নুসরাত হত্যার রায়: আদালত প্রাঙ্গণে উৎসুক জনতার ভিড়
নুসরাত হত্যাফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আলোচিত মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায় বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর)। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদের আদালতে এ রায় ঘোষণা করা হবে। রায়কে ঘিরে সোনাগাজী ও ফেনী সদর উপজেলায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
আলোচিত এ রায় সম্পর্কে জানতে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে ভিড় করেছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। আদালত প্রাঙ্গণে সমবতেরা জানান, নুসরাতকে যেমন নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তা ফেনী জেলায় একটি বিরল ঘটনা। এর আগে এমন কোন নৃশংস হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করতে হয়নি তাদের। তাই তারা চান এই হত্যার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি যেন আদালত নিশ্চিত করেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে আদালত প্রাঙ্গণে উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এদিন সকাল ৮টা থেকে আদালত প্রাঙ্গণের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রধান ফটক থেকে আদালত প্রাঙ্গণে ভিতর কাউকে তল্লাশি ছাড়া যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও আলোচিত এ হত্যার রায়কে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে বিপুলসংখ্যক উৎসুক জনতা ভিড় করছেন।
সোনাগাজী উপজেলা থেকে আগত মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, নুসরাত হত্যার রায় জানতে এসেছি আদালত প্রাঙ্গণে। আমরা চাই আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।
মোহাম্মদ তালেব নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী এর আগে ফেনীবাসী হয়নি। আমরা চাই এই হত্যার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন যেন হয়। আর কোন অপরাধী এমনভাবে যেন কোন নিরাপরাধকে হত্যা না করে।
গত ১০ জুন নুসরাত হত্যা মামলা আদালত আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে বিচার কাজ শুরু হয়। এরপর ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দেন।
এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও বাদীপক্ষের খণ্ডন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৪ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার কার্যালয়ে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি যৌন হয়রানির শিকার হন। এ ঘটনায় তার মা শিরীন আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেফতার করে জেল-হাজতে পাঠায়।
এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণ। অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে নুসরাতের পরিবারকে চাপ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে ৬ এপ্রিল পরীক্ষার কক্ষ থেকে ডেকে মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে কেরোসিন ঢেলে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তার চিৎকারে মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল নুসরাতের মৃত্যু হয়। ৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আটজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
গত ২৮ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত শেষে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে ৮৬৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে।
মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ১৬ আসামি হলেন— সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদ্রাসার ছাত্র নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।