতে থাকে। মৌটুসি (Sunbird)  বা মাকড়সাভূকের (Spiderhunter) বাসায় একটি করে সাদার উপর বাদামি বা লালচে ছিটযুক্ত ডিম পাড়ে। যদিও ওদের ডিম আকারে কিছুটা বড়ো হয়, কিন্তু ডিমের রং পোষক বা ধাত্রী পাখির মতোই। পোষকের ডিমের আগেই এই ডিম ফোটে। আয়ুষ্কাল চার বছরের বেশি।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পান্না কোকিলের ছবি তোলারত অবস্থায় লেখক

E-mail:[email protected], [email protected]

   

কবে পাবো শীতের দেখা?



আহসান জোবায়ের, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বাঙালির জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটে শীতকালে

বাঙালির জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটে শীতকালে

  • Font increase
  • Font Decrease

‘গুড়ি গুড়ি বায়, হিমের কাঁথা গায়, দাঁড়িয়ে কুয়াশায়, পাতা ঝরা শীতের ছোঁয়া, কাঁপিয়ে দিয়ে যায়’- আবহমান বাংলার প্রকৃতিতে শীতকে ব্যাখ্যা করতে এর চেয়ে সুন্দর অভিব্যক্তি আর কী হতে পারে! সবুজ ঘাসের ডগায় জমা হয় শিশির বিন্দু। সকালবেলা সূর্যের সোনালি আলো যখন জমে থাকা শিশির বিন্দুর উপর এসে পড়ে, তখন তাতে সোনালি আবহ তৈরি হয়। মৌমাছিরা ব্যস্ত হয়ে যায় ফুলের মধু সংগ্রহ করতে। শীতের কুয়াশা ভেজা সকালে মায়ের হাতের পিঠাপুলি, বন্ধুদের সাথে খোলা মাঠে দাঁড়িয়াবান্ধা কিংবা গোল্লাছুট, উঠোন ভর্তি ধান মাড়ানো; এ যেন তীব্র আকাঙ্ক্ষা গ্রামীণ শৈশবের স্মৃতিচারণ। 

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছে গাছি 

বাঙালির জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটে শীতকালে। কুয়াশার চাদরে আবৃত থাকে চারপাশ। বাঙালি মেয়েরা আয়োজন করে চড়ুইভাতি আর শহরের মানুষেরা মাতে বারবিকিউতে। গ্রামে-শহরে চলে ব্যাডমিন্টন খেলার আসর। কৃষকের জমিতে ফলে নানান শীতকালীন সবজি। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে আগুন পোহানো যেন এক শীত-সংস্কৃতি। গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস পেড়ে গুড় বানায়। 

বাংলার প্রকৃতিতে পৌষ-মাঘ মাসে শীত ঋতু হলেও অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকেই রাতে ও ভোরে কুয়াশার সাথে শীত অনুভূত হয়। কিন্তু এ বছর অগ্রহায়ণ মাসের অর্ধেক শেষ হয়ে গেলেও দেখা নেই শীতের। রাতে ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় রাত ও ভোরের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও পুরোদমে শীত অনুভূত হচ্ছে না। সকালে সূর্য ওঠার পরপরই বাড়ছে তাপমাত্রা। আগে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শীত পড়তে শুরু করত। অথচ ডিসেম্বর এসে গেলেও মিলছে না শীতের দেখা। কোথায় সেই সময়, কোথায় সে অনুভূতি? তবে কি হারিয়ে গেলো শীতকাল!

শীতে কুয়াশার চাদরে আবৃত থাকে চারপাশ 

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর শীতকাল শুরু হবে কিছুটা দেরিতে। পাশাপাশি শীতের প্রকোপও থাকবে কম। কবে থেকে শীত নামবে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে বলেননি।

