‘ধর্মীয় বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য একটি সর্বোচ্চ অথরিটি থাকা প্রয়োজন’



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি প্রসঙ্গে আলেমদের অভিমত, ছবি: বার্তা২৪.কম

বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি প্রসঙ্গে আলেমদের অভিমত, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগের দাবি’র প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদ, গবেষক, আলেম-উলামা ও ইসলামবিষয়ক জনপ্রিয় কয়েকজন লেখকের মতামত। ‘ফিকহে ইসলামিতে বিশেষজ্ঞ মুফতিদের নিয়ে কেন্দ্রীয় ফতোয়া বোর্ড গঠন এবং ইলম ও আমলে জ্যেষ্ঠ মনীষীকে ‘প্রধান মুফতি’ নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার চুম্বকাংশ পাঠকদের জন্য-

মাওলানা জাকারিয়া নোমান
সহকারী পরিচালক, মেখল মাদরাসা, চট্টগ্রাম
বর্তমান সময় একটা সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড গঠন কতটা জরুরি তা আমাদের বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে ছিলাম আমরা সিদ্ধান্তহীন। বর্তমানের কঠিন এই সময়ে কাদিয়ানি এবং শিয়াদের বাদ দিয়ে সব উপদল থেকে আহলে ইলম মুরব্বিদের নিয়ে একটা সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড গঠন এবং একজন মুফতিয়ে আজম নিযুক্ত করা অত্যন্ত প্রয়োজন মনে করছি। এটা সরকার কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে, তবে কোনোভাবেই সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবে না। এ পদের জন্য কোনো বেতন-ভাতা থাকবে না। কেউ কোনো বেতন নেব না। তারা জাতির দুর্দিনে একটা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত কিংবা মতামত জাতির সামনে উপস্থাপন করবে। এটা হাইয়াতুল উলইয়ার ব্যাবস্থাপনায় থাকবে। তাদের জন্য হাইয়াতুল উলইয়া একটা আলাদা জায়গায় অফিসের ব্যবস্থা করবে। সর্বোচ্চ মুফতি বোর্ড না থাকায় সবাই যে যার অবস্থান থেকে ফতোয়া দিচ্ছে। ফলে দেশে চরম বিশৃঙ্খলা হচ্ছে এবং এর দ্বারা সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে, আলেমদের প্রতি আস্থাহীন হয়ে উঠছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় মানুষ পুরোপুরি আলেমদের প্রতি আস্থাহীন হয়ে যাবে।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তখন আলেম বা বক্তা নামধারী মূর্খরা আর ফতোয়া দেওয়ার সাহস করবে না। যারা আজেবাজে ফতোয়া দেবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে সহজ হবে। এর দ্বারা দেশে ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। মুফতি আজম যাকে নির্ধারণ করা হবে, তিনি অবশ্যই সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকবেন। তাকে সর্বজন গ্রহণযোগ্য হতে হবে এবং এই পদটা দেশের সর্বোচ্চ বেসরকারি পদ হতে হবে। এভাবে একটি ফতোয়া বোর্ড গঠন করলে আশা করি দেশের মধ্যে ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

মুফতি মুহাম্মদ আমিমুল ইহসান
গবেষক ও লেখক
ফতোয়া ইসলামি শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুসলিম উম্মাহ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে ফতোয়ার মুখাপেক্ষী হয়। ফতোয়া জীবন সমস্যার সমাধান পেশ করে। ফতোয়া প্রদানের কাজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে চল্লিশটি মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করলে তিনি পাঁচটির উত্তর প্রদান করতেন। একজন মুফতি আল্লাহ ও রাসূলের প্রতিনিধি হিসেবে যুগ-সমস্যার সমাধান পেশ করেন। আধুনিক সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন সময় মুফতিদের বেগ পেতে হয়। এ লক্ষ্যে মুফতিদের সমন্বিত বোর্ড থাকা প্রয়োজন।

