কওমি মাদরাসার শিক্ষক নিয়োগে শৃঙ্খলা জরুরি



মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম
কওমি মাদরাসার শিক্ষক নিয়োগে শৃঙ্খলা জরুরি, ছবি: সংগৃহীত

কওমি মাদরাসার শিক্ষক নিয়োগে শৃঙ্খলা জরুরি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাধারণত মৌখিকভাবেই চলে কওমি মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগ। নিয়োগ পাওয়া মাদরাসা থেকে পাস করা মেধাবী শিক্ষার্থী, পুরোনো শিক্ষার্থী কিংবা কারও মাধ্যমে আসা চাকরিপ্রার্থীকে কর্তৃপক্ষের পছন্দ হলে তাকে পাঠদান শুরু করতে বলা হয়। ব্যস, এটাই নিয়ম। কোনো নিয়োগপত্র নেই, লিখিত কোনো ডকুমেন্ট নেই। কোনো লেনদেন নেই। শুধুমাত্র বিশ্বাস আর আস্থার ওপর নির্ভর করে চলে নিয়োগ। বেতন-ভাতা, ছুটি ও অন্যকোনো সুযোগ-সুবিধার কথা সেভাবে উল্লেখ থাকে না। কিংবা থাকলেও তা মৌখিক পর্যায়ে। এভাবেই চলে আসছে। তবে হ্যাঁ, ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়, কিন্তু সেটা সংখ্যানুপাতে খুবই কম। বিশ্বাস করা কঠিন, তবু এটাই বাস্তবতা।

আমরা জানি, একজন শিক্ষকের দু’টি বিষয়ে পারদর্শিতা অপরিহার্য। এক. বিষয় জ্ঞান এবং শিক্ষণ, দুই. গবেষণা দক্ষতা। এগুলো নির্ভর করে শিক্ষার মৌল ধারণা ও সিলেবাস সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান, শিক্ষার ইতিহাস, শিক্ষার্থীর মনোজগৎ, জ্ঞান বিতরণে বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল-সম্পর্কিত জ্ঞান, পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়ন, শিক্ষার্থীর শিখনফল পরিমাপ ও মূল্যায়ন করার ক্ষমতা এবং নতুন নতুন শিক্ষণ কৌশল উদ্ভাবনের দক্ষতার ওপর। আর উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে একজন শিক্ষক নিজেকে সৃষ্টিশীল শিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। বর্তমান পৃথিবীতে তাই শিক্ষা বিষয়ে উপযুক্ত ডিগ্রি, প্রশিক্ষণ ছাড়া শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হওয়া যায় না। এর সবগুলোই বলতে গেলে অনুপস্থিত কওমি শিক্ষা ব্যবস্থায়।

লেখার শুরুতে কওমি শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে সামান্য ধারণা দেওয়া হয়েছে। ভেতরের কথা কাছে অন্যের কাছে বলার জন্য বলছি না, কিন্তু বছরের পর বছর এভাবেই চলছে কওমি মাদরাসাগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি। নিয়োগের সময় নিয়োগপত্র ও নিয়োগ রেজিস্টার না থাকায় উভয়পক্ষের মাঝে অনালোচিত থেকে যায় কিছু বিষয়, সেখান থেকে ধীরে ধীরে তৈরি হয় চাপা ক্ষোভ। ফলে এক সময় সম্পর্ক শীতল হয়ে যায়। ফলাফল চাকরিচ্যুতি কিংবা পদত্যাগ।

অথচ পবিত্র কোরআনের ইরশাদ ছিলো, ‘দু’জনের চুক্তি লিখে রাখার, যেন কেউ প্রতারিত বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সঙ্কটকালে যেন সুষ্ঠু সমাধান অনায়েসে বের হয়ে আসে।’

