‘ধর্মীয় বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য একটি সর্বোচ্চ অথরিটি থাকা প্রয়োজন’

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি প্রসঙ্গে আলেমদের অভিমত, ছবি: বার্তা২৪.কম

বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি প্রসঙ্গে আলেমদের অভিমত, ছবি: বার্তা২৪.কম

‘বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগের দাবি’র প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদ, গবেষক, আলেম-উলামা ও ইসলামবিষয়ক জনপ্রিয় কয়েকজন লেখকের মতামত। ‘ফিকহে ইসলামিতে বিশেষজ্ঞ মুফতিদের নিয়ে কেন্দ্রীয় ফতোয়া বোর্ড গঠন এবং ইলম ও আমলে জ্যেষ্ঠ মনীষীকে ‘প্রধান মুফতি’ নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার চুম্বকাংশ পাঠকদের জন্য-

মাওলানা জাকারিয়া নোমান
সহকারী পরিচালক, মেখল মাদরাসা, চট্টগ্রাম
বর্তমান সময় একটা সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড গঠন কতটা জরুরি তা আমাদের বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে ছিলাম আমরা সিদ্ধান্তহীন। বর্তমানের কঠিন এই সময়ে কাদিয়ানি এবং শিয়াদের বাদ দিয়ে সব উপদল থেকে আহলে ইলম মুরব্বিদের নিয়ে একটা সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড গঠন এবং একজন মুফতিয়ে আজম নিযুক্ত করা অত্যন্ত প্রয়োজন মনে করছি। এটা সরকার কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে, তবে কোনোভাবেই সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবে না। এ পদের জন্য কোনো বেতন-ভাতা থাকবে না। কেউ কোনো বেতন নেব না। তারা জাতির দুর্দিনে একটা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত কিংবা মতামত জাতির সামনে উপস্থাপন করবে। এটা হাইয়াতুল উলইয়ার ব্যাবস্থাপনায় থাকবে। তাদের জন্য হাইয়াতুল উলইয়া একটা আলাদা জায়গায় অফিসের ব্যবস্থা করবে। সর্বোচ্চ মুফতি বোর্ড না থাকায় সবাই যে যার অবস্থান থেকে ফতোয়া দিচ্ছে। ফলে দেশে চরম বিশৃঙ্খলা হচ্ছে এবং এর দ্বারা সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে, আলেমদের প্রতি আস্থাহীন হয়ে উঠছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় মানুষ পুরোপুরি আলেমদের প্রতি আস্থাহীন হয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তখন আলেম বা বক্তা নামধারী মূর্খরা আর ফতোয়া দেওয়ার সাহস করবে না। যারা আজেবাজে ফতোয়া দেবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে সহজ হবে। এর দ্বারা দেশে ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। মুফতি আজম যাকে নির্ধারণ করা হবে, তিনি অবশ্যই সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকবেন। তাকে সর্বজন গ্রহণযোগ্য হতে হবে এবং এই পদটা দেশের সর্বোচ্চ বেসরকারি পদ হতে হবে। এভাবে একটি ফতোয়া বোর্ড গঠন করলে আশা করি দেশের মধ্যে ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

মুফতি মুহাম্মদ আমিমুল ইহসান
গবেষক ও লেখক
ফতোয়া ইসলামি শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুসলিম উম্মাহ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে ফতোয়ার মুখাপেক্ষী হয়। ফতোয়া জীবন সমস্যার সমাধান পেশ করে। ফতোয়া প্রদানের কাজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে চল্লিশটি মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করলে তিনি পাঁচটির উত্তর প্রদান করতেন। একজন মুফতি আল্লাহ ও রাসূলের প্রতিনিধি হিসেবে যুগ-সমস্যার সমাধান পেশ করেন। আধুনিক সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন সময় মুফতিদের বেগ পেতে হয়। এ লক্ষ্যে মুফতিদের সমন্বিত বোর্ড থাকা প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