১৯৮১ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফিকহ একাডেমি জেদ্দা বিভিন্ন দেশের মুফতিদের সমন্বয়ে ফিকহি নাওয়াজেল ও আধুনিক সমস্যাদির সমাধান দিয়ে আসছে। আধুনিক অর্থনীতি বিষয়ক সমস্যার সমাধানে বিশ্ববরেণ্য মুফতি ও স্কলারদের নেতৃত্বে একাউন্টিং এন্ড অডিটিং অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক ফিন্যান্সিয়্যাল ইন্সটিটিউটস (Accounting and Auditing Organization for Islamic Financial Institutions. AAOIFI) বাহরাইন কাজ করছে। ইসলামিক ফিকহ একাডেমি ইন্ডিয়া আধুনিক ফিকহি সমস্যার সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। দারুল উলূম করাচি আর মুফতি রফি উসমানি ও মুফতি তাকি উসমানির কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশ ফতোয়া ও দ্বীন চর্চার উর্বরক্ষেত্র। মাদরাসাকেন্দ্রিক ইফতাগুলো মুসলিম উম্মাহর উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন সময় এসেছে একটি কেন্দ্রীয় মুফতি বোর্ড গঠন করার। যে বোর্ডে একজন গ্র্যান্ড মুফতি থাকবেন। তিনি বোর্ডের সকল সদস্যদের মতামত নিয়ে ফতোয়া প্রদান করবেন। এই বোর্ড থাকবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। তবে এটা কিভাবে গঠন হবে, কারা এর সদস্য হবেন, এটা কি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে চলবে, এ বোর্ডের দফতর কোথায় হবে ও তা পরিচালনার অর্থের উৎস কি হবে এ গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। পর্যালোচনা করতে হবে।

এ বোর্ড ও গ্র্যান্ড মুফতি কারো রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার হবে না। মিসরের গ্র্যান্ড মুফতি সরকারি অনেক অনৈতিক কাজের বৈধতা দিয়েছেন যা সকলের জানা। বস্তুত বিষয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই শীর্ষস্থানীয় মুফতি ও ইসলামি স্কলারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

মুফতি মাহফূযুল হক
মাদরাসা শিক্ষক ও লেখক
বাংলা ভাষায় বড় মুফতি, আরবি ভাষায় আল মুফতি আল আম, ইংরেজি ভাষায় গ্র্যান্ড মুফতি। দাপ্তরিকভাবে আন্তর্জাতিক ভাষা আরবিতে নাম হতে পারে- আল মুফতি আল আম। ইসলাম মুক্ত জ্ঞান চর্চার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আর মুক্ত জ্ঞান চর্চার অনিবার্য বাস্তবতা মতপার্থক্য। ইসলাম যোগ্য জ্ঞানীদের মতপার্থক্যের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। তাইতো জ্ঞান চর্চায় মুফতি সাহাবাদের মাঝেও বিস্তর মতপার্থক্য হয়েছে। সাহাবা পরবর্তী যুগেও ফকিহদের মতপার্থক্যের ভেতর দিয়েই ইসলাম এগিয়ে চলেছে। বহুমতের মধ্যে সাধারণ জনতা নিজ নিজ এলাকার শ্রদ্ধেয় মান্যবর ফকিহকে অনুসরণ করে থাকেন। আর শাসন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হুকুমত বা সালতানাত অনুসরণ করে থাকে রাজফকিহকে। এটাই মুসলিমদের অনুসৃত ঐতিহ্য।

বর্তমান সময়ে এ দেশে সাধারণ বিষয়ে সাধারণ জনতা ধর্ম পরিপালনে উল্লেখযোগ্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে না। পূর্বের মতোই নিজেদের পছন্দের মুফতিকে অনুসরণ করে চলছে। কিন্তু সরকার ও আদালত বর্তমান সময়গুলোতে শাসন সংশ্লিষ্ট দ্বীনী বিষয়গুলো প্রায়ই সমস্যায় পড়ছে। এক্ষেত্রে আমরা দেখছি, সরকার ও আদালত কয়েকজন মুফতি থেকে মত নিয়ে নিজেরা সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অথচ এটা চরম ভুল পদ্ধতি। বহু মুফতির মত সমন্বয় করতে পারে কেবলমাত্র আরেকজন বিজ্ঞ মুফতি। এ কাজ কোনোভাবেই একজন অমুফতির নয়।

