‘ধর্মীয় বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য একটি সর্বোচ্চ অথরিটি থাকা প্রয়োজন’



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি প্রসঙ্গে আলেমদের অভিমত, ছবি: বার্তা২৪.কম

বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি প্রসঙ্গে আলেমদের অভিমত, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগের দাবি’র প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদ, গবেষক, আলেম-উলামা ও ইসলামবিষয়ক জনপ্রিয় কয়েকজন লেখকের মতামত। ‘ফিকহে ইসলামিতে বিশেষজ্ঞ মুফতিদের নিয়ে কেন্দ্রীয় ফতোয়া বোর্ড গঠন এবং ইলম ও আমলে জ্যেষ্ঠ মনীষীকে ‘প্রধান মুফতি’ নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার চুম্বকাংশ পাঠকদের জন্য-

মাওলানা জাকারিয়া নোমান
সহকারী পরিচালক, মেখল মাদরাসা, চট্টগ্রাম
বর্তমান সময় একটা সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড গঠন কতটা জরুরি তা আমাদের বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে ছিলাম আমরা সিদ্ধান্তহীন। বর্তমানের কঠিন এই সময়ে কাদিয়ানি এবং শিয়াদের বাদ দিয়ে সব উপদল থেকে আহলে ইলম মুরব্বিদের নিয়ে একটা সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড গঠন এবং একজন মুফতিয়ে আজম নিযুক্ত করা অত্যন্ত প্রয়োজন মনে করছি। এটা সরকার কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে, তবে কোনোভাবেই সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবে না। এ পদের জন্য কোনো বেতন-ভাতা থাকবে না। কেউ কোনো বেতন নেব না। তারা জাতির দুর্দিনে একটা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত কিংবা মতামত জাতির সামনে উপস্থাপন করবে। এটা হাইয়াতুল উলইয়ার ব্যাবস্থাপনায় থাকবে। তাদের জন্য হাইয়াতুল উলইয়া একটা আলাদা জায়গায় অফিসের ব্যবস্থা করবে। সর্বোচ্চ মুফতি বোর্ড না থাকায় সবাই যে যার অবস্থান থেকে ফতোয়া দিচ্ছে। ফলে দেশে চরম বিশৃঙ্খলা হচ্ছে এবং এর দ্বারা সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে, আলেমদের প্রতি আস্থাহীন হয়ে উঠছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় মানুষ পুরোপুরি আলেমদের প্রতি আস্থাহীন হয়ে যাবে।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তখন আলেম বা বক্তা নামধারী মূর্খরা আর ফতোয়া দেওয়ার সাহস করবে না। যারা আজেবাজে ফতোয়া দেবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে সহজ হবে। এর দ্বারা দেশে ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। মুফতি আজম যাকে নির্ধারণ করা হবে, তিনি অবশ্যই সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকবেন। তাকে সর্বজন গ্রহণযোগ্য হতে হবে এবং এই পদটা দেশের সর্বোচ্চ বেসরকারি পদ হতে হবে। এভাবে একটি ফতোয়া বোর্ড গঠন করলে আশা করি দেশের মধ্যে ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

মুফতি মুহাম্মদ আমিমুল ইহসান
গবেষক ও লেখক
ফতোয়া ইসলামি শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুসলিম উম্মাহ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে ফতোয়ার মুখাপেক্ষী হয়। ফতোয়া জীবন সমস্যার সমাধান পেশ করে। ফতোয়া প্রদানের কাজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে চল্লিশটি মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করলে তিনি পাঁচটির উত্তর প্রদান করতেন। একজন মুফতি আল্লাহ ও রাসূলের প্রতিনিধি হিসেবে যুগ-সমস্যার সমাধান পেশ করেন। আধুনিক সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন সময় মুফতিদের বেগ পেতে হয়। এ লক্ষ্যে মুফতিদের সমন্বিত বোর্ড থাকা প্রয়োজন।