দ্য ওয়েদার চ্যানেলের তাপমাত্রা সূচক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম থেকেই ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই তাপমাত্রা চলমান থাকবে। তবে সমুদ্র সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে ৬ ও ৭ ডিসেম্বর হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মোঃ বজলুর রশিদ বার্তা২৪.কম'কে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের ফলে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এই বৃষ্টির পরই শীত নামবে। মধ্যদিন পর্যন্ত শীতের দেখা মিলবে। রাত ও ভোরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রার চেয়ে ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা কমবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিগার সুলতানা বার্তা২৪.কম'কে বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে একদিকে যেমন বেড়ে চলেছে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের (বন্যা, ঘন ঘন নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধস) তীব্রতা, অন্যদিকে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, স্বল্প বৃষ্টিপাত, অনাবৃষ্টি, অসময়ে ভারী বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা এবং সর্বোপরি মৌসুমি বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার ফলে মানুষের জীবনযাত্রা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। অন্যদিকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ঋতুচক্রের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যথাসময়ে শীত না আসা, শরৎ-এ বর্ষার রূপ, বর্ষায় কম বৃষ্টিপাত ইত্যাদির ফলে ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে দিন দিন ঋতু হারিয়ে যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে দেশের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৪ বছরের তুলনায় শুধু নভেম্বর মাসেই এই তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

;

শীতের শুরুতে তিস্তার চরে দাগি রাজহাঁস



বর্ণালী জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শীতের শুরুতেই ভিড় জমায় রকমারি অতিথি পাখি। তারমধ্যে দাগি রাজহাঁস একটি। মনের সুখে সহজেই হিমালয় পারি দিয়ে অতিথি পাখির আনাগোনা দেখা যায় রংপুরের তিস্তা চরে। এই সুশ্রীর চেহারার রাজহাঁস পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ, মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। শীতকালে এরা মধ্য এশিয়া থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অতিথি হয়ে আসে। শীতের শেষে আবার সেখানে চলে যায়। এরা খুব সহজেই হিমালয়ের মত উঁচু পর্বতমালা পাড়ি দিতে পারে। সেই ধারাবাহিকতায় শীতের শুরুতে এই পাখিটি রংপুরের তিস্তার চরে দেখা মেলে।

জানা গেছে, শীতের সময় এই পাখিগুলো মধ্য এশিয়া থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অতিথি হয়ে আসে। বসন্ত কালে আবার নিজ গন্তব্যে চলে যায়। সেখানকার পার্বত্য অঞ্চলে ও জলাশয়ে বিচরণ ও প্রজনন করে। এ জন্য তাদের সাত হাজার মিটার উঁচু হিমালয় অতিক্রম করতে হয়। আট ঘণ্টায় বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত হিমালয় পার হতে পারে তারা অনায়াসে। প্রায় ২০ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এদের আবাস হলেও বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। 

আট ঘণ্টায় পর্বত হিমালয় পার হতে পারে এই পাখি 

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত। দাগি রাজহাঁসের অন্য কোনো উপপ্রজাতি নেই। অনেক উঁচু দিয়ে এরা উড়তে পারে। প্রকৃতপক্ষে দাগি রাজহাঁস পৃথিবীর সর্বোচ্চ উড্ডয়নকারী পাখিদের মধ্যে একটি।

দাগি রাজহাঁস বড় আকারের জলচর পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৭৩ সেন্টিমিটার ডানা ৪৫ সেন্টি মিটার, ঠোঁট ৫ দশমিক ৫ সেন্টি মিটার, লেজ ১৪ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার, পা ৭ দশমিক ১ সেন্টি মিটার এবং ওজন দেড় কেজি থেকে সাড়ে ৩ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্ক পাখিগুলো দেখতে ধূসর। সাদা মাথা থেকে সাদা একটি লাইন ধূসর গলার নীচ পর্যন্ত চলে গেছে। মাথায় দুটি স্পষ্ট কালো ডোরা থাকে। ওড়ার সময় এদের সাদা মাথা, ফিকে দেহও ডানার কালো আগা স্পষ্ট চোখে পড়ে। এদের চোখ বাদামি। ঠোঁট হলুদ এবং ঠোঁটের আগা ও নাক কালো। পা ও পায়ের পাতা গাঢ় হলুদ। স্ত্রী ও পুরুষ হাঁসের চেহারা প্রায় একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথায় ডোরা নেই। কপাল, গাল ও গলা ভারী। মাথায় ধূসর-বাদামি। পিঠ ও পেটের রং একই রকম। কাক, দাঁড়কাক, শিয়াল, গাঙচিল, ঈগল এদের প্রধান শত্রু।