তাই স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রের নিজস্ব একজন আল মুফতি আল আম দরকার। যিনি সাংবিধানিক স্বাধীন ক্ষমতাসম্পন্ন হবেন। সরকার, আদালত ও প্রশাসন দ্বীনী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার মত গ্রহণ করতে সাংবিধানিকভাবে বাধ্য থাকবেন। এতে ধর্মীয় কাজে সরকার, আদালত ও প্রশাসনে গতি আসবে। এ জন্য দরকার এমন ব্যক্তিকে মনোনীত করতে হবে যিনি জীবনের দীর্ঘ সময় ফতোয়ার কাজে নিয়োজিত আছেন। কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে অতীতে কখনও সম্পৃক্ত ছিলেন না। দেশের অধিকাংশ ফতোয়া বিভাগ তাকে সমিহ করে। আল মুফতি আল আমের কোনো মেয়াদ থাকবে না।

আল মুফতি আল আম বানানোর উদ্দেশ্য মতপার্থক্যের চর্চাকে নিষিদ্ধ ও বন্ধ করা হবে না। বরং উদ্দেশ্য হবে, সরকার ও আদালতের জন্য একটি মত গ্রহণের সহজ ঠিকানা।

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
লেখক, আলেম ও কলেজ শিক্ষক
আমরা জানি, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গ্র্যান্ড মুফতির পদ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অমুসলিম দেশেও গ্র্যান্ড মুফতির পদ রয়েছে। আমরা যদি সৌদি আরবের কথাই বলি, সেখানে গ্র্যান্ড মুফতির পদটি সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃত্বধারী পদ। ইসলামি আইনের কোনো বিষয়ে ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে ফতোয়া দেওয়ার চূড়ান্ত এখতিয়ার গ্র্যান্ড মুফতির হাতে ন্যাস্ত। ১৯৫৩ সালে বাদশাহ আবদুল আজিজ গ্র্যান্ড মুফতির পদ সৃষ্টি করেন।

পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশেও গ্র্যান্ড মুফতির পদ তৈরির দাবি বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। বিশেষ করে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে কয়েকটি জরুরি দ্বীনী বিষয়ে উলামায়ে কেরামের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেওয়ায় এ দাবি আরও জোরালো হয়েছে।

আমি মনে করি, দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য দেশে গ্র্যান্ড মুফতির পদ তৈরি করা খুবই প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি জটিল। কেননা আমাদের দেশের উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত। এছাড়া যিনি গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে নিযুক্ত হবেন, তিনি বিভিন্ন ভয়ভীতি ও রাজনৈতিক ও ধর্মীয় চাপের ঊর্ধ্বে উঠে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত প্রদান করতে পারবেন কিনা- এ বিষয়টিও প্রশ্নসাপেক্ষ। তারপরও সকল নেতিবাচক আশঙ্কা দূর করে যদি গ্র্যান্ড মুফতির পদ সৃষ্টি করা যায়, তবে দ্বীনী বিষয়ে অনেক অনাকাঙ্খিত বিভ্রান্তি হতে দেশের মুসলমান রক্ষা পাবে। এক্ষেত্রে গ্র্যান্ড মুফতির পদটি হতে হবে সম্পূর্ণ সাংবিধানিক।

মুহাম্মাদ এহসানুল হক
শিক্ষক, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
আমাদের দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। ইসলামকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। ব্যক্তিগত জীবনের ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে না পারলেও ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ঘাটতি নেই। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি কাজ কিভাবে সম্পাদন করতে হবে এ বিষয়ে ইসলামের সুনির্দিষ্ট নিদের্শনা রয়েছে। অতীতে ধর্মীয় এসব নির্দেশনা জানার মাধ্যম অনেকটা সীমিত ছিলো। কিন্তু বর্তমানে সেটা মাদরাসা, মসজিদ ও ওয়াজ মাহফিল থেকে আরও অনেক দূর বিস্তৃত হয়েছে। গণমাধ্যমগুলোও এখন কিছুটা এদিকে ঝুঁকেছে। অনলাইনেও এখন অনেক ধরনের ধর্মীয় আলোচনা পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিষয় জানার আগ্রহ আগের তুলনা অনেক বেশি।

আমরা অনেকেই হয়তো জানি, ধর্মীয় বিষয়ে আলেমদের কিছু মতবিরোধ আছে। এই মতবিরোধগুলো সাধারণ মানুষের সামনে আগে ততোটা আসতো না, বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়ার কারণে যতোটা আসছে। আর সাধারণ মানুষ ধর্মীয় বিষয়ে দ্বিমত শুনতে চায় না। এদেশের মানুষ যেহেতু একই মাজহাবের অনুসারী, তাই তাদের সামনে বিরোধপূর্ণ বক্তব্য আসা উচিতও না। সর্বসম্মত অনুসরণীয় একটি বক্তব্য থাকা দরকার।

