সুস্থ চোখের স্বরলিপি
‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায় না’। বহুল প্রচলিত এই প্রবাদ বাক্যের মতোই সুস্থ চোখ ও চোখের সুস্থতার বিষয়ে সকলের ভেতরই গা-ছাড়া ভাব কাজ করে। গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটির সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার দায়িত্ব পালনে হেলাফেলা করলে, ভুক্তভোগী হতে হবে নিজেকেই।
তাইতো শারীরিক সুস্থতার মতোই জরুরি চোখের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত জীবনে চোখকে সুস্থ রাখতে মেনে চলতে হবে এই সহজ কিছু নিয়ম।
দিনের বেলায় সানগ্লাস পরতে ভোলা যাবে না
শুধু স্মার্টনেসের জন্যই নয়, চোখের সুরক্ষার জন্যেও প্রয়োজন সানগ্লাস। রোদের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন (UV Ray) চোখের উপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। দ্য আমেরিকান অপটোমেট্রিক এসোসিয়েশন জানায়, রোদের আলোতে অধিক সময় থাকার ফলে ফটোকেরাটাইটিস (Photokeratities) এর সমস্যা তৈরি হয়। এর ফলে চোখ লাল হয়ে যাওয়া, আলোতে সমস্যা হওয়া, চোখে ঘন ঘন পানি আসার সমস্যা দেখা দেয়। যদিও এই সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী নয়, তবুও বারংবার একই সমস্যা দেখা দিলে চোখের ক্ষতি হতে পারে।
সানগ্লাস রোদের এই ক্ষতিকর রশ্মিকে ৯০-৯৫ শতাংশ প্রতিরোধ করে। ফলে চোখ ও চোখের আশেপাশের অংশ রোদের আলো থেকে সুরক্ষিত রাখে।
কমাতে হবে ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের ব্যবহার
অফিসে কিংবা বাসাতে সারাদিন কম্পিউটার, ল্যাপটপ অথবা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকা হয়। অতিরিক্ত সময় ইলেক্ট্রনিক এই সকল যন্ত্রের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখে দেখা দেয় ড্রাই আই সিনড্রোম। যার ফলে চোখ শুষ্ক হয়ে ওঠা ও রাতের ঘুমের চক্রে সমস্যা দেখা দেয়। তাই চেষ্টা করতে হবে, জরুরি কাজ ব্যতীত এই সকল যন্ত্র ব্যবহারের মাত্রা যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে।
ড্রাই আই সিনড্রোম এড়াতে একটি কার্যকরী উপায় হলো ২০-২০-২০ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রতি ২০ মিনিট পর ২০ ফিট দূরের কোন একটি বস্তুর উপর ২০ সেকেন্ড সময় তাকিয়ে থাকতে হবে। এতে চোখের উপর প্রেশার অনেকটাই কমে যায়।
চোখ একদম কচলানো যাবে না
চোখে ধুলাবালি পড়লে সাথে সাথেই আমরা খুব জোরে চোখ কচলানো শুরু করি। এর ফলে বেশ আরামবোধ হয় এবং চোখের ময়লা দূর হয়। যতই আরামবোধ হোক না কেন, চোখে কোন ময়লা পড়লে একেবারেই চোখ কচলানো বা চুলকানো যাবে না। কারণ এই অভ্যাসের ফলে চোখের কর্ণিয়া দুর্বল হয়ে যায়। কর্ণিয়া হলো চোখের আইরিশ ও পিউপিলের উপরের স্বচ্ছ ও পাতলা একটি পর্দা। এছাড়াও চোখ কচলানোর ফলে চোখের আশেপাশের অংশের চামড়ার অংশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ও চামড়ার ইলাস্টিসিটি নষ্ট হয়ে যায়।
আরো পড়ুন: অস্বাস্থ্যকর এই ‘অভ্যাস’গুলো অসুস্থ করে তুলছে আপনাকে!
অনেক সময় চোখ চুলকানোর আগে হাত ধোয়া হয় না। যার ফলে চোখ ও চোখের আশেপাশের অংশে ইনফেকশনের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাইতো, চোখে কোন ময়লা পড়লেও হাত দিয়ে জোরে না কচলিয়ে পরিষ্কার কোন কাপড় কিংবা তোয়ালের সাহায্যে মুছে নিতে হবে।
চোখের জন্য ব্যবহার করতে হবে মানসম্মত মেকআপ পণ্য
চোখে ব্যবহৃত মেকআপ পণ্যের উপরে চোখের সুস্থতার অনেকটা নির্ভর করে। আইশ্যাডো, আইলাইনার, কাজল, মাশকারা ও আইশ্যাডো ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য ব্যবহারে চোখে জ্বালাপোড়া, ড্রাই আই সিনড্রোম সহ চোখে ইনফেকশনের সমস্যাও দেখা দেয়। চোখের মেকআপ কেনার আগে লেবেলে মেয়াদ দেখে নিতে হবে এবং মেকআপ ব্যবহারের আগে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। একইসাথে চোখের মেকআপ ভালোভাবে তুলে এরপর ঘুমাতে হবে। নইলে চোখ সহ চোখের আশেপাশের অংশের ত্বকেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অবশ্যই কন্টাক্ট লেন্স খুলে ঘুমাতে হবে
যেকোন অনুষ্ঠানে গ্ল্যামার ভাব আনতে কন্টাক্ট লেন্স পারফেক্ট একটি অনুষঙ্গ। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফিরে অলসতার অজুহাতে কন্টাক্ট লেন্স চোখে রেখেই ঘুমিয়ে যাওয়া মস্ত বড় ভুল হবে। চোখের ভেতরে কন্টাক্ট লেন্স থাকা অবস্থায় সারারাত কাটিয়ে দিলে চোখে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়। যার ফলে সাধারণ চোখের সমস্যা সহ অনেক বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনাও তৈরি হয়।
আরো পড়ুন: শিশুর নিরাপত্তায় আপনি কতটা সতর্ক
ডাক্তারের কাছে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করাতে হবে
চোখে কোন সমস্যা দেখা দিচ্ছে না মনে করে হয়তো চোখের ডাক্তারের কাছে যাওয়া হচ্ছে না। কিন্তু চোখের কিছু সমস্যা সহসাই বোঝা যায় না বা ধরা পড়ে না। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা নিজেদের চোখের সমস্যা ঠিকভাবে বুঝতে পারেন না। সেজন্য প্রতি মাসে অন্তত একবার চোখের ডাক্তারের কাছে চেকআপ করানো উচিৎ। এতে চোখ যেমন সুস্থ থাকবে, তেমনই চোখে কোন সমস্যার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে প্রাথমিক পর্যায়েই সমাধান করা সম্ভব হবে।