১৯৮১ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফিকহ একাডেমি জেদ্দা বিভিন্ন দেশের মুফতিদের সমন্বয়ে ফিকহি নাওয়াজেল ও আধুনিক সমস্যাদির সমাধান দিয়ে আসছে। আধুনিক অর্থনীতি বিষয়ক সমস্যার সমাধানে বিশ্ববরেণ্য মুফতি ও স্কলারদের নেতৃত্বে একাউন্টিং এন্ড অডিটিং অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক ফিন্যান্সিয়্যাল ইন্সটিটিউটস (Accounting and Auditing Organization for Islamic Financial Institutions. AAOIFI) বাহরাইন কাজ করছে। ইসলামিক ফিকহ একাডেমি ইন্ডিয়া আধুনিক ফিকহি সমস্যার সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। দারুল উলূম করাচি আর মুফতি রফি উসমানি ও মুফতি তাকি উসমানির কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশ ফতোয়া ও দ্বীন চর্চার উর্বরক্ষেত্র। মাদরাসাকেন্দ্রিক ইফতাগুলো মুসলিম উম্মাহর উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন সময় এসেছে একটি কেন্দ্রীয় মুফতি বোর্ড গঠন করার। যে বোর্ডে একজন গ্র্যান্ড মুফতি থাকবেন। তিনি বোর্ডের সকল সদস্যদের মতামত নিয়ে ফতোয়া প্রদান করবেন। এই বোর্ড থাকবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। তবে এটা কিভাবে গঠন হবে, কারা এর সদস্য হবেন, এটা কি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে চলবে, এ বোর্ডের দফতর কোথায় হবে ও তা পরিচালনার অর্থের উৎস কি হবে এ গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। পর্যালোচনা করতে হবে।

এ বোর্ড ও গ্র্যান্ড মুফতি কারো রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার হবে না। মিসরের গ্র্যান্ড মুফতি সরকারি অনেক অনৈতিক কাজের বৈধতা দিয়েছেন যা সকলের জানা। বস্তুত বিষয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই শীর্ষস্থানীয় মুফতি ও ইসলামি স্কলারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

মুফতি মাহফূযুল হক
মাদরাসা শিক্ষক ও লেখক
বাংলা ভাষায় বড় মুফতি, আরবি ভাষায় আল মুফতি আল আম, ইংরেজি ভাষায় গ্র্যান্ড মুফতি। দাপ্তরিকভাবে আন্তর্জাতিক ভাষা আরবিতে নাম হতে পারে- আল মুফতি আল আম। ইসলাম মুক্ত জ্ঞান চর্চার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আর মুক্ত জ্ঞান চর্চার অনিবার্য বাস্তবতা মতপার্থক্য। ইসলাম যোগ্য জ্ঞানীদের মতপার্থক্যের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। তাইতো জ্ঞান চর্চায় মুফতি সাহাবাদের মাঝেও বিস্তর মতপার্থক্য হয়েছে। সাহাবা পরবর্তী যুগেও ফকিহদের মতপার্থক্যের ভেতর দিয়েই ইসলাম এগিয়ে চলেছে। বহুমতের মধ্যে সাধারণ জনতা নিজ নিজ এলাকার শ্রদ্ধেয় মান্যবর ফকিহকে অনুসরণ করে থাকেন। আর শাসন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হুকুমত বা সালতানাত অনুসরণ করে থাকে রাজফকিহকে। এটাই মুসলিমদের অনুসৃত ঐতিহ্য।

বর্তমান সময়ে এ দেশে সাধারণ বিষয়ে সাধারণ জনতা ধর্ম পরিপালনে উল্লেখযোগ্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে না। পূর্বের মতোই নিজেদের পছন্দের মুফতিকে অনুসরণ করে চলছে। কিন্তু সরকার ও আদালত বর্তমান সময়গুলোতে শাসন সংশ্লিষ্ট দ্বীনী বিষয়গুলো প্রায়ই সমস্যায় পড়ছে। এক্ষেত্রে আমরা দেখছি, সরকার ও আদালত কয়েকজন মুফতি থেকে মত নিয়ে নিজেরা সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অথচ এটা চরম ভুল পদ্ধতি। বহু মুফতির মত সমন্বয় করতে পারে কেবলমাত্র আরেকজন বিজ্ঞ মুফতি। এ কাজ কোনোভাবেই একজন অমুফতির নয়।

তাই স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রের নিজস্ব একজন আল মুফতি আল আম দরকার। যিনি সাংবিধানিক স্বাধীন ক্ষমতাসম্পন্ন হবেন। সরকার, আদালত ও প্রশাসন দ্বীনী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার মত গ্রহণ করতে সাংবিধানিকভাবে বাধ্য থাকবেন। এতে ধর্মীয় কাজে সরকার, আদালত ও প্রশাসনে গতি আসবে। এ জন্য দরকার এমন ব্যক্তিকে মনোনীত করতে হবে যিনি জীবনের দীর্ঘ সময় ফতোয়ার কাজে নিয়োজিত আছেন। কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে অতীতে কখনও সম্পৃক্ত ছিলেন না। দেশের অধিকাংশ ফতোয়া বিভাগ তাকে সমিহ করে। আল মুফতি আল আমের কোনো মেয়াদ থাকবে না।