বর্তমানে সারা পৃথিবী করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় আক্রান্ত। এমতাবস্থায় মসজিদে জামাত, জুমা ও তারাবি ইত্যাদি বিষয়ে মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে। যা কখনোই কাম্য ছিলো না। ধর্মীয় এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে মতবিরোধ কিভাবে এড়ানো যায় সেই পথ খোঁজা উচিত। অনেকেই মনে করছেন, অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও একজন গ্র্যান্ড মুফতি থাকা দরকার। কিন্তু সেখানে প্রশ্ন থেকে যায়, কে হবেন গ্র্যান্ড মুফতি? সেটা কিভাবে নিধার্রিত হবে? সেটা যদি সরকারি কোনো পদ হয়, অথবা সম্পূর্ণ সরকারি বলয়ের মধ্যেই থাকে তাহলে সেই ফতোয়া সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এজন্য আমি মনে করি দেশের শীর্ষস্থানীয় মুফতিদের সমন্বয়ে একটি মুফতি বোর্ড থাকা প্রয়োজন।

ইসলামি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় দেশের শীর্ষ আলেমগণ উদ্যোগে নিতে পারেন। অথবা কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘হাইয়াতুল উলইয়া’ একটি মুফতি বোর্ড গঠন করতে পারে। সেই মুফতি বোর্ডের একজন প্রধান থাকতে পারেন। ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামতের জন্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় গ্রহণযোগ্য একটি অথরিটি থাকা এখন অপরিহার্য বলে মনে করি।

মুহাম্মদ জসিমুদ্দিন
তরুণ আলেম ও লেখক
সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ নিয়োগের আওয়াজ উঠেছে। ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ হলো রাষ্ট্রকর্তৃক নিযুক্ত সর্বোচ্চ ধর্মীয় পদ। যিনি রাষ্ট্রের মুসলমান নাগরিকদের ধর্মীয় বিধিমালা আইন-কানুন সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকারের উপায় নেই। কেননা যেসব বিষয়ে কোরআন-হাদিসে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো বিধান বর্ণিত হয়নি, সেসব বিষয়ে মুফতিরা গবেষণার মাধ্যমে সমাধান বের করেন। এক্ষেত্রে বাস্তবতার পর্যবেক্ষণ ও দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সকল মুফতির ফতোয়া এক রকম হয় না। যার ফলে দেখা যায় এসব বিষয়কে উপলক্ষ করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এজন্য নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকার সুরক্ষিত করার জন্য রাষ্ট্রকর্তৃক নিযুক্ত একজন গ্র্যান্ড মুফতির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। যিনি ফতোয়া বোর্ড কিংবা জেলাভিত্তিক মুফতিদের সঙ্গে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন।

তবে এই দাবিটি আপাতদৃষ্টিতে কল্যাণকর মনে হলেও আমাদের দেশীয় রাজনীতি ও সামাজিক অবকাঠামোয় হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কেননা গ্র্যান্ড মুফতির কর্মপরিধি স্বাধীন থাকার কথা বলা হলেও পরবর্তীতে যে দলীয়করণ বা সরকারিকরণ হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তখন মানুষের ধর্মীয় মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে এবং সুযোগ তৈরি হবে সরকারের মর্জিমতো ফতোয়া চাপিয়ে দেওয়ার। যার ফলে বর্তমান বিতর্কের চেয়ে পরিস্থিতি আরও নৈরাজ্যের দিকে এগিয়ে যাবে।

তাছাড়া সর্বপ্রথম যে বিষয়টি সামনে আসে তা হলো, ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ নিয়োগের প্রক্রিয়া। কঠোরভাবে ধর্ম পালনকারী আমাদের এই দেশে দল-মত, আদর্শ ও তরিকার ঊর্ধ্বে সর্বজনমান্য একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রাজ্ঞ মুফতি নির্বাচন করা শুধু কঠিন নয় বরং অসম্ভব ব্যাপার। এছাড়া নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয়করণ, মাসলাক ও তরিকার পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি অস্বীকারের সুযোগ নেই। এজন্য আপাতদৃষ্টিতে ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ নিয়োগের বিষয়টি কল্যাণকর মনে হলেও পরবর্তীতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাটাই প্রবল।