কওমি মাদরাসার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক)-এর তরফে যদিও নিয়োগ রেজিস্টার রাখার নির্দেশ দেওয়া আছে কিন্তু তা নির্দেশ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। যার কোনো বাস্তবতা নেই। মাদরাসাগুলো এ নির্দেশের কোনো তোয়াক্কা করে না। বেফাকও কোনো মনিটরিং কিংবা ব্যবস্থা নেয় না। নিয়োগ রেজিস্টার ব্যবহার ও সংরক্ষণে কোনো চাপ দেয় না।

অন্যদিকে কোনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে শিক্ষকরা নিবন্ধিত না থাকায় বহুমুখি সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এবং উত্তরোত্তর তা কেবল বাড়ছে।

খুবই তুচ্ছ কোনো কারণে বা খামখেয়ালি করে একজন শিক্ষক শিক্ষাবর্ষের মাঝে এক মাদরাসা ছেড়ে আরেক মাদরাসায় যোগদান করছেন। এতে অনেক সময় পূর্বের মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাদরাসার কার্যক্রম বন্ধের উপক্রমও হয়।

যদিও কওমি মাদরাসার অধিকাংশ শিক্ষকই আদর্শবান, চরিত্রবান। শুধু এতটুকুই নয়, তারা একেকজন আদর্শ ও উত্তম চরিত্রের নমুনা। কিন্তু এর পরও কিছু ব্যতিক্রম আছে। এক্ষেত্রে কোনো শিক্ষকের অসামাজিক আচরণ, অনৈতিক কাজ, চারিত্রিক স্খলন প্রকাশ পেলে মাদরাসা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি এখান থেকে বের হয়ে দূরের আরেক স্থানে যেয়ে অতীত গোপন করে দিব্যি চাকরি নিয়ে নিজের লাম্পট্যপনা চালিয়ে যেতে থাকেন। এতে করে অপরাধ নির্মূল না হয়ে আরও বিস্তৃতি লাভ করে। অথচ শিক্ষক নিবন্ধন প্রক্রিয়ার দ্বারা এ সমস্যাগুলোর সহজ সমাধান সম্ভব ছিলো।

প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে প্রতিটি কওমি মাদরাসা তার পরিচালনাগত নীতিতে স্বাধীন। এ স্বাধীনতা বাস্তবসম্মত ও প্রয়োজনীয়। যা কিছু করার তা স্বাধীনতাকে ঠিক রেখেই করতে হবে। যেমনটি জাতিসংঘ পৃথিবীর স্বাধীন দেশগুলোকে অনেক নিয়ম-নীতি মেনে চলতে বাধ্য করে। আবার স্বাধীন সার্বভৌম না হয়েও কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন দেশগুলোতে প্রদেশগুলো নিজেদের মতো করে দেশ চালায়। ঠিক এভাবেই বেফাক-হাইয়া মাদরাসাগুলোকে সুষ্ঠু সুশৃঙ্খলভাবে চালাতে পারে।

সকল মাদরাসার জন্য বেফাক-হাইয়া একই নিয়োগবিধি, একই ছুটিবিধি, একই কানুন তৈরি করে দেবে- তা বলছি না। আর তা বাস্তবসম্মতও নয়। কিন্তু প্রতিটি মাদরাসাকে নিজের মতো করে এ সকল বিধি লিখিতভাবে তৈরি করে নিতে বেফাক-হাইয়া বাধ্য করতে পারে। অনেক মাদরাসার লিখিত গঠনতন্ত্র পর্যন্ত নেই। এক্ষেত্রে বেফাক-হাইয়া আইন করতে পারে, মাদরাসার গঠনতন্ত্র, নিয়োগ বিধি, ছুটি বিধি ইত্যাদি তৈরি করে অনুলিপি বেফাক-হাইয়ার কাছে জমা দেবে। কোনো সময় সংশোধনের দরকার হলে নিজেরাই নিয়মমতো সংশোধন করে সংশোধিত বিধির অনুলিপিও বেফাক-হাইয়ার কাছে জমা দেবে। শিক্ষক নিয়োগ-অব্যাহতি মাদরাসাগুলো নিজেদের মতো করবে, কিন্তু নিয়োগ রেজিস্টারের অনুলিপি ও প্রদত্ত নিয়োগপত্রের অনুলিপি বেফাক-হাইয়ার কাছে জমা দেবে।