১৯৮১ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফিকহ একাডেমি জেদ্দা বিভিন্ন দেশের মুফতিদের সমন্বয়ে ফিকহি নাওয়াজেল ও আধুনিক সমস্যাদির সমাধান দিয়ে আসছে। আধুনিক অর্থনীতি বিষয়ক সমস্যার সমাধানে বিশ্ববরেণ্য মুফতি ও স্কলারদের নেতৃত্বে একাউন্টিং এন্ড অডিটিং অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক ফিন্যান্সিয়্যাল ইন্সটিটিউটস (Accounting and Auditing Organization for Islamic Financial Institutions. AAOIFI) বাহরাইন কাজ করছে। ইসলামিক ফিকহ একাডেমি ইন্ডিয়া আধুনিক ফিকহি সমস্যার সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। দারুল উলূম করাচি আর মুফতি রফি উসমানি ও মুফতি তাকি উসমানির কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশ ফতোয়া ও দ্বীন চর্চার উর্বরক্ষেত্র। মাদরাসাকেন্দ্রিক ইফতাগুলো মুসলিম উম্মাহর উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন সময় এসেছে একটি কেন্দ্রীয় মুফতি বোর্ড গঠন করার। যে বোর্ডে একজন গ্র্যান্ড মুফতি থাকবেন। তিনি বোর্ডের সকল সদস্যদের মতামত নিয়ে ফতোয়া প্রদান করবেন। এই বোর্ড থাকবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। তবে এটা কিভাবে গঠন হবে, কারা এর সদস্য হবেন, এটা কি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে চলবে, এ বোর্ডের দফতর কোথায় হবে ও তা পরিচালনার অর্থের উৎস কি হবে এ গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। পর্যালোচনা করতে হবে।

এ বোর্ড ও গ্র্যান্ড মুফতি কারো রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার হবে না। মিসরের গ্র্যান্ড মুফতি সরকারি অনেক অনৈতিক কাজের বৈধতা দিয়েছেন যা সকলের জানা। বস্তুত বিষয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই শীর্ষস্থানীয় মুফতি ও ইসলামি স্কলারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

মুফতি মাহফূযুল হক
মাদরাসা শিক্ষক ও লেখক
বাংলা ভাষায় বড় মুফতি, আরবি ভাষায় আল মুফতি আল আম, ইংরেজি ভাষায় গ্র্যান্ড মুফতি। দাপ্তরিকভাবে আন্তর্জাতিক ভাষা আরবিতে নাম হতে পারে- আল মুফতি আল আম। ইসলাম মুক্ত জ্ঞান চর্চার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আর মুক্ত জ্ঞান চর্চার অনিবার্য বাস্তবতা মতপার্থক্য। ইসলাম যোগ্য জ্ঞানীদের মতপার্থক্যের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। তাইতো জ্ঞান চর্চায় মুফতি সাহাবাদের মাঝেও বিস্তর মতপার্থক্য হয়েছে। সাহাবা পরবর্তী যুগেও ফকিহদের মতপার্থক্যের ভেতর দিয়েই ইসলাম এগিয়ে চলেছে। বহুমতের মধ্যে সাধারণ জনতা নিজ নিজ এলাকার শ্রদ্ধেয় মান্যবর ফকিহকে অনুসরণ করে থাকেন। আর শাসন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হুকুমত বা সালতানাত অনুসরণ করে থাকে রাজফকিহকে। এটাই মুসলিমদের অনুসৃত ঐতিহ্য।

বর্তমান সময়ে এ দেশে সাধারণ বিষয়ে সাধারণ জনতা ধর্ম পরিপালনে উল্লেখযোগ্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে না। পূর্বের মতোই নিজেদের পছন্দের মুফতিকে অনুসরণ করে চলছে। কিন্তু সরকার ও আদালত বর্তমান সময়গুলোতে শাসন সংশ্লিষ্ট দ্বীনী বিষয়গুলো প্রায়ই সমস্যায় পড়ছে। এক্ষেত্রে আমরা দেখছি, সরকার ও আদালত কয়েকজন মুফতি থেকে মত নিয়ে নিজেরা সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অথচ এটা চরম ভুল পদ্ধতি। বহু মুফতির মত সমন্বয় করতে পারে কেবলমাত্র আরেকজন বিজ্ঞ মুফতি। এ কাজ কোনোভাবেই একজন অমুফতির নয়।