আরও পড়ুন
বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগের দাবি জোরালো হচ্ছে

‘গ্র্যান্ড মুফতির পদ সৃষ্টি সময়ের দাবি’

‘সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড গঠন জরুরি’

   

রোজার প্রথম সপ্তাহে মসজিদে নববিতে ৫২ লাখ মুসল্লি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায়ের দৃশ্য, ছবি : সংগৃহীত

মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায়ের দৃশ্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। এ সময়ে মদিনার মসজিদে নববিতে ৫২ লাখের বেশি মুসল্লি উপস্থিত হয়েছে। তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগিতে অংশ নিয়েছেন।

মসজিদে নববি তত্ত্বাবধানকারী জেনারেল অথরিটি বিভাগ রমজান মাসে মুসল্লিদের পরিষেবাবিষয়ক এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, রমজানের প্রথম সপ্তাহে ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৮ জন পবিত্র রওজা শরিফে নবী কারিম (সা.)-কে সালাম নিবেদন করেছে। একই সময়ে রওজা শরিফে নামাজ পড়েছেন ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৭ জন পুরুষ ও ১০ লাখ সাত হাজার ৬৯৭ জন নারী। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানে শৃঙ্খলাপূর্ণ ব্যবস্থাপনা নারী-পুরুষ সব মুসল্লির যাতায়াত সুনিশ্চিত করা হয়।

তাতে আরও বলা হয়, গত সপ্তাহে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ১০ হাজার ৪৮২ জন বিশেষ পরিষেবা পেয়েছেন।

তা ছাড়া বিভিন্ন দেশের ১০ লাখ ১০ হাজার ৪১২ জনকে একাধিক ভাষায় যোগাযোগ সেবা দেওয়া হয়। আর মসজিদের লাইব্রেরিতে শিক্ষামূলক পরিষেবা থেকে উপকৃত হয়েছেন ১২ হাজার ২৭৯ জন এবং মিউজিয়ামে চার হাজার ৫৬৭ জন পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে মসজিদে আসা এক লাখ ৪৯ হাজার ১৪৯ জন দর্শনার্থীকে নানা রকম উপহারসামগ্রী দেওয়া হয় এবং মসজিদের সমন্বিত পরিষেবার মাধ্যমে ছয় লাখ ৪৮ হাজার ৪১১ জনকে সেবা দেওয়া হয়। তা ছাড়া এক লাখ ৪৪ হাজার জমজম পানির বোতল বিতরণ করা হয় এবং রোজাদারদের মধ্যে ১৫ হাজার ২৪৩টি ইফতারির খাবার বিতরণ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ২৮ কোটির বেশি মুসল্লি পবিত্র মসজিদে নববিতে আগমন করে। একই বছর এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মুসলিম ওমরাহ পালন করে, যা ছিল সৌদি আরবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যা। আগামী হজ মৌসুম শুরুর আগেই দুই কোটির বেশি মুসল্লি ওমরাহ পালন করবে বলে আশা করছে সৌদি আরব।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয়ে যায়



মুফতি মো. আবদুল্লাহ
রোজার মাসয়ালা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

রোজার মাসয়ালা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র মাহে রমজানের ফরজ রোজা আদায় করছেন। কিন্তু কি কারণে রোজার পবিত্রতা নষ্ট হয়, কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং কি কারণে ভঙ্গ হয় না, তা অনেকের কাছে অজানা। আজকে এ জাতীয় মাসয়ালা নিয়ে আলোচনা করা হলো-