কওমি মাদরাসাগুলোর চিরায়ত সুনাম-শৃঙ্খলা অক্ষুন্ন রাখার জন্য সকল শিক্ষককে বেফাক-হাইয়ার কাছে নিবন্ধিত থাকা সময়ের অন্যতম দাবি। এটা তেমন কোনো কঠিন কাজ নয়, এ জন্য কোনো নিবন্ধন পরীক্ষারও দরকার নেই। বেফাক-হাইয়ার নির্ধারিত ফরম পূরম করে জমা প্রদান করে কর্তৃপক্ষের মঞ্জুরি স্বাপেক্ষে সহজ নিবন্ধন ধারা চালু করা যায়। বেফাক-হাইয়া কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সকল তথ্যের কলাম রেখে ফরম তৈরি করবে। পাঠদানে আগ্রহীরা ফরম পূরণ করে জমা দিলে কর্তৃপক্ষ তাদের নিবন্ধন নম্বর দেবে। আর নিবন্ধন রেজিস্টারে ফরমের সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ভবিষ্যতের বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ করারও কলাম তাতে থাকবে।

নিবন্ধন বাতিলেরও একটা স্বচ্ছ নিয়ম থাকবে। তাতে উল্লেখ থাকবে, কোন কোন অপরাধে নিবন্ধন বাতিল হবে, অপরাধ কিভাবে প্রমাণিত হবে, অপরাধের তথ্য কার মারফত কিভাবে আসতে হবে। কোন ধরণের অপরাধে নিবন্ধন বাতিল না হলেও অপরাধ নিবন্ধন রেজিস্টারে সংরক্ষিত হয়ে থাকবে।

গ্রাম পর্যায়ের মাদরাসা এবং প্রাইভেট মাদরাসাগুলোর অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধের জন্য নিবন্ধনকে একাধিক মারহালাতে বিভক্ত করা যেতে পারে। মুতাওয়াসসিতা, ছানাবিয়া, তাকমিল অথবা ছানাবিয়া, তাকমিল এভাবেও বিভক্ত করা যেতে পারে। নচেৎ অনেক সময় দেখা যায় নুরুল ইজাহ পড়ানোর যোগ্যতা নেই দিব্যি তাকে হেদায়া দেওয়া হয়েছে। নিজে ইবারত পড়তেও পারে না, তরজমাও করতে পারে না, নোট দেখে দারস পাড়ি দেয়। আর মারহালাভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এখনতো বলতে গেলে কওমি মাদরাসায় কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষণের (নূরানি প্রশিক্ষণ ছাড়া) ব্যবস্থা নেই।

বেফাক-হাইয়া আইন করতে পারে, শর্তারোপ করতে পারে, অনিবন্ধিত কোনো ব্যক্তিকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

কোনো নিয়ম-নীতি না থাকায় কোথাও শিক্ষক নির্যাতিত হয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় আবার কোথাও প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সারাদেশে সকল কওমি মাদরাসা এক নিয়মে পরিচালিত হতে হবে তা বলছি না। তবে প্রতিটি মাদরাসার নিজস্ব নিয়মগুলো লিখিতভাবে থাকা দরকার এবং তা বেফাক-হাইয়ার গোচরিভূতও থাকা দরকার।

শিক্ষকতা আর পাঁচটা চাকরির মতো নয়। এ বিষয়টা সদ্য শিক্ষকতায় যোগ দেওয়া মানুষটি মনে আসে না। কারণ নিয়মিত ক্লাসের বাইরে জ্ঞান বিতরণ যে আলাদা কিছু, সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণা হয়নি প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে।

সুতরাং ঢেলে সাজাতে হবে বর্তমান শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। বেতন কাঠানো নির্ধারণ, বেতনবৈষম্য কমানো থেকে শুরু করে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। শিক্ষক নিয়োগে কঠোর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। না হলে কিন্তু আখেরে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