আল মুফতি আল আম বানানোর উদ্দেশ্য মতপার্থক্যের চর্চাকে নিষিদ্ধ ও বন্ধ করা হবে না। বরং উদ্দেশ্য হবে, সরকার ও আদালতের জন্য একটি মত গ্রহণের সহজ ঠিকানা।

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
লেখক, আলেম ও কলেজ শিক্ষক
আমরা জানি, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গ্র্যান্ড মুফতির পদ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অমুসলিম দেশেও গ্র্যান্ড মুফতির পদ রয়েছে। আমরা যদি সৌদি আরবের কথাই বলি, সেখানে গ্র্যান্ড মুফতির পদটি সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃত্বধারী পদ। ইসলামি আইনের কোনো বিষয়ে ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে ফতোয়া দেওয়ার চূড়ান্ত এখতিয়ার গ্র্যান্ড মুফতির হাতে ন্যাস্ত। ১৯৫৩ সালে বাদশাহ আবদুল আজিজ গ্র্যান্ড মুফতির পদ সৃষ্টি করেন।

পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশেও গ্র্যান্ড মুফতির পদ তৈরির দাবি বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। বিশেষ করে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে কয়েকটি জরুরি দ্বীনী বিষয়ে উলামায়ে কেরামের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেওয়ায় এ দাবি আরও জোরালো হয়েছে।

আমি মনে করি, দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য দেশে গ্র্যান্ড মুফতির পদ তৈরি করা খুবই প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি জটিল। কেননা আমাদের দেশের উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত। এছাড়া যিনি গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে নিযুক্ত হবেন, তিনি বিভিন্ন ভয়ভীতি ও রাজনৈতিক ও ধর্মীয় চাপের ঊর্ধ্বে উঠে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত প্রদান করতে পারবেন কিনা- এ বিষয়টিও প্রশ্নসাপেক্ষ। তারপরও সকল নেতিবাচক আশঙ্কা দূর করে যদি গ্র্যান্ড মুফতির পদ সৃষ্টি করা যায়, তবে দ্বীনী বিষয়ে অনেক অনাকাঙ্খিত বিভ্রান্তি হতে দেশের মুসলমান রক্ষা পাবে। এক্ষেত্রে গ্র্যান্ড মুফতির পদটি হতে হবে সম্পূর্ণ সাংবিধানিক।

মুহাম্মাদ এহসানুল হক
শিক্ষক, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
আমাদের দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। ইসলামকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। ব্যক্তিগত জীবনের ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে না পারলেও ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ঘাটতি নেই। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি কাজ কিভাবে সম্পাদন করতে হবে এ বিষয়ে ইসলামের সুনির্দিষ্ট নিদের্শনা রয়েছে। অতীতে ধর্মীয় এসব নির্দেশনা জানার মাধ্যম অনেকটা সীমিত ছিলো। কিন্তু বর্তমানে সেটা মাদরাসা, মসজিদ ও ওয়াজ মাহফিল থেকে আরও অনেক দূর বিস্তৃত হয়েছে। গণমাধ্যমগুলোও এখন কিছুটা এদিকে ঝুঁকেছে। অনলাইনেও এখন অনেক ধরনের ধর্মীয় আলোচনা পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিষয় জানার আগ্রহ আগের তুলনা অনেক বেশি।

আমরা অনেকেই হয়তো জানি, ধর্মীয় বিষয়ে আলেমদের কিছু মতবিরোধ আছে। এই মতবিরোধগুলো সাধারণ মানুষের সামনে আগে ততোটা আসতো না, বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়ার কারণে যতোটা আসছে। আর সাধারণ মানুষ ধর্মীয় বিষয়ে দ্বিমত শুনতে চায় না। এদেশের মানুষ যেহেতু একই মাজহাবের অনুসারী, তাই তাদের সামনে বিরোধপূর্ণ বক্তব্য আসা উচিতও না। সর্বসম্মত অনুসরণীয় একটি বক্তব্য থাকা দরকার।