তাই স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রের নিজস্ব একজন আল মুফতি আল আম দরকার। যিনি সাংবিধানিক স্বাধীন ক্ষমতাসম্পন্ন হবেন। সরকার, আদালত ও প্রশাসন দ্বীনী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার মত গ্রহণ করতে সাংবিধানিকভাবে বাধ্য থাকবেন। এতে ধর্মীয় কাজে সরকার, আদালত ও প্রশাসনে গতি আসবে। এ জন্য দরকার এমন ব্যক্তিকে মনোনীত করতে হবে যিনি জীবনের দীর্ঘ সময় ফতোয়ার কাজে নিয়োজিত আছেন। কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে অতীতে কখনও সম্পৃক্ত ছিলেন না। দেশের অধিকাংশ ফতোয়া বিভাগ তাকে সমিহ করে। আল মুফতি আল আমের কোনো মেয়াদ থাকবে না।

আল মুফতি আল আম বানানোর উদ্দেশ্য মতপার্থক্যের চর্চাকে নিষিদ্ধ ও বন্ধ করা হবে না। বরং উদ্দেশ্য হবে, সরকার ও আদালতের জন্য একটি মত গ্রহণের সহজ ঠিকানা।

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
লেখক, আলেম ও কলেজ শিক্ষক
আমরা জানি, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গ্র্যান্ড মুফতির পদ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অমুসলিম দেশেও গ্র্যান্ড মুফতির পদ রয়েছে। আমরা যদি সৌদি আরবের কথাই বলি, সেখানে গ্র্যান্ড মুফতির পদটি সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃত্বধারী পদ। ইসলামি আইনের কোনো বিষয়ে ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে ফতোয়া দেওয়ার চূড়ান্ত এখতিয়ার গ্র্যান্ড মুফতির হাতে ন্যাস্ত। ১৯৫৩ সালে বাদশাহ আবদুল আজিজ গ্র্যান্ড মুফতির পদ সৃষ্টি করেন।

পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশেও গ্র্যান্ড মুফতির পদ তৈরির দাবি বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। বিশেষ করে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে কয়েকটি জরুরি দ্বীনী বিষয়ে উলামায়ে কেরামের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেওয়ায় এ দাবি আরও জোরালো হয়েছে।

আমি মনে করি, দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য দেশে গ্র্যান্ড মুফতির পদ তৈরি করা খুবই প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি জটিল। কেননা আমাদের দেশের উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত। এছাড়া যিনি গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে নিযুক্ত হবেন, তিনি বিভিন্ন ভয়ভীতি ও রাজনৈতিক ও ধর্মীয় চাপের ঊর্ধ্বে উঠে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত প্রদান করতে পারবেন কিনা- এ বিষয়টিও প্রশ্নসাপেক্ষ। তারপরও সকল নেতিবাচক আশঙ্কা দূর করে যদি গ্র্যান্ড মুফতির পদ সৃষ্টি করা যায়, তবে দ্বীনী বিষয়ে অনেক অনাকাঙ্খিত বিভ্রান্তি হতে দেশের মুসলমান রক্ষা পাবে। এক্ষেত্রে গ্র্যান্ড মুফতির পদটি হতে হবে সম্পূর্ণ সাংবিধানিক।

মুহাম্মাদ এহসানুল হক
শিক্ষক, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
আমাদের দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। ইসলামকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। ব্যক্তিগত জীবনের ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে না পারলেও ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ঘাটতি নেই। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি কাজ কিভাবে সম্পাদন করতে হবে এ বিষয়ে ইসলামের সুনির্দিষ্ট নিদের্শনা রয়েছে। অতীতে ধর্মীয় এসব নির্দেশনা জানার মাধ্যম অনেকটা সীমিত ছিলো। কিন্তু বর্তমানে সেটা মাদরাসা, মসজিদ ও ওয়াজ মাহফিল থেকে আরও অনেক দূর বিস্তৃত হয়েছে। গণমাধ্যমগুলোও এখন কিছুটা এদিকে ঝুঁকেছে। অনলাইনেও এখন অনেক ধরনের ধর্মীয় আলোচনা পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিষয় জানার আগ্রহ আগের তুলনা অনেক বেশি।