পাখিটির ছবি তোলার কারিগর বেগম রোকেয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন এই পাখিটির ছবি চারদিন আগে রংপুরের তিস্তা নদী থেকে তুলেছি। দুর্লভ এই প্রজাতির পাখিটি সহজে বাংলাদেশে দেখা যায় না। এই পাখি হিমালয় পর্বতের মতো উচ্চতা সহজেই পাড়ি দিতে পারে। তিনি বলেন, গবেষকদের মতে এই পাখির রক্তের লোহিতকণিকা কিছুটা ভিন্ন ধরনের। অক্সিজেন শক্ত করে ধরে রাখতে পারে। ফলে অনেক উঁচুতে এরা সহজেই উড়তে পারে।

;

২য় বিশ্ব যুদ্ধের ৫০০ পাউন্ডের বোমা উদ্ধার



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
২য় বিশ্ব যুদ্ধের ৫০০ পাউন্ডের বোমা উদ্ধার

২য় বিশ্ব যুদ্ধের ৫০০ পাউন্ডের বোমা উদ্ধার

  • Font increase
  • Font Decrease

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে সবাই জানে। সে সময়কার ক্ষয়ক্ষতি পুরো বিশ্বকে প্রভাবিত করেছিল। তার রেশ কাটেনি যুদ্ধ পরবর্তী কয়েক বছরেও। জাপান তো তার প্রত্যক্ষ উদাহরণ। এখনো প্রায়শই তৎকালীন বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিস্ফোরক জিনিসপত্র। আবারও ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে পুতে রাখা বোমা উদ্ধার হলো। এবার গ্রিক সৈনিকরা এক উন্নয়নের খননকালে একটি বোমা খুঁজে পায়। তারা দ্রুত বোমাটি ধ্বংসের কাজ শুরু করে সফলও হয়েছে।

এই ঘটনা গত ৩০ নভেম্বর, বৃহস্পতিবারের। গ্রীসের দক্ষিণে সমুদ্রতীরবর্তী গ্লাইফাদা এলাকার কাছে গ্রীক সেনা বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। এথেন্সের দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় একটি বিলাসবহুল প্রকল্পে কাজ করেন্ তারা। নগর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের সময় তারা আবিষ্কার করে এই বোমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই অবিস্ফোরিত বোমা অবশেষে তারা ডিস্পোজ করতে সক্ষম হয়। ৫০০ পাউন্ডের বোমাটি কোনো ক্ষতি ছাড়াই ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে।

এজন্য দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। এলাকাবাসীর নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত সতর্কতাও অবলম্বন করা হয়। আশেপাশের বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক দ্রুত খালি করিয়ে নেওয়া হয়।

নগর উন্নয়ন প্রকল্পে একটি পার্ক, শপিং মল, হোটেল, একটি ক্যাসিনো এবং রাজধানীর দক্ষিণে একাধিক অবসর সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কাজটি গত বছর শুরু হয়েছিল এবং২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা।

"সবকিছু ঠিকঠাক হয়েছে, এবং আমরা জড়িত সমস্ত সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাই: বিশেষায়িত সেনা ইউনিট, ফায়ার বিভাগ এবং ট্রাফিক পুলিশ," গ্লাইফাডা মেয়র জিওরগোস পাপানিকোলাউ সাইটের কাছাকাছি সাংবাদিকদের বলেছেন।

"খননকার্যের অগ্রগতির সাথে সাথে আরও অবিস্ফোরিত অস্ত্র আবিষ্কৃত হতে পারে।"

উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০০১ সালে বন্ধ হওয়ার আগে এবং একটি নতুন স্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার আগে এথেন্সের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জায়গাটি ব্যবহার করবে। সাইটটি ২০০৪ সালে এথেন্স অলিম্পিকের সময় বেশ কয়েকটি ক্রীড়া স্থানের আয়োজন করেছিল এবং ২০১৫-১৬ সালের শরণার্থী সংকটের সময় আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্তভাবে একটি শিবির স্থাপন করেছিল।