বর্তমানে সারা পৃথিবী করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় আক্রান্ত। এমতাবস্থায় মসজিদে জামাত, জুমা ও তারাবি ইত্যাদি বিষয়ে মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে। যা কখনোই কাম্য ছিলো না। ধর্মীয় এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে মতবিরোধ কিভাবে এড়ানো যায় সেই পথ খোঁজা উচিত। অনেকেই মনে করছেন, অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও একজন গ্র্যান্ড মুফতি থাকা দরকার। কিন্তু সেখানে প্রশ্ন থেকে যায়, কে হবেন গ্র্যান্ড মুফতি? সেটা কিভাবে নিধার্রিত হবে? সেটা যদি সরকারি কোনো পদ হয়, অথবা সম্পূর্ণ সরকারি বলয়ের মধ্যেই থাকে তাহলে সেই ফতোয়া সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এজন্য আমি মনে করি দেশের শীর্ষস্থানীয় মুফতিদের সমন্বয়ে একটি মুফতি বোর্ড থাকা প্রয়োজন।

ইসলামি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় দেশের শীর্ষ আলেমগণ উদ্যোগে নিতে পারেন। অথবা কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘হাইয়াতুল উলইয়া’ একটি মুফতি বোর্ড গঠন করতে পারে। সেই মুফতি বোর্ডের একজন প্রধান থাকতে পারেন। ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামতের জন্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় গ্রহণযোগ্য একটি অথরিটি থাকা এখন অপরিহার্য বলে মনে করি।

মুহাম্মদ জসিমুদ্দিন
তরুণ আলেম ও লেখক
সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ নিয়োগের আওয়াজ উঠেছে। ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ হলো রাষ্ট্রকর্তৃক নিযুক্ত সর্বোচ্চ ধর্মীয় পদ। যিনি রাষ্ট্রের মুসলমান নাগরিকদের ধর্মীয় বিধিমালা আইন-কানুন সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকারের উপায় নেই। কেননা যেসব বিষয়ে কোরআন-হাদিসে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো বিধান বর্ণিত হয়নি, সেসব বিষয়ে মুফতিরা গবেষণার মাধ্যমে সমাধান বের করেন। এক্ষেত্রে বাস্তবতার পর্যবেক্ষণ ও দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সকল মুফতির ফতোয়া এক রকম হয় না। যার ফলে দেখা যায় এসব বিষয়কে উপলক্ষ করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এজন্য নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকার সুরক্ষিত করার জন্য রাষ্ট্রকর্তৃক নিযুক্ত একজন গ্র্যান্ড মুফতির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। যিনি ফতোয়া বোর্ড কিংবা জেলাভিত্তিক মুফতিদের সঙ্গে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন।

তবে এই দাবিটি আপাতদৃষ্টিতে কল্যাণকর মনে হলেও আমাদের দেশীয় রাজনীতি ও সামাজিক অবকাঠামোয় হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কেননা গ্র্যান্ড মুফতির কর্মপরিধি স্বাধীন থাকার কথা বলা হলেও পরবর্তীতে যে দলীয়করণ বা সরকারিকরণ হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তখন মানুষের ধর্মীয় মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে এবং সুযোগ তৈরি হবে সরকারের মর্জিমতো ফতোয়া চাপিয়ে দেওয়ার। যার ফলে বর্তমান বিতর্কের চেয়ে পরিস্থিতি আরও নৈরাজ্যের দিকে এগিয়ে যাবে।

তাছাড়া সর্বপ্রথম যে বিষয়টি সামনে আসে তা হলো, ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ নিয়োগের প্রক্রিয়া। কঠোরভাবে ধর্ম পালনকারী আমাদের এই দেশে দল-মত, আদর্শ ও তরিকার ঊর্ধ্বে সর্বজনমান্য একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রাজ্ঞ মুফতি নির্বাচন করা শুধু কঠিন নয় বরং অসম্ভব ব্যাপার। এছাড়া নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয়করণ, মাসলাক ও তরিকার পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি অস্বীকারের সুযোগ নেই। এজন্য আপাতদৃষ্টিতে ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ নিয়োগের বিষয়টি কল্যাণকর মনে হলেও পরবর্তীতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাটাই প্রবল।

আরও পড়ুন
বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগের দাবি জোরালো হচ্ছে

‘গ্র্যান্ড মুফতির পদ সৃষ্টি সময়ের দাবি’

‘সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড গঠন জরুরি’