আমরা অনেকেই হয়তো জানি, ধর্মীয় বিষয়ে আলেমদের কিছু মতবিরোধ আছে। এই মতবিরোধগুলো সাধারণ মানুষের সামনে আগে ততোটা আসতো না, বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়ার কারণে যতোটা আসছে। আর সাধারণ মানুষ ধর্মীয় বিষয়ে দ্বিমত শুনতে চায় না। এদেশের মানুষ যেহেতু একই মাজহাবের অনুসারী, তাই তাদের সামনে বিরোধপূর্ণ বক্তব্য আসা উচিতও না। সর্বসম্মত অনুসরণীয় একটি বক্তব্য থাকা দরকার।

বর্তমানে সারা পৃথিবী করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় আক্রান্ত। এমতাবস্থায় মসজিদে জামাত, জুমা ও তারাবি ইত্যাদি বিষয়ে মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে। যা কখনোই কাম্য ছিলো না। ধর্মীয় এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে মতবিরোধ কিভাবে এড়ানো যায় সেই পথ খোঁজা উচিত। অনেকেই মনে করছেন, অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও একজন গ্র্যান্ড মুফতি থাকা দরকার। কিন্তু সেখানে প্রশ্ন থেকে যায়, কে হবেন গ্র্যান্ড মুফতি? সেটা কিভাবে নিধার্রিত হবে? সেটা যদি সরকারি কোনো পদ হয়, অথবা সম্পূর্ণ সরকারি বলয়ের মধ্যেই থাকে তাহলে সেই ফতোয়া সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এজন্য আমি মনে করি দেশের শীর্ষস্থানীয় মুফতিদের সমন্বয়ে একটি মুফতি বোর্ড থাকা প্রয়োজন।

ইসলামি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় দেশের শীর্ষ আলেমগণ উদ্যোগে নিতে পারেন। অথবা কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘হাইয়াতুল উলইয়া’ একটি মুফতি বোর্ড গঠন করতে পারে। সেই মুফতি বোর্ডের একজন প্রধান থাকতে পারেন। ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামতের জন্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় গ্রহণযোগ্য একটি অথরিটি থাকা এখন অপরিহার্য বলে মনে করি।

মুহাম্মদ জসিমুদ্দিন
তরুণ আলেম ও লেখক
সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ নিয়োগের আওয়াজ উঠেছে। ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ হলো রাষ্ট্রকর্তৃক নিযুক্ত সর্বোচ্চ ধর্মীয় পদ। যিনি রাষ্ট্রের মুসলমান নাগরিকদের ধর্মীয় বিধিমালা আইন-কানুন সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকারের উপায় নেই। কেননা যেসব বিষয়ে কোরআন-হাদিসে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো বিধান বর্ণিত হয়নি, সেসব বিষয়ে মুফতিরা গবেষণার মাধ্যমে সমাধান বের করেন। এক্ষেত্রে বাস্তবতার পর্যবেক্ষণ ও দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সকল মুফতির ফতোয়া এক রকম হয় না। যার ফলে দেখা যায় এসব বিষয়কে উপলক্ষ করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এজন্য নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকার সুরক্ষিত করার জন্য রাষ্ট্রকর্তৃক নিযুক্ত একজন গ্র্যান্ড মুফতির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। যিনি ফতোয়া বোর্ড কিংবা জেলাভিত্তিক মুফতিদের সঙ্গে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন।

তবে এই দাবিটি আপাতদৃষ্টিতে কল্যাণকর মনে হলেও আমাদের দেশীয় রাজনীতি ও সামাজিক অবকাঠামোয় হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কেননা গ্র্যান্ড মুফতির কর্মপরিধি স্বাধীন থাকার কথা বলা হলেও পরবর্তীতে যে দলীয়করণ বা সরকারিকরণ হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তখন মানুষের ধর্মীয় মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে এবং সুযোগ তৈরি হবে সরকারের মর্জিমতো ফতোয়া চাপিয়ে দেওয়ার। যার ফলে বর্তমান বিতর্কের চেয়ে পরিস্থিতি আরও নৈরাজ্যের দিকে এগিয়ে যাবে।