রোজা নষ্ট হওয়ার কারণসমূহ
১. কানে ও নাকে ঔষধ ঢেলে দেওয়া।
২. ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করা।
৩. কুলি করার সময় গলার ভেতরে পানি চলে যাওয়া।
৪. কোনো নারীর সঙ্গে আলিঙ্গন বা মাখামাখিতে বীর্যপাত হয়ে যাওয়া।
৫. এমন কোনো বস্তু গিলে ফেলা যা সাধারণত খাওয়া হয় না। যেমন কাঠ, লোহা, কাঁচা গম ইত্যাদি।
৬. লোবান বা উদ কাষ্ঠ ইত্যাদির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাক দিয়ে বা কণ্ঠনালীর ভেতরে টেনে নেওয়া; বিড়ি, সিগারেট ও হোক্কা পান করারও একই বিধান।
৭. ভুলে পানাহার করার পর এমনটি ধারণা করে যে, আমার রোজা নষ্ট হয়ে গেছে; অতপর পানাহার করা।
৮. রাত বাকী আছে মনে করে সুবহে সাদেকের পর পানাহার করা।
৯. সূর্য ডুবে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করা। উল্লেখ্য, এসব ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে যায় এবং শুধু রোজা কাজা করতে হয়; কাফফারা আবশ্যক হয় না।
১০. ভুলে নয়, জেনে-বুঝে সুস্থ-সবল অবস্থায়, কোনো ওজর-সমস্যা ব্যতীত দিনের বেলায় পানাহার করলে অথবা স্ত্রী-সঙ্গম করলে, সেই রোজার কাজাও করতে হয় এবং কাফফারাও প্রদান করতে হয়। ‘কাফফারা’ হলো, একটি ক্রীতদাস মুক্তকরণ; অথবা একাধারে ৬০টি রোজা পালন করা। আর যদি রোজা রাখার শক্তি না থাকে, সেক্ষেত্রে ৬০জন মিসকিনকে দু’বেলা পেটপুরে খাবার খাওয়াতে হবে। এ যুগে যেহেতু শরিয়তসম্মত ক্রীতদাস বাস্তবে নেই, সে কারণে কাফফারার ক্ষেত্রে শেষোক্ত দু’টির যেকোনো একটি পালন করতে হবে।

যেসব কারণে রোজা মাকরূহ হয়
১. রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় অপ্রয়োজনে কোনো বস্তু চিবানো অথবা লবণ ইত্যাদি জিহবায় দিয়ে থু থু ফেলে দেওয়া; টুথপেস্ট বা মাজন বা কয়লা দ্বারা দাঁত মাজা বা পরিস্কার করা।
২. সারাদিন গোসল ফরজ অবস্থায় অপবিত্র কাটিয়ে দেওয়া।
৩. একান্ত প্রয়োজন ছাড়া শিঙ্গা লাগানো এবং দূর্বল হয়ে পড়ার ভয় থাকলে নিজ শরীর থেকে অন্যের জন্য রক্তদান করা মাকরূহ; কিন্তু তাতে রোজা নষ্ট হয় না।
৪. রোজা অবস্থায় গীবত করা তথা কারও অবর্তমানে তার দোষ বর্ণনা করা রোজার ক্ষেত্রে মাকরূহ বটে; কিন্তু এ গীবত কর্মটি অন্যতম একটি হারাম কাজ ও কবিরা গোনাহ বটে। মাহে রমজানে এর পাপ আরও অনেক গুণ বেড়ে যায়।
৫. রোজা অবস্থায় ঝগড়া-বিবাদ, গালি-গালাজ করা; হোক তা কোনো মানুষের সঙ্গে বা কোনো জীবজন্তুকে বা কোনো প্রাণহীন জড় বস্তুকে; এসব কারণেও রোজা মাকরূহ হয়ে যায়।

যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয় না, মাকরূহও হয় না
১. মিসওয়া করা।
২. মাথায় বা মোচ-দাড়িতে তেল ব্যবহার করা।
৩. চোখে ঔষধ বা সুরমা দেওয়া।
৪. আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৫. গরম ও পিপাসার কারণে গোসল করা।
৬. যেকোনো রকম ইনজেকশন বা টিকা দেওয়া।
৭. ভুলবশত পানাহার করা।
৮. অনিচ্ছাবশত গলায় ধোঁয়া বা ধুলোবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করা।
৯. কানে পানি দেওয়া (২/১ ফোটা) অথবা অনিচ্ছাকৃত প্রবেশ করা।
১০. অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়া।
১১. শোয়া অবস্থায় স্বপ্নদোষ হয়ে যাওয়া।
১২. দাঁত হতে রক্ত বের হওয়া এবং তা গলা অতিক্রম না করা।
১৩. ঘুমের মধ্যে বা সহবাসের কারণে রাতে গোসল ফরজ হয়েছিল, অথচ সুবহে সাদেকের পূর্বে গোসল করা হয়নি; আর এমতাবস্থায় রোজার নিয়ত করে নেওয়া হয়েছে; তাতেও রোজার কোনো ক্ষতি নেই।

লেখক : মুফতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, গবেষণা বিভাগ।

;