মোটাদাগে বলা চলে, শিক্ষক নিবন্ধন পদ্ধতি চালু, নিবন্ধন বাতিলের ক্ষমতা সংরক্ষণ, শিক্ষক নিবন্ধন বাধ্যতামূলক, নিবন্ধনহীন শিক্ষক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা, মাদরাসাগুলোর জন্য নিজস্ব নিয়োগ বিধি-অব্যাহতি বিধি-ছুটি বিধি বাধ্যতামুলক করা, নিয়োগ রেজিস্টার, নিয়োগ ফাইল ও নিয়োগপত্র বাধ্যতামূলক করা, নিয়োগপত্রের অনুলিপি বোর্ডে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, অব্যাহতি নিয়ে শিক্ষক-মাদরাসা দ্বিপাক্ষিক মতানৈক্য হলে বোর্ডকে জানানো এবং বোর্ডের মাধ্যমে সুরাহার ব্যবস্থা জটিল কিছু নয়। এগুলোর জন্য দরকার শুধু সদিচ্ছা। এখন প্রশ্ন হলো- সেই সদিচ্ছাটুকু কী আমাদের আছে?

মুফতি মাহফূযুল হক: কওমি মাদরাসার শিক্ষক ও কলাম লেখক

আরও পড়ুন:
কওমি মাদরাসার শিক্ষকদের জন্য আপৎকালীন তহবিল গঠন আবশ্যক

দুই লক্ষাধিক কওমি শিক্ষকের কথা ভাববার কেউ নেই!

কওমি শিক্ষকদের আর্থসামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা

কওমি মেরুদণ্ড যেভাবে সোজা রাখতে পারি

করোনার কবলে কওমি মাদরাসার শিক্ষক-পরিচালক, অতঃপর...

বিপদগ্রস্ত কওমি শিক্ষকের কথা বলা কী অন্যায়?

কওমি মাদরাসার মুহতামিমদের প্রতি অনুরোধ

   

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;

গরমে মুমিনের আমল



মুফতি উমর ফারুক আশিকী
গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে, হে রব! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। আল্লাহতায়ালা তখন তাকে দুইটি নিশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি নিশ্বাস শীতকালে আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো।’ -সহিহ বোখারি : ৩২৬০

মুমিন বান্দারা দয়াময় আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয়ে গ্রীষ্মের এই গরম সময়ে অফুরন্ত সওয়াব লাভের জন্য বেশ কিছু আমল করতে পারেন। আশা করা যায়, মহান আল্লাহর দয়ায় পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে- ইনশাআল্লাহ।

তওবা করা : মানুষের পাপের কারণে মানুষের ওপর নানা ধরনের বিপদাপদ আসে, তাই প্রতিকূল অবস্থাকে অনুকূলে আনতে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করার কোনো বিকল্প নেই।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

ইবাদতে গাফিলতি না করা : গরমের কারণে ইবাদত-বন্দেগিতে গাফিলতি না করা। কারণ জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার গরমের চেয়ে বহুগুণে উত্তপ্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘পেছনে থাকা লোকগুলো আল্লাহর রাসুলের বিপক্ষে বসে থাকতে পেরে খুশি হলো। আর তারা অপছন্দ করল তাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করতে এবং তারা বলল, ‘তোমরা গরমের মধ্যে বের হয়ো না।’ বলো, জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত।’ -সুরা তওবা : ৮১

পিপাসার্তকে পানি পান করানো : হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, (এক দিন) আমি (নবীজিকে) বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, পানি পান করানো। -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৬৫

চলমান গরমের সময় শহরেরে বিভিন্ন স্থানে পথচারীদের জন্য ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা রাখা হয় বিভিন্ন অফিস, দাতব্য সংগঠন কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে। এটা অত্যন্ত ভালো কাজ, সওয়াবের কাজ।

কেউ পানি চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে নিষেধ করেছেন নবী কারিম (সা.)। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন কী জিনিস আছে, যা কেউ চাইলে না দিয়ে তাকে বিদায় দেওয়াটা ঠিক নয়?