তাছাড়া সর্বপ্রথম যে বিষয়টি সামনে আসে তা হলো, ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ নিয়োগের প্রক্রিয়া। কঠোরভাবে ধর্ম পালনকারী আমাদের এই দেশে দল-মত, আদর্শ ও তরিকার ঊর্ধ্বে সর্বজনমান্য একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রাজ্ঞ মুফতি নির্বাচন করা শুধু কঠিন নয় বরং অসম্ভব ব্যাপার। এছাড়া নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয়করণ, মাসলাক ও তরিকার পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি অস্বীকারের সুযোগ নেই। এজন্য আপাতদৃষ্টিতে ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ নিয়োগের বিষয়টি কল্যাণকর মনে হলেও পরবর্তীতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাটাই প্রবল।

আরও পড়ুন
বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগের দাবি জোরালো হচ্ছে

‘গ্র্যান্ড মুফতির পদ সৃষ্টি সময়ের দাবি’

‘সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড গঠন জরুরি’

   

ঈমানের স্বাদ ও মিষ্টতা কী?



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ঈমানের স্বাদ সবাই আস্বাদন করতে পারে না, ছবি : সংগৃহীত

ঈমানের স্বাদ সবাই আস্বাদন করতে পারে না, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, হজরত জিবরাইল (আ.) রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, এবার আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন, রাসুল (সা.) বললেন, ‘ঈমান হলো, তুমি ঈমান রাখবে আল্লাহর প্রতি, তার (আল্লাহর) ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসুলদের প্রতি এবং শেষ দিবসের (কেয়ামত) প্রতি। (এবং) তুমি ঈমান রাখবে তাককিরের ভালো-মন্দের প্রতি।’ হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। -সহিহ মুসলিম : ৮

ঈমানের স্বাদ
হজরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী কারিম (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে রবরূপে, ইসলামকে দ্বীনরূপে এবং মুহাম্মাদ (সা.)-কে রাসুলরূপে সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করবে। -সহিহ মুসলিম : ৩৪

সুস্বাদু খাদ্যের স্বাদ সেই বুঝতে পারে যার জিহ্বায় স্বাদ আছে। রোগ-ব্যাধির কারণে নষ্ট হয়ে যায়নি। তদ্রূপ ঈমান ও যাবতীয় আমলের স্বাদও ওই খোশনসিব ব্যক্তিই অনুভব করে, যে সম্পূর্ণ সন্তুষ্টিচিত্তে ও সর্বান্তকরণে আল্লাহকে রব ও পরওয়ারদিগার এবং মুহাম্মদ (সা.)-কে রাসুল ও আদর্শ এবং ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করে।

আল্লাহতায়ালা, নবী মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলামের সঙ্গে যার সম্পর্ক কেবলই বংশগত ও প্রথাগত বা কেবলই চিন্তাগত ও বুদ্ধিগত পর্যায়েই নয় বরং সে আল্লাহর বন্দেগি, মুহাম্মদ (সা.)-এর আনুগত্য এবং ইসলামের অনুসরণকে মনেপ্রাণে নিজের জীবনে গ্রহণ করে নেবে। সেই ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। -মাআরিফুল হাদিস : ১/৯১

ঈমানের মিষ্টতা
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকবে সে ঈমানের মিষ্টতা অনুভব করবে। আল্লাহ ও তার রাসুল তার কাছে সবকিছু থেকে অধিক প্রিয় হওয়া, কাউকে ভালোবাসলে শুধু আল্লাহরই জন্য ভালোবাসা, আর কুফুরিতে ফিরে যাওয়াকে এমন ঘৃণা করা, যেমন সে ঘৃণা করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে। -সহিহ বোখারি : ১৬