অশ্লীলতামুক্ত সাইবার গঠনে ১৯ বছর বয়সী আবদুল রহমানের স্বপ্ন



ফাতেমা বিনতে আশরাফ
রাইডার্স ক্রিয়েশন ও রাইডার্স মার্টের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল রহমান, ছবি : সংগৃহীত

রাইডার্স ক্রিয়েশন ও রাইডার্স মার্টের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল রহমান, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের জীবন এখন অনলাইননির্ভর। ছোট থেকে বড় সবধরনের কাজ এখন অনলাইনে করা যায়। এ জন্য আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিনিয়ত নানা সেবা নিচ্ছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিব্রতকর বিষয় হলো- অনলাইনের বিস্তৃত অঙ্গনজুড়ে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। তাই মাদরাসাশিক্ষার্থী আবদুল রহমান (Abdul Rahman) স্বপ্ন দেখেন এ অঙ্গনকে অশ্লীলতামুক্ত করে গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে তিনি কাজও শুরু করেছেন।

আবদুল রহমান (Abdul Rahman) রাইডার ভাউ অফিসিয়াল, রাইডার্স ক্রিয়েশন এবং রাইডার্স মার্টের প্রতিষ্ঠাতা। এটি বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত আইটি সলিউশন কোম্পানি। তার তীক্ষ্ণ ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং উচ্চমানের পরিষেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, তিনি সফলভাবে কোম্পানিটিকে আইটি সমাধান এবং পরিষেবা প্রদানকারী একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলেছেন।

পাশাপাশি তিনি আরও একটি নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। নাম রাইডার্স ফাউন্ডেশন। খুব শিগগির-ই এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আবদুল রহমান। তার উদ্দেশ্য, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের অসহায় ও দুস্থ মানুষের সেবা করা। অভাবে কেউ কষ্ট না পাক এবং সবার মুখে হাসি থাকুন- এই প্রত্যাশা থেকেই তিনি এটি গড়ে তুলেছেন।

আবদুল রহমান (Abdul Rahman) বেশ কয়েকটি অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন, ছবি : সংগৃহীত

উদ্যোক্তা প্রচেষ্টার পাশাপাশি, আবদুল রহমান (Abdul Rahman) সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষতার জন্যও স্বীকৃত। তিনি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সেক্টরে কাজ করছেন এবং তার অশ্লীলতামুক্ত অনলাইন গড়ার বিষয়টিসহ তার এসব কাজকর্ম নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে আবদুল রহমানের সুগভীর জ্ঞান তাকে বিশ্বব্যাপী সাইবার অঙ্গনে কাঙ্ক্ষিত স্পিকার হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে।

ব্যবসায়িক উদ্যোগের পাশাপাশি আবদুল রহমান তার এ অঙ্গনের মানুষদের সহযোগিতার জন্যও নিবেদিত। তিনি বেশ কয়েকটি অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন এবং অন্যদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে তার দক্ষতা এবং জ্ঞান ব্যবহার করে প্রশংসিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

আবদুল রহমান একজন বাংলাদেশী উদ্যোক্তা, সোশ্যাল মিডিয়া সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ। পিরোজপুরে তার জন্ম। তিনি তার কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্ভাবনের প্রতি আবেগের মাধ্যমে আইটি এবং সোশ্যাল মিডিয়া শিল্পে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

আবদুল রহমানের কে.এম. লতীফ ইনস্টিটিউশন থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট রয়েছে। একই স্কুল থেকে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট, যেখানে তিনি বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত করেছেন। বর্তমানে তিনি মাদারীপুর ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার থেকে কোরআন-হাদিসে স্নাতকোত্তর করছেন।

সামগ্রিকভাবে আবদুল রহমান তার বুদ্ধিমত্তা, দৃঢ়তা এবং উদ্ভাবনের প্রতি তার যে আবেগ, তা দিয়ে সমাজে অবদান রাখতে চান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি; অশ্লীলতামুক্ত অনলাইন গড়ে আগামী দিনগুলোতে সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার স্বপ্ন দেখেন।

;