তিনি বলেন, পানি, লবণ ও আগুন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই পানি সম্পর্কে তো আমরা জানি, কিন্তু লবণ ও আগুনের ব্যাপারে কেন বাধা দেওয়া যাবে না? তিনি বলেন, হে হুমায়রা! যে ব্যক্তি আগুন দান করল, সে যেন ওই আগুন দিয়ে রান্না করা যাবতীয় খাদ্যই দান করল।
যে ব্যক্তি লবণ দান করল, ওই লবণে খাদ্য যতটা সুস্বাদু হলো তা সবই যেন সে দান করল। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা সহজলভ্য, সে যেন একটি গোলামকে দাসত্বমুক্ত করল এবং যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৭৪

অন্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো : তীব্র গরমে অনেক সময় মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। বয়োবৃদ্ধরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বাইরে যেতে পারেন না, তখন তাদের সাহায্য করার মাধ্যমে সদকার সওয়াব মেলে।

হজরত আবু জার (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথ থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। -জামে তিরমিজি : ১৯৫৬

পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া : গরমে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও কষ্টে পড়ে। তাই মানুষের উচিত তাদের পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়; সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল, কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা কুকুরটাকে মুমূর্ষ করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ হতে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করালো), এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। -সহিহ বোখারি : ৩৩২১

গরমের কারণে দুনিয়ার এই হাহাকার পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে, মহান রবের সন্তুষ্টি পেতে বর্ণিত আমলগুলো বেশি বেশি করা জরুরি।

 

;

আগামীতে হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট: ধর্মমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ অনুসারে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে হজ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে।

তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত যে পোর্টালটি রয়েছে সেখানে আমরা নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করছি। আগামী দিনে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে ঢাকা হজ অফিসের সম্মেলন কক্ষে হজযাত্রী প্রশিক্ষণ ২০২৪ ’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্মমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ফরিদুল হক খান বলেন, আপনারা সকলেই যাতে সহী-শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে পারেন সেজন্যই মূলত আজকের এই প্রশিক্ষণ। আমরা প্রশিক্ষণের জন্য অত্যন্ত দক্ষ প্রশিক্ষক নির্বাচন করেছি। আপনারা যদি প্রশিক্ষণের প্রতি মনযোগী হতে পারেন তাহলে আপনারা হজের নিয়ম-কানুন, হুকুম-আহকাম, ধারাবাহিক আনুষ্ঠানিকতা- সবকিছু আয়ত্তে আনতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই প্রবণতা হলো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হজ পালন করা। হজ অনেক পরিশ্রমসাধ্য ইবাদত, এর জন্য শারীরিক সামর্থ্য থাকা বাঞ্চনীয়। অনেকেরই সেই শারীরিক সামর্থ্য থাকে না। যার কারণে তাদের পক্ষে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন করা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়।

তিনি বলেন, অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে জমানো সঞ্চয় দিয়েই হজব্রত পালন করতে যান। এদেশের অধিকাংশ মানুষেরই দ্বিতীয় বার হজ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি থাকে না। সে কারণে আপনার পরিশ্রম ও অর্থ যেন বিফলে না যায় সেজন্য অবশ্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)’র নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে হজ সম্পাদন করতে হবে। সহী ও শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে হবে।

ফরিদুল হক খান বলেন, সৌদি আরবে আপনার পরিচয় শুধু একজন হজযাত্রী নয়, আপনার পরিচয়-আপনি একজন বাংলাদেশি। আপনার আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চালচলনের মাধ্যমেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রকাশ পাবে।

তিনি সৌদি আরবের আইন-কানুন, নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিপালনে কোনরূপ বিচ্যুতি না ঘটে সেদিকে যত্নবান থাকার আহ্বান জানান।

এছাড়া, কারো জন্য দেশের ভাবমূর্তি ও সম্মান যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে বিশেষভাবে সর্তক থাকার জন্য হজযাত্রীদেরকে অনুরোধ জানান তিনি।