১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি সমর্থন করার জন্য কয়েক দশক ধরে এয়ারফিল্ড ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং গ্রিসের নাৎসি-নেতৃত্বাধীন দখলের সময়, মিত্রদের দ্বারা বিমানঘাঁটি বোমাবর্ষণ করা হয়েছিল।

;

মানুষের আশেপাশে থাকতে পছন্দ করে যে পাখি



বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
মাটিতে খাবারের সন্ধানে ‘পাকরা-শালিক’। ছবি: বিভোর

মাটিতে খাবারের সন্ধানে ‘পাকরা-শালিক’। ছবি: বিভোর

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের প্রকৃতিতে নানান প্রজাতির পাখির সমারোহ। নানা রকমের চরিত্র তাদের। কোনটা বনের পাখি। কোনোটা শহরের পাখি। কোনোটা আবার বিল-হাওরের পাখি। স্বভাব-চরিত্র ভেদেই তাদের জীবন সম্পূর্ণ হয় পরিপূর্ণতার দিকে।

আজ যে পাখির কথা বলছি- সে মানুষের আশেপাশে থাকতেই খুব বেশি পছন্দ করে। মানুষকে ভয় পায় না। প্রায় প্রতিদিনই চা বাগানের নির্জন পথে তার সাথে দেখা হয়ে যায়! হয় চোখাচোখিও! ও থাকে ওর মতো! চা গাছেদের নিচে খাদ্য অনুসন্ধানে ব্যয় করে বেড়ায় দিনের অনেকটা সময়ে।

এ পাখিটির নাম ‘পাকরা-শালিক’। ইংরেজি নাম Asian Pied Starling বৈজ্ঞানিক নাম Sturnus contra. তবে কেউ কেউ ‘গো শালিক’ বা ‘গোবরে শালিক’ বলে পাখিটিকে কিছুটা হলেও অসম্মান করেন। বহুকাল ধরে ভাবি, ভাবতেই থাকি- সুন্দর এই পাখিটির ‘এমন নাম’ পাখিটির আপামর সৌন্দর্যকে অনেকটাই হনন করেছে। যিনি এই সুন্দর পাখির সাথে ‘এমন নাম’ জুড়ে দিয়েছেন তিনি এর প্রতি গভীর অবিচার করেছেন। এই অবিচারই আমাকে ব্যথিত করে। নিঃশব্দ-নীরবে!

পাকরা-শালিক পাখিটির দৈর্ঘ্য ২৩ সেন্টিমিটার। পাখিটির দেহের রং সাদা-কালো। গাল, পেট ও লেজতল সাদা রঙের। দেহের অবশিষ্ট অংশ কালচে। চোখ সাদা, তবে চোখের পাশে রয়েছে কমলা রঙের চামড়ার পট্টি। এ পট্টিতেই ফোটে আছে তার মুখশ্রীর আসল সৌন্দর্য।

গৃহপালিত ষাঁড় বা গাভীর গোবরে থাকে ছোট ছোট পোকা। সেগুলোই মূলত পাকরা-শালিকের অন্যতম প্রধান খাবার। চা বাগানের সেকশনের ভেতরে অসংখ্য গরু চষে বেড়ায়। সেখানেই পতিত হয় তাদের মল। সূর্যোলোকের আলোয় সেই মল কিছু শুকিয়ে গেলে তাতেই বাসা বাঁধে এক ধরণের পোকা। পাখিটি সেই অর্ধশুকনো গোবর পা দিয়ে টেনে টেনে পোকাগুলোকে বের করে খায়। সেইটাই ওর খাদ্য অনুসন্ধানের চারিত্রিক প্রধান প্রক্রিয়া।

সেই গোবরে পোকাগুলোই খাবার হয়ে শালিক প্রজাতির এই সুন্দর পাখিটাকে বহুকাল ধরে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমরা ক্রমশই দেখে চলেছি পাখিটির প্রাকৃতিক গতিময় সৌন্দর্য।

;