এই হাদিসের বিষয়বস্তুও আগের হাদিসের বিষয়বস্তুর প্রায় কাছাকাছি। উপস্থাপনায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এই হাদিসে বলা হচ্ছে, ঈমানের মিষ্টতা ওই ব্যক্তিই অনুভব করতে পারবে, যে আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ সমর্পিত থাকবে; আল্লাহ ও তার রাসুলকে জগতের সবকিছু থেকে বেশি ভালোবাসবে। অন্য কারও প্রতি যদি তার ভালোবাসা হয়, তা হবে সম্পূর্ণ এই ভালোবাসার অধীন। আর ইসলাম তার এতই প্রিয় যে, ইসলাম থেকে ফিরে যাওয়া, কুফুরিতে লিপ্ত হওয়া তার কাছে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সমতুল্য। -মাআরিফুল হাদিস : ১/৯১

;

মসজিদ নির্মাণ করবে দাউদ কিম

কোরিয়ার প্রতিটি গলি থেকে ভেসে আসবে আজানের সুর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জমি কেনার দলিল হাতে দাউদ কিম, ছবি : সংগৃহীত

জমি কেনার দলিল হাতে দাউদ কিম, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কয়েক বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী দক্ষিণ কোরিয়ান ইউটিউবার দাউদ কিম মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে মসজিদের জন্য জমিও কিনেছেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে ওই জমি ও তার দলিলের ছবি শেয়ার করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক এই নওমুসলিম। তিনি দেশটির ইঞ্চোন শহরে মসজিদটি নির্মাণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

ইনস্টাগ্রামে কিম লিখেছেন, ‘অবশেষে আপনাদের সাহায্যে আমি ইঞ্চোনে মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি ক্রয়ের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। খুব শিগগিরই জায়গাটিতে মসজিদ নির্মিত হবে। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আমার এই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।’

ওই পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘ওই জমিতে মসজিদের পাশাপাশি একটি ইসলামিক পডকাস্ট স্টুডিও তৈরির ইচ্ছা আমার। সত্যি এটি একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ, এতে বহু সমস্যার সম্মুখীন হওয়া লাগতে পারে। তবে আমার বিশ্বাস- আমি এগুলো সম্পন্ন করতে সক্ষম হব।’

দাউদ কিম আশাবাদ ব্যক্ত করে লিখেছেন যে, ‘এমন একটি দিন আসবে, যেদিন কোরিয়ার প্রতিটি গলি আজানের সুমধুর ধ্বনিতে ভরে উঠবে। এ জন্য আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

কিম ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। এরপর ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে তিনি সারাবিশ্বে বিখ্যাত বনে যান। জনপ্রিয় এই ইউটিউবার তার নিয়মিত ব্লগে ইসলামিক বিভিন্ন কনটেন্ট, নামাজ পড়ার ভিডিওসহ নানা কিছুই পোস্ট করে থাকেন। ২০২২ সালে কিম বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশ ঘুরে তিনি পবিত্র উমরা পালন করতে সৌদি আরব যান।

দক্ষিণ কোরিয়ার এই গায়ক ইউটিউবিং করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান। ঘুরতে ঘুরতে তিনি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও তিউনিশিয়া যান। দেশগুলোতে গিয়ে ইসলাম ধর্মকে কাছ থেকে দেখে ও বুঝে তিনি আকৃষ্ট হন। ইসলামের জীবনবিধান দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পুরোপুরি মুসলমান হয়ে যান।

দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। যা কোরিয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশ নিয়ে গঠিত। সিউল দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। সিউল বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ধনী শহরের তালিকায় থাকা একটি শহর।

দক্ষিণ কোরিয়ায় ইসলামের উপস্থিতি খুবই সামান্য। ২০০৫ সালেও দেশটির আদমশুমারিতে মুসলিমদের কোনো বিভাগের সদস্য হিসেবে ধরা হত না। বর্তমানে দেশটিতে ২ লাখ মুসলিম রয়েছে, যাদের বেশিরভাগ বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশ থেকে আসা অভিবাসী এবং কিছু ধর্মান্তরিত বাসিন্দা। দেশটিতে ২১টি মসজিদ, ১৩টি ইসলামিক সেন্টার ও ১৪০টির মতো নামাজের স্থান রয়েছে।