ধর্মসচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম, যুগ্মসচিব ড. মো. মঞ্জরুল হক ও ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।

প্রশিক্ষণে সরকারি মাধ্যমে নিবন্ধিত ঢাকার হজযাত্রীরা অংশগ্রহণ করছেন।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশঙ্কা এজেন্সি মালিকদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান অপারেটিং হজ এজেন্সির মালিকরা।

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কিছু ঊর্ধতন কর্মকর্তা এবং মক্কা হজ মিশনের কিছু কর্মকর্তাদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, গত ১৮ এপ্রিল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ ১ শাখা থেকে সৌদি সরকারের একটি চিঠির বরাতে জানানো হয়- আগামী ২৯ এপ্রিল হজ যাত্রীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাবে।

চিঠিতে আরও জানানো হয়, ২৯ এপ্রিলের মধ্যে আবশ্যিকভাবে হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করতে হবে। এজেন্সীর অবহেলার কারণে হজযাত্রীদের হজে গমন অনিশ্চিত হলে সে এজেন্সীর বিরুদ্ধে হজ ও উমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন ২০২১ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে, গত ১০ ফ্রেব্রুয়ারি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে জানানো হয়, সৌদি সরকারের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের আবাসন, ক্যাটারিং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল প্রকার অনলাইন চুক্তি (সার্ভিস কোম্পানি, পরিবহান, ইত্যাদি) সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ এখনো অনেক এজেন্সির ৮০ শতাংশ কার্যক্রম বাকি।

এমন অবস্থায় সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এবং সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে হজ এজেন্সি মালিকেরা অনুরোধ করেন।

এছাড়াও কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেন তারা। সেগুলো হলো- দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল হাজির মিনার জোন নির্ধারণ করে ই হজ সিস্টেম আপডেট করতে হবে। ফাইনাল ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা ও সকল এজেন্সির হজযাত্রী অনুপাতে টিকেট নিশ্চিত করতে হবে। মোয়াজ্জেমদের জন্য বারকোড ভিসার বিষয়টি নিশ্চিত করা। যাদের সৌদি একাউন্টে এখনো রিয়াল জমা হয়নি তাদের একাউন্টে দ্রুত রিয়াল জমার ব্যবস্থা করা।

তারা বলেন, বর্তমানে সৌদি একাউন্টে টাকা ঢুকতে দেড় মাস সময় লাগে। যদি কারো একাউন্টে ১ পয়সাও কম থাকে তাহলে তার হজে যাওয়া সম্ভব হবে না। এবং বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন চার্জ একবারে হিসাব করে পাঠানো অনেকটা অসম্ভব। এছাড়া যাদের এখনো মেননজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা হয়নি তাদের জন্য দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়াও ভিসা ইস্যু কার্যক্রম অন্যান্য বছরের মতো সর্বশেষ ফ্লাইটের এক সপ্তাহ পূর্ব পর্যন্ত চালু রাখার দাবি জানান তারা। আরও বলেন, অতীতে দেখা গেছে অনেকে হজ করতে যাওয়ার ইচ্ছে করলেও সকল প্রস্তুতির পর মারা গেছেন। আবার কেউ মারাত্মক রোগাক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে যেতে পারেন না। তাই সেই হজযাত্রীর পরিবর্তে তার পরিবারের অন্য কোন সদস্যদের যাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে জমাকৃত টাকা গচ্চা যেতো না। বর্তমানে যে অবস্থা আছে তাতে ভিসা ইস্যু এতো আগে বন্ধ হয়ে গেলে অহেতুক প্রচুর টাকা সৌদি আরবে চলে যাবে। এতে দেশের ক্ষতি হবে। যদি বিষয়টি সৌদি সরকারকে বুঝাতে আমরা সক্ষম হই তাহলে আমাদের বিশ্বাস সৌদি সরকার বাস্তবতা বুঝে অবশ্যই বিবেচনা করবেন।

;