রমজানে দশ কাজ থেকে বিরত থাকা



আহমদ যাকারিয়া, অতিথি লেখক, ইসলাম
রোজা একটি ফরজ ইবাদত, ছবি : সংগৃহীত

রোজা একটি ফরজ ইবাদত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের মুসলমানরা পবিত্র রমজান মাস পালন করছেন। রোজা একটি ফরজ ইবাদত। এই ইবাদতটি যেনো সুন্দরভাবে আদায় করা যায়, এ জন্য সবার সর্বাত্মক চেষ্টা করা দরকার। ইসলামি স্কলারদের মতে, রমজানের ১০টি কাজ থেকে বিরত থাকা দরকার; তাহলে রোজা হবে পরিপূর্ণ। ওই দশ কাজ হলো-

সেহরি না খাওয়া : অনেকে সেহরি খান না, অনেকে আবার আগ রাতে খেয়েই শুয়ে পড়েন। এটা সুন্নতের পরিপন্থী। ইসলামে সেহরি খাওয়ার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে, কারণ ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সেহরি খায় না। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবিদের (ইহুদি ও খ্রিস্টান) রোজার মাঝে পার্থক্য হলো- সেহরি গ্রহণ।’ -সহিহ মুসলিম : ২৬০৪

বিলম্বে ইফতার করা : রোজার পূর্ণ সওয়াব পাওয়ার জন্য বিলম্বে ইফতার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সাহাবি হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, হরজত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দীন বিজয়ী হবে, যে যাবৎ মানুষ দ্রুত ইফতার করবে। কারণ, ইহুদি-নাসারারা তা বিলম্বে করে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২৩৫৫

লাইলাতুল কদর তালাশ না করা : পবিত্র রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ -সুরা কদর : ৪

হরজত রাসুলুল্লাহ (সা.) (রমজানের) শেষ দশদিন লাইলাতুল কদর তালাশ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ।’ -সহিহ বোখারি : ২০২০

মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা : একজন রোজাদার মিথ্যা কথা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না, তার রোজা রেখে শুধু পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ -সহিহ বোখারি : ৬০৫৭

সুন্নত ত্যাগ করা : আমাদের প্রত্যেকটি আমল হবে সুন্নত মোতাবেক। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন অনেক রোজাদার আছে, যার রোজা থেকে প্রাপ্তি হচ্ছে শুধু ক্ষুধা ও তৃষ্ণা। তেমনি কিছু নামাজি আছে যাদের নামাজ কোনো নামাজই হচ্ছে না। শুধু যেন রাত জাগছে।’ -মুসনাদে আহমাদ : ৮৮৪৩

দান-সদকা না করা : পুণ্য অর্জনের মাস রমজান। এ মাসে রোজা-নামাজ ইত্যাদির পাশাপাশি দান-সদকার মাধ্যমেও ফজিলত অর্জন করতে হবে। বেশি বেশি দান-সদকা করার চেষ্টা করতে হবে। এতিম, বিধবা ও গরীব-মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তাদের জন্য হিসাব করে এ মাসে জাকাত দেওয়া উত্তম। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল, আর রমজানে তার এ দানশীলতা আরও বেড়ে যেত।’ -সহিহ বোখারি : ১৯০২

অপচয় ও অপব্যয় করা : প্রয়োজনের অতিরিক্ত অপচয় করা থেকে বিরত থাকা। অনেকে রমজান মাসে ইফতার ও সেহরিতে এমন খরচ করেন- যার প্রয়োজন নেই। কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘হে বনী আদম! তোমরা প্রতি নামাজে তোমাদের সাজসজ্জা পরিধান করো এবং খাও, পান করো ও অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ -সুরা আরাফ : ৩১

তাড়াহুড়ো করে কোরআন খতম করা : শুধু খতম দেওয়া বা পড়া শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন মাজিদ তেলাওয়াতা করলে কোরআনের হক আদায় হয় না। বিশেষ করে খতম তারাবিতে খতম শেষ করা বা ২০ রাকাত তারাবি শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন পড়া। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোরআন সুন্দর উচ্চারণে পড়ে না, সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয়।’ -সহিহ বোখারি : ৭৫২৭

ফরজ নামাজ আদায়ে অলসতা করা : রোজা পালনের সঙ্গে সঙ্গে ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। অনেকে ফরজ নামাজ আদায়ে উদাসীন থাকেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

দুনিয়ার ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা: ইবাদত-বন্দেগি মাস রমজানে বেশি বেশি আমলের কথা রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই ব্যস্ত থাকি দুনিয়ার নানা কাজে। এটা কাম্য নয়। এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া-দরুদ ও তওবা-ইস্তেগফার করা উচিত।

;