১৯৬৯ সালে কোরিয়ান সরকার প্রদত্ত জমিতে গড়ে ওঠে সিউল কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার। সিউল সেন্ট্রাল মসজিদ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম মসজিদ। যা হেনামডং সিউলে অবস্থিত। মসজিদটি ইতিমধ্যে বিশ্বের অনন্য সুন্দর মসজিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

;

তীব্র গরম মুমিনকে যা শিক্ষা দেয়



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
গরম থেকে বাঁচতে ফুটপাতের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাথায় পানি দিচ্ছেন, ছবি : রাজু আহমেদ

গরম থেকে বাঁচতে ফুটপাতের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাথায় পানি দিচ্ছেন, ছবি : রাজু আহমেদ

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে এখন চলছে গ্রীষ্মকাল। ফলে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। বস্তুত শীত, গরম, রোদ, বৃষ্টি সবই আল্লাহর দেওয়া। তীব্র শীত আর প্রচণ্ড গরমে রয়েছে মুমিনে জন্য শিক্ষা। জনজীবন অতিষ্ট হওয়া গরম আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আজাবের কথা। তাই তীব্র তাপদাহের সময় দয়াময় আল্লাহতায়ালার কাছে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা জরুরি।

পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে মানবতার কল্যাণ সাধনকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। ফলে তীব্র গরমের সময় ইবাদত-বন্দেগি সহজ করেছে ইসলাম। হজরত আবু জার (রা.) বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম।
এক সময় মোয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী কারিম (সা.) বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মোয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবী কারিম (সা.) পুনরায় বলেন, গরম কমতে দাও।
এভাবে তিনি (নামাজ আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম।
এরপর নবী কারিম (সা.) বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামাজ আদায় করো। -সহিহ বোখারি : ৫৩৯
বর্ণিত হাদিসের আলোকে বিধান হলো, অতীব গরমের সময় কিছুটা বিলম্ব করে জোহরের নামাজ আদায় করা সুন্নত।

গরমের সময় এমন কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোর সওয়াব অনেক। একজন মুমিন সেসব আমল করে সহজেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারেন। ওই সব আমলের কয়েকটি হলো-

নফল রোজা
গরমের রোজা শীতের থেকে বেশি কষ্টকর। গরমের কষ্ট উপেক্ষা করে যদি নফল রোজা রাখা যায়, তাহলে আল্লাহতায়ালা বেশি নেকি দেবেন। সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্ববর্তী বুজুর্গরা বেশি সওয়াবের আশায় গরমকালে রোজা রাখতেন।

পিপাসার্তকে পানি পান করানো
পিপাসার্তকে পানি পান করানো একটি উত্তম কাজ। আর যদি প্রচণ্ড গরমে কাউকে ঠাণ্ডা পানি পান করানো হয়, তাহলে তো কাজটি আরও উত্তম হবে। এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ‘কোন দান উত্তম? তিনি বললেন, ‘পানি পান করানো।’ -সুনানে নাসাই : ৫৪৫৬
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা নিবারণ সর্বোত্তম মহৎ কাজের একটি।’
হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সদকা বা দান জাহান্নামের আগুন নির্বাপণ করে। আর পানি পান করানো উত্তম সদকা।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৭৪৩৫

নফল নামাজ
অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস, তাই জাহান্নামের ভয়ে বেশি করে এবং লম্বা লম্বা সুরা দিয়ে নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন গরম বেশি পড়বে, তখন বেশি নামাজ আদায় করো। কারণ অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস।’ -মেশকাত : ৫৯১

গরম থেকে শিক্ষা
গরমের তীব্রতা থেকে মুমিনের জন্য রয়েছে শিক্ষা। কেননা জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি। তাই এ গরম থেকে জাহান্নামের তীব্রতা অনুমান করে গোনাহ থেকে মুক্ত থাকা। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলছে। ফলে আল্লাহ তাকে দুইটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি শীতকালে অপরটি গ্রীষ্মকালে। আর তাই তোমরা গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে তীব্র ঠাণ্ডা অনুভব করো।’ -সহিহ বোখারি : ৫৪৫৫

গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে, গরিবদের মাঝে সুমিষ্ট ফল বিতরণ করা। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা। ঘামে ভেজা শরীরে জনসমাগমে গমন না করা। গরমের সময় প্রবাহিত ঘামের গন্ধ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা। গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা বিষয়টিও খেয়াল রাখার নির্দেশ দেয় ইসলাম।

বৃষ্টির জন্য নামাজ
প্রচণ্ড গরমে একপশলা বৃষ্টির জন্য মুমিনরা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। শস্য ফলানোসহ পশুপাখির খাবারের জন্য যেমন বৃষ্টি দরকার, তেমনি তীব্র তাপদাহে সৃষ্ট নানা জটিলতা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতেও আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি খুব প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে দয়াময় আল্লাহতায়ালার দরবারে বৃষ্টি কামনা করে নামাজ পড়া ও দোয়া করা সুন্নত। পরিভাষায় এই নামাজের নাম ‘ইসতিসকা’ বা বৃষ্টির নামাজ।

ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় বান্দা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। প্রচণ্ড গরমের সময়ও এর ব্যতিক্রম নয়। তীব্র তাপদাহের সময় মানুষের উচিৎ জাহান্নামের গরমের কথা স্মরণ করা। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে আত্মনিয়োগ করা।

একটু শান্তির জন্য দুনিয়ার জীবনে গরমের কষ্ট ও তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য যদি আমরা সম্ভবপর সব উপায় অবলম্বন করতে পারি, তাহলে আখেরাতের আজাব ও ভয়াবহতা থেকে বাঁচার জন্য আমলদার এবং সাধনাকারী হওয়া জরুরি।

;

৪০ বছর ধরে মদিনায় বিনামূল্যে চা-কফি খাওয়ানো বৃদ্ধের মৃত্যু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র মদিনা জিয়ারতকারীদের অনেকের কাছে পরিচিত নাম শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা। গত ৪০ বছর ধরে তিনি পবিত্র হজ-উমরা পালনকারীদের মাঝে বিনামূল্যে চা, কফি, রুটি ও খেজুর বিতরণ করেছেন। অনেক বাংলাদেশি হাজি তার হাতে চা-কফি পান করেছেন।

সদাহাস্য সিরিয়ান এই নাগরিক মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ৯৬ বছর বয়সে মদিনায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হারামাইনের খবর সরবরাহকারী ভেরিফায়েড পেইজ ‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’ এই খবর জানিয়ে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

জানা যায়, প্রতিদিন ৪০টি ফ্লাস্কে করে চা-কফি আনতেন তিনি। এ জন্য একটি বিশেষ ট্রলি ব্যবহার করতেন, মসজিদে নববিতে যাওয়া অন্যতম পথ জায়েদিয়া এলাকায় বসতেন তিনি। সবুজ চা, লাল চাসহ নানা স্বাদের চা বানিয়ে আনতেন। থাকত চিনিযুক্ত, চিনিমুক্ত চা-কফি। এছাড়া এলাচযুক্ত চা, পুদিনা চা, বিভিন্নরকমের মশলাযুক্ত চা আনতেন।

তিনি রাস্তার পাশে বসে পথচারীদের মধ্যে চা, কফি, খেজুর, রুটি ও বিস্কুট বিনামূল্যে বিতরণ করতেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন ছেলেরা। কেউ কিছু দিতে চাইলে বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করতেন।

গত বছর সৌদি আরবের প্রভাবশালী পত্রিকা আল আরাবিয়া তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সিরিয়ার নাগরিক শায়খ ইসমাইল প্রায় ৪০ বছর ধরে মদিনায় বসবাস করে আসছিলেন। মদিনার কুবা এভিনিউতে একটি সাধারণ বাড়িতে বসবাস করলেও নিজের সম্পদ পুরোটাই উৎসর্গ করেছিলেন হজ ও উমরা যাত্রীদের খেদমতে।

টানা চার দশক ধরে অনন্য এই সেবার কারণে সবার কাছে তিনি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হন। তার মৃত্যুতে মদিনায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বাংলাদেশের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি শোকপ্রকাশ করে তার জন্য দোয়া কামনা করেছেন।

;