বাংলাদেশ নারী ফুটবল পার করছে সংকটময় সময়। সংকটটা অবশ্য এখন খুব স্পষ্টভাবেই সামনে এসেছে। নারী জাতীয় ফুটবল দলের সঙ্গে কোচ পিটার বাটলারের সংকট রূপ নিয়েছে ভয়াবহ পর্যায়ে।
নতুন মেয়াদে কোচের সঙ্গে বাফুফের চুক্তির পর ক্ষিপ্ত নারী ফুটবলারদের গণমাধ্যমের সামনে চোখের পানি ফেলতেও দেখা গেছে। সংকটের জল এতদূরই গড়িয়েছে যে, বাটলারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল না করলে একযোগে পদত্যাগ করার হুমকিও দিয়েছেন নারী ফুটবলাররা।
সংকটের শুরুটা অবশ্য পুরোনো। গত বছর অক্টোবরে কাঠমান্ডুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলার সময় থেকেই বাটলারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সিনিয়র খেলোয়াড়দের। খেলোয়াড়রা আশা করেছিল বাফুফে নতুন করে আর চুক্তির মেয়াদ বাড়াবে না। তবে তাদের সে প্রত্যাশা ভেঙে দিয়েছে বাফুফে। তাই সংকটের ঘটনা নতুন করে সামনে এসেছে। বাটলারের অধীনে টিম মিটিং থেকে শুরু করে জিম সেশনেও অংশ নেয়নি খেলোয়াড়রা।
গতকাল বৃহস্পতিবার এক লিখিত বক্তব্যে কোচের বিরুদ্ধে নিজেদের অভিযোগগুলো তুলে ধরেছেন সাবিনা খাতুনসহ আরও ১৬ খেলোয়াড়।
কোচের বিরুদ্ধে সাবিনাদের অভিযোগ:
১/নিজের ইচ্ছেমত একাদশ গঠন- বাটলার গত সাফ টুর্নামেন্টে সিনিয়রদের বাদ দিয়ে নিজের ইচ্ছেমত একাদশ গড়তে চেয়েছিলেন। দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের প্রতি বাটলারের বৈষম্য আছে এটা অনেক আগেই গুঞ্জন উঠেছিল। এমনকি পাকিস্তানের বিপক্ষে সিনিয়র খেলোয়াড়দের ছাড়াই মাঠে নেমেছিল বাটলার। যে ম্যাচ হারতে হারতে ড্র করেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। খেলোয়াড়দের চাপে ভারতের বিপক্ষে সিনিয়র খেলোয়াড়দের মাঠে নামায় বাটলার যে ম্যাচ জয় দিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।
২/ক্যারিয়ারের ঝুকিঁ- সে সময় সিনিয়র খেলোয়াড়দের চাপে যে বাটলার তাদের দলে নিয়েছেন এটা গণমাধ্যমে ব্যাপকহারে প্রচার হয়েছিল। তাই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে হারলেই সকলের কাছে খারাপ ভাবে উপস্থাপিত হতেন সাবিনারা। তাদের ক্যারিয়ার শেষ হওয়ারও আশঙ্কা ছিল।
৩/ দুর্ব্যবহার ও বিভাজনের চেষ্টা- মাঠের বাইরেও খেলোয়াড়দের নিয়ে হাসি ঠাট্টা ও দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ এনেছেন বাটলারের বিরুদ্ধে। সিনিয়র-জুনিয়র খেলোয়াড়দের মাঝে বিভাজনের চেষ্টাও করেছেন বাটলার বলে অভিযোগ করেন সাবিনারা।
৪/ বডি শেমিংয়ের অভিযোগ- বাটলারের বিরুদ্ধে বডি শেমিংয়ের মত গুরুতর অভিযোগ এনেছেন খেলোয়াড়রা। এমনকি মেয়েদের পোশাক-আশাক নিয়েও কথা শুনিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সাবিনারা।
৫/সমাধান না করে অবহেলা করা- যে ঘটনা একসঙ্গে বসে সমাধান করা যেত সেটা বাটলার রীতিমত দিনের পর দিন উপেক্ষা করে গেছেন। সাবিনারা মিটিংয়ের অপেক্ষায় থাকলেও নিজের ইগো ইস্যুকে বড় করে দেখেছেন বাটলার। এমনটাই অভিযোগ করেছেন খেলোয়ারেরা।
৬/ ম্যাচের মাঝে খেলোয়াড় পরিবর্তনে ভুল- পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ টা খেলোয়াড় পরিবর্তনের সুযোগ থাকলেও বাটলার পরিবর্তন করেছিলেন মাত্র ৩ টি। বাটলার খেলোয়াড় পরিবর্তনের কথা ভুলে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন নারী ফুটবলাররা। যা বাটলারের উদাসীনতা ও অপেশাদারিত্বকে প্রমাণ করে।
৭/গালিগালাজ,মিথ্যাচার ও মানসিক হয়রানি- পিটারের কাছ থেকে অনেক গালিগালাজ শুনেছেন বলে অভিযোগ করেন সাবিনারা। তার রূঢ় আচরণ খেলোয়াড়দের মানসিক হয়রানি এবং উৎপীড়নের কারণ হয়েছে একাধিক বার। কিছু মেয়েদের ব্যবহার করে মিথ্যাচার করার মতো অভিযোগ আনা হয়েছে বাটলারের বিরূদ্ধে।